বাচ্চাদের দাঁতে গর্ত হলে করণীয় কি বিস্তারিত জানুন
বাচ্চাদের দাঁতে গর্ত হলে করণীয় কি জানতে চান? দাঁতের গর্ত দূর করার ঘরোয়া উপায় কি কি? জানতে হলে আজকের পোস্টটি চট করে এক্ষুনি একবার পড়ে নিন। শিশুদের দাঁতে গর্ত হলে করণীয় এবং গর্ত দূর করার বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আজ আমরা আলোচনা করবো।
সাথে আরো আলোচনা করবো বাচ্চার দাঁত ব্যথা দূর করার কার্যকরী কিছু ঔষধ সম্পর্কে। যা অভিভাবক হিসেবে আপনার জেনে রাখাটাও জরুরী। তাহলে চলুন আর সময় ক্ষেপণ না করে আজকের মত আলোচনা শুরু করি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ বাচ্চাদের দাঁতে গর্ত হলে করণীয়
- বাচ্চাদের দাঁতে গর্ত হলে করণীয়
- দাঁতের গর্ত দূর করার ঘরোয়া উপায়
- ছোট বাচ্চাদের দাঁত ব্যথার ঔষধ
- দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হলে করণীয়
- শিশুদের দাঁত ব্যথায় করণীয়
- বাচ্চাদের দাঁত ব্যথার সিরাপ
- বাচ্চাদের দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয়
- বাচ্চাদের দাঁতে পোকা হলে করণীয়
- বাচ্চাদের দাঁত ক্ষয় হলে করণীয়
- বাচ্চাদের দাঁতে গর্ত হলে করণীয় সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
বাচ্চাদের দাঁতে গর্ত হলে করণীয়
বাচ্চাদের দাঁতে গর্ত হলে আপনার করণীয় কি? দেখুন বাচ্চাদের দাঁতে গর্ত হলে দেরি না করে খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দাঁতে গর্ত হলে তা দ্রুত দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে দাঁতের ব্যথা, ফোলা ভাব এমনকি ইনফেকশনও হতে পারে। এছাড়াও দাঁতের গর্ত থেকে আপনার শিশুর আরও নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।দাঁতে গর্ত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো দাঁতের ক্ষয় বা ক্যাভিটি। এই ক্ষয় হওয়ার পেছনে মূলত খাদ্যাভ্যাস বিশেষ করে চিনি বা মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া এবং সঠিকভাবে দাঁত পরিষ্কার না করা। আবার গর্তের কারণে খাদ্য কণা দাঁতের গর্তের ভেতর আটকে থাকতে পারে। যা দাঁতের ব্যাকটেরিয়া দিনকে দিন বৃদ্ধি করতে থাকে।
ঠিক এ কারণেই অভিভাবক হিসেবে আপনার বাচ্চার দাঁতের গর্তকে অতি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। আপনি যদি গর্ত দেখতে পান তাহলে অতি দ্রুত একজন ডেন্টিস্টের কাছে নিয়ে যান। দাঁতের গর্তের প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে শিশুদের জন্য সাধারণত কম্পোজিট বা প্যাডিং ভরাট ব্যবহৃত হয। যা দাঁতের গর্তের আকার অনুযায়ী পরবর্তীতে ঠিক করা হয়।
শুধু চিকিৎসা করলেই হবে না বরং দাঁতের গর্তের সমস্যা প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাথে চিনি, মিষ্টান্ন ও শর্করা জাতীয় খাবার আপনার বাচ্চাকে কম খাওয়াবেন। কারণ, এগুলি দাঁতের ক্ষয় ঘটাতে সাহায্য করে। মিষ্টির পরিবর্তে আপনি আপনার শিশুকে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন- ফল ও সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
পাশাপাশি দাঁত পরিষ্কার রাখার জন্য প্রয়োজনে একাধিকবার ব্রাশ করতে হবে, বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে। বাচ্চাদের দাঁতে গর্ত হলে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ফিলিং বা দাঁত ভরাট করা এটি করতে পারেন। এতে দাঁতের ক্ষয় পূর্ণ হয় এবং শিশু দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তি পায়। তবে গর্ত যদি গভীর হয় কিংবা ইনফেকশন হয় সেক্ষেত্রে চিকিৎসক রুট ক্যানালও করতে পারেন।
বাচ্চাদের দাঁতে গর্ত হলে যা করবেন
আবার দাঁতটি তুলেও ফেলতে পারেন। এছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি আরো কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। নিয়মিত ফ্লোরাইড ট্রিটমেন্ট দাঁতের সুরক্ষায় বেশ সাহায্য করে। দাঁতের গর্ত শুরুতে খুব সামান্য হলেও তা দ্রুত বাড়তে পারে এবং অন্যান্য দাঁতের মাঝেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা করে দাঁতের গর্ত সারিয়ে নেওয়া উচিত।
বাচ্চার দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অভিভাবক হিসেবে আপনাকেও কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন ধরুন-নিয়মিত ডেন্টিস্ট এর চেকআপে যাওয়া, দাঁতের মাড়ি শক্তিশালী করতে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, শাক-সবজি খাওয়ানো ইত্যাদি। মনে রাখবেন, আপনার শিশুর দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অভিভাবক হিসেবে আপনাকেই সচেতন থাকতে হবে।
দাঁতের গর্ত দূর করার ঘরোয়া উপায়
দাঁতের গর্ত দুর করার কার্যকরী কিছু ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে। যা হয়তো অনেকেই জানেন না। শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় সব বয়সের মানুষই দাঁতের ব্যথায় কম বেশি ভুগতে থাকেন। তবে কিছু প্রাকৃতিক উপায়ের মাধ্যমে আপনি দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারেন। চলুন এবার উপায় গুলো জেনে নিই -- লবণ পানিঃ দাঁতের সমস্যায় কুসুম গরম লবণ পানি অনেকটা ম্যাজিক এর মত কাজ করে। লবণ পানিতে কুলকুচি করার ফলে এই পানি আপনার মুখের ভেতর যেমন ব্যাকটেরিয়া জমতে দেয় না তেমনি দাঁতের ক্যাভিটিও ভালো করে। শুধু তাই নয়, লবণাক্ত এই পানি অ্যাসিড অপসারণ করে আমাদের মুখের পিএইচের স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলঃ লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু আপনি কি জানেন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবু দাঁতের জীবাণু খুব সহজেই ধ্বংস করতে পারে! এমনকি দাঁতের ক্যাভিটি থেকে যদি যন্ত্রণা হয় সেটিও দূর করতে পারে এক টুকরো লেবু। এর জন্য আপনি এক টুকরো লেবু মুখে নিয়ে চিবোতে থাকুন এবং কিছুক্ষণ পর কুসুম গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করে ফেলুন।
