পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা এড়াতে যেভাবে খাবেন বেল

পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। আবার খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা কি কি  জানেন! হয়তো জানেন না। যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি ঠিক আপনার জন্যই। 
পাকা-বেল-খাওয়ার-অপকারিতা-এড়াতে-যেভাবে-খাবেন-বেল
কারন, আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করতে চলেছি পাকা বেল অতিরিক্ত খাওয়ার বেশ কিছু সাস্থ অপকারিতা এবং সকালে খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারী দিক সম্পর্কে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আজকের মত আলোচনা শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা

বেলের উপকারিতা

বেলের উপকারিতা অনেক। বিশেষ করে  খালি পেটে বেল খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে যা আমাদের প্রায় কমবেশি সকলেরই জানা। বেল শুধু সুস্বাদুই নয়, এর মধ্যে রয়েছে অনেক রকম পুষ্টিগুণ। আজকে আলোচনার শুরুতে আপনাকে জানিয়ে দিব বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-
  • পাচন তন্ত্রের সহায়ক হিসেবেঃ বেল বেলে রয়েছে ফাইবার ও ট্যানিন উপাদান যা আপনার হজম ক্রিয়া সহজ করে। এতে করে আপনার পাকস্থলীর গ্যাস এসিডিটি এবং হজম সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যা খুব সহজেই দূর হয়।
  • বেল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ বেল খাওয়ার ফলে এর ভিটামিন সি আপনার ইমিউন সিস্টেম কে শক্তিশালী করে তোলে এবং শরীরকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
  • শরীরের তাপমাত্রা কমাতে বেলঃ প্রচন্ড গরমে শরীরে প্রশান্তি আনতে আপনি খেতে পারেন বেলের শরবত। বেলের এই শরবত আপনার শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করবে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে বেলঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী।কারণ, বেলে লাইসেন্স ইনডেক্স কম থাকার কারণে এটি আপনার শরীরের রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • শরীরকে ফ্রি রেডিকেল মুক্ত রাখেঃ বেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আপনার শরীরের ফ্রি রেডিক্যালস গুলো ধ্বংস করে। যা কোষের ক্ষতি কমায় এবং শরীরে ক্ষতিকর কোষ বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে বেলঃ নিয়মিত বেল খাওয়ার ফলে এটি আপনার হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতেও কাজ করে। কারণ, বেল আপনার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেলঃ বেল ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা খেলে আপনার পেটের হজমের সমস্যা দূর হবে এবং সেই সাথে দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্যও খুব সহজেই দূর হবে।
  • ত্বকের শুষ্কতা কমায়ঃ বেল খাওয়া আপনার ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। কারণ, নিয়মিত বেল খেলে এটি আপনার ত্বকের জ্বালা, ত্বকের শুষ্কতা এবং একজিমা কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া বেল ফলের ভিটামিন সি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও কাজ করে।
  • মৃগী রোগের সহায়ক হিসেবে বেলঃ মৃগী রোগের উপশমে বেলের বহুল ব্যবহার রয়েছে। বিশেষ করে বেলের রস মৃগী রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সুতরাং মৃগী রোগের সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয় বেল ফল।
  • শরীরের ইনফেকশন প্রতিরোধেঃ বেল ফলের অ্যান্টিসেপটিক গুন ব্যাকটেরিয়া এবং ফাংগাল আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন প্রতিরোধেও বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ করে বেলঃ নিয়মিত বেল খাওয়া এটি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে ও সহায়ক হতে পারে। কারণ, বেলে রয়েছে কম ক্যালরি এবং উচ্চফাইবার যা কিনা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা রাখে। সুতরাং ওজন কমানোর হাতিয়ার হিসেবে আপনি আজ থেকেই বেল খাওয়া শুরু করুন।
  • কিডনির সুরক্ষায় বেলঃ আপনার কিডনি জনিত কোন সমস্যা থেকে থাকলে বেল খেতে পারেন। কারণ, বেলের মধ্যে থাকা পটাশিয়াম আপনার কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে এবং কিডনি স্ফীতি ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • মৌলিক পুষ্টি উপাদানের উৎস হিসেবেঃ বেল ফল ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, ফাইবার এবং আইরন সমৃদ্ধ যা আপনার শরীরের মৌলিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে।
  • আলসার ও ডায়রিয়া সারাতেঃ কাঁচা বেল যেমন আপনার হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে তেমনি অপরদিকে পাকা বেল আপনার ডাইরিয়া প্রতিরোধেও কাজ করে। আবার পাকা বেলের শাসে যে ফাইবার থাকে তা আপনার আলসার রোধে বিশেষভাবে কার্যকরী।
  • আর্থাইটিস রোগ দূর করেঃ আপনারা যারা আর্থাইটিস রোগে ভুগছেন তারা নিয়মিত বেল খেতে পারেন। কারণ, বিশেষজ্ঞদের মতে বেলে এমন সব পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আর্থাইটিস সমস্যায় উপকারী।
  • শরীরের এনার্জি বাড়াতেঃ আপনি কি শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন? তাহলে শরীরের এনার্জি বাড়াতে আপনি বেলকে সঙ্গী করে নিতে পারেন। কারণ, আপনি ১০০ গ্রাম বেল খেলে এটি আপনাকে ১৪০ ক্যালোরি এনার্জি দেবে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন বেল আপনার শরীরে অতিরিক্ত এনার্জির যোগান দেবে।
পাকা-বেল-খাওয়ার-অপকারিতা-এড়াতে-যেভাবে-খাবেন-বেল
  • ক্যান্সার রোধে বেলঃ ফলে রয়েছে এন্টি প্রোলিফিরেটিভ ও আন্টি মুটাজেন উপাদান। যা নিয়মিত খেলে আপনার শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধী শক্তি অনেকটাই বেড়ে যাবে।
  • বেলের ঔষধি গুনঃ আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, বেল বমি, রক্তক্ষরণ, রক্তবমি, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, পানিবসন্ত এবং মাড়ি প্রদাহের ওষুধ তৈরিতে বহুল ব্যবহৃত হয়।
  • ইনফার্টিলিটির ঝুঁকি কমাতেঃ বেল খেলে এটি মহিলাদের প্রজেস্টেরন হরমোন লেভেল বাড়িয়ে ইনফার্টিলিটি ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, প্রসব পরবর্তী ডিপ্রেশন কমাতেও বেল ভীষণ উপকারী।
  • যক্ষার প্রতিষেধক হিসেবেঃ পাকা বেলে রয়েছে এন্টি মাইক্রোবায়াল উপাদান। যা যক্ষ্মা কমাতে বেশ কার্যকরী।
সম্মানিত পাঠক, বেলের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো এটি আপনার শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরকে শীতল রাখে। তাই গরমের এই সময় আপনি নিয়মিত প্রতিদিন সকালে খেতে পারেন বেল বা বেলের শরবত।

