ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম কি বিস্তারিত জানুন

ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই? অশ্বগন্ধা কিভাবে খাবেন জানেন কি? না জেনে থাকলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই এবং আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। 

ছেলেদের-জন্য-অশ্বগন্ধা-খাওয়ার-নিয়ম-কি-বিস্তারিত-জানুন
কারণ, আজকে আমাদের এই আর্টিকেল থেকেই আপনি জানতে পারবেন অশ্বগন্ধা খাওয়ার উপকারী ও অপকারী দিক এবং এটি কিভাবে খাবেন সে নিয়ম সম্পর্কে। সাথে আরো জানবেন  ছেলে-মেয়েদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম

অশ্বগন্ধার উপকারিতা

অশ্বগন্ধার উপকারিতা অনেক। অশ্বগন্ধার উপকারিতা আমাদের অনেকের জানা, আবার অনেকেরই অজানা। মূলত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে এই অশ্বগন্ধা অশ্বগন্ধার বহু স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। যার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো--
  • মানসিক স্ট্রেস কমাতেঃ আপনি কি মানসিক স্ট্রেস থেকে মুক্তি পেতে চান? তাহলে আজ থেকে অশ্বগন্ধা সেবন করা শুরু করুন। কারণ, অশ্বগন্ধায় রয়েছে আনজাইলটিক উপাদান যা আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। ধরুন আপনি খুব ভয় পেয়ে গেলেন ঠিক সেই সময় প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। ফলে স্নায়ুর চাপ পড়ে। এই সমস্যা থেকে আপনাকে একমাত্র মুক্তি দিতে পারে অশ্বগন্ধা।
  • অনিদ্রা দূর করতেঃ যারা অনিদ্রা রোগে ভুগছেন তাদের জন্য হতে পারে একটি উপকারী মহৌষধ। কারণ , অশ্বগন্ধা সেবনে এটি আপনার ক্লান্তি দূর করে স্নায়ুকে আরাম প্রদান করে। এতে করে আপনার ভালো ঘুম হয়। তাছাড়া বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করলে মনোযোগ ও বৃদ্ধি পায়।
  • কোলেস্টেরল কমাতেঃ আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে বলা হয, নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবন করলে এই ভেষজ আপনার শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে বেশি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে।
  • শক্তি বৃদ্ধিতেঃ আপনি যদি নিয়ম করে নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবন করেন সেক্ষেত্রে এটি আপনার শরীরের সামগ্রিক শক্তি ও সহনশীলতা বৃদ্ধি করবে এবং সেইসাথে দৈনন্দিন কাজকর্মের জন্যও প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করবে।
  • ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালীকরনঃ অশ্বগন্ধা আপনার ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতাকে বৃদ্ধি করতে পারে। যার ফলে রোগ ব্যাধি সহজে আপনাকে আঁকড়ে ধরতে পারে না।
  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে অশ্বগন্ধাঃ বয়সের কারণে অনেকেরই স্মৃতিশক্তি লোপ পায়, অনেক কথা মনে রাখতে পারেনা। আবার অনেকের অল্প বয়সে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। এ সমস্যা দূর করতে আপনি সেবন করতে পারেন অশ্বগন্ধা। কারণ, অশ্বগন্ধা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখেঃ নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবনে এটি আপনার রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও হ্রাস করে।
  • সুগার নিয়ন্ত্রণেঃ যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের জন্য অশ্বগন্ধা হতে পারে একটি উপাদেয় ভেষজ উপাদান। কারণ, অশ্বগন্ধা আপনার শরীরে রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে ডাইবেটিস খুব স্বাভাবিকভাবেই নিয়ন্ত্রিত হয়।
  • শারীরিক দুর্বলতা কাটাতেঃ আপনি কি শরীরে সবসময় দুর্বলতা অনুভব করেন? তাহলে আজ এখন থেকেই অশ্বগন্ধা সেবন শুরু করে দিন। কারণ, এটি শরীরের দুর্বলতা এবং ক্লান্তি কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
  • পেশি শক্তি বৃদ্ধিতেঃ নিয়ম করে অশ্বগন্ধা সেবন করলে এটি আপনার পেশীর শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে এবং শরীরের মাংসল বিল্ডিং এ সহায়তা করে।
  • ত্বকের যত্নেঃ অশ্বগন্ধা ত্বকের যত্নে অশ্বগন্ধার বেশ উপকারী। আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে খেতে পারেন অশ্বগন্ধা।
  • হজমে সাহায্য করেঃ যাদের খাবার হজম হতে চায় না বদহজম হয় তারা অশ্বগন্ধা সেবন করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কারণ, অশ্বগন্ধা  পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং পাচনতন্ত্রের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
ছেলেদের-জন্য-অশ্বগন্ধা-খাওয়ার-নিয়ম-কি-বিস্তারিত-জানুন
  • মহিলাদের পিরিয়ড চক্র নিয়মিত নিয়ম করেঃ  নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবনে এটি মহিলাদের পিরিয়ডস চক্রের স্বাভাবিক নিয়ম বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • কিডনির সুরক্ষায়ঃ আপনি কি কিডনির সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে এখন থেকেই নিয়ম করে  অশ্বগন্ধা খাওয়া শুরু করুন। কারণ, এটি আপনার কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে এবং কিডনির সকল সমস্যা সমাধানে ম্যাজিকের মত কাজ করে।
  • মূত্রনালী স্বাস্থ্যঃ এটি আপনার মূত্রনালী সংক্রান্ত সকল সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে পারে।
  • যৌন শক্তি বৃদ্ধিঃ যৌন শক্তি বৃদ্ধি এবং লিপিডো বাড়াতে বেশ সহায়তা করে এই অশ্বগন্ধা।
  • জ্বরের উপশমঃ সর্দি লাগা, ঠাণ্ডা, কাশি  ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে আপনি খেতে পারেন অশ্বগন্ধা। কারণ, অশ্বগন্ধা আপনার শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে এবং জ্বর কমাতেও সাহায্য করে
  • স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করেঃ অশ্বগন্ধা সেবন এটি আপনার হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে এবং সেই সাথে স্ট্রোকের ঝুকি কমাতে সাহায্য করে।
  • ডিটক্সিফিকেশনঃ শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এবং আপনার শরীরের সাধারণ ডিটেকটিফিকেশন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।
  • প্রদাহ কমাতেঃ আপনার শরীরের যেকোনো প্রদাহ জনিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে বিশেষভাবে সাহায্য করে এই অশ্বগন্ধা।
  • সাপের বিষ নাশক হিসেবেঃ একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাপের কামড়ের জায়গায় অশ্বগন্ধা প্রলেপ লাগালে এর বিষ প্রশমিত হয় এবং তা অন্যত্র সহজে ছড়ায় না।
  • পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ অসংখ্য পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি পুরুষের শুধুমাত্র শুক্রাণুর সংখ্যা বা টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি করেনা বরং সামগ্রিক যৌন ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়।