- নিম পাতার ব্যবহারঃ দাঁত ভালো রাখতে অনেকেই ব্রাশ হিসেবে নিম কাঠির মাজন ব্যবহার করেন। যা দাঁতের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং এতে থাকা ফাইবার আপনার দাঁতে প্লাক হতে দেয় না। নিম কাঠি দাঁতের ব্যবহারের পাশাপাশি আপনি নিম পাতাও ব্যবহার করতে পারেন। যদিও তেতো স্বাদের জন্য নিমপাতা অনেকে ব্যবহার করতে চায় না। কিন্তু দাঁতের ক্যাভিটি সারাতে নিম পাতার ভূমিকা অনবদ্য। এর জন্য আপনি কয়েকটি নিমপাতা কাঁচা চিবিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার দাঁতের ক্যাভিটি সারবে।
- ভিটামিন ডিঃ দাঁতের গর্ত সারাতে আপনি ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ বিভিন্ন খাবার যেমন- সামুদ্রিক বিভিন্ন ধরনের মাছ, ডিম, দুধ অলিভ অয়েল ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খেলে এটি ক্যাভিটির সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে।
- ফ্লুরাইড টুথপেস্টঃ এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যদি প্রতিদিন ফ্লোরাইড টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা হয় সেক্ষেত্রে আপনার দাঁতে কখনোই ক্যাভিটি হবে না। তাছাড়া ফ্লোরাইড দাঁতের ক্যাভিটির সমস্যা এবং দাঁতের এনামেল রক্ষা করতে দারুণ কাজ করে।
- মিষ্টান্ন এড়িয়ে চলুনঃ মিষ্টি বা চিনি জাতীয় যেকোন খাবার যতটা সম্ভব আপনি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কারণ, দাঁতের ক্যাভিটি সৃষ্টির পেছনে যে খাবারটি রয়েছে সেটি হল মিষ্টি জাতীয় খাবার। আর মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলেও খুব ভালো করে দাঁত পরিষ্কার করে ফেলুন।
- তিল বা নারিকেল তেলের ব্যবহারঃ দাঁতের গর্ত দূর করতে আপনি তিল বা নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য তিল বা নারিকেলের তেল আপনার দাঁতে ১০-১৫ মিনিটের মত লাগিয়ে রাখুন এবং কুলকুচি করে দাঁত ধুয়ে ফেলুন। ক্লিনিকাল একটি ট্রায়ালে দেখা গেছে নিয়মিত দাঁতের তেল কিংবা নারিকেল তেল ব্যবহার করলে দাঁতের প্লাক, জিঞ্জিভাইটিস কমে। সাথে দাঁতের ব্যাকটেরিয়াও কমতে থাকে।
- লবঙ্গের ব্যবহারঃ দাঁতের ক্যাভিটি সারাতে লবঙ্গ কিন্তু দারুণ উপকারী। কারণ, লবঙ্গে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এই উপাদানগুলি দাঁতের ক্যাভিটি সহজে অন্য তাতে ছড়াতে দেয় না।
- হলুদের ব্যবহারঃ দাঁতের গর্ত দূর করতে আপনি হলুদ গুঁড়ো ব্যবহার করতে পারেন। হলুদের গুড়া দাঁতের জন্য খুবই উপকারী। কারণ, হলুদে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী কিছু উপাদান। যা দাঁতের ব্যক্তিরা দূর করে ইনফেকশন কমায়। এর জন্য আপনি ২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো এবং পরিমাণ মতো পানি একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে আপনার দাঁতের গর্তে ব্যবহার করুন। তাতে দাঁতের ব্যথা অনেকটাই কমে গেছে।
- পেঁয়াজের ব্যবহারঃ আপনার ঘরে থাকা একটি পেঁয়াজ কেটে এর একটি স্লাইস আপনার আক্রান্ত তাদের ওপর বেশ কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখুন। এতে আপনার দাঁতের ক্ষয় যেমন রোধ হবে তেমনি ক্যাভিটি থেকেও মুক্তি পাবেন।
- ডিমের খোসার ব্যবহারঃ আপনি জেনে অবাক হবেন যে ফেলে দেওয়া ডিমের খোসাও আপনার দাঁতের জন্য উপকারী। কারণ, ডিমের খোসাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম কার্বনেট। এই ক্যালসিয়াম কার্বনেট দাঁতের ক্যাভিটি দূর করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি দাঁতের এনামেল পুনর্জীবিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- এর জন্য আপনি ফেলে দেওয়া ডিমের খোসা গুলো একটি পাত্রে কয়েক মিনিট সেদ্ধ করে নিয়ে সেগুলো শুকাতে দিন। এরপর খোসা গুলো ব্লেন্ড করে গুঁড়ো তৈরি করুন। এবার ডিমের খোসার গুড়োর সাথে বেকিং সোডা মিশিয়ে একটি পাউডার তৈরি করে ফেলুন। ব্যাস নিয়মিত এই গুড়ো আপনার দাঁতে মালিশ করতে থাকুন।
- হারবাল পাউডারঃ অনেক সময় দাঁতের ক্যাভিটির সাথে সাথে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত শুরু হয়। এর জন্য আপনি আপনার হাতের নাগালে থাকা কিছু ভেষজ উপাদান দিয়ে একটি হারবাল পাউডার তৈরি করে নিতে পারেন। আপনি হাফ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো, নিম পাতার গুঁড়ো ১ চা চামচ, এবং হাফ চা চামচ লবঙ্গ গুঁড়া একসাথে মিশিয়ে তৈরি করে ফেলুন হারবাল পাউডার। রোজ এই হারবাল পাউডার দিয়ে দাঁত মাজার অভ্যাস করুন। তাতে আপনার দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
- লবঙ্গের তেলঃ দাঁত ভালো রাখতে শুধু নারিকেল কিংবা দিলে তেল নয় বরং আপনি লবঙ্গের তেলও ব্যবহার করতে পারেন। লবঙ্গের তেল দিনে ২-৩ বার আপনার দাঁতের ক্ষতস্থানে লাগান। তাতে দাঁতের ব্যথা দূর হবে। প্রয়োজনে একটি তুলোর সাহায্যে আপনি লবঙ্গ তেল ফোঁটা ফোটা করে আপনার দাঁতের গর্ত গহবরে ব্যবহার করুন। এভাবে দাঁতে লবঙ্গের তেল দিয়ে ভিজিয়ে রাখলে ব্যথা অনেকটাই লাঘব হবে।
- পেয়ারা পাতাঃ পেয়ারা পাতাতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এটি দাঁতের ক্যাভিটি প্রতিরোধে সক্ষম। এর জন্য আপনি ফুটন্ত পানিতে পেয়ারা পাতার গুঁড়ো মিশিয়ে ঠিক মাউথ ওয়াশের মত করে ব্যবহার করুন।