অতিরিক্ত বেল খাওয়ার অপকারিতা

অতিরিক্ত বেল খাওয়ার অপকারিতাও রয়েছে। বেল যদিও পুষ্টিকর একটি ফল। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে আপনার বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন ধরুন-
  • অতিরিক্ত পরিমাণে বেল খেলে আপনার পেট ফেটে যাওয়া গ্যাস বা ডায়রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।কারণ বেলে তন্তু বা ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে এটি আপনার পেটের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য বেল খুব একটা উপকারী নাও হতে পারে। কেননা বেলে শর্করা এবং কার্বোহাইড্রেট অতিরিক্ত পরিমাণে থাকে।ফলে অতিরিক্ত পরিমাণে বেল খেলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। পরিমিত পরিমাণে বেল খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
  • অধিক পরিমাণে পাকা বেল খেলে এটি আপনার পেটের দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে।
  • বেলে কিছু পরিমাণ শর্করা থাকে।আর অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ করলে এটি ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিন প্রতিরোধের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে পাকা বেল খাওয়ার ফলে অনেক সময় আপনার অন্ত্রের ছিদ্র হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
বেলের উপকারিতা থেকে এই অপকারিতা গুলো একেবারেই নগণ। বিশেষ করে খালি পেটে বেল খেলে এই অপকারিতা গুলো বেশি দেখা দেয়। তাছাড়া বেল ফলের তেমন কোন অপকারিতা নেই বললেই চলে। তবে খাদ্য উপাদান হিসেবে প্রতিটি খাদ্যই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। সে হিসেবে আপনি বেলও পরিমিত মাত্রায় খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা 

পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতাও রয়েছে। তবে সঠিক পরিমাণে খেলে আপনি এর উপকারিতাই বেশি পাবেন। যদিও পাকা বেল একটি পুষ্টিকর ঔষধি গুন সম্পূর্ণ ফল তা সত্ত্বেও অতিরিক্ত খাওয়া কখনোই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অতিরিক্ত পরিমাণে পাকা বেল খেলে আপনার শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। কি কি সমস্যা হতে পারে চলুন জেনে নিই-
  • কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারেঃ পাকা বিলে ফাইবার এবং ট্যানিন বেশি পরিমাণে থাকে। ফলে পরিমিত পরিমাণে খেলে এটি যেমন হজমের সহায়ক তেমনি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে আপনার হজম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় এবং মল কঠিন হয়ে যায়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। 
  • গ্যাস্ট্রিক ও এসিডিটির সমস্যাঃ পাকা বেলে থাকা ট্যানিন ও অন্যান্য অম্লীয় উপাদান অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে আপনার পেটে জ্বালাপোড়া গ্যাস অম্বল হতে পারে।
  • পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনঃ পাকা বেল খেলে এটি মল পাতলা করে অর্থাৎ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এটি অতিরিক্ত বা পাতলা পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়। এতে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। 
  • শরীরে ঝিমুনি ভাবঃ পাকা বেল খেলে হজম প্রক্রিয়া অনেকটা ধীর গতি সম্পন্ন হয়। ফলে শরীরে একটা ক্লান্তি ভাব বা ঘুমঘুম ভাব চলে আসে। আর অতিরিক্ত খেলে শরীর এক ধরনের অলসতা কাজ করে। 
  • শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়ঃ পাকা বেলে প্রাকৃতিক সুগার থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ফলে অতিরিক্ত খেলে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে যা ঝুঁকিপূর্ণ। 
  • লিভারের ওপর চাপ পড়েঃ বেলের মধ্যে কিছু বায়ো একটিভ উপাদান রয়েছে যা অতিরিক্ত খেলে লিভারে টক্সিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ফলে যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে তারা সীমিত পরিমাণে পাকা বেল খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • এলার্জিক প্রতিক্রিয়াঃ অনেকেই পাকা বিল সহ্য করতে পারেনা। কারো কারো আবার পাকা বেলের প্রতি এলার্জি কাজ করে। এতে করে চুলকানি, চোখে পানি এমনকি শ্বাসকষ্টও হতে পারে।
  • ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়াঃ বেলে থাকা কিছু উপাদান আপনার ঔষধ শোষণের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস এবং ব্লাড প্রেসারের ঔষধ যদি আপনি আগে থেকেই সেবন করে থাকেন, সেক্ষেত্রে পাকা বেল খুব বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো।
  • গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণঃ গর্ভাবস্থায় বেল খাওয়া ভালো তবে সীমিত পরিমাণে। কারণ, এই সময় অতিরিক্ত বেল খেলে আপনার জরায়ু সংকোচন হতে পারে বা হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে। 
  • রক্তচাপ কমায়ঃ বেল খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিকের থেকে কিছুটা কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই যারা লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপের রোগী তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বেল খাওয়া মোটেও উচিত নয়। অতিরিক্ত খেলে আপনার মাথা ঘোরা, শারীরিক দুর্বলতা এমনকি জ্ঞান হারানো পর্যন্ত হতে পারে।
  • পেট ব্যথাঃ নিয়ম না মেনে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে পাকা বেল খেলে স্বাভাবিকভাবে আপনার হজমের ভারসাম্য নষ্ট হবে। ফলে পেটে গ্যাস জমে পেট ব্যথা হতে পারে এবং হালকা বমি বমি ভাবও হতে পারে।
সম্মানিত পাঠক, সুতরাং বুঝতেই পারছেন পাকা বেল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত খাওয়া বিপদজনক হতে পারে। তবে গরমের দিনে প্রতিদিন একটি মাঝারি সাইজের পাকা বেল খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত।

খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা অনেক। পাকা বেল খেয়ে এর অপকারিতা এড়াতে আপনি খালি পেটেও বেল খেতে পারেন। কারণ, খালি পেটে বেল খাওয়ার অনেকগুলো স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এবার চলুন,খালি পেটে বেল খেলে আপনি কি কি উপকার পেতে পারেন সে সম্পর্কে জেনে নিন--
  • বেল উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় সকালে খালি পেটে খেলে এটি আপনার হজমতন্ত্রকে সহজ করে এবং পেটের সকল সমস্যার দূর করে।
  • নিয়মিত খালি পেটে বেল খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরে প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। এতে করে আপনার শরীর ভেতর থেকে পরিষ্কার হয় এবং এটি শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া বাড়ায়।
  • সকালে খালি পেটে বেল খেলে বেলের ফাইবার দীর্ঘক্ষণ আপনার পেটকে ভর্তি রাখে। ফলে অন্যান্য খাবারের প্রতি আপনার আগ্রহ কমে। এতে করে আপনার ওজনও দিন দিন কমতে থাকে।
  • প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে খালি পেটে বেল খেলে এটি সারা দিনের জন্য আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং শক্তি সরবরাহ করতে থাকে।
  • খালি পেটে বেল খাওয়া আপনার ত্বকের জন্যও উপকারী। কারণ, বেলের ভিটামিন সি আপনার ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন করতে পারে। ফলে আপনার ত্বক আরো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
  • সকাল বেলা খালি পেটে বেল খেলে এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।শুধু তাই নয়, বেল ভিটামিন সি এর দুর্দান্ত উৎস। সে হিসেবে এটি আপনার ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে তোলে।
  • বেলের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স কম যা আপনার শরীরে ধীরে ধীরে শর্করা কমাতে থাকে। ফলে সকালে খালি পেটে বেল খেলে আপনার শরীরের রক্তে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ভীষণই উপকারী।

খালি পেটে বেল খাওয়ার অপকারিতা

খালি পেটে বেল খাওয়ার অপকারিতাও নেহায়েত কম নয়। খালি পেটে বেল খাওয়ার ফলে এর উপকারিতার পাশাপাশি  আপনার কিছু শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। যেমন ধরুন-
  • বেলে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার এবং পলিফেনল থাকে। ফলে খালি পেটে বেল খেলে আপনার পেট ফাঁপা বা অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • খালি পেটে বেল ফেলে এটি আপনার পেটে অতিরিক্ত গ্যাস এবং পেটের অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
  • বেলে উচ্চ মাত্রার ফাইবার রয়েছে। আর অতিরিক্ত ফাইবার গ্রহণ অনেক সময় আপনার কষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে খালি পেটে বেল খান সেক্ষেত্রে এটি হতে পারে।
  • খালি পেটে বেল খাওয়ার ফলে অনেকের আবার শরীরে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে।
  • রোজ সকালে খালি পেটে বেল খেলে আপনার রক্তচাপের সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে যাদের রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। কারণ, বেলের মধ্যে কিছু পরিমাণ সোডিয়াম থাকে। আর এই সোডিয়াম অতিরিক্ত গ্রহণ করলে সেটি উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
খালি পেটে বেল খাওয়ার এই  অপকারিতা গুলো আপনি তখনই পাবেন যখন অতিরিক্ত পরিমানে খাবেন। ঠিক সে কারনেই আপনাকে নিয়ম মেনে পর্যাপ্ত পরিমানে সঠিক সময়ে বেল খেতে হবে। তবেই এর উপকারিতা বেশি পাবেন। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

