শবে কদরের নামাজ কত রাকাত জানতে বিস্তারিত পড়ুন

শবে কদরের নামাজ কত রাকাত জানতে চান? শবে কদরের নামাজের নিয়ত কি? জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি আপনাকে একবার পড়ে নিতে হবে। শবে কদর যার অর্থ হলো মহিমান্বিত রজনী। যে রাত হাজার মাসের রাতের থেকেও শ্রেষ্ঠ।
শবে-কদরের-নামাজ-কত-রাকাত-জানতে-বিস্তারিত-পড়ুন
শবে কদরের নামাজের রাকাত এবং কদরের নামাজের নিয়ত সম্পর্কে আজ আমরা আলোচনা করবো। সেই সাথে আরো আলোচনা করব কদরের রাতের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। যা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। তাহলে চলুন আজকের মত আলোচনা শুরু করি।

পোস্ট সূচিপত্রঃ শবে কদরের নামাজ কত রাকাত

শবে কদরের নামাজ কত রাকাত

শবে কদরের নামাজ কত রাকাত এই প্রশ্ন কমবেশি সকলেই জানতে চান। আসলে শবে কদরের নামাজের নির্দিষ্ট কোন রাকাত সংখ্যা নেই। তবে এই রাতে বিশেষ কিছু সুন্নত ও নফল নামাজ পড়ার বিধান রয়েছে। শবে কদর ইসলামের একটি অত্যন্ত পবিত্র রাত। যা সাধারণত রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ কিংবা ২৯ তারিখে হয়ে থাকে।
 
এটি মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত, বরকত এবং মাগফিরাতের রাত হিসেবে পরিচিত। এই রাতেই পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছিল। সেই সাথে এটি এমন একটি রাত যে রাতে সারা বছরের জন্য প্রত্যেকের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। ঠিক সে কারণেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানগন শবে কদরের রাতে বিশেষভাবে ইবাদত করার চেষ্টা করেন। যাতে করে তারা আল্লাহর দয়া ও রহমত লাভ করতে পারেন।
শবে কদরের নামাজের রাকাতঃ
শবে কদরের রাতে বিশেষ নামাজ পড়ার বিধান রয়েছে। সাধারণত শবে কদর রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া উত্তম যা একটি নফল নামাজ। এই নামাজের সময় ধর্মপ্রাণ মুসলমানগন একাগ্রচিত্রে নিষ্ঠাভরে অনেক রাকাত নামাজ আদায় করতে থাকেন। তবে এই নামাজের সুনির্দিষ্ট কোন রাকাআত সংখ্যা নেই।
 
আবার এই নামাজের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা নিয়ে ইমাম ও আলেমদের মধ্যে বেশ মতভেদও রয়েছে। তবুও অধিকাংশের মতে শবে কদরের রাতে নামাজের জন্য কোন নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। সে হিসেবে অধিক রাকাত পড়া বিশেষভাবে উত্তম। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন শবে কদরের নামাজের ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিন-
  • তাহাজ্জুদ নামাজ
শবে কদরের রাতের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ নামাজ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ। তাহাজ্জুদ নামাজ মূলত রাতের নামাজ যা রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আদায় করতে হয়। শবে কদরের রাতে বিশেষভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া গুরুত্বপূর্ণ। তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দিষ্ট কোন রাকাত সংখ্যা নেই। সাধারণত দুই রাকাত দুই রাকাত করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে হয়।
 
