গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু গর্ভাবস্থায় কলার মোচা খাওয়া যাবে কি যাবে না তা হয়তো অনেকেই জানি না? পুরো বিষয়টি জানতে হলে আজকের আর্টিকেলটি এক্ষুনি একবার চট করে পড়ে নিন।
কারণ,
আজ আমরা আলোচনা করবো গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ কিছু
স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং এই সময় কলার মোচা খাওয়া যাবে কিনা সে সম্পর্কে।
সাথে আরো আলোচনা করবো গর্ভাবস্থায় আপনার কি কি ফল খাওয়া
উচিত। তাহলে চলুন আজকের মত আলোচনা শুরু করা যাক।
পোস্ট সুচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভকালীন সময়ে কলা খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় বিচি কলা খাওয়া যাবে কি
- গর্ভাবস্থায় কলার মোচা খাওয়া যাবে কি
- গর্ভাবস্থায় কলার মোচা খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় কলার মোচা খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না
- গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় খাওয়ার তালিকা
- গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত
- গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
- গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। এই সময় একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভের শিশু উভয়ের জন্যই কলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল। কলা একটি পুষ্টিকর ফল যা বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবারের সমৃদ্ধ উৎস। এবার চলুন গর্ভাবস্থায় কলা খেলে আপনি কি কি উপকার পাবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন-- গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশেঃ কলাতে কিছু পরিমাণ হলে রয়েছে যা আপনার নবজাতকের স্নায়ু সিস্টেমের উন্নয়নে কাজ করে। তাছাড়া ফোলেট আপনার শিশুর মস্তিষ্ক এবং উন্নয়নের সহায়ক এবং জন্মগত বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি প্রতিরোধ করে।
- গর্ভাবস্থায় মেজাজ নিয়ন্ত্রণেঃ কলাতে রয়েছে উচ্চমাত্রার সব ভিটামিন যা গর্ভবতী মায়ের মেজাজ নিয়ন্ত্রণ এবং গর্ভাবস্থার বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এই ভিটামিন একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরের প্রোটিন, বিপাক ও স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- মর্নিং সিকনেস কমাতেঃ কলাতে রয়েছে ভিটামিন বি। গর্ভাবস্থায় কলা খেলে ভিটামিন বি অনেক সময় বমি রোধ করতে কাজ করে। শুধু তাই নয়, এই ভিটামিন গর্ভাবস্থায় আপনার মর্নিং সিকনেস কমাতেও সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ কমাতেঃ কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখে। তাছাড়া নিয়মিত কলা খাওয়ার ফলে এটি গর্ভকালীন সময়ের আপনার উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কাজ করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। এই সময় প্রায় কমবেশি সব গর্ভবতী মা-বোনরাই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগে থাকেন। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি খেতে পারেন কলা। কারণ, কলাতে রয়েছে ফাইবার যা আপনার হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সেই সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- গর্ভকালীন সময়ে অস্বস্তি কমাতেঃ রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম যা আপনার পেশী স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখে। ফলে গর্ভাবস্থায় কলা খেলে এটি আপনার পেশির টান কমানোর পাশাপাশি শারীরিক অস্বস্তি ও মানসিক পেনশন কমাতে সাহায্য করে।
- প্রাকৃতিক শক্তির উৎস হিসেবেঃ কলায় প্রাকৃতিক সুগার যেমন- গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ এবং সুক্রোজ থাকে, যা আপনার শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া, গর্ভাবস্থায় কলা খেলে আপনি শারীরিক ক্লান্তে অনেকটাই দূর হবে।
- ভিটামিন সি এর উৎসঃ কলাতে রয়েছে ভিটামিন সি যা আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে।