পাকা বেল খাওয়ার নিয়ম

পাকা বেল খাওয়ার নিয়ম কি? পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আমরা আপনাকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি। পাকা বেল খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। পাকা বেল খাওয়ার সময় কিছু নিয়ম মেনে চললে এর থেকে আপনি স্বাস্থ্য উপকারিতাও বেশি পাবেন। এবার চলুন পাকা বেল খাবার নিয়ম সম্পর্কে আপনি জেনে নিন-
  • পাকা বেল সংগ্রহ করুনঃ প্রথমেই বলি, বেল খাওয়ার পূর্বে আপনি একটি সম্পূর্ণ পাকা বেল সংগ্রহ করবেন। পাকা বেল সাধারণত হালকা হলুদাভ বা কমলা বর্ণের হয়ে থাকে।
  • বেল ধুয়ে নিনঃ এবার বেলটিকে খাওয়ার আগে পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিন। যাতে করে এতে মাটির কনা সহ অন্যান্য জীবাণু না থাকে। প্রয়োজনে বেল পরিষ্কার করতে আপনি একটি ব্রাশও ব্যবহার করতে পারেন।
  • বেল কাটার সময় সতর্কতাঃ বেলের বাইরের অংশ বেশ শক্ত তাই কাটার সময় আপনি কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং একটি ধারালো ছুরি ব্যবহার করুন। ছুরি দিয়ে আস্তে আস্তে বেলটিকে কেটে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলুন। আপনি চাইলে বেল না কেটে সরাসরি ফাটিয়েও নিতে পারেন।
  • বীজ অপসারণ করুনঃ বেলের ভেতরে ছোট ছোট সাদা বা বাদামি রঙের বীজ থাকে যা খাওয়ার জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়। বেলের স্লাইস গুলো থেকে বীজগুলোকে অপসারণ করে ফেলুন।
  • সরাসরি বেল খাওয়াঃ এবার বিলটিকে আপনি টুকরো টুকরো করে কেটে নিন। পাকা বেল আপনি সরাসরি খেতে পারেন। কারণ, পাকা বেল খেতে অনেক সুস্বাদু আর মিষ্টি হয়।
  • বেল শরবত হিসেবেঃ আপনি চাইলে বেলের শরবত বা জুস করেও খেতে পারেন। এর জন্য আপনি ব্লেন্ডারে বেলের মাংসল অংশটুকু নিয়ে তার সাথে পানি এবং স্বাদমতো চিনি মিশিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন বেলের শরবত। বেলের এই শরবত আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
  • বেলের স্মুদিঃ বেলের স্মুদি তৈরির জন্য আপনি বেলের পিউরি ব্লেন্ডারে নিয়ে তাতে দুধ, মধু এবং কয়েক টুকরো বরফ যোগ করুন। এবার এটি ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন এবং ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।
  • বেলেট মোরব্বাঃ আপনি চাইলে বিল দিয়ে মোরব্বা তৈরি করেও খেতে পারেন। বেলের এই মোরব্বা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং মজাদার হয়। তবে এর জন্য কাঁচা বেল প্রয়োজন।
  • বেল দিয়ে কেক তৈরিঃ আপনি চাইলে পাকা বেল্টে কেক তৈরি করেও খেতে পারেন। এর জন্য বেলকুচি তার সাথে চিনি এবং অন্যান্য উপকরণ যেমন- কনডেন্স মিল্ক, ময়দা ইত্যাদি মিশিয়ে প্রথমে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন এবং মিশ্রণটি বেকিং পাত্রে ঢেলে ওভেনে বেক করুন। এভাবে পাকা বেল দিয়ে আপনি কেক তৈরি করে খেতে পারেন।
  • আইসক্রিম হিসেবেঃ পাকা বেল দিয়ে আপনি আইসক্রিম তৈরি করেও খেতে পারেন। এর জন্য আপনি বেলের পিউরি, ক্রিম, চিনি এবং কিছু ভ্যানিলা একসাথে মিশিয়ে আইসক্রিম তৈরি করে ফেলুন।
  • বেলের কাস্টার্ডঃ পাকা বেল কাস্টার্ড তৈরি করেও খাওয়া যায়। এর জন্য আপনি কাস্টার্ড পাউডার দুধে মিশিয়ে ঘন হওয়া পর্যন্ত জ্বাল করতে থাকুন তারপর এর সাথে বেলের টুকরো গুলো মিশিয়ে ঠান্ডা হতে রেখে দিন। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল বেলের কাস্টার্ড।
পাকা বেল আপনি কিভাবে কোন নিয়মে খাবেন তার বেশ কিছু উপায় জানিয়ে দিলাম। এগুলোর মধ্যে আপনি আপনার সুবিধা মত যে কোন একটি তৈরি করে খেয়ে দেখতে পারেন। আশা করছি ভালো লাগবে।

কাঁচা বেল খাওয়ার নিয়ম

কাঁচা বেল খাওয়ার নিয়ম কি তা আমরা অনেকেই জানিনা।  আপনি চাইলে বেল কাঁচা এবং পাকা উভয় অবস্থাতেই খেতে পারেন। অনেকে পাকা বেল খেতে পছন্দ করে না, তারা চাইলে কাঁচা বেল খেতে পারেন। কাঁচা বেলেও রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ । তবে বেলের এসব উপকারিতা পাওয়া সম্ভব যদি আপনি নিয়ম মেনে বেল খান। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন আপনি কাঁচা বেল কিভাবে খাবেন সেই নিয়ম সম্পর্কে জেনে রাখুন--
  • আপনি পাকা বেলের মত ঠিক কাঁচা বেল দিয়েও শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। এর জন্য কাঁচা বেল সিদ্ধ করে তার মধ্যে গরম পানি স্বাদমতো চিনি ও লবণ মিশিয়ে একটি শরবত বানিয়ে ফেলুন।
  • কাঁচা বেল খাওয়ার আরেকটি অন্যতম উপায় হলো চাটনি বানিয়ে খাওয়া। কাঁচা বেলের চাটনি তৈরি করতে আপনি বেলটিকে প্রথমে ভালোভাবে সিদ্ধ করে এর আশ গুলো বের করে নেবেন এবং এর মধ্যে পেঁয়াজ কুচি, মরিচ কুচি, লবণ দিয়ে মাখিয়ে তৈরি করে ফেলুন কাঁচা বেলের চাটনি।
আশা করছি কাঁচা বেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনি বুঝতে পেরেছেন। বাজারে বেল সারা বছর পাওয়া যায় না। আর তাই সারা বছর বেল খেতে চাইলে আপনি কাঁচা বেল এভাবে প্রসেসিং করে সংরক্ষণ করে সারা বছর ধরে খেতে পারেন।