অশ্বগন্ধার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

অশ্বগন্ধার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। অশ্বগন্ধা বেশ উপকারী হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাছাড়া সব জিনিসের কিছু উপকারী দিক আবার কিছু অপকারি দিক থাকবে।  এটাই স্বাভাবিক। অশ্বগন্ধার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। এবার চলুন অশ্বগন্ধার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা জেনে নেওয়া যাক-

  • আপনি যদি দীর্ঘদিন একটানা অশ্বগন্ধা সেবন করতে থাকেন তাহলে আপনার ডায়রিয়া, গ্যাসট্রিক এবং বমির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অশ্বগন্ধা সেবনের ফলে অনেক সময় গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
  • দীর্ঘদিন ধরে অশ্বগন্ধা শুধুমাত্র সেবন করলে আপনার থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন হতে পারে।
  • অশ্বগন্ধা রক্তকে পাতলা করতে সাহায্য করে। তাই এক্ষেত্রে আপনার যদি কোন অস্ত্রপাচার হয় বা এ সম্পর্কিত কোন ঔষধ গ্রহণ করে থাকেন তাহলে অশ্বগন্ধা সেবন না করাটাই ভালো।
  • অশ্বগন্ধা খেলে এমনিতে ভালো ঘুম হয়। তাই আপনি যদি অশ্বগন্ধা খেয়ে থাকেন তাহলে ঘুমের ওষুধ খাবেন না। আর খেলে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই খাবেন।
  • মাত্রাতিরিক্ত অশ্বগন্ধা সেবনের ফলে এটি আপনার মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, উদ্বেগ, হতাশা, ত্বকের জ্বালাপোড়া, এমনকি চুল পড়ারও কারণ হতে পারে।
সম্মানিত পাঠক, দেখুন মাত্রাতিরিক্ত কোন কিছু খাওয়া আমাদের যে কারোরই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই আপনি যদি নিয়ম মেনে সঠিক পরিমাণে অশ্বগন্ধা সেবন করেন তাহলে অপকারিতা থেকে এর উপকারিতাই বেশি পাবেন।

রোগ নিরাময়ে অশ্বগন্ধার ব্যবহার

ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম জানবেন।  কিন্তু আপনি কি জানেন অশ্বগন্ধা বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়। শুধু তাই নয়, রোগ নিরাময়ে আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে নয়ন মনি হিসেবে ধরা হয় এই অশ্বগন্ধাকে। প্রতিটি রোগের জন্য এর ব্যবহার ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন কোন রোগ নিরাময়ে অশ্বগন্ধা কিভাবে ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন-
  • মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতেঃ আপনি কি প্রচন্ড রকমের মানসিক স্ট্র্রেস এ ভুগছেন? অনেক ওষুধ ব্যবহার করেও আপনি আপনার মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে পারছেন না। তাহলে আজ থেকে আপনি অশ্বগন্ধার ব্যবহার শুরু করুন। মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে আপনি অশ্বগন্ধা পাউডার বা ক্যাপসুল প্রতিদিন সকাল বা রাতে খাবারের সাথে খেয়ে নিন।
  •  যদি পাউডার খেতে চান, তাহলে দিনে ১-২ গ্রাম পাউডার এবং ক্যাপসুল খেতে চাইলে দিনে ২টি করে ক্যাপসুল খাবেন। এতে দেখবেন আপনার মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ অনেকটাই কমে গেছে।
  • শারীরিক ক্লান্তি এবং অবসাদ দূর করতেঃ আপনি সবসময় শরীরে একটা ক্লান্তি ভাব অনুভব করেন তাই তো! শরীরের এই ক্লান্তি ভাব কাটাতে আপনি প্রতিদিন সকালে বা দুপুরে ১-২ গ্রাম অশ্বগন্ধা পাউডার বা ২ টি অশ্বগন্ধা ক্যাপসুল নিয়মিত নিয়ম করে খেতে থাকুন। কিছুদিন পরেই দেখবেন আপনার শরীরের শক্তি ফিরে এসেছে এবং ক্লান্তি ভাবও গায়েব হয়ে গেছে।
  • ঘুমের সমস্যা দূর করতেঃ অনেক চেষ্টা করেও আপনি রাতে ঘুমাতে পারছেন না। নিদ্রাহীনতার জন্য দিন দিন আপনার শরীর আরো দুর্বল হয়ে পড়ছে। আর চিন্তা নয়! এ সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে কেবলমাত্র অশ্বগন্ধা। অনিদ্রার সমস্যা দূর করতে আপনি প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে ১-২ গ্রাম অশ্বগন্ধা পাউডার দুধের সাথে মিশিয়ে পান করুন। আপনি টানা কয়েকদিন এভাবে খেতে থাকুন। তাতে দেখবেন, আপনার অনিদ্রা ভাব অনেকটাই কেটে গেছে।
  • ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা কাটাতেঃ আপনি আপনার ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা কাটাতে দিনে ১-২ গ্রাম অশ্বগন্ধা পাউডার দুধ বা পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। আর ক্যাপসুল হলে ১-২ টি অশ্বগন্ধা ক্যাপসুল খাবারের পর পানি গিলে ফেলুন। এতে করে আপনার ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হবে এবং সেইসাথে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দ্বিগুণ পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে।
  • ডায়াবেটিসে অশ্বগন্ধার ব্যবহারঃ আপনাদের যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা প্রতিদিন ২ গ্রাম অশ্বগন্ধা পাউডার অথবা ১-২ টি ক্যাপসুল গ্রহণ করতে পারেন। তাছাড়া সবথেকে ভালো হয় আপনি যদি অশ্বগন্ধা পাউডারের চা খেতে পারেন। কারণ, ডায়াবেটিস নির্মূলে অশ্বগন্ধার চা বেশ উপকারী।
  • ত্বকের ইনফেকশন সারাতেঃ অশ্বগন্ধার পাতা এবং মূলে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এটি আপনার ত্বকের যেকোনো ধরনের সারাতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
  • বার্ধক্যের ছাপ দূর করতেঃ আপনি আপনার শরীরের বার্ধক্যের চাপ দূর করতে অশ্বগন্ধা গাছের নির্যাস গ্রহণ করতে পারেন। নিয়মিত অশ্বগন্ধা গাছের নির্যাস সেবন করলে এটি আপনার ত্বকে ছাপ পড়তে বাধা প্রদান করে।
  • চুল পাকা প্রতিরোধেঃ আমাদের অনেকেরই বয়সের আগেই চুলে পাক ধরতে শুরু করে। এর জন্য আপনি আপনার চুলে অশ্বগন্ধা গাছের নির্যাস ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে অশ্বগন্ধা গাছের নির্যাস অকালে চুল পাকা প্রতিরোধে বিশেষভাবে কার্যকর।