- ফিটকিরির ব্যবহারঃ আপনার সাদা দাঁতের মাঝে গর্ত হয়ে কালো হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আপনি ফিটকিরি ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য ফিটকিরি এবং শিলা লবণ একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। নিয়মিত এই পেস্ট ব্যবহার করে আপনার দাঁত পরিষ্কার করুন। নিয়মিত এই পেস্ট ব্যবহারে আপনার দাঁতের ক্যাভিটির ব্যথা দূর হবে এবং দাঁত ভালো থাকবে।
- রসুনের ব্যবহারঃ মুখের ভেতরের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং দাঁতের ক্যাভিটি ব্যথা দূর করতে আপনি প্রতিদিন এক টুকরো রসুন খেতে পারেন। কারণ, রসুন খেলে এটি মুখের ভেতরের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
- তুলসী পাতাঃ আপনার এবং আপনার শিশুর দাঁতের গর্ত দূর করতে পারে তুলসী পাতায়। দাঁতের ক্ষয় রোধে এবং দাঁতের ব্যথা কমাতে তুলসী পাতার ভীষণই কার্যকরী। কারন, তুলসী পাতায় রয়েছে প্রাকৃতিক এন্টি ব্যাকটেরিয়াল। এর জন্য আপনি তুলসী পাতা রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে নিন এবং সেটি টুথপেস্টের মতো করে ব্যবহার করুন। সারাদিনে অন্তত একবার তুলসী পাতার গুঁড়ো দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন।
- ভিনেগারঃ দাঁতের গর্ত দূর করতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন ভিনেগার। ১ চা চামচ ভিনেগার এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে সেটি দিয়ে নিয়ম করে প্রতিদিন গার্গল করুন। আপনার দাঁতের ক্যাভিটির ব্যথা অনেকটাই দূর হবে।
- কলার খোসাঃ কলার খোসা দাঁতের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে এটি দাঁতের পোকা দূর করতে এবং দাঁত পরিষ্কার রাখতে ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন আপনি কলার খোসা আপনার দাঁতে এক মিনিটের জন্য হলেও ঘষুন। এতে করে দাঁত উজ্জ্বল থাকবে।
- বেশি করে পানি পান করুনঃ বেশি বেশি পানি খেলে দাঁতের উপর জমে থাকা ময়লা এবং জীবাণু দূর হয়ে যায় ফলে এটি দাঁতের গর্তরোধে সাহায্য করে এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তাই দাঁত ভালো রাখতে প্রতি এক ঘণ্টা পর পর আপনি পানি পান করুন এবং আপনার শিশুকেও পানি পানের অভ্যাস করান।
- এলোভেরার ব্যবহারঃ এলোভেরা প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক এবং দাঁতের প্রদাহ কমানোর জন্য ব্যবহার করতেই পারেন। তাছাড়া দাঁতের গর্ত কমাতেও সাহায্য করে অ্যালোভেরা। আপনি এলোভেরার জেল দাঁতে লাগিয়ে কিছুটা সময় রেখে দিন। এরপর ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এভাবে দিনে একবার ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
- কমলার খোসাঃ কমলার খোসা প্রাকৃতিক এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ সম্পন্ন। তাই কমলা খাওয়ার পর কমলার খোসা ফেলে না দিয়ে সেটি রোদে শুকিয়ে মিহি গুঁড়ো করে নিন। টুথপেস্ট ব্যবহারের পাশাপাশি দাঁতে কমলার খোসার গুঁড়ো ব্যবহার করুন দিনে অন্তত একবার। তাতেও আপনার দাঁতের ক্যাভিটি দূর হতে পারে।
প্রিয় পাঠক, এই ঘরোয়া উপায় গুলি নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার শিশুর দাঁতের গর্ত এবং অন্যান্য দন্তজনিত সমস্যা কিছুটা হলেও কমতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ধরে যদি দাঁতে গর্ত থাকে এবং ব্যথা বৃদ্ধি পায় তাহলে বলবো অবশ্যই একজন দন্ত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ গ্রহণ করুন।
ছোট বাচ্চাদের দাঁত ব্যথার ঔষধ
ছোট বাচ্চাদের দাঁত ব্যথার ঔষুধ কি কি খাওয়াবেন? দেখুন ছোট বাচ্চাদের দাঁত ব্যথার জন্য আপনি নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন। তবে তা অবশ্যই শিশুদের জন্য নিরাপদ হতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত। আবার শিশুদের দাঁত ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের বয়স ও ওজন অনুযায়ী সঠিক ডোজ নির্ধারণ করাটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত প্যারাসিটামল, এমিফেন শিশুদের জন্য দাঁতের ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এবার চলুন শিশুর বয়স ভেদে এই ওষুধগুলো ব্যবহারের নিয়ম ও ডোজ সম্পর্কে জেনে নিন -প্যারাসিটামল
প্যারাসিটামল সাধারণত যেকোনো ধরনের ব্যথা নাশক ঔষধ হিসেবে কাজ করে। সুতরাং এটি দাঁতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আপনি আপনার শিশুকে প্যারাসিটামল সিরাপ বা ট্যাবলেট খাওয়াতে পারেন।
বয়স অনুযায়ী ডোজ
এমিফেন সেবন বিধি
প্যারাসিটামল ছাড়াও দাঁতের ব্যথার জন্য আপনি আপনার শিশুকে এমিফেন সিরাপও খাওয়াতে পারেন। এটি সাধারণত শিশুদের ব্যথা এবং জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। বিশেষত যখন শিশুদের দাঁত ওঠে বা দাঁতের ব্যথায় ভুগছে। তবে এর ডোজ ও ব্যবহার সঠিক পরিমাণে দেওয়া উচিত।
প্রিয় পাঠক, উপরিউক্ত ঔষধ সেবন করার পূর্বে আপনার কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে। যেমন ধরুন-
ওষুধ দেওয়ার আগে আপনার বাচ্চার ওজন ও বয়স অনুযায়ী সঠিক ডোজ নির্ধারণ করে নিন।
প্যারাসিটামল সাধারণত যেকোনো ধরনের ব্যথা নাশক ঔষধ হিসেবে কাজ করে। সুতরাং এটি দাঁতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আপনি আপনার শিশুকে প্যারাসিটামল সিরাপ বা ট্যাবলেট খাওয়াতে পারেন।
বয়স অনুযায়ী ডোজ