বেল স্যুট খাওয়ার নিয়ম

বেল স্যুট খাওয়ার নিয়ম কি? পাকা  বেল খাওয়ার নানাবিধ অপকারিতা জানার পর আপনি এবার নিশ্চয়ই বেল স্যুট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান? বেল স্যুট নামটির সাথে আপনারা হয়তো অনেকেই পরিচিত নন। কিন্তু এই বেল স্যুট আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এবার চলুন আপনি বেল স্যুট কিভাবে খাবেন এবং তৈরি করবেন সে সম্পর্কে জানুন-
  • প্রথমেই বলি, বেল স্যুট তৈরির জন্য আপনি একটি কচি বেল টুকরো টুকরো করে কেটে রোদে ভালো করে শুকিয়ে নিবেন। রোদে শুকানো হলে বেল সুটগুলো একটি বায়ু নিরোধক বয়ামে ভালো করে সংরক্ষণ করে রাখুন। আপনি চাইলে এটি বুড়ো করেও সংরক্ষণ করতে পারেন।
  • আপনাদের যাদের আলসার এর সমস্যা রয়েছে তারা বেল স্যুটের সাথে পরিমাণ মতো বার্লি মিশিয়ে রান্না করে নিয়মিত খান।এতে করে খুব দ্রুত আপনার আলসার সেরে যাবে।
  • যারা বেল সুটের গুড়ো খেতে পছন্দ করেন তারা হালকা কুসুম গরম পানিতে ৩-৪ চা চামচ বেল সুটের গুঁড়ো মিশিয়ে শরবত করে খেতে পারেন। আপনি চাইলে এতে স্বাদমতো চিনি বা মধু মিশিয়েও খেতে পারেন।
  • বেলে যেমন নানান ধরনের উপকার রয়েছে তেমনি বেল স্যুটেও অনেক ভিটামিন রয়েছে। বেলকুট খেলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য ক্রিমই জন্ডিস সর্দি পাইলস ইত্যাদি দূর হবে।
  • এই বেল স্যুটে রয়েছে বেটাক্যারোটিন নামক রঞ্জক পদার্থ যা মানব দেহে টিউমার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে।
  • বিশেষ করে মহিলাদের জন্য বেল সুট অত্যন্ত উপকারী। কেননা বেস্ট ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

বেল খাওয়ার সঠিক সময়

বেল খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি জানেন! বেলের উপকারিতা অনেক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু বেলের এই উপকারিতা পেতে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে খেতে হবে। কারণ, সময় না মেনে বেল খেলে এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নাও হতে পারে। এবার চলুন জেনে বেল খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে--
  • সকালে খালি পেটেঃ বেল খাওয়ার সবথেকে উপযুক্ত সময় হলো সকালে খালি পেটে যদি আপনি খেতে পারেন। কারণ, সকালে খালি পেটে বেল খেলে এটি সারাদিনের জন্য আপনার শরীরে পুষ্টি উপাদান ও শক্তি সরবরাহ করতে।
  • দুপুরের খাবারের পরেঃ আপনার যদি হজমে সমস্যা থাকে তাহলে আপনি দুপুরের খাবারের পরে বেল খেতে পারেন। এতে করে আপনার পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়বে এবং হজমের সমস্যা দূর হবে।
  • দুপুরের সময়ঃ দুপুরের খাবারের পর একটি পুষ্টিকর ডেজার্ট হিসেবে আপনি বেল খেতে পারেন।
  • গ্রীষ্মের দুপুরেঃ প্রচন্ড গরমের দাবদাহ থেকে বাঁচতে গ্রীষ্মকালের দুপুরে আপনি বেলের শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার শরীর শীতল থাকবে এবং রৌদ্রের তাপ থেকেও স্বস্তি পাবেন।
বেল খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
  • অত্যন্ত ভারি বা তৈলাক্ত খাবারের পরে আপনি বেল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ, ইতি আপনার হজমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
  • খালি পেটে বেল খেলে কিছু কিছু মানুষের সহনীয় নাও হতে পারে এবং হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তারা খালি পেটে বেল না খেয়ে বেল খাওয়ার আগে কিছু খেয়ে তবেই বেল খাবেন।