তবে আপনি ৮ রাকাত, ১২ রাকাত, ২০ রাকাত বা আরও বেশি রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে পারেন। আরেকটি কথা খেয়াল রাখবেন, যদি সম্ভব হয় তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার আগে দুই রাকাত সালাতুল তাওয়াহু পড়ে নেবেন। অতঃপর আপনার ইচ্ছামত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করুন।
  • সালাতুল তাওবা
শবে কদরের রাত হলো মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা বা ক্ষমা প্রার্থনা করার রাত। আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা চেয়ে আপনি সালাতুল তাওবা ২ রাকাত বা আরও বেশি রাকাত নামাজ আদায় করতে পারেন। এই সালাতুল তাওবা নামাজের প্রধান উদ্দেশ্য হল আল্লাহর কাছে আপনার সমস্ত পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং ভবিষ্যতের গুনাহর কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখার প্রতিজ্ঞা করা।
  • নফল নামাজ
আপনি শবে কদরের রাতে সাধারণ নফল নামাজ ও আদায় করতে পারেন। আপনার যত ইচ্ছা তত নফল নামাজ পড়তে পারেন। হতে পারে ২ রাকাত, ৪ রাকাত, ৬ রাকাত অথবা আরো বেশি। আপনি যত বেশি রাকাত নামাজ পড়বেন আপনার সওয়াবের পাল্লা তত বেশি ভারী হবে। এই নামাজে আপনি পবিত্র কুরআনের বিশেষ কিছু সূরা যেমন- সূরা আল ইখলাস, সূরা আল-ফালাক্ব, সূরা আল-নাস,পড়তে পারেন। কারণ, এই সূরাগুলো অত্যন্ত বরকতময় সূরা।
শবে-কদরের-নামাজ-কত-রাকাত-জানতে-বিস্তারিত-পড়ুন
  • তারাবি নামাজ
যদিও রমজান মাসের প্রতি রাতেই তারাবি নামাজ পড়া হয়। তবে সবই কদরের রাতেও আপনি এই তারাবি নামাজ আদায় করতে পারেন। তারাবি নামাজ সাধারণত ২০ রাকাত হয়ে থাকে। তবে আপনি চাইলে ৮ রাকাত পর্যন্ত পড়তে পারেন। তাতে কোনো অসুবিধা নেই।
শবে কদরের বিশেষ দোয়াঃ
  • শবে কদরের রাতে একটি বিশেষ দোয়া পড়া হয়। যা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) শবে কদরের রাতে তার উম্মাহকে পড়ার উপদেশ দিয়েছেন। দোয়াটি হল- "আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফু তুহিব্বুল আফু ফা'ফু আন্নি"
  • এর বাংলা অর্থ হল- "হে আল্লাহ তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো, অতএব আমাকে ক্ষমা করো।" (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
বিশেষ দোয়া ও ইস্তেগফারঃ
  • শবে কদরের রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ ছাড়াও মহান আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করতে থাকুন এবং অতীতের সকল গুনাহ কাজের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিন। এই রাতে বেশি বেশি দোয়া ও ইস্তেগফার করার পাশাপাশি কুরআন তিলাওয়াত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কদরের রাতে কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে আরও বেশি রহমত ও বরকত পাওয়া যায়।
সম্মানিত পাঠক, উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বুঝতেই পারছেন শবে কদরের রাতে নামাজের রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয়নি। তবে অধিক রাকাত নামাজ পড়া, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা, আল্লাহর কাছে দোয়া ও ইস্তেগফার করা এবং কুরআন তিলাওয়াত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং একজন মুসলিম হিসেবে আপনি আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত এবং পূণ্য লাভের আশায় এই রাতে বিশেষ এবাদত করতে পারেন।

শবে কদরের নামাজের নিয়ত

শবে কদর রাতের নামাজের নিয়ত কিভাবে করতে হয় আমরা অনেকেই জানিনা। কিন্তু কদরের রাতের নামাজের নিয়ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, নিয়ত ছাড়া কখনোই নামাজ কবুল হতে পারে না। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন কদর রাতের নামাজের নিয়ত অর্থাৎ আপনি কিভাবে নিয়ত করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন-
 