- ২-৩ মাসঃ বয়স আপনার শিশুর বয়স যদি ২-৩ মাস হয় এবং ওজন ৪-৫ কেজি হয় সেক্ষেত্রে ১.২৫ মিলিমিটার প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়াতে পারেন।
- ৩-৬ মাসঃ শিশুর বয়স যদি ৬ মাসের মধ্যে হয় এবং ওজন ৬-৮ কেজি হয় সে ক্ষেত্রে আপনি ২.৫ মিলিলিটার প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়াতে পারেন।
- ৬-১২ মাসঃ আপনার শিশুর বয়স ৬-১২ মাসের মধ্যে হলে এবং ওজন ৮-১০ কেজি হলে আপনি ৩ মিলিলিটার প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়াতে পারেন।
- ১-৫ বছরঃ ১ থেকে ৫ বছর বয়সের শিশুদের এবং যাদের ওজন ১০-১৫ কেজি তাদের সর্বোচ্চ ৫ মিলিলিটার পর্যন্ত প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়ানো যায়।
- ৬-১২ বছরঃ আবার আপনার শিশুর বয়স যদি ৬-১২ বছর হয় এবং ওজন ১৫-২৫ কেজি হয় তাহলে আপনি অনায়াসে ১০ মিলিলিটার প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়াতে পারেন।
এমিফেন সেবন বিধি
প্যারাসিটামল ছাড়াও দাঁতের ব্যথার জন্য আপনি আপনার শিশুকে এমিফেন সিরাপও খাওয়াতে পারেন। এটি সাধারণত শিশুদের ব্যথা এবং জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। বিশেষত যখন শিশুদের দাঁত ওঠে বা দাঁতের ব্যথায় ভুগছে। তবে এর ডোজ ও ব্যবহার সঠিক পরিমাণে দেওয়া উচিত।
- ৬ মাস - ১ বছরঃ আপনার শিশু যদি ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে হয় তাহলে প্রতিদিন ৫ মিলি করে দিনে অন্তত ৩ বার এটি সেবন করান।
- ২ বছর - ৪ বছরঃ শিশুর বয়স ২-৪ বছরের মধ্যে হলে আপনি প্রতিদিন ৩ বার ১০মিলি করে এমিফেন সেবন করাতে পারেন। তাতে কোন অসুবিধা নেই।
- ৫ বছর - ৮ বছরঃ আপনার শিশু যদি ৫-৮ বছরের মধ্যে হয় সেক্ষেত্রেও প্রতিদিন ৪ বার করে ১০ মিলি ঔষধ সেবন করাতে পারবেন।
- ৯ বছর - ১২ বছরঃ ৯-১২ বছর বয়সের শিশুদের প্রতিদিন চারবার ১৫ মিলি করে এমিফেন সেবন করানো যায়।
প্রিয় পাঠক, উপরিউক্ত ঔষধ সেবন করার পূর্বে আপনার কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে। যেমন ধরুন-
ওষুধ দেওয়ার আগে আপনার বাচ্চার ওজন ও বয়স অনুযায়ী সঠিক ডোজ নির্ধারণ করে নিন।
- প্যারাসিটামল এবং এমিফেন কখনো একসাথে খাওয়াবেন না। কারণ, অতিরিক্ত ডোজের কারণে আপনার শিশুর শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।
- ওষুধ ব্যবহারের পর যদি ব্যথা বা শারীরিক উপসর্গ বৃদ্ধি পায় সে ক্ষেত্রে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- আবার দাঁতের ব্যথা যদি দীর্ঘদিন যাবত থাকে সেক্ষেত্রে ডেন্টিস্ট এর শরণাপন্ন হওয়াটাও জরুরী।
দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হলে করণীয়
দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হলে করণীয় কি? বাচ্চার দাঁতে গর্ত হলে কি করা উচিত তা জেনেছেন কিন্তু দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হলে কি করবেন? দাঁতের ইনফেকশন বিষয়ে আমরা অনেকেই সচেতন নই। কিন্তু আপনি কি জানেন চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে দাঁতের ইনফেকশন কিংবা ব্যথা হলে সেটাকে কখনোই হালকাভাবে নেওয়া উচিত না।কারণ, দাঁতের যেকোনো ধরনের সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হলে সেটি থেকে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের জটিল রোগ। তো চলুন এবার জেনে নিই দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হলে আপনার করণীয় সম্পর্কে-
- ডেন্টিস্টের পরামর্শ গ্রহণঃ দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হলে প্রথমেই আপনার একজন দন্ত চিকিৎসক বা ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া উচিত। যদি ইনফেকশন খুবই গুরুতর হয় সেক্ষেত্রে ডেন্টিস্ট আপনাকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও চিকিৎসা যেমন ধরুন- রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট, এক্স-রে, ওপিজি এক্সরে, ইনফেকশন দূর করার জন্য এন্টিবায়োটিক ইত্যাদির জন্য পরামর্শ দেবে। ইনফেকশন সাধারণত মাড়ি বা দাঁতের ভেতর থেকে শুরু হয়। ফলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ম মেনেই আপনার চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
- রুট ক্যানেল পদ্ধতিঃ দাঁতের ইনফেকশন দূর করতে অনেক সময় চিকিৎসকরা রুট প্যানেল পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকেন। এই পদ্ধতিতে চিকিৎসক আপনার মাড়িতে ছড়িয়ে পড়া সংক্রমণ ও জমে থাকা পূজ অপসারণ করে ফেলেন।
- দাঁত তুলে ফেলাঃ যখন রুট ক্যানেল পদ্ধতি কার্যকরী হয় না ঠিক তখন শেষ পদক্ষেপ হিসেবে চিকিৎসক আপনার দাঁতটি তুলেও ফেলতে পারে।
- অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণঃ আপনার দাঁতের ইনফেকশন যদি ব্যাকটেরিয়াল কারণে হয় তাহলে চিকিৎসক আপনাকে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার পরামর্শ দেবেন। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে এটি ইনফেকশন কমাতে এবং অন্য দাঁতে ছড়িয়ে পড়া রোধ করবে। দাঁতের অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে সাধারণত এমোক্সিসিলিন, ক্লিনডামাইসিন, মেট্রোনিডাজল ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।
- দাঁত ফ্লস করাঃ দাঁতের ইনফেকশন প্রতিরোধে আপনাকে দিনে অন্তত একবার দাঁত ফ্লোস করতে হবে। যাতে করে দুই দাঁতের মাঝে জমে থাকা খাদ্যকনা পরিষ্কার হয়।