অশ্বগন্ধা কিভাবে খাবেন

অশ্বগন্ধা কিভাবে খেতে হয় বা খাওয়ার নিয়ম জানেন কি? হয়তো জানেন না। কিন্তু অশ্বগন্ধা খাওয়ারও  বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। আপনি বিভিন্নভাবে যেমন- ট্যাবলেট হিসেবে, ক্যাপসুল হিসেবে বা তরল নির্যাস হিসেবে এই অশ্বগন্ধা খেতে পারেন। এবার চলুন আপনি কিভাবে কোন নিয়মে অশ্বগন্ধা খেতে পারবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন--
  • পাউডার হিসেবেঃ আপনি যদি অশ্বগন্ধার পাউডার খেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন সেক্ষেত্রে হালকা কুসুম গরম দুধের সাথে এই পাউডার মিশিয়ে খেতে পারেন। আপনি দুধের সাথে ৪-৫ গ্রাম পাউডার মিশিয়ে খাবেন। ইচ্ছে করলে এর সাথে আপনি স্বাদমতো মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। দুধ ছাড়া শুধু পানির সাথেও অশ্বগন্ধা গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারবেন।
  • ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল হিসেবেঃ আপনি যদি ট্যাবলেট হিসেবে অশ্বগন্ধা খেতে চান তাহলে প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যায় দুইটি করে এই ট্যাবলেট খেতে পারেন। এই ট্যাবলেট খাওয়ার জন্য খাবারের পর পর আপনি পানি দিয়ে ট্যাবলেটটি গিলে ফেলুন। এতে শারীরিকভাবে বেশ উপকার পাবেন।
  • অশ্বগন্ধা টিঙ্কচার হিসেবেঃ টিঙ্কচারের ডোজ সাধারণত লেবেল অনুযায়ী দেওয়া থাকে। আপনি এটি জল বা যেকোনো পানীয় এর সাথে ২০-৩০ ফোঁটা মিশিয়ে খেতে পারেন। টিঙ্কচার হিসেবে অশ্বগন্ধা দিন এ ২-৩ বার খেলে বেশ উপকার পাবেন।
  • অশ্বগন্ধা মূল হিসেবেঃ অশ্বগন্ধার ট্যাবলেট, সিরাপ এবং পাউডার ছাড়া আপনি এর মূলও পানিতে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খেতে পারেন।
  • অশ্বগন্ধা চা হিসেবেঃ অনেকেই আছেন যারা অশ্বগন্ধা পাউডার চা হিসেবে খেয়ে থাকেন। এর জন্য আপনি এক কাপ পরিমাণ জল ফুটিয়ে নিয়ে তাতে ১-২ চা চামচ অশ্বগন্ধা পাউডার যোগ করুন। ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে একে ফিল্টার করুন এবং গরম গরম অশ্বগন্ধা তা পান করুন।
আশা করছি, অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন। আরেকটি কথা, আপনি যদি একেবারেই প্রথম অশ্বগন্ধা খাওয়া শুরু করেন সে ক্ষেত্রে অল্প মাত্রায় খাবেন এবং পরবর্তীতে আপনার শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে এর পরিমাণ বাড়াতে পারেন।

অশ্বগন্ধা গ্রহণের সঠিক সময়

অশ্বগন্ধা গ্রহনের সঠিক সময় কোনটি? এর উপকারিতা পেতে এবং অপকারিতা এড়াতে আপনাকে অশ্বগন্ধার গ্রহণের সঠিক সময় সম্পর্কে জানতে হবে। আপনার ইচ্ছে মতো যখন তখন অশ্বগন্ধা খেলেই কিন্তু রোগ সারবে না। আবার কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধা এড়িয়ে চলা উচিত যেমন- আপনি যদি জ্বরে আক্রান্ত হন তাহলে অশ্বগন্ধা এড়িয়ে চলুন।
 
কারণ, এই অশ্বগন্ধায় নানান বায়োএক্টিভ যৌগ যেমন- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা কেবলমাত্র সাধারণ ঠান্ডায় এবং ফ্লুর মত রোগের ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে। কিন্তু আপনার শরীরে যখন উচ্চ তাপমাত্রা থাকে তখন এই আয়ুর্বেদিক অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, জ্বর এমনিতেই আমাদের শরীরকে দুর্বল করে দেয় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজেও ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
 
সুতরাং, এই সময় অশ্বগন্ধা গ্রহণ করলে আপনার এটি আপনার পক্ষে হজম করা সম্ভব নাও হতে পারে।যার ফলে ডায়রিয়া সহ আপনার আরও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এবার আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন অশ্বগন্ধা গ্রহণের সঠিক সময় কোনটি তাহলে? আপনার এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন এখনই। আপনি জেনে রাখুন, অশ্বগন্ধা গ্রহণের সবচেয়ে উত্তম সময় হলো সকাল বা সন্ধ্যায়। এই সময় খেলে আপনি সবথেকে বেশি উপকার পাবেন। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা

ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতাও কম নয়। ছেলেদের  অশ্বগন্ধা খাওয়ার বিশেষ কিছু উপকারিতা রয়েছে। ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধা ব্যবহারের কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা জেনে নিন--
  • দেহের শক্তি বৃদ্ধিতেঃ অশ্বগন্ধা আপনার শরীরের শক্তি এবং সহনশীলতা বৃদ্ধি করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি আপনার শারীরিক এবং মানসিক ক্লান্ত দূর করে এবং আপনার দেহকে অধিক কার্য ক্ষমা করে তোলে।
  • টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতেঃ অশ্বগন্ধা পুরুষদের টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে। তাছাড়া নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবনে এটি পুরুষের যৌন শক্তি, লিবিডো এবং যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে।
  • মানসিক চাপও ও উদ্বেগ কমানোঃ নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবনে এটি একজন পুরুষের স্ট্রেস হরমোন করটিসলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ ও কমায়।
  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেঃ অশ্বগন্ধা আপনার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কে উন্নত করতে পারে। তাছাড়া এটি আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, মনোযোগ বাড়ানো এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • পুরুষের মাসল বৃদ্ধিতেঃ অশ্বগন্ধা অশ্বগন্ধা আপনার পেশী বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হতে পারে। নিয়মিত নিয়ম করে অশ্বগন্ধা সেবনে এটি আপনার শক্তি এবং পেশীর গঠন বাড়ায় যা শরীর চর্চার সময় পেশী গঠনেও সহায়ক।
  • অনিদ্রা দূরীকরণেঃ অশ্বগন্ধা আপনার ঘুমের গুণমান উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি আপনার নিদ্রাহীনতা দূর করে এবং গভীর ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করে।
  • ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালীকরনঃ অশ্বগন্ধা পুরুষের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। ফলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
  • মেটাবলিজম বৃদ্ধিতেঃ নিয়মিত নিয়ম করে অশ্বগন্ধা সেবনে একজন পুরুষের শরীরে মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের শক্তি উৎপাদন দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে যায়।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেঃ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অশ্বগন্ধা বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাছাড়া এটি আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং হৃদরোগের উপসর্গ কমাতে সহায়ক হতে পারে।
  • বয়সজনিত প্রভাব কমাতেঃ অশ্বগন্ধা একজন পুরুষের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। যার ফলে এটি আপনার বয়সজনিত সমস্যাও হ্রাস করে।

ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম 

ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম কি? অশ্বগন্ধা এমন একটি প্রাকৃতিক ভেষজ উদ্ভিদ যা বহু বছর ধরে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে শারীরিক শক্তি বাড়াতে, মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরের সিস্টেম শক্তিশালী করতে এটি দারুন কাজ করে। ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধা খাওয়ার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। যে নিয়ম মেনে খেলে আপনি এর থেকে সর্বাধিক উপকারিতা পেতে পারেন। তো চলুন নিয়ম গুলো কি কি তা জেনে নিন-
  • সঠিক ডোজ মেনে চলুনঃ অশ্বগন্ধা সেগুলির সময় সেবনের সময় এর সঠিক দোস্ত মেনে সেবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অতিরিক্ত ব্যবহারে এটি আপনার শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সাধারণত একজন পুরুষের প্রতিদিন ৩-৫ গ্রাম অশ্বগন্ধা গুড়ো খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আবার আপনি যদি ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট খান সেক্ষেত্রে প্রতিদিন ১-২ টি ক্যাপসুল গ্রহণ করতে পারেন। তবে এর পরিমাণ নির্ভর করবে একান্তই আপনার শারীরিক অবস্থার উপর। 
  • খালি পেটে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুনঃ একেবারে খালি পেটে অশ্বগন্ধা খাওয়া উচিত নয়। কারণ, খালি পেটে অশ্বগন্ধা খেলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি খাবারের পরে কিংবা খাবারের সাথে অশ্বগন্ধা মিশিয়ে খান। এতে হজম ক্রিয়া যেমন সহজ হবে তেমনি এর পুষ্টি উপাদানও আপনার শরীরে সহজেই শোষিত হবে।
  • পানি বা দুধের সাথে খাওয়াঃ আপনি অশ্বগন্ধা পাউডার হালকা গরম পানি বা দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। চেষ্টা করবেন দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে। কারণ, দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে এর কার্যকারিতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
  • নিয়মিত খানঃ আপনি নিয়ম মেনে নিয়মিত অশ্বগন্ধা খাওয়ার অভ্যাস করুন। এটি আপনার শরীরে ধীরে ধীরে কাজ করবে। সুতরাং একদিন বাদ দিয়ে খাওয়া বা একদিনে অতিরিক্ত খাওয়া কখনোই ফলপ্রসু হবে না। অর্থাৎ আপনি নিয়ম মেনে ধৈর্য ধরে টানা ৬ মাস খেলে এর উপকারিতাই বেশি পাবেন।
  • অশ্বগন্ধা খাওয়ার সঠিক সময়ঃ  অশ্বগন্ধা খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় হিসেবে আপনি সকাল বা সন্ধ্যা বেছে নিতে পারেন। আপনারা যারা মানসিক চাপ বা উদ্বেগের সমস্যায় ভুগছেন তারা সন্ধ্যা বেলা বা রাতে শোয়ার আগে অশ্বগন্ধা সেবন করতে পারেন। তাতে মানসিক দুশ্চিন্তা দূর হবে এবং ঘুমও ভালো হবে। অন্যদিকে আপনার যারা শারীরিক শক্তি বা কার্যক্ষমতা বাড়াতে চান তারা সকালে অশ্বগন্ধা খেতে পারেন।
  • অন্যান্য ঔষধের সাথে মিশিয়ে না খাওয়াঃ আপনি কখনোই অন্যান্য ঔষধের সাথে অশ্বগন্ধা মিশিয়ে খাবেন না। যেমন ধরুন- আপনি যদি রক্তচাপ কমানোর বা ডাইবেটিসের জন্য ঔষধ ব্যবহার করছেন, সেক্ষেত্রে অশ্বগন্ধা আপনার ঔষধের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। তাই অন্যান্য ঔষধের সাথে অশ্বগন্ধা খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেবেন। 
  • মেয়াদের দিকে খেয়াল রাখুনঃ অশ্বগন্ধা পাউডার কিংবা অশ্বগন্ধা ক্যাপসুলের নির্দিষ্ট একটি মেয়াদ থাকে। মেয়াদ শেষ হলে এর কার্যকারিতা কমে যায় এবং তা আপনার শরীরের জন্য উপকারী নাও হতে পারে। তাই সবসময় মেয়াদ সঠিকভাবে দেখে অশ্বগন্ধা সেবন করুন। 
  • অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুনঃ নির্দিষ্ট ডোজ ছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে অশ্বগন্ধা খাওয়া পরিহার করুন। কেননা অশ্বগন্ধা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এর বেশ কিছু শারীরিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যেমন- পেটের সমস্যা, মাথাব্যথা মাথা ঘোরা, শারীরিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
  • ধূমপান এবং অ্যালকোহল পরিহার করুনঃ অশ্বগন্ধা সেবনের সময় অবশ্যই আপনাকে ধূমপান এবং এলকোহল এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ এই দুটি উপাদানই শরীরের শক্তি কমিয়ে অশ্বগন্ধার কার্যকারিতাকে বাধাগ্রস্থ করে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পানঃ অশ্বগন্ধা খাওয়ার সময় আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। এতে আপনার শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে এবং অশ্বগন্ধার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কম হবে। 
উপরিউক্ত নিয়ম গুলো মেনে আপনি অশ্বগন্ধা সেবন করতে পারেন। তাতে আপনার মানসিক চাপ যেমন কমবে তেমনি শারীরিক শক্তিও বৃদ্ধি পাবে।