নামাজে কিভাবে নিয়ত করবেনঃ
  • নামাজে নিয়ত করার পূর্বে আপনার মনোযোগ পুরোপুরি নামাজের উদ্দেশ্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে নিবদ্ধ থাকতে হবে। আপনি নিয়ত মনে মনে করতে পারেন, আবার উচ্চস্বরে বলেও করতে পারেন। তবে মনে মনে নিয়ত করাটাই বেশি সুন্নত। নামাজ শুরুর পূর্বে নিয়ত করতে কিছুটা সময় নেবেন এবং রাকাত শুরুর আগে সঠিকভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিয়ত রাখবেন।
আরবি ও বাংলা নিয়তঃ
  • আপনি নামাজের নিয়ত আরবিতে করতে পারেন আবার  বাংলা ভাষাতেও করতে পারেন। অর্থাৎ আপনার যে ভাষা সে ভাষাতে নিয়ত করলেই চলবে। নিয়তি আরবি ভাষাতে হবে- "নাওয়াইতুআন উছলিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাকআতাই ছালাতি লাইলাতুল কদর-নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা- জিহাতিল কা'বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার"
  • এর বাংলা অর্থ হলো- " আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য শবে কদরের দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম - আল্লাহু আকবার।"
সম্মানিত পাঠক, এই নামাজের নিয়ত সঠিকভাবে করতে হবে এবং মনের মধ্যে দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে যে আপনি এই নামাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রহমত লাভের উদ্দেশে আদায় করছেন। নিয়ত সঠিকভাবে করার পর আপনি নামাজ শুরু করতে পারেন এবং মহান আল্লাহতালার কাছ থেকে তাঁর রহমত ও বরকত লাভের আশায় প্রার্থনা করতে পারেন।

শবে কদরের নামাজের নিয়ম

শবে কদরের নামাজের নিয়ম কি? শবে কদরের নামাজের রাকাত সংখ্যা কত তা জেনেছেন। কিন্তু শবে কদরের নামাজ আপনি কিভাবে কোন নিয়মে পড়বেন? দেখুন শবে কদরের নামাজ পড়ার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। অর্থাৎ অন্যান্য নফল নামাজ আপনি যেভাবে আদায় করেন ঠিক সেভাবে শবে কদরের নামাজ ও আদায় করবেন। 
 
আবার কেউ যদি এই রাতে নফল নামাজ আলাদা নিয়ম করে পড়েন সেক্ষেত্রে এটি বিদআত বলে গণ্য হবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শবে কদরের নামাজের নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম বর্ণনা করেননি। সুতরাং বিদআত সৃষ্টিকারীদের প্রতি আল্লাহর রাসূল কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এজন্য কদরের রাতে নফল নামাজ পড়লে অন্যান্য সময়ের নফল নামাজের মতই 
 
আপনি সানা, সূরা ফাতিহা, সূরা মিলানো, তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ এবং এ দোয়া মাসুরা সবকিছুই স্বাভাবিক নিয়মে করতে হবে। আপনি শবে কদরের নফল নামাজ ২ রাকাত করে যত বেশি পড়তে পারবেন ততই বেশি সওয়াব পাবেন। নামাজ শুরুর পূর্বে প্রথমেই নিয়ত করে নেবেন সঠিকভাবে যা আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। 
 
নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর আয়াতাল কুরসি, সূরা ইখলাস, সূরা ক্বদর ইত্যাদি সূরা মিলিয়ে পড়লে অধিক সওয়াব পেতে পারেন। এভাবে আপনি ১২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করার চেষ্টা করবেন। যদি সম্ভব হয় এর বেশি যত রাকাত নামাজ আদায় করবেন ততই ভালো। আপনার যদি উপরিউক্ত সূরাগুলো না জানা থাকে
 
সেক্ষেত্রে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর আপনার জানা আছে এমন প্রতি রাকাতে মিলিয়ে পড়লেই চলবে। এছাড়াও আপনি সালাতুল তাওবা, সালাতুল তাজবিহ, সালাতুল হাজত নামাজও আদায় করতে পারেন। পাশাপাশি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে অর্থাৎ শেষ রাতে কমপক্ষে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ সালাত অবশ্যই আদায় করার চেষ্টা করবেন।

মহিলাদের শবে কদরের নামাজের নিয়ম

মহিলাদের শবে কদরের নামাজের নিয়ম কি? দেখুন মহিলাদের জন্য শবে কদরের নামাজের আলাদা বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। অর্থাৎ মহিলাদের শবে কদরের নামাজের নিয়ম ঠিক পুরুষের মতোই। একজন পুরুষ যেভাবে নামাজ আদায় করবে ঠিক তেমনি একজন মহিলাও একইভাবে কদরের নামাজ আদায় করবে। তবে কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। 
 