- গরম পানিতে কুলকুচি করাঃ দাঁতের ইনফেকশন দূর করতে ঘরোয়া উপায় হিসেবে আপনি এক কাপ গরম পানিতে আধা চা চামচ পরিমাণ লবণ মিশিয়ে সেই লবণ পানি দিয়ে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত কুলকুচি করুন। সারাদিনে এভাবে ২-৩ বার করতে থাকেন। এতে আপনার দাঁতের ব্যথা দূর হবে। কারন, এটি একটি প্রাকৃতিক এন্টাসেপটিক যা ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সহায়ক।
- মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করুনঃ আপনি চাইলে মাউথ ওয়াশও ব্যবহার করতে পারেন। অ্যান্টিসেপটিক মাউথ ওয়াশ যেমন- ক্লোরোহেক্সিডিন ব্যবহারে দাঁতের ভেতরের জীবাণু অনেকটাই কমে যায় এবং মাড়ির ইনফেকশনও কমে।
- অ্যালোভেরা জেল বা তেল ব্যবহারঃ দাঁতের জন্য অ্যালোভেরা প্রাকৃতিক এন্টি ইনফ্লামেটরি ও এন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। সুতরাং আপনি দাঁতের গোড়ায় অ্যালোভেরা জেল লাগালে তাতে ব্যথা কমবে এবং ইনফেকশনও নিয়ন্ত্রণে আসবে। অ্যালোভেরা জেল ছাড়াও আপনি নারিকেল তেল কিংবা মেথি তেলও ব্যবহার করতে পারেন।
- স্টেরয়েড ক্রিম বা ইনজেকশনঃ গামের সংক্রমণ গুরুতর হলে এবং খুব বেশি প্রদাহ হলে ডেন্টিস্ট আপনাকে স্টেরোয়েড ক্রিম বা ইনজেকশন ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারে। এটি প্রদাহ কমাতে এবং ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
- দাঁত পরিষ্কার রাখাঃ দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো বিভিন্ন ধরনের জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। তাই বলবো দাঁত পরিষ্কার রাখতে আপনি নিয়মিত দুই বেলা বিশেষ করে সকালে এবং রাতে ব্রাশ করুন। প্রয়োজনে মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন।
- ধূমপান বন্ধ করুনঃ আপনি কি ধূমপানে অভ্যস্ত? তাহলে বলবো আজ থেকেই ধূমপান এড়িয়ে চলুন যদি আপনার দাঁত ভালো রাখতে চান। কারণ, ধূমপান দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন এবং অন্যান্য গাম সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে।
- খাদ্যাভাসে পরিবর্তনঃ দাঁতে যেন কোন প্রকার ইনফেকশন না হয় সেজন্য আপনার রোজকার খাদ্যাভ্যাসের দিকেও নজর রাখতে হবে। বিশেষ করে চিনি যুক্ত খাবার, কোমল পানীয় এবং বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া থেকে আপনাকে বিরত থাকতে হবে। এর পরিবর্তে আপনাকে খেতে হবে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, ফলমূল এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন- কমলা, লেবু, পেপে ইত্যাদি।
- শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোঃ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আপনি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম, সুস্থ জীবন যাপন যোগ ব্যায়াম ইত্যাদি করার অভ্যাস করুন। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে যা আপনার দাঁতের ইনফেকশন প্রতিরোধেও কাজ করবে।
- জীবাণু প্রতিরোধক টুথপেস্ট ব্যবহার করাঃ বাজারে বিভিন্ন ধরনের দাঁতের জীবাণু প্রতিরোধক উপাদান সমৃদ্ধ টুথপেস্ট পাওয়া যায়। যা গাম ইনফেকশন এবং দাঁতের অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। সাথে চেষ্টা করুন ফ্লোরাইড যুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে।
- সঠিক টুথব্রাশঃ আপনি দাঁত ব্রাশ করার জন্য নরম ব্রিস্টেলের টুথব্রাশ ব্যবহার করুন।
- ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণেঃ প্রাকৃতিক উপায় দাঁতের ইনফেকশন দূর করতে আপনি প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হিসেবে হলুদ ব্যবহার করতে পারেন। ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো পানিতে মিশিয়ে দাঁতের গোড়ায় লাগালে ইনফেকশন অনেকটাই কমে যায়। তাছাড়া কলাপাতার রস ব্যবহার করলেও মাড়ির প্রদাহ কমে।
শিশুদের দাঁত ব্যথায় করণীয়
শিশুদের দাঁত ব্যথায় করণীয় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। অধিকাংশ শিশুই মুখ এবং দাঁতের ব্যথায় কষ্ট পায়। বিশেষ করে যখন খাবার খায় খাবার ঠিকমত চিবোতে পারে না এবং কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। আবার ব্যথার স্থানও ঠিকমতো চিহ্নিত করতে পারে না। এক্ষেত্রে অভিভাবক হিসেবে আপনাকে উদ্যোগী হতে হবে।কারণ, প্রাথমিক অবস্থায় আপনি যদি আপনার শিশুর দাঁতের ব্যথাকে গুরুত্ব না দেন তাহলে পরবর্তীতে সেটি আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং আপনার শিশুর দাঁতের ব্যথায় আপনাকে যা যা করতে হবে-
ফেনামিন প্লাস সিরাপের ডোজ এবং ব্যবহার
ফেনামিন প্লাস সিরাপ মূলত বাচ্চাদের দাঁত ব্যথার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি দাঁতের ব্যথা এবং ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে। এই সিরাপটি প্যারাসিটামল এবং ক্লোরোফেনিরামিন এর সমন্বয়ে তৈরি। ফেনামিন প্লাস সিরাপ এন্টি ইনফ্লামেটরি সিরাপ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বাচ্চার বয়স অনুযায়ী ফেনামিন প্লাস সিরাপ এর সাধারণ ডোজ এবং ব্যবহার পদ্ধতি জেনে নিন-
বয়স অনুযায়ী ফেনামিন সিরাপের ডোজ
- প্রথমেই বলবো আপনি আপনার শিশুর খাবারের দিকে নজর দিন। অর্থাৎ আপনার শিশুকে অবশ্যই খুব বেশি গরম বা খুব বেশি ঠান্ডা খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখবেন।
- নিয়মিত ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করে আপনার শিশুর দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাদ্য বের করুন।
- সামান্য কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে আপনার শিশুকে কুলকুচি করান। তাতে দাঁতের ব্যথা অনেকটাই দূর হবে।
