তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে বিস্তারিত পড়ুন

তেঁতুল খাওয়ার  উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আপনি নিশ্চয়ই ইচ্ছুক? ওজন কমাতে তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম জানেন কি? যদি না থাকে তাহলে আজকে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন। 
তেঁতুল-খাওয়ার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-জানতে-বিস্তারিত-পড়ুন
কারণ, আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করবো তেঁতুলের উপকারিতা এবং ওজন কমাত তেঁতুল খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম সম্পর্কে। সাথে আরো জানবেন মেয়েদের তেঁতুল খেলে কি হয় এবং তেতুলের বিচির উপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে চলুন আজকের আলোচনা শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ তেঁতুল খাওয়ার  উপকারিতা

তেঁতুল খেলে যেসব উপকার পাবেন

তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা অনেক। তেতুল পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। বিশেষ করে মেয়েদের কাছে তেতুল একটি জনপ্রিয় ফল। অনেকেই আবার মনে করেন তেতুল খেলে রক্ত পানি হয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আদৌ কি এটা সত্য? তাহলে চলুন আপনাকে প্রথমেই জানিয়ে দেই তেতুল খাওয়ার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা গুলো সম্পর্কে--
  • লিভার সুস্থ রাখেঃ তেঁতুল খেলে আপনার লিভার সুস্থ থাকবে। কারণ, তেতুলের প্রকিয়ানিডিনগুলো আপনার লিভারকে ফ্রি মেডিকেল ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে,নিয়মিত নিয়ম করে তেতুলের নির্যাস গ্রহণ করলে এটি লিভারের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করে। তাছাড়া তেতুলের ভিটামিন ই এবং সেলিনিয়াম উপাদান লিভারের লিপিড সামগ্রিক গুলোকে খুব সহজে ফ্রি মেডিকেলের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে পারে।
  • তেতুল হার্ট সুস্থ রাখেঃ তেতুল উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আপনার শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল রাশ করতে সক্ষম। এতে করে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হার্টের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।
  • হজমের সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ আপনি কি বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন? খাবার খাওয়ার পরে কি হজম হতে সমস্যা হয়? তাহলে আজ থেকেই নিয়মিত তেতুল খাওয়া শুরু করুন। কারন, তেতুল উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ হাওয়ায় এটি আপনার অন্ত্রের গতিবিধি সহজ করে।ফলে তেঁতুল খেলে খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা ও দূর হয়।
  • তেতুল ওজন কমায়ঃ অতিরিক্ত ওজন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এটি নিশ্চয় আপনি জানেন? তাছাড়া অতিরিক্ত ওজনের ফলে আপনার হৃদরোগ কিডনি এবং লিভারের রোগ ব্যাধি অনেকটাই বেড়ে যায়। আবার অনেকেই আছেন যারা বাড়তি ওজন কোনভাবেই কমাতে পারছেন না। তাদের জন্য ওজন কমানোর একটি কার্যকরী উপাদান হতে পারে তেঁতুল। কারণ, তেঁতুল খেলে এটি আপনার শরীরের ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং খারাপ কোলেস্টেরল হ্রাস করে। ফলে আপনার ওজনও কমতে থাকে।
  • ত্বকের যত্নে তেতুলঃ ত্বকের যত্নে যুগ যুগ ধরে তেতুলের পল্প ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাছাড়া তেতুলে থাকা আলফা হাইডক্সি এসিড আপনার ত্বককে মসৃণ এবং উজ্জ্বল করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করতে এবং এক্সফোলিয়েট করতে নিয়মিত তেতুলের রস আপনার ত্বকে ব্যবহার করুন। তেতুলের পাশাপাশি এতে রয়েছে পেকটিন এবং চিনি যা আপনার ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতেও সাহায্য করে।
তেঁতুল-খাওয়ার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-জানতে-বিস্তারিত-পড়ুন
  • অকাল বার্ধক্য রোধেঃ নিয়মিত তেতুল খেলে এটি আপনাকে অকাল বার্ধক্য এর হাত থেকে বাঁচাতে পারে। কারণ, তেতুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি যা অকাল বার্ধক্য রোধ করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তেতুল বেশ উপকারী একটি ফল। নিয়মিত তেতুল খেলে এটি আপনার রক্তের সরকারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
  • অগ্নাশয় সুরক্ষায়ঃ তেতুলে রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য যা আপনার অগ্নাশয়কে বিভিন্ন প্রদাহজনিত ক্ষতি থেকে খুব সহজেই রক্ষা করতে পারে।
  • ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে তেতুলঃ ম্যালেরিয়া প্রতিরোধেও তেতুল বেশ কার্যকর। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে আমাদের অনেক সময় জ্বর হয় এই জ্বর রোধের বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া আফ্রিকান উপজাতিরা সেই প্রাচীনকাল থেকেই ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা হিসেবে তেতুল ব্যবহার করে আসছে।
  • চোখ ভালো রাখেঃ আমরা অনেকেই অল্প বয়সেই চোখের সমস্যায় ভুগে থাকি, চোখের ঝাপসা দেখি। কিন্তু নিয়মিত তেতুল খেলে এটি আপনার চোখকেও ভালো রাখবে। এটি চোখের কন্জেক্টিভাইটিসের চিকিৎসায় সহায়তা করে। তাছাড়া চোখের ড্রপ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় তেতুল।
  • চুলের যত্নে তেঁতুলঃ আপনি আপনার চুলের যত্নেও তেতুল ব্যবহার করতে পারেন। আপনি আপনার মাথার ত্বকে তেতুলের রস লাগান। এতে করে আপনার মাথার ত্বকের ফলিকল যেমন বৃদ্ধি পাবে,তেমনি আপনার চুলও প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। তাছাড়া তেতুলে থাকা ভিটামিন সি আপনার চুলকে ক্ষতিকারক আল্ট্রাভায়োলেট রশি থেকে রক্ষা করতে পারে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ তেতুলে রয়েছে সক্সলেট মিথেনলীক এক্সট্র্যাক্ট যা আপনাকে প্রাণঘাতী ক্যান্সারের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। তাছাড়া, তেতুল উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল হওয়ায় এটি ক্যান্সারের কোষ গুলো খুব সহজেই নির্মূল করতে পারে। তাই ক্যান্সার থেকে বাঁচতে আপনি নিয়মিত তেতুল খান।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ তেতুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি। তেতুলের এই এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি উপাদান আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দিতে পারে। আর তাই নিয়মিত তেতুলের রস আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ম্যাজিক এর মত কাজ করে।
  • পেপটিক আলসার রোধে তেতুলঃ পেপটিক আলসার খুবই বেদনাদায় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই আলসার পেট বা ক্ষুদ্রান্তে হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত তেতুলের বীজ গুঁড়ো করে খেলে এই পেপটিক আলসার দূর হয়। তাছাড়া তেতুলে থাকা পলিফেনোলিল কম্পাউন্ড আফটার আলসার রোগকেও ছাড়িয়ে তুলতে পারে।
  • রক্ত প্রবাহের উন্নতিতে তেতুলঃ তেতুলের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা আপনার শরীরে লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধির পাশাপাশি অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের প্রত্যেকটি কোনায় পৌঁছে দিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এতে করে আপনার দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি আপনি অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার হাত থেকেও রক্ষা পেতে পারেন।
  • শরীরের ক্ষত সারাতেঃ শুধু তেঁতুল নয় বরং এর পাতা এবং গাছের ছালও ভীষণ উপকারী।তেতুলের পাতা এবং তেতুল গাছের ছাল এন্টিসেপটিক ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হওয়ায় এটি আপনার শরীরের যে কোন ক্ষত খুব সহজেই সরিয়ে তুলতে পারে।
  • স্নায়ুর জন্য ভালোঃ তেতুলে থাকা ভিটামিন বি এবং থায়ামিন যা আপনার স্নায়ুর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পেশির বিকাশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
  • জ্বালা যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করেঃ তেতুলে উচ্চমাত্রার টারটারিক অ্যাসিড থাকার কারণে এটি আপনার শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। অনেক সময় প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া হয়। এর সমাধান আপনি পেতে পারেন তেতুল খেয়ে।
  • মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ অনেকেই মনে করেন তেঁতুল খেলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয় কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ভ্রান্ত। কেননা তেতুলে রয়েছে করবিক এসিড যা মানুষের খাবার থেকে আইরন সংগ্রহ করে সেটি রীতিমতো দেহের বিভিন্ন কোষে সরবরাহ করে। যা আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভীষণই দরকার।
তেতুলের এতসব উপকারিতা জানার পরেও আপনি কি বিশ্বাস করবেন তেতুল খেলে রক্ত পানি হয়! মোটেও না বরং এটি একটি প্রচলিত কুসংস্কার। আর তাই কুসংস্কারে কান না দিয়ে সুস্থ থাকতে আপনি তেতুল খাওয়া শুরু করুন।