- হাড় শক্তিশালী করেঃ গর্ভাবস্থায় কলা খেলে কলার ভিটামিন সি এবং ম্যাগনেসিয়াম আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ সন্তানের হাড় শক্তিশালী করে।
- পেটের অস্বস্তি কমায়ঃ গর্ভাবস্থায় পেটের সমস্যা যেমন ধরুন- গ্যাস, অম্বল ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে কলা। কেননা কলায় রয়েছে প্রাকৃতিক সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের মিশ্রণ যা আপনাকে পেটের অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিতে পারে।
- ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করেঃ গর্ভাবস্থায় নিয়মিত কলা খেলে কলার পটাশিয়াম আপনার শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখে। তাছাড়া কলা গর্ভকালীন ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।
- রক্তাল্পতা থেকে মুক্তিঃ গর্ভাবস্থায় অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় অনেকেই ভুগতে থাকেন। এই রক্তাল্পতা থেকে মুক্তি পেতে আপনি নিয়ম করে গর্ভাবস্থায় কলা খান। কারণ, কলায় থাকা আয়রন আপনার শরীরের রক্তস্বল্পতা কমাতে সহায়ক এবং এটি আপনার শরীরে রক্তের স্বাভাবিক উৎপাদন বাড়াতেও কাজ করে।
- অনিদ্রা দূর করেঃ গর্ভকালীন সময়ে অনেক মা-বোনরাই অনিকদের রোগে ভুগে থাকেন। এই অনিদ্রা দূর করতে আপনি কলা খেতে পারেন। কারণ, কলার ট্রিপটোফ্যান ও ম্যাগনেসিয়াম আপনার শরীরে মেলাটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে। ফলে ঘুম ভালো হয় এবং অনিদ্রা দূর হয়।
- এসিডিটি কমায়ঃ গর্ভাবস্থায় এসিডিটি কমাতে আপনি কলা খান। কারণ কলার পিএইচ স্তর প্রাকৃতিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে যা গর্ভাবস্থায় আপনার অ্যাসিটি সমস্যা কমাতে কাজ করে।
- মানসিক চাপ কমাতেঃ গর্ভাবস্থায় কলা খেলে কলায় থাকা ম্যাগনেসিয়াম আপনার শরীরকে শান্ত রাখে এবং মানসিক স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমাতে কাজ করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ কলা গর্ভাবস্থায় নিয়মিত কলা খাওয়ার ফলেটি আপনার শরীরের ও প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে আপনার শরীর সুরক্ষা পায়।
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে, তেমনি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। আর তাই গর্ভাবস্থায় কলা অতিরিক্ত পরিমাণে না খেয়ে পরিমিত পরিমাণ খাওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় কলা খেলে আপনার শরীরে কি কি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে চলুন তা জেনে নিই-- কলা ফাইবার এর একটি দুর্দান্ত উৎস তবে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কলা খাওয়ার ফলে এটি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণও হতে পারে। বিশেষ করে আপনি যদি অতিরিক্ত কলার খান এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না করেন সেক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়।
- মাত্রতিরিক্ত কলা খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ করতে পারে। আর অতিরিক্ত ক্যালরি আপনার ওজন বৃদ্ধি করতে পারে,যা গর্ভাবস্থায় শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
- কলা খাওয়ার ফলে অনেকের শরীরে চুলকানি বা এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। হলে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কলা না খাওয়াটাই ভালো।
- গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কলা খেলে অনেক সময় আপনার পেটে গ্যাস বা অম্বল সৃষ্টি হতে পারে এবং পেট ফোলা সমস্যাও দেখা দিতে পারে। কারণ, কলাতে থাকা ফাইবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেটের অস্বস্তি কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- কলায় থাকা প্রাকৃতিক সুগার যা আপনার রক্তে সরকারের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে আপনার যদি গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত কলা না খাওয়াই ভালো।