যেমন ধরুন- যদি কোন মহিলার হায়েজ বা নিফাস থাকে সেক্ষেত্রে তিনি নামাজ আদায় করতে পারবেন না। তবে হায়েজের সময় নামাজ আদায় ব্যতীত অন্যান্য কার্যক্রম যেমন- দোয়া, জিকির, ইস্তেগফার, তাসবিহ ইত্যাদি করতে পারবেন। মহিলারা সাধারণত বাড়িতে নামাজ করতে অভ্যস্ত। কিন্তু যদি কোন স্থানীয় মসজিদে যেতে চান,
 
সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে আপনার পোশাক পরিচ্ছদের ওপর। যেন আপনি ইসলামী শরীয়াহ্ অনুযায়ী পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করে সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিকতা নিয়ে ইবাদত করতে পারেন। তাছাড়া শবে কদর বা লাইলাতুল কদরের নামাজ ঠিক কত রাকাত তা খানিক আগেই আজকের আলোচনায় জেনেছেন।

শবে কদরের দোয়া কখন পড়তে হয়

শবে কদরের দোয়া কখন পড়তে হয় তা আমরা অনেকেই জানি আবার অনেকেই জানিনা। শবে কদরের রাত অত্যন্ত পবিত্র রাত হিসেবে বিবেচিত এবং এই রাতে মহান আল্লাহতালা বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত ও ক্ষমা বর্ষণ করেন। সাধারণত রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাত গুলোর মধ্যে যেকোনো একটি রাতে লাইলাতুল কদর সংঘটিত হয়ে থাকে।
 
অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলিম মুমিন ব্যক্তি লাইলাতুল কদরের এই রাত্রি পাওয়ার জন্য রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ পালন করে থাকেন। তাছাড়া আমাদের প্রিয় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম আমৃত্য ইতিকাফ পালন করেছেন। সেই সাথে এই রাতে বিশেষ একটি দোয়া পাঠ করার কথাও বলেছেন। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
 
একবার আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কি দোয়া পড়বো? ঠিক তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম যে দোয়াটির কথা বললেন সেটি হল- "আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফু তুহিব্বুল আফু ফা'ফু আন্নি।" এর বাংলা অর্থ হল-"হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।" (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
 
সুতরাং প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলিম ব্যক্তির উচিত রমজান মাসের শেষ দশকের প্রতি রাতে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার জন্য বিশেষ এই দোয়াটি বেশি বেশি করে পাঠ করা। এটি একটি বিশেষ দোয়া যা বিশেষ করে শবে কদরের রাতেই পাঠ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অনেক হাদিসে কদরের রাতে আল্লাহর কাছে বিভিন্ন প্রকার দোয়া ও ইবাদত করার কথা বলা হয়েছে।
 
আবার আপনি আরো দোয়া ও আযকারও পড়তে পারেন। যেমন- "আল্লাহুম্মা ইগফিরলি ওয়ার লি'আবি ওয়া লি'আমি ওয়া লি'খাওয়ানি ওয়া লিখাওয়াতি।" এর অর্থ হল- "হে আল্লাহ! আমাকে, আমার পিতা মাতাকে, আমার ভাই বোনদেরকে ক্ষমা করুন।"
  • দোয়া পড়ার সময়ঃ
কদরের রাতের এই দোয়াটি আপনি সিজদারত অবস্থায় দোয়া কুনুতে কিংবা নামাজ শেষে মোনাজাত করার সময় পড়তে পারেন। এছাড়াও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করার সময়, উঠতে বসতে, কিংবা যেকোনো কাজের ফাঁকে অধিক পরিমাণে এই দোয়াটি পাঠ করতে পারেন। তবে শবে কদরের রাতের দোয়া পড়ার বিশেষ সময় হল রাতের তৃতীয় প্রহরে অর্থাৎ সেহরি শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত।

লাইলাতুল কদরের নামাজের সময়

লাইলাতুল কদরের নামাজের সময় কখন এ প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। আসলে লাইলাতুল কদরের নামাজের সময় নির্দিষ্ট নেই। তবে কদর রাতের শেষ এক তৃতীয়াংশ সময়টুকু নামাজের জন্য অন্যান্য সময় থেকে অধিক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া রাতের প্রথম ভাগে বা মাঝের অংশে নামাজ পড়লেও কোন সমস্যা নেই।
 