তেঁতুল খাওয়ার অপকারিতা

তেঁতুল খাওয়ার  উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। আপনি যদি নিয়ম না মেনে মাত্রাতিরিক্ত তেঁতুল খেতেই থাকেন দীর্ঘদিন ধরে তাহলে আপনার শরীরে এর বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন--
  • প্রথমেই বলি, যারা চিকিৎসায় আছেন বা ঔষধ সেবন করছেন তারা তেঁতুল খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। বিশেষ করে কেউ যদি এন্টি প্লাটিনেট ড্রাগ, ওইস্পিরিন ইত্যাদি ওষুধ সেবন করেন তাহলে তেঁতুল খাবেন না। কারণ, তেতুল আপনার ওষুধের সাথে বিক্রিয়া করে আপনার শরীরের রক্তপাত বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • মাত্র অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়ার ফলে এটি আপনার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। যার ফলে আপনার হাইপোগ্লাইসেমিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।
  • দীর্ঘদিন ধরে তেতুল খাওয়ার ফলে আপনার ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে।
  • প্রতিনিয়ত তেঁতুল খেতেই থাকলে তেতুলের টারটারিক এসিড আপনার দাঁতের এনামেলকে নষ্ট করে ফেলে।ফলে দাঁতের ক্ষতি হয়।
  • খুব বেশি পরিমাণে তেতুল খেলে এটি আপনার জন্ডিস রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • আপনার যদি এলার্জি থেকে থাকে,তাহলে তেতুল খেলে আপনি বিপাকে পড়তে পারেন।
  • তেতুলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যাসিটিক অ্যাসিড,যার ফলে অতিরিক্ত তেতুল খেলে আপনার গ্যাস অম্বল বা অ্যাসিটিতে সমস্যা হতে পারে।
  • তেতুল যেহেতু রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, তাই যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তারা ভুল করেও তেঁতুল খাবেন না। এতে আপনার রক্তচাপ আরো কমে যেতে পারে। তাছাড়া নিম্ন রক্তচাপের রোগীদের চিকিৎসকরা তেতুল না খাওয়ারই পরামর্শ দেন।
  • অধিক পরিমাণে তেতুল খাওয়ায় অনেক সময় এটি আপনার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।ফলে বদহজম,পেট খারাপ এবং ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ঔষধ সেবন করছেন,এমন পরিস্থিতিতে তেতুল এড়িয়ে চলুন। কেননা তেতুল আপনার ওষুধের সাথে বিক্রিয়া করে হিতে বিপরীত হতে পারে।
  • একদল ভারতে গবেষক প্রমাণ করেছেন, প্রচুর পরিমাণে তেতুল খেলে পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় বা শিশুকে স্তন্যপান করাচ্ছেন এমন সময় তেতুল খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। আর খেতে চাইলে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই খান।
প্রিয় পাঠক, তেঁতুল খাওয়ার অনেক উপকারিতা থাকলেও আপনি যদি না বুঝে এবং আপনার শরীরের অবস্থা না বুঝে মাত্র অতিরিক্ত পরিমাণে খান, তাহলে আপনি এর উপকারিতার থেকে অপকারিতাই বেশি পাবেন।

তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম

তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। আপনি চাইলে বিভিন্ন উপায়ে তেঁতুল খেতে পারেন। আবার কেউ কেউ আছেন যারা পাকা তেতুলের পরিবর্তে কাঁচা তেতুল খেতে পছন্দ করেন। আপনারা যারা বিভিন্ন নিয়মে তেঁতুল খেতে চান তারা নিম্নলিখিত পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করতে পারেন--