- গর্ভাবস্থায় অধিক পরিমাণ কলা খেলে এটি আপনার মাইগ্রেন সমস্যার মূল কারণ হতে পারে। কারণ, কলাতে থাকাটা আইয়ামিন ও অন্যান্য উপাদান মাইগ্রেনের ট্রিগার হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বিচি কলা খাওয়া যাবে কি
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। আপনারা অনেকেই জানতে চান, গর্ভাবস্থায় বিচি কলা খাওয়া যাবে কিনা? তাহলে জেনে রাখুন, গর্ভাবস্থায় বিচি কলা খাওয়ার সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কারণ, বিচি কলায় কলার বিচিতে পটাশিয়াম, ভিটামিন বি-৬ এবং ফাইবার থাকে।যা গর্ভাবস্থায় আপনাকে এবং আপনার অনাগত গর্ভস্থ ভ্রুনকে সঠিক পুষ্টির
যোগান দিয়ে থাকে। তাছাড়া বিচি কলাতে থাকা পটাশিয়াম আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করা। সেইসাথে এর
ফাইবার আপনার হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও বিশেষভাবে সাহায্য
করে। তবে একটি কথা, বিচি কলাতে কিছু পরিমাণে শর্করা ও ক্যালোরি থাকে।
তাই
গর্ভকালীন সময়ে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে বিচি কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ,
আপনাকে সব সময় মনে রাখতে হবে গর্ভাবস্থায় শুধু বিচি কলা কেন বরং যে কোন খাবারই অতিরিক্ত পরিমাণে
খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। গর্ভাবস্থায় বিচি কলা খাওয়া যাবে কিনা আশা
করছি বুঝতে পেরেছেন।
গর্ভাবস্থায় কলার মোচা খাওয়া যাবে কি
গর্ভাবস্থায় কলার মোচা খাওয়া যায় কিনা এ প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। দেখুন, গর্ভাবস্থায় কলের মোচা খাওয়া সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ। এতে তেমন কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই। কলার মোচা যাতে ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার রয়েছে এবং এটি গর্ভাবস্থায় আপনার জন্য উপকারী। তাছাড়া এতে থাকা ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম আপনার শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে।গর্ভাবস্থার
একটি সাধারণ সমস্যা কোষ্ঠকাঠিন্য যা কলার মোচার ফাইবার দূর করতে পারে। তবে
গর্ভাবস্থায় কলার মোচা খাওয়ার ক্ষেত্রে এটি অবশ্যই ভালো মতো রান্না করে
খাওয়া খাবেন। কাঁচা বা আধা সিদ্ধ ভাবে রান্না করে কখনোই খাবেন না। কেননা
কলার মোচাতে কিছু বিষাক্ত উপাদানও থাকতে পারে যা আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ
ভ্রূণের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কলার মোচা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কলার মোচা খাওয়ার উপকারিতাও কম নয়। গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার যেমন বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। পাশাপাশি কলার মোচা খাওয়ারও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা রয়েছে। এবার চলুন গর্ভকালীন সময়ে কলার মোচা খেলে আপনি এর থেকে কি কি উপকার পাবেন তা জেনে নিন-- কলার মোচায় রয়েছে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেমন- ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ফোলেট যা একজন গর্ভবতী মা এবং তার অনাগত সন্তানের জন্য ভীষণই দরকার।
- কলার মোচা উচ্চ ফাইবার যুক্ত হওয়ায় এটি গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে পারে। ফলে গর্ভকালীন সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আপনি কলার মোচা খেতে পারেন।
- কলার মতো কলের মোচাতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। ফলে গর্ভাবস্থায় কলার মোচা খাওয়ার মাধ্যমে আপনি অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
- কলের মোচায় আরো রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম দাঁত ও হাড়ের গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- কলার মোচার এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য যা গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমতে কাজ করে।