আপনি যদি কদরের রাতে নামাজ পড়তে চান তবে এশার নামাজের পর শুরু করে রাতের যেকোনো সময় অব্দি পড়ে নিতে পারেন। তবে রাতের শেষ অংশে নামাজ পড়ার সওয়াব বেশি। সে হিসেবে কদর রাতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইবাদত করতে বলা হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত আছে যারা কদরের রাতে ইবাদত করবে তারা মহান আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে বিশেষ পুরস্কার লাভ করবে।
 
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কদরের রাতে নামাজ এবং ইবাদত করবে আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন। সাধারণভাবে সালাতুল তাহাজ্জুদ, নফল নামাজ, সালাতুল তাওবা, কুরআন তেলাওয়াত, তাসবিহ, আকবর এবং দোয়া করার জন্য উত্তম একটি রাত হল কদরের রাত। যেহেতু লাইলাতুল কদর
 
বা শবে কদরের সময় নির্দিষ্ট ভাবে জানা যায় না তাই রমজানের শেষ ১০ দিন অতিরিক্ত ইবাদত করা, নফল নামাজ আদায় করা, ইস্তেগফার, জিকির করা উত্তম। বিশেষত ২৭ রমজানকেই আমরা অনেকেই লাইলাতুল কদর করে মনে করে থাকি। কিন্তু না! ২১, ২৩, ২৫ বা ২৯ রমজানেও কদরের রাত হতে পারে।

শবে কদরের নামাজ জামাতে পড়া যাবে কি

শবে কদরের নামাজের রাকাত সংখ্যা কত তা ইতিমধ্যেই আজকের আলোচনায় জেনেছেন। কিন্তু শবে কদরের নামাজ জামাতে পড়া যাবে কি? এই বিষয়টি সম্পর্কে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। যদিও কদরের রাতে অতিরিক্ত ফজিলত বরকতের আশায় রাতভর অনেকেই ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকেন।
 
কিন্তু যে ভুলটি করে থাকেন সেটি হল জামাতের সাথে নামাজ আদায়কে গুরুত্ব দেন না। অথচ ফরজ ইবাদতের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি নফল ইবাদতের থেকে। তাই বলবো শবে কদর রাতে অন্তত এশা এবং ফজরের নামাজ আপনি জামাতের সাথে আদায় করার চেষ্টা করবেন। খেয়াল রাখবেন, কোনভাবেই যেন জামাতের সাথে নামাজ ছুটে না যায়। 
 
তাছাড়া হাদিসে বলা হয়েছে, "যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ে সে যেন সারারাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ল।"(মুসলিম হাদিস: ৬৫৬)। আবার বর্তমান সময়ে কদরের রাত উপলক্ষে মসজিদে মসজিদে বিশেষ জামাতের আয়োজন করা হয়। কিন্তু যদি এটি নতুন কোন রীতি হিসেবে তৈরি করা হয় সেক্ষেত্রে ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে এবং তা বিদআত বলে গণ্য হবে। আর ইসলামিক শরীয়তে বিদআত একেবারেই পরিহার করা উচিত।