তেতুল তরকারিঃ আপনি আপনার রান্নায় তেতুল ব্যবহার করে খাবারে ভিন্নতা আনতেপারেন। এর জন্য যেকোনো তরকারি রেসিপি বানাতে আপনি প্রথমেই পছন্দের সবজি কেটে নিবেন। এরপর পেঁয়াজ, রসুন এবং মসলা একসাথে ভালো করে কষানোর পর হালকা তেতুল পানি দিয়ে কাঁটা সবজি ছেড়ে দিন। ভালোমতো আবারো কষিয়ে ঝোল দিন। ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল আপনার তেতুল তরকারি।

তেতুলের বলঃ আপনি গোটা তেঁতুল খেতে অভ্যস্ত না হলে, তেতুলের বল বানিয়েও খেতে পারেন। তেতুলের বল বানাতে আপনাকে যা যা করতে হবে--
  • প্রথমে চার কাপ পরিমাণ তেতুল নিন।
  • এবার একটি প্যানে ২ কাপ পরিমান পানি গরম করে তাতে ১ চা চামচ লবণ, ৩ কাপ পরিমাণ চিনি এবং ২ চা চামচ মরিচের গুঁড়ো যোগ করুন।
  • সব উপাদান একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে ঠান্ডা হলে হাতের তালুর সাহায্যে বলের মত সেভ করে তৈরি করে ফেলুন তেঁতুল বল।
তেতুলের টকঃ আপনি তেতুলের টক বানিয়েও খেতে পারেন বানাতে প্রথমে আপনি ৩-৪ টির মত তেতুল দানা ছাড়িয়ে পিষে নিন। এবার এতে সামান্য পরিমাণ পেঁয়াজ, সরষের তেল লেবুর রস, স্বাদমতো লবণ,মরিচ গুঁড়ো এবং চিনি যোগ করুন। সব উপকরণ মিশিয়ে আধা কাপ পরিমাণ পানিতে আবারো ভালো করে মিশিয়ে নিন। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল আপনার তেতুলের টক এভাবে আপনি তেতুলের টক বানিয়ে খেতে পারেন।

তেতুলের জুসঃ তেতুলের জুস হয়তো আপনার অনেকেই তৈরি করে খেয়েছেন। নতুন করে বলার কিছু নেই। তবুও যারা জানেন না তারা জেনে রাখুন কিভাবে তেতুলের জুস বানাতে হয়। তেতুলের জুস বানাতে আপনি প্রথমেই তেঁতুলের দানা ছাড়িয়ে ভালো করে পিষে নিন। এবার এতে হালকা লবণ, স্বাদমতো চিনি মিশিয়ে পরিমাণমতো পানি দিয়ে ছেকে নিন। ব্যাস,আপনার তেঁতুলের জোস একেবারেই তৈরি।

ওজন কমাতে তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম

ওজন কমাতে তেতুল কিভাবে খাবেন জানেন কি? আপনি আপনার ওজন নিয়ে কি খুব বেশি চিন্তিত? দিনকে দিন আপনার ওজন বেড়েই চলেছে?কোনভাবেই ওজন কমাতে পারছেন না! তাহলে আজ থেকেই আপনি নিয়ম করে খাওয়া শুরু করুন তেতুল জল বা তেতুলের শরবত। আর তেঁতুল খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই রয়েছে। ওজন কমাতে তেতুল খাওয়ার অনেক রকম নিয়ম রয়েছে। 
 
শুধুমাত্র বর্তমান সময় নয়, সেই প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে তেতুল জলের ব্যবহার। তাছাড়া আপনি কি জানেন, পুষ্টিবিদরাও ওজন কমাতে তেতুল জল খাওয়ার পক্ষে। কারণ, তেঁতুলের রস আপনার শরীরে হাইড্রোক্সিসিট্রিক এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে । এর ফলে আপনার পেটের চর্বি কমে যায়।
 
এই অ্যাসিড সেরোটোনিন নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা বাড়িয়ে আপনার অতিরিক্ত ক্ষুধা ভাব হ্রাস করে। আর তাই ওজন কমাতে আপনি আপনার খাদ্য তালিকার ডায়েটে তেতুল পুদিনা শরবত যোগ করতে পারেন। এবার আপনাকে জানাবো ওজন কমাতে তেঁতুল খাওয়ার একটি বিশেষ নিয়ম সম্পর্কে। আসুন তাহলে জেনে নিন কিভাবে আপনি তৈরি করবেন এই তেঁতুল-পুদিনা শরবত--
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • তেতুলের কাথ 1 টেবিল চামচ
  • চিনির পরিমাণ- ১/২ চা চামচ
  • বিট নুন- পরিমাণ মত
  • পুদিনা পাতা- ৮-১০ টি
  • জিরা গুঁড়ো- খুব সামান্য
  • জল- পরিমাণমতো এবং
  • আইস টুকরো- ৫-৬ টি।
প্রস্তুত প্রণালী
তেতুল পুদিনা শরবত তৈরি করতে আপনি প্রথমেই পাকা তেতুল ভালো করে ধুয়ে নিন। এরপর এতে পরিমাণমতো পানিতে প্রায় দশ মিনিটের মতো তেতুলগুলো ভিজিয়ে রাখুন। মিনিট দশেক পর তেতুলগুলো হাত দিয়ে ভালো করে চটকিয়ে আপনি তেতুলের কাথ তৈরি করুন। এরপর পুদিনার পাতা ধুয়ে নিয়ে এর সাথে বিট নুন
 
এবং স্বাদমতো চিনি মেশে ব্লেন্ডারে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। সবশেষে এতে তেতুলের ক্কাথ এবং পরিমাণমতো পানি যোগ করে আবারো একবার ব্লেন্ড করে নিন। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল আপনার তেঁতুল পুদিনার শরবত। এই তেঁতুল পুদিনা শরবত প্রচন্ড গরমে একদিকে যেমন আপনার তৃষ্ণা মিটাবে, তেমনি অন্যদিকে শরীরের ওজনও কমাবে।

এবার জেনে নিন এই তেতুল জল কিভাবে আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে--
  • নিয়মিত তেতুল জল খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।ফলে ক্যালরি দ্রুত খরচ হয় না এবং সেই সাথে ওজনও বাড়তে দেয় না।
  • এক গবেষণায় বলা হয়েছে, তেতুলে রয়েছে লাক্সেটিভ যা কিনা আপনার হজম ক্রিয়াকে উন্নত করে। ফলের স্বাভাবিকভাবেই ওজন নিয়ন্ত্রিত হয় ।
  • তেতুল জলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। ফলে এটি খেলে আপনার পেট দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত ভরা থাকবে এবং অন্য কোন কিছু খেতেও ইচ্ছা করবে না। ফলে আপনার ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর ঠিক এভাবেই তেতুল জল খাওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার ওজন খুব সহজেই কমিয়ে আনতে পারবেন।

ছেলেরা তেতুল খেলে কি হয়?