মেয়েদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা

ছেলেদের অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম জেনেছেন কিন্তু আপনি কি জানেন মেয়েদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতাও অনেক। মেয়েদের জন্য এটি একটি বিশেষ উপকারী ঔষধি গাছ, যা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়। মেয়েদের জন্য অশ্বগন্ধের উপকারিতা গুলো হল-
  • হরমোনাল ভারসাম্য বজায় রাখতেঃ অশ্বগন্ধা নারীদের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি নারীদের মাসিক চক্রের সমস্যা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সকল সমস্যা সমাধানে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
  • পিরিয়ড যন্ত্রণার উপশমঃ অশ্বগন্ধায় রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য যা একজন নারীর পিরিয়ডের সময় যন্ত্রণা এবং অস্বস্তি কমাতে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • ইমিউন সিস্টেমঃ অশ্বগন্ধা পুরুষের মতো নারীর শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি আপনার শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমক এবং রোগ বালাই থেকে রক্ষা করে।
  • শক্তি ও সহনশীলতা বৃদ্ধিতেঃ অশ্বগন্ধা একজন নারীর শারীরিক ক্লান্তি এবং দুর্বলতা কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে এবং দৈনন্দিন কর্মকান্ডে আরো শক্তি যোগায়।
  • অনিদ্রা দূর করেঃ নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবনে এটি নারীর অনিদ্রা দূর করে এবং শারীরিক বা মানসিক চাপের কারণে ঘুমের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ অশ্বগন্ধার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুনাবলী আপনার অক্সিডেটিভ স্ট্রেসকে প্রতিরক্ষা করে।
  • যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধিতেঃ যে সকল নারীর যৌন ইচ্ছা ইতিমধ্যেই হ্রাস পেয়েছে তাদের জন্য অশ্বগন্ধা অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। কারণ, নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবনে এটি নারীর যৌন ইচ্ছা কে আরো বৃদ্ধি করে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ অশ্বগন্ধে একজন নারীর শরীরে মেটাবলিজম উন্নত করতে পারে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
অশ্বগন্ধা ব্যবহারের আগে আপনার একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। বিশেষ করে আপনি যদি গর্ভবতী হন বা নির্দিষ্ট কোন শারীরিক সমস্যা আপনার থেকে থাকে। তাছাড়া এটি আপনার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অনুযায়ী সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত।

অশ্বগন্ধা খেলে কি হয়?

ছেলেদের অশ্বগন্ধা খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম  সম্পর্কে আপনি ইতিমধ্যেই অবগত হয়েছেন। আবার অনেকেই জানতে চান অশ্বগন্ধা খেলে কি এমন হয়? তাহলে জেনে রাখুন, অশ্বগন্ধা আপনার শরীরে নানা উপায় কাজ করে থাকে। এটি একটি অ্যাডাপ্টোজেন যার অর্থ এটি আপনার শরীরকে মানসিক এবং শারীরিক চাপ মোকাবেলা করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।
 
নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবনে এটি আপনার মানসিক চাপ কমাতে পারে, কারণ এটি স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি আপনার অনিদ্রা দূর করতেও সক্ষম। নিয়মিত অশ্বগন্ধা খেলে এটি আপনার শরীরের শক্তি ও সহনশীলতা বাড়ায় ক্লান্তি কমায় এবং আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে, যা শরীরকে বিভিন্ন রোগ ব্যাধির সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
 
শুধু তাই নয়, এটি একজন নারীর হরমোনাল ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, মাসিকের যন্ত্রণার উপশম করে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তবে কিছু মানুষের জন্য অশ্বগন্ধার অতিরিক্ত ব্যবহার এলার্জির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই নিয়মিত ব্যবহারের আগে আপনি অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।

অশ্বগন্ধা ট্যাবলেট এর উপকারিতা

অশ্বগন্ধা ট্যাবলেট এর উপকারিতা কি কি? এই ট্যাবলেট ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি শারীরিক এবং মানসিক উভয়ভাবেই উপকৃত হতে পারেন। এই ট্যাবলেট সেবনে যেমন আপনার মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমে আসে তেমনি এটি আপনার স্ট্রেস হরমোন করটিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। এছাড়া নিয়মিত অশ্বগন্ধা ট্যাবলেট সেবন আপনার শরীরের শক্তি ও সহনশীলতা বৃদ্ধি করে, ক্লান্তি এবং দুর্বলতা কমায় যা আপনাকে দৈনন্দিন কাজকর্মে আরও শক্তি যোগায়। শুধু কি তাই! 
 
এই অশ্বগন্ধা ট্যাবলেট আপনার ইমিউন সিস্টেমকেও শক্তিশালী করে তোলে যার ফলে আপনার শরীর বিভিন্ন সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পায়। এছাড়াও এটি আপনার মেটাবলিজমকে উন্নত করে যা ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে করতে পারে এবং শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট ঝরাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। অনেকেই আছেন যারা অশ্বগন্ধ পাউডার কিংবা অশ্বগন্ধা সিরাপ খেতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না। তারা চাইলে অশ্বগন্ধা ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল খুব সহজেই খেতে পারেন।

ত্বকের যত্নে অশ্বগন্ধার ব্যবহার

দৈনন্দিন জীবনের কাজে-কর্মে আমাদের প্রতিনিয়ত ঘরের বাইরে যেতেই হয়। এতে করে একদিকে যেমন কাজের চাপ তেমনি অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ ধুলোবালি এ দুইয়ের সাঁড়াশি চাপে আপনার ত্বক হয়ে পড়ে নাজেহাল। আপনার এই রুক্ষ শুষ্ক এবং নাজেহাল তককে প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারে একমাত্র অশ্বগন্ধা। 
 
অশ্বগন্ধার ফেসপ্যাক ব্যবহারে এটি আপনার ত্বকের গভীরে জমে থাকা ধুলোবালি পরিষ্কার করে এবং সেই সাথে ত্বকে ব্রণ, ব্রনের দাগ, কালো ছোপ দাগ ইত্যাদি দূর করতেও সাহায্য করে। এখন আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন কিভাবে অশ্বগন্ধার ফেসপ্যাক ব্যবহার করা যায়? তাহলে চলুন এবার জেনে নিন আপনি অশ্বগন্ধা কিভাবে ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করবেন--

ত্বকের যত্নে অশ্বগন্ধা যেভাবে ব্যবহার করবেনঃ সাধারণত যে সমস্ত দোকানে ভেষজ শেকড় বাকর বিক্রি করে সেসব দোকানেই আপনি অশ্বগন্ধ পেয়ে যাবেন। দোকান থেকে অশ্বগন্ধা কিনে এটি আপনি ব্লেন্ডারে মিহি করে ব্লেন্ড করে নিন এবং একটি বায়ু নিরোধক কৌটাতে ভরে রাখুন। যদি অশ্বগন্ধা একান্তই না পান সেক্ষেত্রে আপনি অশ্বগন্ধার ক্যাপসুলও ব্যবহার করতে পারবেন। ক্যাপসুল ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনি ক্যাপসুল কেটে এর ভেতরের পাউডার টুকু আপনার ফেসপ্যাক এ ভালো করে মিশিয়ে নিন এবং ব্যবহার করুন। 

ফেস টনিক হিসেবেঃ অশ্বগন্ধার ব্যবহার আপনার মলিন ক্লান্ত মুখ নিমেষের মধ্যে প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে এই অশ্বগন্ধা। এর জন্য আপনি আধা চা চামচ অশ্বগন্ধার পাউডার নিয়ে এর সাথে আধা চামচ আদা গুঁড়ো এবং সামান্য লেবুর রস যোগ করে ভালো করে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
 
এই পেস্ট আপনার মুখে লাগিয়ে পনেরো মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন তারপর ঠান্ডা জলে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। ব্যাস এভাবে কিছুদিন একটানা ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের জেল্লা অনায়াসে ফিরে আসবে।