শবে কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য

শবে কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য খুবই গভীর। এই রজনীর বরকত সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে একটি সূরাও অবতীর্ণ হয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফে কদরের রাতকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এটিকে এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এবার চলুন শবে কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য বিস্তারিত জেনে নিই-
শবে-কদরের-নামাজ-কত-রাকাত-জানতে-বিস্তারিত-পড়ুন
  • কুরআন নাযিল হওয়ার রাতঃ শবে কদর হল সেই রাত যেদিন মহান আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদ আসমান থেকে পৃথিবীতে অবতীর্ণ করেন। কুরআনে বলা হয়েছে, "আমরা এই কুরআনকে শবে কদরে নাযিল করেছি।" ( কুরআন ৯৭:১). এই রাতেই পবিত্র মক্কার হেরা পর্বতের গুহায় মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হযরত জিবরাঈল (আ:) এর মাধ্যমে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উপর মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআন নাযিল করেন।
  • হাজার মাসের চেয়েও উত্তমঃ শবে কদরের রাত এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে মহান আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআন এ ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, "শবে কদর এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।" (কুরআন 97:3)
  • ফেরেশতাদের আগমনঃ কদরের রাতে ফেরেশতারা পৃথিবীতে নেমে আসেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, "এই রাতে ফেরেশতা এবং জিব্রাইল (আ:) পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন এবং তারা প্রত্যেকটি কাজের উপর শান্তি ও প্রশান্তি নিয়ে আসেন।" (কুরআন ৯৭: ৪). এটি এমন একটি বরকতময় ও পুণ্যের রাত যেখানে ফেরেশতারা দোয়া ও আল্লাহর প্রশংসায় তাসবিহ পাঠ করতে থাকে।
  • গুনাহ মাফের রাতঃ কদরের রাত কে গুনাহ মাফের রাতও বলা হয়ে থাকে। কদরের রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের সকল গুনাহ মাফ করে দেন। বিশেষ করে যারা মন থেকে আল্লাহর নিকট তওবা করে তারা আল্লাহর মাগফিরাত লাভ করে। হাদিসে এসেছে, "যে ব্যক্তি শবে কদরে ঈমান ও ও আশা নিয়ে ইবাদত করবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে (বুখারী, মুসলিম)
  • রহমত ও মাগফিরাতের রাতঃ শবে কদরের রাত আল্লাহর বিশেষ রহমত, মাগফিরাত এবং আনুকূল্য লাভের জন্য উপযুক্ত একটি রাত। এ রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত মাগফিরাত প্রদানে অনুগ্রহ করেন।
  • দোয়া কবুলের রাতঃ কদরের রাতে আল্লাহতালা তাঁর বান্দার দোয়া কবুল করে নেন। যারা এই রাতে দোয়া করেন তাদের প্রার্থনা আল্লাহ একে একে গ্রহণ করেন এবং তাদের জন্য কল্যাণ ও শান্তি দান করেন। হাদিসে এসেছে, "শবে কদরে যিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন তার দোয়া কবুল হবে।"
  • শান্তির রাতঃ শবে কদর মূলত পৃথিবীতে শান্তি এবং শান্তির বার্তা নিয়ে আসে। এই রাতে সারা পৃথিবী শান্ত থাকে এবং মানুষের অন্তরে এক শান্তির অনুভূতি জাগ্রত হয়।
  • আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগঃ নৈকটতলাভের একটি বিশেষ সুযোগ হল কদরের রাত। যারা এই রাতে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকেন, দোয়া, দোয়া জিকির তাজবীহ পাঠ, কুরআন তেলাওয়াত সালাত এবং অন্যান্য নফল ইবাদত করেন তারা আল্লাহর বিশেষ রহমত ও মাগফিরাত লাভ করে থাকেন।
  • ঐশী সান্তনা ও প্রেরণাঃ শবে কদর শুধুমাত্র এক রাতের ইবাদতের বিষয় নয় বরং এটি একজন মুসলমানের আত্মিক প্রেরণা ও আত্মশুদ্ধির সময়। শবে কদরের মানুষ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে, তওবা করে এবং নতুনভাবে জীবনে পরিবর্তন আনতে সংকল্প করে।
  • আত্মশুদ্ধি ও তাওবার সুযোগঃ পাপমুক্তির এক সুযোগ হল শবে কদরের রাত। যারা পাপী তারা এই রাতে তওবা করে আল্লাহর নিকট ক্ষমতা প্রার্থনা করতে পারেন। আল্লাহ বিশেষভাবে এ রাতে তাওবা কারীদের ক্ষমার ঘোষণা করে দেন।
  • মানবজাতির মুক্তির দিশারীঃ পৃথিবীর সকল মানব জাতির মুক্তির দিশারী হিসেবে কদরের রাতকে গণ্য করা হয়। মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, "রমজান মাস! এমন একটি মানুষ যে মাসে কোরআন নাযিল করা হয়েছে মানবের মুক্তির দিশারী ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শন রূপে।" ( সূরা-২ আল বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম শবে কদরের রাতের ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে। শবে কদরের রাত মূলত মুসলমানদের জন্য একটা বিরল উপহার। এটি কেবল শুধুমাত্র একটি রাত নয় বরং এটি এক বিশেষ সুযোগ যার মাধ্যমে মানুষ তাদের জীবন ও আখেরাতকে সুন্দর করতে পারে।