ছেলেরা তেতুল খেলে কি হয় জানেন কি? অনেকে মনে করেন, পুরুষরা তেতুল খেলে যৌন ক্ষমতা কমে যায় কিংবা রক্ত পানি হয়ে যায়। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ভুল। কারণ, ছেলেরা তেঁতুল খেলে তাতে কোন ক্ষতি হয় না বরং উপকারই হয়। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে পুরুষরা তেতুল খেলে কি এমন উপকার হতে পারে ?তাহলে জেনে রাখুন--
  • তেঁতুল খেলে এটি মুখের রুচি ফিরিয়ে আনে। সুতরাং তেতুল পুরুষ এবং নারী উভয়ের জন্য উপকারী এতে কোন সন্দেহ নেই।
  • বর্তমান সময়ে ভেজালযুক্ত বিভিন্ন খাবার এবং রাসায়নিক পদার্থ যুক্ত ফলমূল খাওয়ার ফলে অনেক পুরুষই বন্ধ্যাত্বের শিকার হচ্ছেন। পুরুষের এই বন্ধত্ব দূর করতে পারে কেবলমাত্র তেঁতুল।
  • পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে তেঁতুল।
  • গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষের শুক্রানুর গুণমান উন্নত করতে প্রতিদিন অন্তত একটি করে তেঁতুল খাওয়া উচিত।
  • আবার পুরুষদের লিভার থেকে ফ্যাট কমাতে অর্থাৎ যারা ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত আছেন তাদের জন্যও এই তেঁতুল ফল ভীষণই উপকারী।
  • পুরুষরা নিয়মিত তেতুল খেলে এটি আপনার ফ্যাটি লিভারের পাশাপাশি লিবিডো হরমোন বাড়াতেও সাহায্য করে।
আশা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন তেঁতুল পুরুষদের জন্য ক্ষতিকর কোন কিছু নয় বরং উপকারী একটি ফল।

মেয়েদের তেঁতুল খেলে কি হয়?

তেঁতুল খাওয়ার  উপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। কিন্তু মেয়েদের তেঁতুল খেলে কি হয়? টক মিষ্টি স্বাদ যুক্ত এই তেতুল ফল খেতে পছন্দ করেন না এমন নারী খুব কমই আছেন। তেতুল যেমন পুরুষের জন্য উপকারী, তেমনি মেয়েদের জন্যও উপকারী। অনেকেই ধারণা করেন, তেঁতুল খেলে মেয়েদের বন্ধ্যাত্ব হতে পারে, 
 
পিরিয়ডের সমস্যা হতে পারে অথবা সন্তান জন্মদানে কোন সমস্যা হতে পারে। কিন্তু এই ধারণাগুলো নিছক প্রচলিত কুসংস্কার। তেঁতুল খেলে মেয়েদের কোন ক্ষতি হয় না বরং উপকারী হয় কারণ তেতুলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি যা নারীদের দেহের ক্ষত পূরণে সাহায্য করে। আবার প্রেগনেন্সি কালিন সময়ে এই তেতুলই খুব সহজেই একজন গর্ভবতী মায়ের মুখে

কাঁচা নাকি পাকা তেতুল খাওয়া উচিত?

কাঁচা নাকি পাকা তেতুল খাওয়া উচিত? স্বাস্থ্যর জন্য উপকারী কোনটি? তেঁতুল খাওয়ার  উপকারিতা পেতে তেতুল ফল আপনি কাঁচা এবং পাকা উভয় অবস্থাতেই খেতে পারেন। কাঁচা তেঁতুল খাওয়াটা যদিও স্বাস্থ্যকর কিন্তু প্রচন্ড রকমের অম্ল স্বাদযুক্ত হওয়ায় অনেকে কাঁচা তেঁতুল খেতে অভ্যস্ত নন। সে ক্ষেত্রে বলবো আপনি পাকা তেতুল খেতে পারেন।
 
কারণ, পাকা তেতুল টক মিষ্টি স্বাদযুক্ত এবং রসালো হয়। কাঁচা তেতুলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান যেমন- ভিটামিন সি, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের হজমে সাহায্য করে এবং সেইসাথে বিপাক ক্রিয়াও সহজ করে। আবার কাঁচা তেঁতুল অনেক সময় নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে গ্যাস কিংবা পাঁচন তন্ত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
 
ফলে অধিকাংশ মানুষ কাঁচা তেতুলের থেকে পাকা তেতুল খেতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। তবে নিয়ম মেনে পরিমাণ মত খেলে তাতে তেমন কোন অসুবিধা হয় না। তাছাড়া আপনি তেঁতুল কাঁচা খাবেন নাকি পাকা খাবেন সেটি নির্ভর করবে একান্তই আপনার রুচি, শারীরিক অবস্থার ওপর। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