- দাঁতের ব্যথা সারার অন্যতম দাওয়াই হলো লবঙ্গ। কারণ লবঙ্গতে এমন সব উপাদান রয়েছে যা দাঁতের ব্যথা এবং যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে খুব দ্রুত কাজ করে। তাই আপনার সন্তানের যে দাঁতে ব্যথা সেখানে একটি ছোট্ট লবঙ্গ চেপে ধরতে বলুন। ব্যাস, কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যথা কমে যাবে।
- আপনি কি জানেন আপনার ঘরের কোণে পড়ে থাকা এক টুকরো রসুন আপনার সন্তানের দাঁতের ব্যথা দূর করতে পারে! হ্যাঁ, রসুন এ রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুন। আপনি রসুন থেঁতো করে তার একটি পেস্ট বানিয়ে নিন এবং সেই পেস্ট আপনার শিশুর দাঁতের ব্যথার স্থানে বেশ কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পরেই ব্যথা গায়েব হয়ে যাবে।
- শিশুর দাঁতের ব্যথা দূর করার আরেকটি অন্যতম হাতিয়ার হল ঠান্ডা পানির সেক দেওয়া। এর জন্য আপনি একটি কাপড়ে বরফ মুড়িয়ে আপনার শিশুর গালের ওপর থেকে সেক দিতে থাকুন কয়েক মিনিট। এ কাজটা করলে খুব দ্রুত দাঁত ও মাড়ির ব্যথা দূর হতে পারে।
- শিশুর দাঁতের ব্যথা দূর করতে আপনি নরম কিছু পেইন কিলার যেমন- প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করতে পারেন। তবে এই ওষুধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিবেন।
- আপনার শিশুকে বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড, চিনি যুক্ত খাবার, অতিরিক্ত গরম খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখুন। কারণ, এগুলো দাঁতের ব্যথা বাড়াতে কাজ করে।
- আপনার শিশুর দাঁত ব্যথা প্রতিরোধে প্রিভেনশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিকভাবে দাঁত পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি সঠিকভাবে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাবার অভ্যাস করতে হবে।
- শিশুর দাঁত ব্যথা প্রতিরোধে আপনি আপনার শিশুকে বিশেষ টুথপেস্ট ব্যবহার করাতে পারেন। যেগুলো দাঁত ব্যথায় প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
- আপনার শিশুর দাঁতের ইনফেকশন প্রতিরোধে প্রয়োজন তাদের বয়স উপযোগি ব্রাশ ও টুথপেস্ট। ৬-৪ মাস বয়সী শিশুর দুধ দাঁতের জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন ফ্লুরাইডবিহীন টুথপেস্ট। আবার ৫-১২ বছর বয়সের শিশুদের জন্য বাজারে ব্যালেন্সড ফ্লুরাইড টুথপেস্ট পাওয়া যায়।
- সুতরাং টুথপেস্ট কেনার সময় ব্যালান্স ফ্লুরাইড আছে কিনা সেটি দেখে অবশ্যই কিনবেন। এই টুথপেস্ট বয়স ভেদে তিন ধরনের পাওয়া যায়। এর মধ্যে ০-৫ বয়সী শিশুদের জন্য জিরো ফ্লুরাইড, ৫-১২ শিশুদের জন্য ব্যালেন্সড ফ্লুরাইড (৫০০-৬০০ পিপিএম) এবং বড়দের জন্য শুধু ফ্লোরাইড (১০০০ পিপিএম)
বাচ্চাদের দাঁত ব্যথার সিরাপ
বাচ্চাদের দাঁত ব্যথার সিরাপ সাধারণত দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- দাঁত ওঠা, দাঁতের মাড়ি ব্যথা ইত্যাদি কারণে ব্যবহার করা হয়। বাচ্চাদের দাঁতে গর্ত হলে প্রতিকার হিসেবে যেমন বেশ কিছু করণীয় রয়েছে ঠিক তেমনি দাঁত ব্যথা হলেও ব্যথা নিরাময়েও কিছু সিরাপ রয়েছে। এই সিরাপ গুলো ব্যবহারের ফলে আপনার শিশু দাঁতের ব্যথা থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পেতে পারে। এবার চলুন জেনে নিন আপনার শিশুর দাঁতের ব্যথার জন্য কোন কোন সিরাপ কিভাবে ব্যবহার করবেন-ফেনামিন প্লাস সিরাপের ডোজ এবং ব্যবহার
ফেনামিন প্লাস সিরাপ মূলত বাচ্চাদের দাঁত ব্যথার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি দাঁতের ব্যথা এবং ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে। এই সিরাপটি প্যারাসিটামল এবং ক্লোরোফেনিরামিন এর সমন্বয়ে তৈরি। ফেনামিন প্লাস সিরাপ এন্টি ইনফ্লামেটরি সিরাপ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বাচ্চার বয়স অনুযায়ী ফেনামিন প্লাস সিরাপ এর সাধারণ ডোজ এবং ব্যবহার পদ্ধতি জেনে নিন-
বয়স অনুযায়ী ফেনামিন সিরাপের ডোজ
- ১-২ বছরঃ বাচ্চার বয়স ১-২ বছর হলে আপনি প্রতিদিন ৩-৪ বার করে ১.৫ মিলি ফেনামিন সিরাপ খাওয়াতে পারেন।
- ৩-৬ বছরঃ আপনার বাচ্চার বয়স যদি তিন থেকে ছয় বছরের মধ্যে হয় তাহলে প্রতিদিন ২ মিলি করে সর্বোচ্চ ৩-৪ বার ফেনামিন সিরাপ সেবন করাতে পারেন।
- ৭-১২ বছরঃ সাত থেকে বার বছরের শিশুদের প্রতিদিন সর্বোচ্চ তিন বার ৩ মিলি করে ফেনামিন সিরাপ খাওয়ানো যেতে পারে।
- খেয়াল করবেন সিরাপের সাথে একটি চামচ বা সিরিঞ্জ দেওয়া থাকে। সুতরাং সঠিক ডোজ মেপে খাওয়াতে সিরাপের প্যাকেটের সঙ্গে দেওয়া মাপের চামচ বা সিরিঞ্জ অবশ্যই ব্যবহার করবেন।
- সিরাপ খাওয়ানোর পর পর আপনার শিশুকে কয়েক মিনিট বিশ্রাম নিতে দিন। এছাড়া সিরাপ খাওয়ানোর কিছুক্ষণ পর বাচ্চাকে কিছু তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে পারেন। এতে আপনার শিশুর শরীরে সিরাপটি দ্রুত শোষিত হবে।
- আপনার বাচ্চার যদি এলার্জি কোন সমস্যা থাকে বা অন্য কোন মেডিসিন নিচ্ছে সেক্ষেত্রে সিরাপ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিন।
- প্রতিবার সিরাপ খাওয়ানোর মাঝে কমপক্ষে ৪-৬ ঘন্টার ব্যবধান রেখে তবেই খাওয়াবেন। একসাথে অত্যধিক পরিমাণে সিরাপ খাওয়ানো একেবারেই উচিত নয়।
বাচ্চাদের দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয়