বেল খেলে কি গ্যাস হয়

বেল খেলে কি গ্যাস হয় অনেকেই জানতে চান। দেখুন, বেল খেলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গ্যাস হতে পারে। কারণ, এর মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে যা আপনার পাঁচনতন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে। বেলের ফাইবার বিশেষ করে এর পেকটিন এবং অন্যান্য শর্করা সমৃদ্ধ যা আপনার হজম প্রক্রিয়ার সাথে ওতপ্রোতভাবে ভাবে জড়িত।
 
এই পেকটিন হজমের সময় আপনার অন্ত্রের মধ্যে ফারমেন্টেশন হতে পারে যা কিনা পেটে গ্যাসের সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া বেলে অতিরিক্ত তিক্ত স্বাদ ও উচ্চফাইবার থাকার কারণে এটি অনেক সময় অন্ত্রের গ্যাস তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে, আপনারা যারা বেলের প্রতি সংবেদনশীল তাদের জন্য এই সমস্যা গুলি আরো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। 
 
তবে সবার জন্য এটি সমস্যার সৃষ্টির নাও করতে পারে। কারণ, বেল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হজমে সহায়ক এবং এসিডিটি কমাতে কাজ করে। আরেকটি কথা, আপনি বেল খাওয়ার পরে যদি গ্যাসের সমস্যা অনুভব করেন সেক্ষেত্রে আপনার ডায়েটে পরিবর্তন আনতে পারেন অথবা একজন পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে পারেন। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

গর্ভাবস্থায় বেল খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় বেল খাওয়ার উপকারিতা জানলে অবাক হবেন। কারণ, গর্ভাবস্থায় বেল খাওয়ার বেশ স্বাস্থ্যসম্মত। আবার অনেক সময় চিকিৎসকরা ও গর্ভকালীন সময়ে বেল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। গর্ভাবস্থায় বেল খেলে আপনি কি কি উপকারিতা পাবেন চলুন তা দেখে নিন--
  • গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আপনি খেতে পারেন বেল। কারন, বেল উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ এবং এই ফাইবার আপনার হজম ক্রিয়াকে সহজ করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
  • পটাশিয়ামের একটি দুর্দান্ত উৎস হলো বেল। আর এই পটাশিয়াম মাংসপেশী এবং স্নায়ু সিস্টেমের কার্যকারিতা বজায় রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়ের মাংসপেশী এবং তার স্নায়ুর স্বাস্থ্যের জন্য এই পটাশিয়াম অতীব জরুরী।
  • বেল ভিটামিন সি এর একটি ভালো উৎস, যা গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভস্থ ভ্রূণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • গর্ভাবস্থায় অনেকে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগতে থাকেন। এই রক্তচাপের সমস্যা দূর করতে আপনি খেতে পারেন বেল। কেননা বেলের পটাশিয়াম আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আইরন যা আপনার রক্তাল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আপনি বেল খেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় বেল খাওয়া ভালো তবে অতিরিক্ত পরিমাণে আপনি অবশ্যই খাবেন না। কেননা গর্ভাবস্থার খাদ্যাভ্যাস অন্যান্য সময়ের থেকে খানিকটা আলাদা এবং সবকিছু পরিমিত পরিমাণে খেতে হয়।

পাকা বেল খাওয়ার উপকারিতা

পাকা বেল খাওয়ার উপকারিতা পেতে আপনাকে নিয়ম মেনে বেল খেতে হবে।  পাকা বেল খাওয়ার বেশ কিছু জাদুকরী উপকারিতা রয়েছে যা জানলে আপনি নিজেও চমকে যাবেন। চলুন সেই উপকারিতা গুলো কি কি তা জেনে নিন-
পাকা-বেল-খাওয়ার-অপকারিতা-এড়াতে-যেভাবে-খাবেন-বেল
 