অশ্বগন্ধার ফেসপ্যাকঃ ফেসপ্যাক হিসেবে অশ্বগন্ধা ব্যবহারের জন্য আপনি এক চা চামচ পরিমাণ অশ্বগন্ধা পাউডার এবং গোলাপজল একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন, মেশানোর সময় যেন দলা পেকে না যায়। এর জন্য আপনি অল্প অল্প করে মেশাবেন যাতে মিশ্রণটি মসৃণ হয়। এবার এই পেস্টটি আপনার মুখে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন
 
এবং পনেরো মিনিট পর সাধারণ তাপমাত্রার পানিতে ধুয়ে ফেলুন। গন্ধের এই ফেসপ্যাক আপনি যদি নিয়ম করে ব্যবহার করেন তাহলে আপনার ত্বক থেকে বয়সের ছাপ তো দূর হবেই,সেই সাথে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল আর টানটান।

অশ্বগন্ধার ফেসপ্যাক ব্যবহারে সতর্কতা
  • অশ্বগন্ধার এই ফেসপ্যাক ব্যবহারে কারো কারো এলার্জির সৃষ্টি হতে পারে।
  • এর জন্য ফেসপ্যাক ব্যবহারের আগে আপনি আপনার শরীরের যেকোনো সংবেদনশীল অংশে একটুখানি লাগিয়ে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নেবেন।
  • যদি কোনরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারেন সেক্ষেত্রে অশ্বগন্ধার ফেসপ্যাক ব্যবহার না করাটাই আপনার জন্য ভালো হবে।

 ঘুমের সমস্যায় অশ্বগন্ধা কিভাবে কাজ করে ?

ঘুমের সমস্যায় অশ্বগন্ধা কিভাবে কাজ করে তা  অনেকেই জানতে চান।  বর্তমানে ডিজিটাল যুগের বদৌলতে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি অত্যধিক আসক্তি, সারা রাত জেগে কাজ করা, দিনের বেলা ঝিমুনি ভাব, মেজাজ খিটখিট এবং বিষন্ন হয়ে থাকার মত ঘটনা ঘটছে প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে।এক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ বলছেন, 
 
সঠিক মাত্রায় ঘুম না হলে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ নানা রকম শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু কি তাই?? রোজকার এই অনিদ্রার কারণে আপনার জীবন বিপর্যয়ের মুখেও পড়তে পারে। অনেকে আবার অনিদ্রা রোগ দূর করতে স্লিপিং পিল বা ঘুমের বড়ি একটানা খেতে থাকেন।
 
যা আপনার স্বাস্থ্যকে আরো ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়। তাই ঘুমের সমস্যা দূর করতে আপনি স্লিপিং পিল না খেয়ে খেতে পারেন উইন্টার চেরি বা অশ্বগন্ধা। এখন প্রশ্ন হল অনিদ্রা রোগ দূর করতে আপনি কিভাবে খাবেন এই অশ্বগন্ধা? তাহলে জেনে রাখুন, অনিদ্রা নিরাময়ে অশ্বগন্ধা সেবনের একটি কার্যকরী পদ্ধতি হলো রাতের খাবারের পরে এটি গ্রহণ করা।
 
আপনি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ১-২ গ্রাম অশ্বগন্ধার পাউডার এক কাপ গরম দুধ বা মধুর সাথে মিশিয়ে পান করতে পারেন। আর যদি ক্যাপসুল খেতে চান তাহলে শোয়ার আগে একটি ক্যাপসুল পানি দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলুন। এভাবে আপনি ২-৮ সপ্তাহ অশ্বগন্ধা সেবন করলে অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত ফল পাবেন।
 
সেই সাথে আপনার অনিদ্রা রোগও চিরতরের মত গায়েব হয়ে যাবে। অশ্বগন্ধা সেবনের এই পদ্ধতিটি আপনার শরীরকে রাতে ভালোভাবে বিশ্রাম দিতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। কি বিশ্বাস করতে পারছেন না তাইতো! আপনি টানা কয়েকদিন এভাবে খেয়েই দেখুন না!! নিজেই এর ফলাফল টের পাবেন।

হোমিওপ্যাথিক অশ্বগন্ধার উপকারিতা

ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধা খাওয়ার বেশ কিছু  নিয়ম আমরা জেনেছি। এবার আমরা জানবো  হোমিওপ্যাথিক অশ্বগন্ধার উপকারিতা সম্পর্কে। আপনি কি জানেন, বিভিন্ন ধরনের হোমিও ঔষধ তৈরিতেও ব্যবহৃত হয় এই অশ্বগন্ধা। এবার চলুন হোমিওপ্যাথিক অশ্বগন্ধার উপকারিতা গুলো কি কি তা জেনে নেবেন--
  • আপনার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এবং চুল পড়া রোধে অশ্বগন্ধা হোমিওপ্যাথিক বিভিন্ন ঔষধের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভালো উপকার পাবেন।
  • যৌন সমস্যা এবং বীর্যপাত জনিত সমস্যার ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক ঔষধে অশ্বগন্ধার ব্যবহার করা হয়।
  • হোমিওপ্যাথিক ঔষধি সাধারণত বিভিন্ন ধরনের গাছের রস, শিকড়-বাকড়, পাতা ব্যবহার করা হয়। সেই হিসেবে অশ্বগন্ধাও এতে ব্যবহৃত হয়।
  • তাছাড়া বর্তমানে আমাদের দেশে এডোপ্যাথিক ওষুধের তুলনায় হোমিওপ্যাথিক ঔষধ বেশ কার্যকরী।
এক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখবেন, আপনার হোমিওপ্যাথিক অশ্বগন্ধার সঠিক রোজ এবং ব্যবহারের জন্য একজন অভিজ্ঞ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। কারণ, প্রতিটি ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে ঔষধ ব্যবহারের পদ্ধতিও ভিন্ন হতে পারে।

অশ্বগন্ধা খেলে কি মোটা হয়?