কাঁচা তেঁতুলের  উপকারিতা

কাঁচা তেঁতুল খাওয়ারও বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, যা আমাদের অনেকেরই অজানা। এবারে চলুন কাঁচা তেঁতুল খেলে আপনার কি কি উপকার হতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নিন-
  • কাঁচা তেতুলে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার থাকে যা আপনার পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
  • কাঁচা তেতুলে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকে যা আপনার শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন প্রবাহ জনিত রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
  • কাঁচা তেতুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা আপনার ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • আপনি যদি কাঁচা তেঁতুল খেতে অভ্যস্ত না হন তাহলে আজ থেকেই কাঁচা তেঁতুল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ, কাঁচা তেতুলে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা বিভিন্ন ফ্রি রে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে এবং সেই সাথে ত্বক ও শরীরের অন্যান্য অংশকেও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ।
  • নিয়মিত কাঁচা তেঁতুল খাওয়ার ফলে এর পুষ্টি উপাদান গুলো আপনার মেটাবলিজম বৃদ্ধি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • কাঁচা তেতুলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম।আর এই পটাশিয়াম আপনার শরীরের সোডিয়ামের প্রভাবকে কমিয়ে দিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
  • কাঁচা তেতুলের মধ্যে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান গুলো আপনার শরীরের টক্সিন বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
  • কাঁচা তেতুলের এন্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য যা আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • যারা খাবার খেতে মুখে রুচি পান না,রুচি হীনতায় ভুগতে থাকেন তাদের জন্য এই কাঁচা তেঁতুল বেশ উপকারী। কারণ, কাঁচা তেতুল খাবারের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।
সম্মানিত পাঠক, কাঁচা  তেতুল খাওয়ার সময় আপনার কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, বিশেষ করে আপনার যদি গ্যাস্ট্রিকের মত সমস্যা থেকে থাকে। তবে সঠিক পরিমাণে এবং নিয়মিতভাবে কাচা তেতুল খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে এতটুকু বলতে পারি।

খালি পেটে তেতুল খেলে কি হয়?

তেঁতুল খাওয়ার নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা জানার পর আপনি এবার নিশ্চয়ই খালি পেটে তেঁতুল খেলে কি হয় সে সম্পর্কে জানতে চান?  খালি পেটে তেতুল খাওয়ার ফলে আপনার বিশেষ কিছু শারীরিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে যেগুলি অত্যন্ত সচেতনতার সাথে বিবেচনা করা উচিত। যেমন--
  • অ্যাসিডিক তেতুল খালি পেটে খেলে আপনার গ্যাস্ট্রাইটিসের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
  • খালি পেটে তেতুল খেলে এর অ্যাসিডিক প্রকৃতি আপনার পেটের অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
  • তেতুলে থাকা ফাইবার এবং এসিড উপাদান গুলি খালি পেটে খেলে আপনার পেটে ফোলা ভাব সৃষ্টি হতে পারে।
  • তেতুলে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে পটাশিয়াম যা খালি পেটে খেলে আপনার রক্তচাপের তারতম্য ঘটতে পারে।
  • খালি পেটে তেতুল খেলে আপনার মুখের আবরণ এসিডিক প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিশেষ করে দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • তেতুলের অ্যাসিডিক প্রভাব খালি পেটে আপনার শরীরের পানি শোষণ প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতে পারে, যার ফলে পিপাসা বা মুখের শুষ্কতা অনুভূত হতে পারে।
  • খালি পেটে তেতুল খাওয়ার ফলে আপনার বমির উদ্রেগ হতে পারে।
  • খালি পেটে তেতুল খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু টিপস
  • খালি পেটে তেতুল খাওয়ার সময় আপনি সামান্য পরিমাণে অর্থাৎ ১-২ টুকরো তেতুল খান।
  • আপনি যদি খালি পেটে তেঁতুল খান সেক্ষেত্রে পানি পান করার চেষ্টা করুন, যাতে এসিডিক প্রভাব কিছুটা কম হয়।
  • তেতুল সাধারণত খাবারের সাথে বা খাবারের পরে খেলে শরীরে আসিডিটি কম দেখা দেয়।
  • আপনার অত্যধিক গ্যাস অম্বলের সমস্যা থাকলে তেঁতুল খাওয়া এড়িয়ে চলুন।

তেতুল খেলে কি গ্যাস হয়?

তেঁতুল খেলে কি গ্যাস হয়? তাহলে জেনে রাখুন, তেঁতুল খেলে গ্যাস হয় কিনা এর উত্তর হল হ্যাঁ। তেতুল খেলে আপনার গ্যাস বা এসিডিটি হতে পারে বিশেষ করে আপনি যদি কাঁচা তেতুল অতিরিক্ত পরিমাণে খান। কারণ, তেতুলের মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে টারটারিক এসিড এবং সিট্রিক এসিড। যা পেটে গ্যাস অম্বলের জন্য দায়ী।
 
এই এসিড গুলি আপনার পেটের পিএইচ স্তরকে পরিবর্তিত করে এবং অতিরিক্ত এসিড উৎপন্ন করতে পারে। তাছাড়া তেতুলে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে খাদ্য ফাইবার। যদিও এই ফাইবার হজমের জন্য ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত ফাইবার খেলে এটি আপনার পেটের মাইক্রোফ্লোরা কে প্রভাবিত করে এবং কিছু লোকের ক্ষেত্রে গ্যাস বা অম্বলের মত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় তেঁতুল কি ক্ষতির কারণ?

গর্ভাবস্থায় তেঁতুল কি ক্ষতির কারন? এ প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। তাছাড়া গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে যে কেউ তেতুল কিংবা তেতুলের তৈরি যে কোন খাবার খেতে একটু বেশিই পছন্দ করেন। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত তেঁতুল খেলে আপনার কি ক্ষতি হতে পারে তা জেনে নিন-
  • বর্তমানে সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, তেতুলে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি থাকার কারণে এটি একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে প্রজেস্টেরন হরমোন উৎপাদন ক্ষমতা অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
  • আর এই প্রোজেস্টেরনের উৎপাদন ক্ষমতা কমে গেলে আপনার গর্ভস্থ শিশুর প্রিটার্ম বার্থের আশঙ্কা অনেকটাই বেড়ে যায়।
  • তাছাড়া, উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের কোষ নষ্ট করে দিতে পারে,এমনকি গর্ভপাত হতে পারে।
  • বিশেষজ্ঞদের মতে,গর্ভধারণের পরে অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়া একজন গর্ভবতী মায়ের শরীর এবং তার ভ্রুনের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে, প্রথম ট্রাইমেস্টারে এ অতিরিক্ত পরিমাণে তেঁতুল খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।
গর্ভাবস্থায় তেঁতুল খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সর্তকতাঃ
গর্ভাবস্থায় তেঁতুল খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন-
  • আপনি পরিমিত পরিমাণে নিয়ম মেনে তেতুল খেতে পারেন। কারণ, অত্যাধিক পরিমাণে কোন কিছু খাওয়া এই সময় শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
  • গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন তেতুল না খাওয়াটাই ভালো তবে 10 গ্রামের বেশি খাবেন না।
  • গর্ভকালীন সময়ে আপনি খালি পেটে তেতুল একেবারেই খাবেন না।
  • গর্ভাবস্থায় যদি তেতুল খেতে একান্ত ইচ্ছা করে,সেক্ষেত্রে আপনি খাবার খাওয়ার আধা ঘন্টা পর অল্প পরিমাণে খাবেন।