- শুধু তাই নয়, কলার মোচাতে আরো রয়েছে প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে গর্ভাবস্থায় কলার মোচা খেলে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল থেকে রক্ষা করতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় অনেক সময় ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় এবং এই বাড়তি ওজন নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন। কিন্তু গর্ভাবস্থায় আপনি যদি কলার মোচা খান তাহলে আপনার ওজন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে।এর কারণ কি জানেন! এর কারণ হলো কলার মোচায় সবচেয়ে কম ক্যালোরি এবং চর্বি থাকে যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করে।
- গর্ভাবস্থায় কলার মোচা খেলে এর ভিটামিন ও মিনারেল আপনার মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে যা কিনা আপনার শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- কলার মোচার কিছু কাঁচা অংশ বিষাক্ত হতে পারে। তাই এটি সঠিক পদ্ধতিতে এবং ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া উচিত।
- অনেক সময় অতিরিক্ত পরিমাণে কলার মোজা খেলে শরীরে এলার্জি প্রতিক টা দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে মোচা না খাওয়াই ভালো।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না এটি জানাও ভীষণই জরুরী। গর্ভকালীন সময়ে ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে এই সময় আপনার নিজের এবং গর্ভস্থ ভ্রুনের কথা ভেবে কিছু কিছু ফল খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত থাকা উচিত। গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা তো জানলেন, এবার চলুন গর্ভাবস্থায় আপনি কোন কোন ফল পরিহার করে চলবেন সে সম্পর্কে জেনে রাখুন-- কাঁচা পেঁপেঃ গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খেলে এটি আপনার গর্ভাশয় সংকোচন সৃষ্টি করতে পারে। এতে করে আপনার গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। ফলে গর্ভাবস্থায় আপনি অপরিপক্ক পেঁপে, কাঁচা পেঁপে, আধা পাকা পেঁপে খাবেন না।
- অপরিপক্ক আনারসঃ অপরিপক্ক আনারসে রয়েছে ব্রমিলিন নামক এনজাইম যা আপনার গর্ভসয়ে সংকোচন ঘটাতে পারে এবং গর্ভকালীন সময়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই এই সময় অপরিপক্ক আনারস এড়িয়ে চলুন।
- কাঁঠালঃ কাঁঠালে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে সরকার ও ফাইবার যা গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে আপনার গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই এই সময় অধিক পরিমাণ কাঁঠাল খাবেন না। তবে পরিমিত পরিমাণে কাঁঠাল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
- পাকা পিচঃ পাকা পিচে কিছু বিষাক্ত উপাদান থাকতে পারে যা আপনার গর্ভাবস্থায় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
- সবুজ আপেলঃ সবুজ আপেল খেতে অনেকেই পছন্দ করেন এর সবুজ রং দেখে। কিন্তু এ সবুজ আপেলে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান থাকতে পারে যা গর্ভকালীন সময়ে আপনার পেটের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে গর্ভাবস্থায় সবুজ আপেল খাওয়া পরিহার করুন।
- ড্রাগন ফ্রুটঃ গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে ড্রাগন ফ্রুট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কারণ, এর অতিরিক্ত ফাইবার আপনার হজমের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
- অধিক পরিমাণে তরমুজ খাওয়াঃ যদিও ভালো কিন্তু তরমুজে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ শর্করা ও জলীয় অংশ। ফলে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত তরমুজ খেলে আপনার গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।
- আমঃ আমে প্রচুর পরিমাণ কষ্ট উপাদান রয়েছে এ কথা ঠিক কিন্তু গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার উপকারিতা অনেক। আপনি প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ, গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার নানার উপকারিতা রয়েছে যা আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এবারে আসুন গর্ভাবস্থায় দুধ খেলে কি কি উপকার পাবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন--- পুষ্টির ঘনত্বঃ দুধে রয়েছে প্রোটিন ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস একজন গর্ভবতী মা এবং তার শিশুর জন্য অতীব জরুরী। দারুন এই পুষ্টি উপাদান গুলো গর্ভাবস্থায় আপনাকে অতিরিক্ত শক্তি প্রদান করে এবং আপনার সন্তানের সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