অশ্বগন্ধা খেলে কি মোটা হয়? অনেকেই জানতে চান। দেখুন অশ্বগন্ধা খাওয়ার সাথে মোটা হওয়ার কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবে, পরোক্ষভাবে এটি আপনার ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। কিভাবে অশ্বগন্ধার ব্যবহার আপনার ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে তা জেনে নিন--
  • অশ্বগন্ধা একটি প্রাকৃতিক অ্যাডাপ্টোজেন আপনার শরীরের শক্তি ও সহনশীলতা উভয়ই বৃদ্ধি করতে পারে। এটিই আপনার শারীরিক ক্লান্ত কমাতে এবং শক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ সহায়ক। সে হিসেবে অশ্বগন্ধা কিছু লোকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছা সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে আপনার ওজনও বেড়ে যেতে পারে।
  • আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন অশ্বগন্ধা এক্সপ্রেস এবং উদ্বেগ কমাতে সক্ষম। আর স্ট্রেস কমাতে পারলে অনেকের আবার খাবারের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেতে পারে, যা অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের সহায়ক হতে পারে। আর অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আপনার ওজনও বাড়তে পারে।
  • অশ্বগন্ধ সেবনের ফলে আপনার অনিদ্রা দূর হয় এবং সেই সাথে শরীরের শক্তি ও পুষ্টির চাহিদা বাড়তে পারে, যা কিছু ক্ষেত্রে ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
  • অশ্বগন্ধা আপনার হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। তবে কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি হরমোনাল পরিবর্তনের মাধ্যমে খাবার ইচ্ছা বৃদ্ধি করতে পারে। যা অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণের সহায়ক হতে পারে এবং ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
সম্মানিত পাঠক, আপনার নিশ্চয়ই বোধগম্য হয়েছে অশ্বগন্ধার সাথে সরাসরি ওজন বৃদ্ধির কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু যেহেতু এটি শক্তি বৃদ্ধি,স্ট্রেস কমানো এবং শরীরের অন্যান্য রোগ দূর করতে সক্ষম। সেই হিসেবে কিছু মানুষের খাবারের পরিমাণ বা অভ্যাস পরিবর্তিত হতে পারে যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।

লম্বা হতে অশ্বগন্ধার উপকারিতা

লম্বা হতে অশ্বগন্ধার উপকারিতা আছে বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়। অশ্বগন্ধা পাউডার খাওয়া আপনার উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে কোনভাবেই সম্পৃক্ত নয়। কারণ, উচ্চতা বৃদ্ধির মূল কারণ জিনগত এবং হরমোনাল ফ্যাক্টর। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে আপনার উচ্চতা বৃদ্ধিতে অশ্বগন্ধা সহায়ক হতে পারে। যেমন-
  • অশ্বগন্ধা আপনার শরীরের শক্তি এবং সহনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক,যা আপনার ওজন বৃদ্ধির জন্য উপকারী হতে পারে।
  • অশ্বগন্ধা যেহেতু এডাপ্টোজেন হিসেবে কাজ করে তাই এটি আপনার মানসিক চাপ কমাতে সক্ষম। আর কম স্ট্রেস আপনার শরীরের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারে যা আপনার লম্বা হওয়ার ক্ষেত্রে উপকারী হবে।
  • অশ্বগন্ধা হরমোনের স্তরের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে,যা আপনার শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক কার্যকারিতায় সহায়ক হতে পারে। যদিও উচ্চতার বৃদ্ধির জন্য হরমোনাল ফ্যাক্টরই গুরুত্বপূর্ণ,তবে অশ্বগন্ধার প্রভাব সরাসরি উচ্চতা বৃদ্ধিতে একেবারেই প্রমাণিত নয়।
সম্মানিত পাঠক, সুতরাং বুঝতেই পারছেন অশ্বগন্ধা পরোক্ষভাবে আপনার লম্বা হওয়ার জন্য সহায়ক হতে পারে। যদি আপনি অন্যান্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন- সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম বজায় রাখেন।

অশ্বগন্ধা আসলে কি?

অশ্বগন্ধা আসলে কি? এখনো অনেকেই জানেন না। অশ্বগন্ধা মূলত  একটি বহুবর্ষজীবী ঔষধি গাছ যা দক্ষিণ এশিয়ার উষ্ণ ও শুষ্ক অঞ্চলে  বেশি জন্মায়। অশ্বগন্ধার ইংরেজি নাম Indian Ginseng এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Withania somnifera. এই গাছটি সাধারণত লম্বায় ৬০-১০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে এবং দেখতে ছোট ঝোপের মত।
 
গাছটির পাতা এলোমেলোভাবে সাজানো থাকে এবং এর পাতা গাঢ় সবুজ রঙের হয় যা কিনা ছোট ছোট রোমে আচ্ছাদিত থাকে। এই গাছের পাতা সিদ্ধ করলে অনেকটা ঘোড়ার মুত্রের মতো ঘ্রাণ নির্গত হয় বিধায় একে অশ্বগন্ধা বলা হয়ে থাকে। অশ্বগন্ধার ফুল ছোট হলুদ বা সাদা রংয়ের এবং এটি গাছের শাখা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।
 
ফুলের পর গাছটি লাল বা কমলা রঙ্গে ছোট ছোট ফল ধারণ করে যা সাধারণত বেগুনি বা সাদা রঙের গুঁড়ো কোষ দ্বারা বেষ্টিত থাকে। গাছটির মূল অংশ যা প্রধানত ঔষধি উদ্দেশ্য ব্যবহৃত হয় তা মাটির মধ্যে গভীরে প্রবাহিত থাকে। অশ্বগন্ধার শিকড় শীতল এবং তিক্ত স্বাদ যুক্ত হয়ে থাকে। এতে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ফাইটো কেমিক্যালস রয়েছে।
 
ফাইটো কেমিক্যালস  হিসেবে এতে উইথানোলোইডোস, অ্যালকালয়েডস এবং সাপোনিন থাকে। বর্তমান সময়ে অনেকেই অশ্বগন্ধা নামটির সাথে পরিচিত না হলেও  প্রাচীন ঐতিহ্যগত চিকিৎসায় যুগ যুগ ধরে এটি শক্তি বৃদ্ধি, মানসিক চাপ কমানো এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যর উন্নতিতে সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হইয়ে আসছে।

অশ্বগন্ধা গাছ কোথায় পাওয়া যায়?

অশ্বগন্ধা গাছ কোথায় পাওয়া যায়? অশ্বগন্ধা একটি প্রাচীন ঔষধি গাছ যা মূলত দক্ষিণেশ্বর বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মে থাকে। ভারতের বিভিন্ন অংশে যেমন রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ এবং হিমাচল প্রদেশে অশ্বগন্ধার প্রচুর চাষ করা হয়। এই অঞ্চল গুলির জলবায়ু ও মাটির গুনাগুন অশ্বগন্ধার বৃদ্ধির জন্য বেশ উপযুক্ত। এছাড়াও পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাতেও এই গাছটি পাওয়া যায় এবং চাষ করা হয়।
 
মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে অশ্বগন্ধা গাছ জন্মাতে দেখা যায়। সাধারণত অশ্বগন্ধা কাজ উষ্ণ এবং শুষ্ক জলবায়ুতে ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে। মূলত সূর্যালোক ও আংশিক ছায়াযুক্ত স্থানে শুষ্ক পাথুরে মাটিতে এর উৎপাদন বেশ ভালো হয়। আর এই অশ্বগন্ধার উৎপাদন সবথেকে বেশি ভালো হয় বসন্তকালে।