তেঁতুল খেলে কি সত্যিই রক্ত পানি হয়ে যায়?

প্রচলিত আছে, তেতুল খেলে নাকি রক্ত পানি হয়ে যায়। আপনিও কি এই কথার সাথে একমত পোষণ করছেন? তাহলে জেনে রাখুন, তেঁতুল খেলে রক্ত কখনো পানি হয়ে যায় না। মূলত, তেতুলের এন্টিকোয়াগুলেন্ট এবং এন্টি প্লেটলেট ফাংশন রয়েছে যার ফলে এটি ব্লাড থিনার হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ রক্তের ঘনত্বকে কমিয়ে দিতে পারে।
 
তা বলে রক্তের ঘনত্ব কমিয়ে দেওয়া আর রক্ত পানি করা কিন্তু দুটি এক বিষয় নয়। মনে রাখবেন, রক্তের পিএইচ এর মান কমে যদি পানির পিএইচ এর মানের সমান হয় সেক্ষেত্রে রক্ত পানির মতো হয়ে যেতে পারে। কিন্তু রক্তের পিএইচ সহজে কমে আসার আশঙ্কা একেবারেই কম।কারণ রক্তে রয়েছে বাফার সিস্টেম,যা রক্তের পিএইচ এর মান এর স্বাভাবিক রাখতে প্রতিনিয়ত কাজ করে।
 
আরেকটি কথা,আপনার শরীর মারাত্মকভাবে রোগাক্রান্ত না হলে রক্তের পিএইচ এর মানের তারতম্য ঘটার ঝুঁকি নেই বললেই চলে। আশা করছি আপনি এখন বুঝতে পেরেছেন তেঁতুল খেলে রক্ত কখনো পানি হয় না। এটি একটি পুরনো ধারণা বা বিশ্বাস হতে পারে যার প্রকৃতপক্ষে বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই।

তেতুলের বিচির উপকারিতা

তেতুলের বিচির উপকারিতাও কম নয়। তেতুল এমন একটি ফল যার গাছের পাতা, গাছের ছাল, এমনকি তেতুলের বীজও ফেলনা নয়। যদিও তেতুল বীজ খাওয়ার কথা খুব একটা শোনা যায় না, কিন্তু এই তেতুল বীজেরও বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। যা জানলে আপনি নিজেও অবাক হয়ে যাবেন। তো চলুন এবার তেতুলের বিচির উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন--
  • তেতুল বিজে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে ওমেগা৩ এবং অমেগা৬ ফ্যাটি অ্যাসিড যা আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কে দ্রুত শক্তিশালী করতে পারে।
  • এছাড়াও পাকস্থলী সমস্যা এবং লিভারের সক্ষমতা বাড়াতে তেতুল বীজ বেশ কার্যকরী।
  • আপনার গর্ভকালীন সময়ে বমি বমি ভাব বা মাথা ঘোরার সমস্যা দূর করতে খেতে পারেন তেতুল বীজের শরবত। তেতুল বীজের শরবত এই সময় আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
  • আপনি জানলে আরো অবাক হবেন যে, শুষ্ক চোখের চিকিৎসার জন্য যে ড্রপ তৈরি করা হয় তাতেও রয়েছে তেতুলের বীজ।
  • তাছাড়া চিকিৎসা ক্ষেত্রে হোমিও বা এলোপ্যাথিক বলুন আর ইউনানী বা আয়ুর্বেদিক বলুন সকল ক্ষেত্রেই ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় তেতুলের বীজ। ফলে তেতুল বীজ ঔষধি গুণের জন্য খুবই উপকারী একটি বীজ।
  • আপনি কি জানেন,তেতুল বীজ গরম পানিতে ফুটিয়ে একপ্রকার আঠা তৈরি করা হয় এবং এই আঠা চিত্রকরগন ছবি আঁকার কাজে ব্যবহার করেন।
  • শুধু তাই নয়, মশার কয়েল তৈরির কাজেও কাঁচামাল হিসেবে এই তেতুল বীজ ব্যবহার করা হয়।
  • তাছাড়া, আমাদের দেশে পাটকল এবং কাপড়ের মিলে সুতা রং করার কাজে তেঁতুলের বীজ ব্যবহার হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।

প্রতিদিন কি পরিমান তেঁতুল খাওয়া উচিত

প্রতিদিন কি পরিমাণ তেঁতুল খাওয়া উচিত জানেন কি? টেটূল শুধু খেলেই হবে না বরং নিয়ম করে তেঁতুল খেতে হবে। তবেই এর উপকারিতা সঠিকভাবে পাবেন। তেতুল একটি পুষ্টিকর ফল হলেও এটি কিছুটা অম্ল এবং তেতো স্বাদ যুক্ত হওয়ার কারণে অতিরিক্ত খেলে কিছু সমস্যাও দেখা দিতে পারে। সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পক্ষে
 
দিনে ২-৩ টুকরো বা ১-২ টেবিল চামচ তেতুলের পেস্ট খাওয়া নিরাপদ এবং উপকারী হতে পারে। সে হিসেবে আপনি প্রতিদিন ২-৩ টুকরো তেতুল নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। এটি একদিকে যেমন আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করবে, তেমনি অন্যদিকে অতিরিক্ত এসিডিকতা থেকেও আপনাকে রক্ষা করবে।
 