  • পাকা বেল খাওয়ার ফলে এর প্রাকৃতিক সাইট্রিক এসিড আপনার হজম ক্রিয়াকে উন্নত করতে পারে। সুতরাং আপনার হজম ক্রিয়াকে সুস্থ রাখতে পাকা বেল অত্যন্ত কার্যকরী একটি ফল।
  • নিয়মিত পাকা বেল খাওয়ার ফলে এটি আপনার আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে আপনি সুরক্ষা পেতে পারেন খুব সহজেই।
  • আপনি কি জানেন পাকা বেল আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? নিয়মিত পাকা বেল খেলে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পটাশিয়াম আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে।
  • আপনি আপনার ত্বকের বলিলেখা এবং শুষ্কতা দূর করতে চান! তাহলে আজ থেকেই পাকা বেল খাওয়া শুরু করুন। কারণ, পাকা বেলের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং সেইসাথে দলিল রেখা কমাতে সাহায্য করে।
  • শুধু তাই নয়,ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পাকা বেল হতে পারে একটি আদর্শ খাদ্য উপাদান। একজন ডায়াবেটিস রোগী যদি নিয়মিত পাকা বেল খায় সেক্ষেত্রে বেলের ফাইবার তার শরীরের গ্লুকোজের স্তর নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
প্রিয় পাঠক, এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন পাকা বেল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কতটা উপকারী! তবে পাকা বেলের উপকারিতার পাশাপাশি পাকা বেল অতিরিক্ত খাওয়ার কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যা আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। উপরিউক্ত এই সমস্ত উপকারিতা গুলো পেতে একটি সুষম খাদ্য হিসেবে আপনি আজ থেকেই পাকা বেল খাওয়া শুরু করতে পারেন।

আমাশয়ে বেলের উপকারিতা

আমাশয়ে বেলের উপকারিতা কি? আমাশয়ে কিন্তু বেল অত্যন্ত কার্যকরী। কারণ, এটি শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। তাছাড়া বেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ট্যানিনস ও ফাইবার থাকে, যা অন্ত্রের শ্লেষ্মা কমাতে সহায়ক এবং ডায়রিয়া কিংবা আমাশয় নিরাময়েও কাজ করে। এছাড়াও হজমে সহায়ক এমন এনজাইম বেল আমাদের শরীরে সরবরাহ করতে পারে।
 
যা অতিরিক্ত জল শোষণ করে এবং আমাদের অন্ত্রের প্রদাহ অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। তাই শুধু আমাশয় নয় বরং আপনি ডায়রিয়ার সমস্যাতেও বেল নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করে খেতে পারেন।কারণ, ডায়রিয়ার সময় বেল খেলে এতে আপনার শরীরের পানি শূন্যতা প্রতিরোধ করতে পারে। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন

বেল এর পুষ্টিগুণ

পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা ও উপকারিতা জানার সম্পর্কে পর এবার আপনি নিশ্চয়ই এর পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানতে চান? বেলে রয়েছে হাজারও পুষ্টিগুণ। প্রতি ১০০ গ্রাম বেলে কি পরিমান পুষ্টি উপাদান থাকতে পারে তার নিজের ছকের মাধ্যমে জেনে নিন-
পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম
আয়রন ০.৫ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ২৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ ৫৪ IU
ভিটামিন সি ৫.৫ মিলিগ্রাম
শর্করা ১০.৬ গ্রাম
ফাইবার ২.৯ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ১১.১ গ্রাম
ফ্যাট ০.২ গ্রাম
প্রোটিন ০.৫ গ্রাম
শক্তি ৪৩ কিলোক্যালরি

পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

পাকা বেল খাওয়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে আজকের আর্টিকেল থেকে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। বেল শুধু খেজেই যে সুস্বাদু তা নয়, এতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। প্রচন্ড গুমোট গরম বা গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে আপনার শরীরকে শীতল করতে এক গ্লাস বেলের শরবতই যথেষ্ট। তাই প্রচন্ড গরমে আপনি অন্য কোন কোমল পানীয় না খেয়ে খেতে পারেন বেলের শরবত।
 
এতে নিয়মিত বেল খাওয়ার ফলে আপনার সুস্থ থাকার পথ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, বেলে রয়েছে নানান ধরনের ঔষধি গুনাগুনও। যা আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে থাকে। বেলের এতসব উপকারিতা পেতে আপনি আজ থেকেই বেল খাওয়ার অভ্যাস করুন এবং আপনার খাদ্য তালিকায় সুস্বাদু এই ফলটিকে অন্তর্ভুক্ত করে নিন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url