অশ্বগন্ধার পুষ্টিগুণ

অশ্বগন্ধার  পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানলে আপনি হয়তো আজ থেকেই উপকারী এই ভেষজের ব্যাবহার শুরু করে দেবেন। তাছাড়া ছেলেরা অশ্বগন্ধা কোন নিয়মে কিভাবে খাবে তা আমরা খানিক আগেই আলোচনা করেছি।  সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন প্রতি ১০০ গ্রাম অশ্বগন্ধা মুলের মধ্যে যে পরিমাণ পুষ্টি  উপাদান রয়েছে তা আপনার সুবিধার্থে  নিচে একটি ছকের মাধ্যমে দেখানো হল--
পুস্টি উপাদান পরিমাণ
ক্যালরি ২৪৫ ক্যালরি
কার্বোহাইড্রেট ৩২ গ্রাম
ফ্যাট ০.৩ গ্রাম
প্রোটিন ৩.৯ গ্রাম
ডায়েটারি ফাইবার ১৩ গ্রাম
ভিটামিন সি ৩.৭ মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ ২.০ আইইউ
ক্যালসিয়াম ২৩ মিলিগ্রাম
আয়রন ৩.৩ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম ৪৫৩ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ৭৮ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ৫০ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম ৫.৪ মিলিগ্রাম

অশ্বগন্ধা পাউডারের দাম কত ২০২৫

অশ্বগন্ধা পাউডারের দাম কত? এর দাম সম্পর্কে আমাদের খুব একটা ধারণা নেই বললেই চলে। আজকে আপনাকে অশ্বগন্ধার দাম সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিয়ে দেব। অশ্বগন্ধা সাধারণত পাউডার, ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়। এখন আপনি পাউডার নিতে চান,নাকি ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট নিতে চান দামটাও তার ওপর নির্ভর করবে। এবার চলুন অশ্বগন্ধার দাম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন--
ছেলেদের-জন্য-অশ্বগন্ধা-খাওয়ার-নিয়ম-কি-বিস্তারিত-জানুন
  • অশ্বগন্ধা পাউডার এর দামঃ সাধারণত বাজারে অশ্বগন্ধা পাউডার এবং অসাধারণ দুটোই পাওয়া যায়।তবে অশ্বগন্ধা পাউডার এর চাহিদায় সবথেকে বেশি থাকে। আপনি যদি অশ্বগন্ধা পাউডার নিতে চান,সেক্ষেত্রে প্রতি ১০০ গ্রাম অশ্বগন্ধা পাউডার পেয়ে যাবেন ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে এবং ৫০০ গ্রাম অশ্বগন্ধা পাউডার পাবেন ৭৫০-১০০০ টাকার মধ্যে। আবার কেজি হিসেবে প্রতি কেজি অশ্বগন্ধা পাউডার পাবেন ১৫০০-২০০০ টাকায়।
  • অশ্বগন্ধা ক্যাপসুল এর দামঃ আপনি যদি অশ্বগন্ধার ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট নিতে চান সেক্ষেত্রে বর্তমান বাজার হিসেবে প্রতি প্যাকেট ক্যাপসুল পেয়ে যাবেন ৩৫০-৫৫০ টাকার মধ্যে।
  • অশ্বগন্ধা সিরাপের দামঃ অনেকেই আবার অশ্বগন্ধার ট্যাবলেট এবং পাউডার এর থেকে অশ্বগন্ধা সিরাপ খেতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। আপনি যদি অশ্বগন্ধার সিরাপ নিতে চান তাহলে ১০০ মিলির এক বোতল অশ্বগন্ধা সিরাপ ৮০-১০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।
  • পতঞ্জলি অশ্বগন্ধা ক্যাপসুল এর দামঃ অনেকেই আবার পতঞ্জলি অশ্বগন্ধা ক্যাপসুল এর দাম জানতে চান। এই পতঞ্জলি অশ্বগন্ধা ক্যাপসুল আপনি প্রতি প্যাক ১০০ টাকা, তিন প্যাক ৩০০ টাকা এবং দশ প্যাক ১০০০ টাকায় পেয়ে যাবেন।
আশা করছি অশ্বগন্ধার ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ এবং পতঞ্জলি অশ্বগন্ধা ক্যাপসুল এর দাম সম্পর্কে আপনি একটি সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। তবে অশ্বগন্ধার এই দাম বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং বাজারের অবস্থার উপর নির্ভর করে কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকে বলব, আপনি আপনার নিকটস্থ স্বাস্থ্য বা ওষুধের দোকান বা অনলাইন প্লাটফর্মে দাম যাচাই করে দেখতে পারেন। এতে করে আপনার ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

যাদের অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা উচিত নয়

যাদের অশ্বগন্ধা  ব্যবহার করা উচিত নয় সে বিষয়েও আমাদের সম্মুখ ধারনা থাকা উচিত। কিছু কিছু মানুষের জন্য অশ্বগন্ধা সেবন না করাটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। এবার চলুন আপনারা কারা অশ্বগন্ধা ব্যবহার করবেন না তা জানিয়ে দিচ্ছি-
  • গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য অশ্বগন্ধা সেবন না করাটাই ভালো। আর একান্তই সেবন করতে চান তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করবেন।
  • যাদের অটো ইমিউন রোগ রয়েছে তারা অশ্বগন্ধা সেবন থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
  • যাদের আগত কিছুদিনের মধ্যে সার্জারি হবে বা খুব সম্প্রতি সার্জারি হয়েছে তারা অশ্বগন্ধা সেবন করবেন না।
  • আপনাদের যাদের থাইরয়েড জনিত সমস্যা রয়েছে থেকে দূরে থাকুন। কারণ, অশ্বগন্ধার সেবনের ফলে এটি আপনার থাইরয়েড হরমোন এর উত্তরকে প্রভাবিত করতে পারে এবং থাইরয়েড জনিত রোগ আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে।
  • যারা কিডনি রোগে ভুগছেন তাদের জন্য অশ্বগন্ধ ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ, এটি কিডনির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
  • আপনি যদি কোন চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যান বা প্রতিদিন ঔষুধ সেবন করতে হয় সে ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধা না খাওয়াটাই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কারণ, অশ্বগন্ধা আপনার ঔষধের সাথে নানান প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
সুতরাং অশ্বগন্ধা বা অন্য যেকোন হারবাল উপাদান ব্যবহারের পূর্বে আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। তারা আপনার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।

ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম কি তা নিশ্চয়ই আমাদের আর্টিকেল পড়ে এতক্ষণে জানতে পেরেছেন। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনার কাছে বোধগম্য হয়েছে।। প্রকৃতপক্ষে অশ্বগন্ধা এমন একটি ভেষজ যা নানা রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে। চিকিৎসা শাস্ত্রে বিশেষ করে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় প্রাচীনকাল থেকেই অশ্বগন্ধার ব্যবহার চলে আসছে।
 
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এই ভেষজ উৎপাদনের জুড়ি মেলা ভার। আর তাই নিয়ম মেনে সঠিক পরিমাণে আপনি যদি অশ্বগন্ধা সেবন করতে পারেন তাহলে নানাবিধ রোগ থেকে খুব সহজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। তবে আপনার যদি বিশেষ কোনো রোগ থেকে থাকে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে তবে অশ্বগন্ধা সেবন করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url