তাছাড়া, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কি পরিমান তেতুল খাওয়া উচিত তা মূলত নির্ভর করবে তার স্বাস্থ্যগত অবস্থা হজম ক্ষমতা এবং পুষ্টির প্রয়োজনীয়তার উপরে। আর আপনার যদি গ্যাস্ট্রাইটিস, আলসার বা অন্য কোন সমস্যা থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে তেঁতুল খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া উচিত বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তেঁতুল খাওয়া উচিত।

তেতুলের আচার রেসিপি

 তেঁতুলের আচার রেসিপি, তেতুল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আচার বানানো যায়, যা আপনার খাদ্য তালিকার স্বাদে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। এবার চলুন তেতুলের কয়েকটি আচার রেসিপি সম্পর্কে জেনে নিন--
 
তেঁতুল-খাওয়ার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-জানতে-বিস্তারিত-পড়ুন
তেতুলের মিষ্টি আচার রেসিপি
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • পাকা তেতুল-২৫০ গ্রাম
  • চিনি - ১৫০ গ্রাম(সাদ অনুযায়ী বাড়াতে বা কমাতে পারেন)
  • লবণ- ১ চা চামচ
  • কাঁচা লঙ্কা- ৩-৪টি (স্লাইস করে কাটা)
  • তেল- ১ টেবিল চামচ
  • রসুন- ১ টি
  • আদা কুচি- ১/২ চা চামচ
প্রস্তুত প্রণালী
  • তেতুলের আচার তৈরির শুরুতেই,আপনি তেতুলের খোসা ছাড়িয়ে এর ভেতরের গাড়ো অংশটি পরিষ্কার করে নিন এবং বীজগুলো আলাদা করে ফেলুন।
  • এবার একটি প্যানে তেল গরম করুন এবং তাতে এক এক করে, কাঁচা লঙ্কা, রসুন কুচি আদা কুচি এবং লবণ দিয়ে দিয়ে ভালো করে কসিয়ে নিন।
  • কখনো শেষে এতে এবার তেতুলের মাংসের অংশ গুলো যোগ করুন। কিছুক্ষণ জাল করার পর তেতুলের ঘনত্ব গাঢ় হয়ে আসলে এতে চিনির সিরকা দিয়ে দিন।
  • সবশেষে তেতুলের আচার চুলা থেকে নামানোর আগ মুহূর্তে আপনি ধনিয়া গুড়া জিরা গুড়া হালকা পরিমাণে দিয়ে নামিয়ে ফেলুন এবং ঠান্ডা হতে রেখে দিন।
  • ব্যাস, আপনার তেতুলের আচার একদম তৈরি। এবার আচার ঠান্ডা হলে একটি কাচের বয়ামে ভোরের সংরক্ষণ করুন। আপনি বছরজুড়ে এই তেঁতুল আচার খেতে পারবেন।
এই তেঁতুল আচার এতটাই লোভনীয় এবং মজাদার হয় যে, আপনি যদি একবার খান তাহলে বারবার খেতে চাইবেন।

তেতুলের অন্যান্য ব্যবহার

তেতুলের আরো এমন কিছু ব্যবহার রয়েছে যেগুলো আপনার দৈনন্দিন জীবনের কাজকে আরো সহজতর করে তুলবে। যেমন--
  • আপনি বিভিন্ন ঝাল রেসিপিতে বিশেষত বিভিন্ন  কারিতে এই তেঁতুল ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার রান্নার স্বাদ আরো দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।
  • কেক তৈরি করার সময় আপনি তেতুল দানা ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, তেঁতুলের দানা কেকের বিভিন্ন অংশে ব্যবহার করলে খুব সহজেই কেকের সুন্দর একটি ডিজাইন তৈরি করতে পারবেন।
  • অনেক সময় মাছ ভাজার ক্ষেত্রে মাছ ভেঙ্গে যায়। এর জন্য মাছ ভাজার পূর্বে আপনি ৩০ মিনিটের মত তেতুল পানিতে মাছ ভিজিয়ে রাখুন। দেখবেন তাতে ভাজার সময় মাছ আর ভাঙবে না।
  • আপনারা যারা বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের সস তৈরি করে থাকেন তারা এই সস তৈরিতে তেতুলের রস ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, সস তৈরিতে টক জাতীয় উপাদান ব্যবহার করলে সসের স্বাদ আরো দ্বিগুণ পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।
আশা করছি, তেতুলের এই ব্যবহারগুলো আপনার দৈনন্দিন জীবনে উপকারে আসবে।

তেতুলের পুষ্টিগুণ

 তেতেউলের পুষ্টিগুণ, টক মিষ্টি  স্বাদযুক্ত এই তেতুলে রয়েছে নানান ধরনের পুষ্টিগুণ উপাদান। প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ তেতুলে কি কি পুষ্টিগুণ থাকতে পারে চলুন এক নজরে তা দেখে নিন--
পুস্টি উপাদান পরিমাণ
প্রোটিন ২.৩ গ্রাম
শর্করা ৬২.৩ গ্রাম
ফাইবার ৫.১ গ্রাম
ফ্যাট ০.৬ গ্রাম
নিয়াসিন ১.৯ মিলিগ্রাম
ফোলেট ১৪ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন সি ৩.৫ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম ৬২৭ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ৭৪ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ৯২ মিলিগ্রাম
আয়রন ২.৮ মিলিগ্রাম

তেতুল পরিচিতি

যেকোনো খাদ্য উপাদান খাওয়ার বা ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্তত এর সঠিক পরিচিতিটুকু সকলেরই জেনে রাখা উচিত। তেঁতুল গাছ প্রচুর শাখা প্রশাখা যুক্ত এবং এর যৌগিক ছোট ছোট পাতা চিরনির মতো সজ্জিত থাকে। এই গাছ গড়ে প্রায় ২০-২৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে এবং গাছের কান্ডের বের ৭-৮ মিটার পর্যন্ত হয়। তেঁতুল গাছে সাধারণত হঠাৎ আসে জ্যৈষ্ঠ আষাঢ় মাসে। এক ফুলের রং হালকা বাদামি। তেতুল ফল লম্বায় ১৫ ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়।
 
এই ফল সোজা এবং বাঁকানো উভয় প্রকৃতির হয় এবং গাছে থোকায় থোকায় ধরে থাকে। ফাল্গুন চৈত্র মাসে তেতুল ফল পাকতে শুরু করে। পাকা তেতুল অম্ল মিষ্টি স্বাদযুক্ত। কাঁচা অবস্থায় তেতুলের রং সবুজাভ এবং পাকলে সেটি বাদামী রঙের হয়। প্রতিটি তেতুল ফলে ৫-১২টি বীজ থাকে এবং এর বীজের রং খয়রি। তেতুলের ইংরেজি নাম Melanesian papeda এবং বৈজ্ঞানিক নাম Tamarindus indica.

