পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে বিস্তারিত পড়ুন

পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আপনি কি অবগত আছেন? পুদিনা পাতা কিভাবে খাব? অনেকেই জানেন, আবার অনেকেই জানেন না। স্বাস্থ্য সুরক্ষা থেকে শুরু করে ত্বকের যত্ন এবং চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয় এই পুদিনা পাতা। 

পুদিনা-পাতার-ক্ষতিকর-দিক-সম্পর্কে-জানতে-বিস্তারিত-পড়ুন
আজকের পোষ্টে আমরা আলোচনা করবো পুদিনা পাতার নানান ক্ষতিকর দিক এবং ক্ষতিকর দিকগুলো এড়াতে আপনি এই পাতা কিভাবে খাবেন সে সম্পর্কে। সম্মানিত পাঠক, তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আজকের মত আলোচনা শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক 

পুদিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

পুদিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। সেটি আপনি রান্নার ক্ষেত্রে বলুন আর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বলুন না কেন পুদিনা পাতার জুড়ি মেলা ভার। পুদিনা পাতা বিশেষ করে এর সুস্বাদু সুঘ্রাণ ও স্বাদ এর জন্য পরিচিত। পুদিনা পাতায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ভিটামিন বি-৬, এবং ম্যাগনেসিয়াম।
পুদিনা পাতার এই খনিজ উপাদান গুলো আপনার পেটের গোলমাল, শ্বাসকষ্টের সমস্যা, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু কি তাই, ক্যান্সার প্রতিরোধেও পুদিনা পাতার ভূমিকা অনন্য। আবার এই পাতার অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দিতে পারে।
 
এ তো গেল স্বাস্থ্যে সুরক্ষার কথা। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াও ত্বকের যত্নে বিশেষ করে ত্বকের ব্রণ দূর করতে, ব্রণের দাগ দূর করতে, ত্বকের তেল তেলে ভাব কমাতে পুদিনা পাতা অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও চুলের যত্নেও পুদিনা পাতার কোন তুলনা হয় না। পুদিনা পাতা উপকারিতা কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহার করো উচিত নয়। তাতে উপকারের পরিবর্তে অপকার হতে পারে।
 
যেমন ধরুন- অতিরিক্ত পুদিনা পাতা ব্যবহারে এলার্জি কিংবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার গর্ভকালীন সময়েও এই পাতার ব্যবহার একেবারেই সীমিত রাখা উচিত। তাই বলবো স্বাস্থ্যকর এই পাতার উপকারিতা পেতে সঠিক মাত্রায় এবং সাবধানতার সাথে ব্যবহার করাই সবচেয়ে কার্যকরী।