শবে কদর ২০২৫ কত তারিখে

শবে কদর ২০২৫ কত তারিখে জানেন কি? ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুসারে শবে কদর বা লাইলাতুল কদর মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র একটি রাত। যা রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের মধ্যে সংঘটিত হয়। শবে কদর সাধারণত ২১, ২৩, ২৫, ২৭ অথবা ২৯ রমজান রাতে হতে পারে। তবে প্রথাগত নিয়ম অনুসারে ২৭ রমজান রাতে শবে কদর বেশি পালিত হয়ে থাকে।
 
ঠিক সে হিসেবে বাংলাদেশের বেশিরভাগ ধর্মপ্রাণ মুসল্লী ২৭ শে রমজানের রাতকেই কদর হিসেবে ইবাদত বন্দেগি করে থাকেন। কিন্তু শবে কদরের তারিখ যেহেতু নির্দিষ্ট নয় তাই ২৭ তম রাতে শবে কদর হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। এ কারণে প্রত্যেক মুসলমানের উচিত রমজান মাসের বিজোড় শেষ ১০ দিন রাতগুলো শবে কদর উদযাপন করা।
 
যদিও প্রত্যেক বছর চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে শবে কদরের তারিখ নির্ধারিত হয়। কিন্তু রাসুল (সা:) বলেছেন তোমরা যদি শবে কদরের রাত পেতে চাও তাহলে রমজান মাসের শেষ বিজোড় দশ রাত তালাশ করো। তাই বলবো আপনারা রমজানের ২৭ তম রাতেই শবে কদর না মেনে শেষ দশ দিনের বিজোড় রাত গুলিকে শবে কদর ভেবে নামাজ আদায় করবেন।

কদরের রাতের বৈশিষ্ট্য

শবে কদরের নামাজ কত রাকাত পড়তে হয় তা ইতিমধ্যেই আমরা আপনাকে আজকের আলোচনার মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু মহিমান্বিত কদরের রাতের বৈশিষ্ট্য কি তা কি জানেন? মহিমান্বিত পবিত্র কদরের রাত, যা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত হিসেবে পরিচিত। সাধারণত রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় যেকোনো একটি রাতে
 
কদরের রাত সংঘটিত হয় এবং হাজার মাসের চেয়েও অধিক শ্রেষ্ঠ, মর্যাদাপূর্ণ ও বরকতপূর্ণ একটি রাত। কদরের রাতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এই রাতেই পবিত্র কুরআন প্রথম বার আসমান থেকে পৃথিবীতে নাযিল হতে শুরু করে। যা আল্লাহর বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহের নিদর্শন স্বরূপ। এই কদরের রাতের মর্যাদা কোরআন ও হাদিসে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। 
 
যেখানে বলা হয়েছে, এই রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের সমান। সুতরাং পবিত্র কদরের রাত আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার রাত। এ রাতে বান্দারা নিজেদের ক্ষমা, মাগফিরাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য বিশেষ সুযোগ পায়। পবিত্র এই রাতে মহান আল্লাহ তাআলা বান্দার সকল দোয়া কবুল করে নেন এবং তাদের পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেন। 
 
এই রাতকে শান্তির রাতও বলা হয়। কারন, এই রাতে প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর রহমত, শান্তি ও বরকত বয়ে আসে। তাই এই রাতে প্রত্যেক মুসল্লী ব্যক্তির ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকা উচিত। কারণ, এই রাতেই আল্লাহ তাআলা জান্নাতে প্রবেশের জন্য বান্দাদের জন্য এক বিশেষ পথ খুলে দেন। কদরের রাতের সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটি মানুষের জীবনের এক নবযাত্রা। 
 