কোন দেশগুলোতে তেতুলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি

কোন দেশগুলোতে তেতুলের চাহিদা সবথেকে বেশি? তেতুল শুধু বাংলাদেশী নয় বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া কিছু কিছু দেশে বাণিজ্যিকভাবে তেতুল চাষও করা হয়। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন কোন দেশগুলোতে তেতুলের চাহিদা সবথেকে বেশি সে বিষয়ে আপনাকে কিছুটা ধারণা দিই -
  • বাংলাদেশঃ প্রথমেই বলি বাংলাদেশে তেতুল ফলের চাহিদা ব্যাপক। তেতুল ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ গোটা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
  • পাকিস্তানঃ পাকিস্তানি তেতুলকে অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল হিসেবে গণ্য করা হয়। তেতুল উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে পাকিস্তান একটি।
  • ভারতঃ আমাদের পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশ ভারত ও তেতুল উৎপাদনে বিশ্বে বিশেষ একটি স্থান দখল করে রয়েছে। গোটা ভারতবর্ষে তেতুল ফল বেশ জনপ্রিয় এবং এর বাজার চাহিদা অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, বিশ্বের সর্বাধিক তেতুল ফল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত ভারত।
  • থাইল্যান্ডঃ তেতুল ফল থাইল্যান্ডের স্থানীয় ফল এবং মিষ্টির সাথে একটি পুষ্টিকর উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সে হিসেবে থাইল্যান্ডে তেতুলের চাহিদা আরো বেশি।
এই দেশগুলি ছাড়াও শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া এবং মালদ্বীপ সহ আরো অন্যান্য দেশে তেতুল ফলের চাহিদা থাকতে পারে। তেতুলের এই চাহিদা এবং বাণিজ্যিক চাষাবাদ একটি দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে।

তেতুলের দাম কত ২০২৫

তেতুলের দাম কত তা অনেকেই জানতে চান। এক্ষেত্রে একটি কথা,অন্যান্য ফলের তুলনায় তেতুল ফল কিন্তু বাজারে বেশ সুলভ মূল্যে বিক্রি করা হয়। বর্তমান বাজারে আপনি প্রতি কেজি তেতুল ১০০ ২০০ টাকা কেজি দরে পেয়ে যাবেন। মৌসুমে তেতুলের সরবরাহ বেশি হলে দাম কিছুটা কম হতে পারে।আবার মৌসুম শেষে বা কম সরবরাহের কারণে এর দাম কিছুটা বাড়তেও পারে। অর্থাৎ স্থানীয় বাজার এবং মৌসুমির উপর ভিত্তি করে তেতুলের পরিবর্তিত হতে পারে।

তেতুল সংরক্ষণের পদ্ধতি

তেতুল সংরক্ষণের পদ্ধতি কি কি জানতে চান? তেতুল একটি মৌসুমী ফল বিধায় আপনি মৌসুমের বাইরে এই ফল নাও পেতে পারেন। আর তাই বছরজুড়ে তেঁতুল খাওয়ার জন্য আপনি তেতুল সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। এবার চলুন আপনি তেতুল কিভাবে সংরক্ষণ করবেন সেই উপায় সম্পর্কে জেনে নিন--
ফ্রিজিং পদ্ধতি
  • ফ্রিজিং পদ্ধতিতে তেতুল সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রথমেই তেতুলের খোসা ছাড়িয়ে এর মাংসের অংশটুকু বের করে ফেলুন এবং প্রয়োজনের টুকরো টুকরো করে কেটে নিন।
  • এবার তেতুলের টুকরো গুলো একটি ফ্রিজার ব্যাগ বা কন্টেইনারে ভরে ফ্রিজে রাখুন। এই পদ্ধতিতে বেশ কয়েক মাস পর্যন্ত আপনি তেঁতুল সংরক্ষণ করতে পারবেন।
ড্রাইং পদ্ধতি
  • এই পদ্ধতিতে তেতুল সংরক্ষণের জন্য প্রথমেই তেতুলের খোসা ছাড়িয়ে এর মাংসল অংশ বের করে নিন।
  • এবার তেতুলের মাংসের অংশগুলো একটি পরিষ্কার পাত্রে বা পাতলা কাপড়ে রেখে রোদে শুকাতে দিন। এক্ষেত্রে আপনি তেতুল শুকানোর জন্য ডিহাইড্রেটেরও ব্যবহার করতে পারেন।
  • এবার শুকনো তেতুল একটি এয়ারটাইট কন্টেইনারে ভরে ঠান্ডা শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করুন।
উপরিউক্ত পদ্ধতি ছাড়াও তেতুলের আচার বানিয়েও আপনি সারা বছরের জন্য সংরক্ষণ করতে পারেন।

তেঁতুল খাওয়ার  উপকারিতা সম্পর্কে লেখকের প্রতিক্রিয়া

তেঁতুল খাওয়ার  উপকারিতা এবং এর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বিস্তারিত ভাবে আজকে আমাদের এই আর্টিকেল পড়ে জানতে পেরেছেন। তেতুল একটি পুষ্টিকর এবং মুখরোচক ফল। আপনি যদি সঠিক পরিমাণে পরিমাণে এবং নিয়ম মেনে তেতুল খান তাহলে এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারিতায় বয়ে নিয়ে আসবে। 
 
কারণ, স্বাভাবিক পরিমাণে তেঁতুল খাওয়া সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর। আর তাই আজ থেকে আপনি আপনার খাদ্য তালিকাযর ডায়েটে তেতুল অথবা তেতুলের আচার সংযোজন করে নিতে পারেন। আশা করছি, আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের বোধগম্য হয়েছে। ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url