- দাঁত ও হাড় ভালো রাখতেঃ দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভস্থ শিশুর হাড় ও দাঁত ভালো রাখে।
- প্রোটিনের উৎস হিসেবেঃ প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস হলো দুধ।আর এই প্রোটিন গর্ভাবস্থায় আপনার শিশুর কোষ ও টিস্যুর বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। তাছাড়া প্রোটিন আপনার পেশী এবং শরীরের যথাযথ কার্যকারিতা ধরে রাখে।
- পুষ্টির অভাব দূর করেঃ দুধে রয়েছে ভিটামিন ডি যা ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়ায়। ফলে গর্ভাবস্থায় দুধ খেলে এটি আপনার এবং আপনার শিশুর পুষ্টির অভাব দূর করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করেঃ গর্ভাবস্থায় নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে দুধ খেলে এর ভিটামিন এ,ভিটামিন বি১২ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আপনার শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়। ফলে এই সময় আপনার শরীর বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পায়।
- হজমে সাহায্য করেঃ দুধে রয়েছে ল্যাকটোজ নামক শর্করা যা গর্ভাবস্থায় খেলে এটি আপনার হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করতে পারে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
- শরীরের পানি শূন্যতা দূর করেঃ গর্ভাবস্থায় অনেকে পানির শূন্যতায় ভুগতে থাকেন। এই সমস্যা দূর করতে আপনি খেতে পারেন দুধ। কারণ, দুধে উচ্চ পরিমাণে জলীয় অংশ থাকে যা আপনার শরীরকে হাইব্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। আর গর্ভাবস্থায় শরীর হাইড্রেটেড রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- অতিরিক্ত পরিমাণে দুধ খেলে এটি আপনার শরীরে ক্যালরি ও সরকারের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে না খেয়ে পরিমিত পরিমাণে দুধ পান করুন। যা আপনার এবং আপনার গর্ভের সন্তানের জন্য উপকারী হবে।
গর্ভাবস্থায় খাওয়ার তালিকা
গর্ভাবস্থায় খাওয়ার তালিকা সকলেরই জেনে রাখা উচিত। এই সময় সর্বদা একটি সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা অনুসরণ করা উচিত। যা কিনা আপনার এবং শিশুর সুস্থতার জন্য সহায়ক হবে। সে হিসেবে আপনি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন, মিনারেলস, প্রোটিন, ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।নাস্তার সময় আপনি বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন-
কলা, বেরি, আম, কমলা, পেয়ারা স্ট্রবেরি, লাল আপেল এবং দই বা ওটস খেতে পারেন। মধ্যাহ্নভোজের
খাবারে আপনি ডাল সবজি হালকা প্রোটিন যেমন মুরগি বা মাছ খেতে পারেন।
সন্ধ্যায় নাস্তার সাথে আপনি বিভিন্ন ধরনের ফলের সালাদ খেতে পারেন এটি
গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
রাতের খাবারে আপনি সুষম খাবার
হিসেবে বিভিন্ন ধরনের সবজি, প্রোটিনের উৎস হিসেবে মুরগির মাছ সয়া প্রডাক্টস
ইত্যাদি খেতে পারেন। তবে একটি কথা, আপনি গর্ভাবস্থায় যে খাবারই খান না
কেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে অবশ্যই ভুলবেন না। সম্ভব
হলে বিভিন্ন ফলের রস করে বা হারবাল চা পান করার অভ্যাস করুন।
এই সময় আপনি
বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি বা প্রক্রিয়াজ আর খাবার খাওয়া কমিয়ে দিন এবং
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যেমন এভোকাডো ও অলিভ অয়েল আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করে
নিন। এই খাদ্য তালিকা গর্ভাবস্থায় আপনার প্রয়োজনীয় পুষ্টির
চাহিদা পূরণে সহায়ক হতে পারে। গর্ভাবস্থায় আপনি কি খাবেন আর কি এড়িয়ে
চলবেন আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত
গর্ভাবস্থায় কলা খেলে এর উপকারিতা তো পাবেনই, সাথে আপনার আরো কিছু পুষ্টিকর ফলও খাওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবেনা তা আপনাকে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছি। এবার চলুন গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত এবং কেন খাবেন সে বিষয়ে জেনে নিন--- আপেলঃ আপেল এ প্রচুর পরিমাণ ফাইবার,ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ার ফলে গর্ভাবস্থায় এটি খেলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
- কলাঃ পটাশিয়াম এবং ভিটামিন বি৬ এর একটি ভাল উৎস হলো কলা। যা গর্ভাবস্থায় খেলে আপনার শরীরে অতিরিক্ত শক্তি প্রদান করে এবং সেই সাথে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
- পেয়ারঃ পেয়ারা রয়েছে ভিটামিন সি,ফাইবার এবং ফোলেট যা গর্ভাবস্থায় আপনার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- বেরি জাতীয় ফলঃ বেরি জাতীয় বিভিন্ন ফল যেমন- স্ট্রবেরি, চেরি এগুলো ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল। ফলে গর্ভাবস্থায় এই ফল খেলে আপনার ঈমান সিস্টেম শক্তিশালী হবে এবং ত্বকও ভালো থাকবে।
- আমঃ আম ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ফাইবারের ভালো উৎস যা গর্ভাবস্থায় আপনার চোখে স্বাস্থ্য কোষের বৃদ্ধিতে কাজ করে। তবে আম পরিমিত পরিমাণে খাওয়াটাই ভালো।
- কমলাঃ ভিটামিন সি-এর একটি দুর্দান্ত উৎস হচ্ছে কমলা। গর্ভাবস্থায় কমলা খেলে এটি আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে এবং শরীরকে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ থেকে রক্ষা করে।
- আঙ্গুর ফলঃ আঙ্গুর এ রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট। গর্ভাবস্থায় আঙ্গুর খেলে এটি আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- মিষ্টি আলুঃ মিষ্টি আলু বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ এবং ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় গর্ভাবস্থায় এটি আপনার হজমের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- জামঃ গর্ভাবস্থায় জাম খেলে এটি আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং হজম ক্রিয়া উন্নত করে।
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা মেনে তবেই খাওয়া উচিত। যদিও কলা গর্ভাবস্থায় উপকারী এবং পুষ্টিকর একটি ফল। তবুও কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। যেমন ধরুন-- আপনি গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে কলা খাবেন না। কেননা অতিরিক্ত কলা খেলে এটি আপনার শরীরে ক্যালরির মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে যা আপনার ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় আপনি প্রতিদিন ১টি বা ২টি করে কলা খাওয়ার অভ্যাস করুন। এর বেশি খাবেন না।
- কলাতে অতিরিক্ত ফাইবার থাকে যা খেলে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তেমন হলে কলা না খাওয়াটাই ভালো।
- অপরিপক্ক বাধা পাকা কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে ভালোভাবে পাকানো কলা খান। কারণ, অনেক সময় কলা রাসায়নিকভাবেও পাকানো হয়ে থাকে এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি এতক্ষণে নিশ্চয়ই অবগত হয়েছেন। গর্ভাবস্থায় আপনার খাদ্য তালিকার দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া উচিত অন্যান্য সময়ের থেকে। কারণ, এই সময় আপনার সাথে বেড়ে উঠছে আরেকটি প্রাণ। সুতরাং কোন খাবারটি খেলে উপকার হবে কোনটি খেলে ক্ষতি হবে তা জেনেশুনে তবেই খাওয়া উচিত।তবে
গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর ফল হিসেবে আপনি কলা খেতেই পারেন। ফলটি বেশ
সহজলভ্য হলেও প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর। যা আপনার এবং আপনার অনাগত সন্তানের
জন্যও ভীষণই উপকারী। সুতরাং গর্ভাবস্থার খাদ্য তালিকায় আপনি নিশ্চিন্তে উপকারী ফল হিসেবে কলা অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারেন। ভালো
থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী পোস্ট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url