বাচ্চাদের দাঁতের মাড়ি ভুলে গেলে করণীয় কি? সাধারণত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া কিংবা দাঁত ব্যথার সমস্যা বেশি দেখা যায়। কারণ, শিশুরা বেশিরভাগ মুখরোচক খাবার, কোমল পানীয়, চকলেট, আইসক্রিম খেতে বেশি পছন্দ করে এবং দাঁতের বারোটা বাজিয়ে ফেলে। যার ফলস্বরপ মাড়ি থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। বাচ্চাদের দাঁতে গর্ত হলে করণীয় সম্পর্কে আমরা এতক্ষণ জেনেছি । এবার আমরা জানবো বাচ্চাদের দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয় সম্পর্কে- বাচ্চার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করুনঃ আপনার শিশুর মাড়ি ফুলে যাওয়ার কারণ সঠিকভাবে বোঝার জন্য প্রথমেই খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিন। মাড়ি ফোলার বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলি আপনি খেয়াল করতে পারেন। যেমন- মাড়ি ফুলে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যথা হচ্ছে কিনা, মাড়িতে কোন ইনফেকশন বা পুঁজ দেখা যাচ্ছে কিনা, বাচ্চার শরীরের জ্বর আছে কিনা কিংবা শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক আছে কিনা।
- পানিজাতীয় নরম খাবার দিনঃ আপনার বাচ্চাকে নরম খাবার খাওয়ান। যাতে করে দাঁতের মাড়িতে কোনভাবে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। নরম খাবার হিসেবে আপনি বিভিন্ন ধরনের স্যুপ, দুধ, মাড়ি ভাত, ভাতের মাড় ইত্যাদি খাওয়াতে পারেন। তবে এই সময় খুব বেশি ঠান্ডা বা গরম খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। কেননা এগুলো মাড়ি ফুলে যাওয়া আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
- মাড়ি ম্যাসাজ করাঃ মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা কমানোর জন্য আপনি কিছু সময় হালকাভাবে মাড়ির ওপর হালকা ম্যাসাজ করতে পারেন। অবশ্যই শক্তভাবে মেসেজ করবেন না। এতে মাড়ির আরো ক্ষতি হতে পারে।
- ঠান্ডা সেকঃ বাচ্চার বাড়ি যদি অতিরিক্ত ফুলে যায় এবং তীব্র ব্যথা হয় সেক্ষেত্রে আপনি ঠান্ডা জলের সেক ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য একটি পরিষ্কার কাপড়ে আপনি বরফ মুড়িয়ে আপনার শিশুর গালে সেক দিতে পারেন। তবে বরফ সরাসরি মাড়ির সাথে লাগাবেন না।
- ঘরোয়া টোটকাঃ বাচ্চার মাড়ি ব্যথা দূর করতে ঘরোয়া টোটকা হিসেবে আপনি লবণ পানি এবং লেবু পানি দিয়ে কুলকুচি করাতে পারেন। তাতে মাড়ির ব্যথা কিছুটা হলেও কমবে।
- দাঁত পরিষ্কার রাখাঃ মাড়ি ফুলে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো তার নিয়মিত পরিষ্কার না করা। সুতরাং আপনার শিশুর দাঁত পরিষ্কার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে আপনি নরম ব্রাশ ব্যবহার করে আপনার শিশুর দাঁত পরিষ্কার করে দিন। যাতে দাঁতের ফাঁকে ব্যাকটেরিয়া কিংবা কোনো খাবারের কনা না জমে থাকে।
- দাঁত ওঠার সময় লক্ষণীয়ঃ অনেক সময় বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় মাড়ি ফুলে যায়। বিশেষ করে বাচ্চার বয়স যদি ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত হয়। যদিও এই ব্যথা দাঁত উঠার কারণে হয়। এটি এক সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আপনার বাচ্চা যদি অতিরিক্ত অস্বস্তি অনুভব করে ব্যথার জন্য সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
- পেইন রিলিফ এর ব্যবহারঃ বাচ্চার বাড়ি অতিরিক্ত ফুলে গেলে এবং তীব্র ব্যথা হলে শিশুদের জন্য অনুমোদিত বিভিন্ন পেইন রিলিফ ওষুধ যেমন- প্যারাসিটামল সেবন করাতে পারেন।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুমঃ বাচ্চার পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম মাড়ি ফুলে যাওয়ার সমস্যা অনেকটাই কমাতে পারে। কারণ, ঘুমের সময় শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক শক্তিশালী হয়, যা ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
- ডাক্তারের পরামর্শ নিনঃ যদি মাড়ি ফুলে যাওয়ার সাথে সাথে মাত্রাতিরিক্ত ব্যথা, জ্বর কিংবা অন্য কোন গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে তৎক্ষণিক আপনি একজন ডেন্টিস্টের সাথে যোগাযোগ করুন।
বাচ্চাদের দাঁতে পোকা হলে করণীয়
বাচ্চাদের দাঁতে পোকা হলে করণীয় সম্পর্কে অনেক অভিভাবকই জানতে চান। দেখুন শিশু হোক কিংবা বয়স্ক হোক দাঁতে কখনোই দৃশ্যমান পোকা থাকে না। বরং এটি এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যা দাঁতের ক্ষয় রোগের জন্য দায়ী। বিশেষ করে মিষ্টি ও চিনি জাতীয় খাবার, চকলেট, কোমল পানীয়, চুইংগাম, ক্যান্ডি ইত্যাদি খাওয়ার পর শিশুর মুখে এক প্রকার এসিড তৈরি হয়।এই এসিড দাঁতের উপরের শক্ত আবরণ বা এনামেল ক্ষয় করতে থাকে এবং দাঁতে কালো ছিদ্র বা গর্ত তৈরি হয়। যা ডেন্টাল ক্যারিজ নামে পরিচিত। প্রাথমিক অবস্থায় ডেন্টাল ক্যারিজের কোন ব্যথা না থাকলেও পরবর্তীতে তৈরি হয় জটিলতা। এবার চলুন আপনার বাচ্চার দাঁতে পোকা হলে আপনার কি একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত তা জেনে রাখুন-
- প্রথমেই বলব যদি আপনার বাচ্চার দাঁতে গর্ত দেখতে পান তাহলে আর দেরি না করে গর্ত জায়গাটি চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে ফিলিং করে ভরাট করে ফেলুন। কেননা এই ডেন্টাল ক্যারিজ ধীরে ধীরে ডেন্টিন থেকে অনেক সময় আরো গভীরে চলে যায়। ফলে ব্যথার তীব্রতাও প্রচন্ড বেড়ে যায়। ফলে বাচ্চা কষ্ট পেতে থাকে।
- দাঁতের পোকা প্রতিরোধে আপনার বাচ্চাকে প্রতিদিন দুই বেলা ব্যালেন্স ফ্লোরাইড টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করানোর অভ্যাস করুন। এমন টুথপেস্ট ব্যবহার করবেন যাতে এটি আপনার বাচ্চার দাঁতের এনামেল রিপেয়ার করে।