যেখানে একটি মানুষ তার গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার সুযোগ পায় এবং আল্লাহর কাছে এক নতুন জীবনের প্রার্থনা নিয়ে ফিরে আসে। কদরের রাত চেনার বেশ কিছু আলামতের কথা হাদিসে এসেছে। এবার চলুন কি কি আলামত লক্ষণ দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন আজকের রাতটিই কদরের রাত হতে পারে-
  • প্রথম লক্ষণঃ আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, " ওই রাতের আলামত বা লক্ষন হলো, রাত শেষে সকালে সূর্য উদিত হবে তা উজ্জ্বল হবে। কিন্তু সে সময় তার কোন তীব্র আলোকরশ্মি থাকবে না।" (মুসলিম, হাদিস: ১৬৭০; ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ১৬৫৫)
  • দ্বিতীয় লক্ষণঃ উবাদাহ্ ইবনু সামাত (রা:) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "লাইলাতুল কদর শেষ ১০ রজনীতে রয়েছে। যে এই রাতে নিজের হিসাব নিতে দাঁড়াবে আল্লাহ তাআলা তার পূর্বের এবং পরের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। আর এই রাত্রি আছে বিজোড় রাত্রিগুলোতে: তৃতীয় পঞ্চম সপ্তম নবম এবং শেষ রাতে।
  • এ প্রসঙ্গে রাসূল (সাঃ) আরও বলেন, "লাইলাতুল কদরের আলামত হচ্ছে, স্বচ্ছ রাত, যে রাতে চাঁদ উজ্জ্বল হবে, আবহাওয়ায় প্রশান্তি থাকবে। না ঠান্ডা, না গরম। সকাল পর্যন্ত আকাশে কোন উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না। সে রাতের চাঁদের মতই সূর্য উঠবে আলোকরশ্মি ছাড়া। শয়তান সেই সময় বের হয় না।" ( মুসনাদ আহমদ, হাদিস: ২২৭৬৫)
  • তৃতীয় লক্ষণঃ আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে নবীজি (সাঃ) বলেন, "লাইলাতুল কদরের রাত্রি হবে প্রফুল্লময়। না গরম, না ঠান্ডা। সেদিন সূর্য উঠবে লাল বর্ণে তবে দুর্বল থাকবে।" ( ইবনু খুযাইমা, হাদিস: ২১৯২)
  • চতুর্থ লক্ষণঃ লাইলাতুল কদরের রাতের আলামত হিসেবে রাসুল সাঃ আরো বলেছেন, "লাইলাতুল কদর রয়েছে সপ্তম, অথবা নবম, অথবা বিংশ, যে রাতে নুড়ি পাথরের চেয়ে বেশি সংখ্যক ফেরেশতাগণ জমিনে নেমে আসে।" (মাজমাউল জওয়ায়িদ, হাদিস: ৩/১৭৮; সহীহ আল-জামী হাদিস: ৫৪৭৩)
  • পঞ্চম লক্ষণঃ পঞ্চম লক্ষণ হিসেবে কদরের রাতের চাঁদটি হবে একটি থালার টুকরোর মত। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত, আমরা রাসূল ( সা:) সামনে কদরের রাত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তখন তিনি বললেন, "তোমাদের মধ্যে কে সেটি স্মরণ রাখবে। যখন চাঁদ উদিত হবে থালার একটি টুকরোর ন্যায়।" ( ইমাম মুসলিম, আস সহীহ ২৬৭৯)
প্রিয় পাঠক, কদরের রাতের বিশেষ এই বৈশিষ্ট্য এবং আলামত দেখে আপনি এই রাত চিহ্নিত করতে পারেন। কদরের রাতের বিশেষত্ব শুধুমাত্র নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এ রাতের মধ্যে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের বিশেষ বরকত পাওয়া যায়।

শবে কদরের নামাজ কত রাকাত সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

শবে কদরের নামাজ কত রাকাত আশা করছি আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনি জানতে পেরেছেন। শবে কদরের রাত অত্যন্ত পবিত্র, মহিমান্বিত এবং বরকতময় রাত যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এই রাতেই মহান আল্লাহ তাআলা বান্দাদের মাগফিরাত দান করেন এবং তাদের প্রার্থনা কবুল করেন। প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য শবে কদরের রাতে
 
নফল নামাজ আদায় করা, দোয়া ও তাসবিহ পাঠ করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। এই রাতের বিশেষ আমল গুলি অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে এবং ঈমান দৃঢ় মজবুত করে। ঠিক সে কারণেই শবে কদরের রাতে আমাদের সকলেরই নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা উচিত। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url