- চিনি যুক্ত পানীয় বা মিষ্টি খাবার, কফি, যে কোন ধরনের আঠালো মিষ্টি খাবার, জাঙ্ক ফুড, চকলেট, কোল্ড ড্রিঙ্কস, বিভিন্ন আর্টিফিশিয়াল জুস, খাওয়া থেকে শিশুকে বিরত রাখবেন। আর খেলে সাথে সাথে কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। যেন দাঁতের ফাঁকে কোন খাদ্য কণা জমে না থাকে।
- শুধু ব্রাশ করলেই হবে না, বরং প্রতিদিন সুতা বা ফ্লশ দিয়ে একবার হলেও দাঁত পরিষ্কার করাবেন।
- আপনার বাচ্চার দাঁতের পোকা দূর করতে বেশি করে পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। বিশেষ করে খাবার খাওয়ার পরে পানি খেলে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাদ্য বেরিয়ে আসে এবং দাঁত পরিষ্কার থাকে।
- দাঁতের রোগ এবং দন্তক্ষয়ের প্রাথমিক লক্ষণ চিহ্নিত করার পর আপনার শিশুকে নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে নিয়ে যান। ৬ মাস পরপর ডেন্টিস্টের পরামর্শ গ্রহণ করুন। একজন চিকিৎসক যদি আপনার বাচ্চার দাঁতের বোকা বুঝতে পারে তাহলে সেটি দ্রুত নিরাময় করা সম্ভব।
- দাঁতের এনামেল ঠিক রাখতে অতিরিক্ত অ্যাসিডিক খাবার খাওয়া থেকে আপনার শিশুকে বিরত রাখুন।
- আপনার বাচ্চাকে স্যালাইন পানি দিয়ে অথবা লবণ পানিতে গারগোল করাতে পারেন। যা মাড়ির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- দাঁতের ফাঁকে খাবার জমে পাশের দাঁতকে নষ্ট করে এমন ভাঙ্গা দাঁত, আক্কেল দাঁত এবং দাঁতের গোড়া প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সারিয়ে তুলতে হবে।
- দাঁতের প্লাক বা পাথর দূর করার জন্য বছরে দুইবার স্কেলিং করার চেষ্টা করবেন। এতে করে অতিরিক্ত যে আবরণটি আপনার দাঁতে ল্যাকটিক এসিড থেকে ক্যারিওজেনিক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটিয়ে দাঁতের ডেন্টাল ক্যারিজ সৃষ্টি করে সেটি প্রতিরোধ হবে।
বাচ্চাদের দাঁত ক্ষয় হলে করণীয়
বাচ্চাদের দাঁত ক্ষয় হওয়া সাধারণ একটি সমস্যা। তবে সময় মত সঠিক চিকিৎসা না করালে দাঁত ক্ষয় থেকে অনেক বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। আর বাচ্চাদের দাঁত ক্ষয়ের প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবস্থা নিলে ভবিষ্যতে আরো বড় সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এবার আপনাকে জানিয়ে দিব বাচ্চাদের দাঁত ক্ষয় রোধে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত-- দাঁতে ক্ষয় দেখা দিলে প্রথমেই দেরি না করে অতিসত্বর একজন দন্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
- যদি দাঁতের ক্ষয় অল্প পরিমাণে হয় সে ক্ষেত্রে ফিলিং করলেই চলবে। তবে ক্ষয় যদি গভীর হয় তাহলে পালপেকটমি অর্থাৎ বাচ্চাদের জন্য বিশেষ রুট ক্যানেল পদ্ধতি কিংবা দাঁত এক্সট্রাকশন করে নিতে পারেন।
- প্রতিদিন আপনার শিশুকে ফ্লোরাইড যুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দাঁতের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া দূর করতে দিনে অন্তত দুইবার বিশেষ করে প্রথম খাওয়ার পর এবং রাতে শোবার আগে একটি নরম সুতি কাপড় দিয়ে মাড়ি মুছে পরিষ্কার রাখুন।
- আপনার শিশু যদি ছোট হয় তাহলে বোতল কিংবা ফিডারে করে দুধ বা পানি পান করানো থেকে বিরত রাখুন। প্রয়োজনে চামচের সাহায্যে খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।
- রাতে আপনার শিশুকে ঘুমের মধ্যে খাওয়ানো পরিহার করে চলুন।
- আপনার বাচ্চার খাবারে চিনি, মিষ্টি বা মধু মিশিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- রাতে খাবার খাওয়ার পর আপনার আপনার বাচ্চা যখন পানি খাবে ঠিক সাথে সাথে পরিষ্কার নরম হয়ে যায় কাপড় দিয়ে বাচ্চার দাঁত এবং মাড়ি খুব ভালো করে মুছে দিন।
- আপনার পরিষ্কার আঙ্গুল দিয়ে মাঝে মাঝে আপনার শিশুর দাঁতের মাড়ি ম্যাসাজ করে দিন।
- আপনার শিশুর বয়স দুই বছর হয়ে গেলে প্রতিদিন দাঁত ফ্লস করুন।
- যে কোন খাবার খাবার পর শিশুকে গার্গল করতে শেখান।
- দাঁতের ক্ষতি হয় এমন মিষ্টি জাতীয় খাবার কিংবা মিষ্টি পানীয় পান করতে দেবেন না। যদি মিষ্টি পানীয় পান করাতে চান শিশুকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই দুপুরে খাবারের সময় করাবেন। তবে দিনে ছয় আউন্সের বেশি মিষ্টি পানীয় অবশ্যই না।
- আপনার শিশুর বয়স যদি ৮ বছরের কম হয় সেক্ষেত্রে দাঁত ব্রাশ করার সময় তাকে সহযোগিতা করুন। কারণ, আট বছর বয়সের কম বয়সী শিশুরা সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ করতে পারে না।
- সর্বোপরি প্রতি ছয় মাস অন্তর একবার আপনার শিশুকে ডেন্টাল সার্জনের কাছে মুখ ও দাঁতের নিয়মিত চেকআপের জন্য নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
বাচ্চাদের দাঁতে গর্ত হলে করণীয় সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
বাচ্চাদের দাঁতে গর্ত হলে করণীয় কি আশা করছি আজকের আর্টিকেল পড়ে এ সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। একটি শিশুর সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি দাঁতের স্বাভাবিক বিকাশ ও গঠনও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তবে শিশুর দাঁতের স্বাভাবিক বৃদ্ধির অন্তরায় হলো দাঁতের ক্ষয় রোগ।আর তাই শিশুকালে দাঁতের ক্ষয় রোগের যথাযথ চিকিৎসা না করলে এক সময় এর প্রদাহ দাঁতের মজ্জা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে এবং সাথে সাথে দাঁতও বিনষ্ট করে ফেলে। তাই শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মতো দাঁতেরও যত্ন নেওয়া উচিত। তাই অবহেলা না করে আজ থেকে আপনার শিশুর দাঁতের যত্ন নেওয়া শুরু করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url