পুদিনা পাতার উপকারিতা

পুদিনা পাতার উপকারিতার পাশাপাশি গুটিকতক অপকারিতাও রয়েছে। যদিও এর উপকারিতাই বেশি। বর্তমান সময়ে পুদিনার মত ভেষজ উপাদান নিয়ে গবেষণা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। আর তাই আজকে আমরা কথা বলব পুদিনা পাতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী নিয়ে।
  • পেটের সমস্যা দূর করেঃ প্রথমেই বলি, পুদিনা পাতা আপনার পাচনতন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। আপনার পেটের বদ হজম, গ্যাসের সমস্যা ইত্যাদি খুব সহজেই দূর করতে পারে পুদিনা পাতা। আবার পুদিনা পাতার তেল ব্যবহারে এটি আপনার পেটের মাংসপেশি শীতল করার পাশাপাশি হজম প্রক্রিয়াও উন্নত করে।
  • শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা প্রতিরোধেঃ শ্বাসযন্ত্রের যেকোনো সমস্যা যেমন ধরুন- এজমা, ব্রংকাইটিস, এবং নাক বন্ধ হওয়া ইত্যাদিতে পুদিনা পাতা দারুন কাজ করে।
  • মাইগ্রেনের ব্যথা কমায়ঃ আপনার কি প্রায়ই মাথা ব্যথা হয়? তাহলে বলবো আপনি পুদিনা পাতা সেবন করুন। কারণ, পুদিনা পাতার সুগন্ধ মাথা ব্যথা কমাতে বেশ কার্যকরী। তাছাড়া এতে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি গুণ মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে পারে।
  • ওজন কমাতে পুদিনা পাতাঃ আপনি আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন ঝরিয়ে ফেলতে চাইলে আজ থেকে নিয়ম করে পুদিনা পাতার ব্যবহার শুরু করুন। কারণ, পুদিনা পাতা শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে। যা আপনার ওজন কমাতে সহায়ক।
  • ত্বকের যত্নে পুদিনাঃ পুদিনা পাতার এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য আপনার ত্বকের যেকোনো ধরনের প্রদাহ যেমন- ব্রনের সমস্যা, ফুসকুড়ি এবং ব্রনের দাগ দূর করতে খুব ভালো কাজ করে। ফলে ত্বক সতেজ এবং উজ্জ্বল থাকে।
  • চুলের জন্য উপকারীঃ পুদিনা শুধু ত্বক নয়, চুলের জন্যও পুদিনা পাতা বিশেষভাবে উপকারী। নিয়মিত পুদিনা পাতা ব্যবহারে এটি আপনার মাথার রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাড়ায় এবং চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
  • পুদিনার ডিটক্সিফিকেশনঃ নিয়মিত পুদিনা পাতা ব্যবহারে এটি আপনার শরীর থেকে সব ধরনের বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করে। ফলে লিভার ও কিডনি সুস্থ থাকে।
  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করেঃ আপনারা যারা কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন তারা আজ থেকেই নিয়ম করে পুদিনা পাতার ব্যবহার শুরু করুন। কেননা এই পাতা কোলেস্টেরলের স্তর নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং সেই সাথে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
পুদিনা-পাতার-ক্ষতিকর-দিক-সম্পর্কে-জানতে-বিস্তারিত-পড়ুন
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ নিয়মিত নিয়ম করে পুদিনা পাতা ব্যবহার করলে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুন আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি থেকে আপনি খুব সহজেই সুরক্ষা পেতে পারেন।
  • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ পুদিনা পাতাঃ পুদিনা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে।
  • সর্দি কাশি নিরাময়েঃ পুদিনা পাতায় রয়েছে মেন্থল। এটি এক ধরনের সুগন্ধিযুক্ত ডিকনজেস্ট্যান্ট যা আটকে থাকা কফ খুব সহজেই বের করতে পারে। তাই সর্দি কাশি নিরাময়ে আপনি পুদিনা পাতা খেতে পারেন।
  • মানসিক উদ্বেগ কমাতেঃ পুদিনা পাতার সুঘ্রাণ মানসিক চাপ এবং মানসিক উদ্বেগ কমাতে বেশ ভালো কাজ করে। তাই অতিরিক্ত মানসিক যন্ত্রণায় ভুগলে আপনি পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও মুখ্য ভূমিকা পালন করে এই পুদিনা পাতা। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগলে আপনি আজ থেকেই পুদিনা পাতার ব্যবহার শুরু করতে পারেন। কারণ, এই পাতা রক্তচাপ কমাতে ভালো কাজ করে।
  • মৌখিক স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ গলার ব্যথা এবং মৌখিক যে কোন প্রদাহ কমাতে পুদিনা পাতা ম্যাজিক এর মত কাজ করে। সুতরাং মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আপনি মাউথওয়াশ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন এই পুদিনা পাতা।
  • দাঁত ভালো রাখেঃ পুদিনা পাতা কেবলমাত্র আপনার নিঃশ্বাসই সতেজ করে তা নয়। বরং এ পাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আপনার মুখের জীবাণু এবং দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে।
  • স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পুদিনাঃ আজকাল কি আপনার স্মৃতিশক্তি লোপ পাচ্ছে! কোন কথা মনে রাখতে পারছেন না। তাহলে আর সময় নষ্ট না করে আজ থেকেই নিয়ম করে পুদিনা পাতার রস খাওয়া শুরু করুন। তাতে দেখবেন আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বেড়ে যাবে এবং স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি পাবে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে পুদিনা পাতাঃ আপনি জেনে অবাক হবেন যে, পুদিনা পাতায় এমন কিছু উপকারী এনজাইম রয়েছে যা আপনার শরীরে প্রবেশ করার পর শরীরের ভেতরে ক্যান্সারের কোষ জন্ম নেওয়ার আর কোন সুযোগ থাকে না। ফলে ক্যান্সার থেকেও বাঁচতে পারেন পুদিনা পাতা খেলে।
  • পিরিয়ডের ব্যথা কমাতেঃ শুধু তাই নয়, মা-বোনদের পিরিয়ড জনিত ব্যথার উপশম ঘটায় এই পুদিনা পাতা। কারণ, পুদিনার এক্সট্র্যাক্ট ক্যাপসুলগুলো ব্যাথার তীব্রতা কমাতে ভালো কাজ করে।
  • অনিদ্রা দূর করতেঃ আপনি হয়তো জানেন না পুদিনা একটি ক্যাফেইন মুক্ত ভেষজ উপাদান। যা ব্যবহারে আপনার বেশি শীতল থাকে এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে পুদিনা খেলে ঘুম ভালো হয়। ফলে অনিদ্রা রোগ থাকলে আপনি আজ রাত থেকেই পুদিনা পাতা খাওয়া শুরু করুন।

পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক

পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিকও কম নয়। এর উপকারিতার পাশাপাশি বেশ কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। শুধু পুদিনা পাতা নয় যেকোনো খাদ্য উপাদান অতিরিক্ত ব্যবহারে তার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ঠিক তেমনি পুদিনা পাতার ক্ষেত্রেও তাই। এবার চলুন  অতিরিক্ত পুদিনা পাতার সেবনে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো জেনে রাখুন -
  • অতিরিক্ত পুদিনা পাতা ব্যবহারে আপনার পেটের প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে আপনার পেটে গ্যাস, অম্বল, পেট ব্যথা কিংবা বমি বমি ভাব হতে পারে।
  • পুদিনা পাতার অ্যান্টিএসিড বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত ব্যবহারে এটি এসিড রিফ্ল্যাক্সের সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে আপনার জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে।
  • মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে পুদিনা পাতার ব্যবহারে আপনার এলার্জির সমস্যা বিশেষ করে তকে চুলকানি এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পুদিনা পাতা সেবন করা মোটেও উচিত নয়। কারণ এই সময় মাত্রাতিরিক্ত পুদিনা পাতা ব্যবহারে এটি আপনার জরায়ু সংকোচনের কারণ হতে পারে। ফলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
  • প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণে পুদিনা পাতা ব্যবহারে আপনার দৃষ্টিশক্তির সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে যারা আগে থেকেই চোখের সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে।
  • আগেই বলেছি, পুদিনা পাতার রক্তচাপ কমাতে ভালো কাজ করে। সুতরাং যাদের নিম্ন রক্তচাপে সমস্যা রয়েছে তারা অতিরিক্ত পরিমাণে পুদিনা পাতা সেবন পরিহার করুন। কারণ, এতে আপনার রক্তচাপ আরো কমে যেতে পারে। যা কিনা আপনার শারীরিক দুর্বলতা এবং মাথা ঘোরার কারণ হতে পারে।
  • আপনাদের যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তারা অত্যধিক পরিমাণে পুদিনা পাতার সেবন করলে শ্বাসকষ্ট কিছুটা বাড়তে পারে।
  • পুদিনা পাতায় মেন্থল থাকে। যার অতিরিক্ত ব্যবহারে এটি আপনার আর্থাইটিসের উপসর্গ বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • আপনার শিশুকে অতিরিক্ত পুদিনা পাতা খাওয়ালে গলায় জ্বালাপোড়া এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • পুদিনা পাতার সাধারণত মূত্র-বর্ধক হিসেবে কাজ করে। তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহার আপনার মূত্রনালীতে অস্বস্তি বা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
সম্মানিত পাঠক, পুদিনা পাতার উপরিউক্ত ক্ষতিকর দিকগুলো এড়াতে আপনি নিয়ম মেনে পরিমিত পরিবারে পুদিনা পাতা সেবন করুন। তাতে আপনার অপকারের পরিবর্তে উপকারই হবে।

পুদিনা পাতা কিভাবে খাব

পুদিনা পাতা কিভাবে খেতে হয় বা খাওয়ার নিয়ম কি তা হয়তো অনেকেই জানেন না। এই পুদিনা পাতা খাওয়ারও বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। যে নিয়ম মেনে পুদিনা পাতা খেলে আপনি এর থেকে সর্বাধিক উপকার পেতে পারেন। এবার পুদিনা পাতা কিভাবে খাওয়া যায় সে সম্পর্কে জেনে নিন-
  • প্রথমেই , পুদিনা পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি সবসময় সতেজ এবং টাটকা পাতা খাওয়ার চেষ্টা করুন। শুকনো পাতা এবং প্যাকেটজাত পুদিনা পাতা খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন কারণ এতে পুষ্টি কম থাকতে পারে।
  • আপনি পুদিনা পাতা সরাসরি চিবিয়ে খেতে পারেন। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেলে আপনার ওরাল হাইজিন সুস্থ থাকবে।
  • আপনি চাইলে গরম পানিতে পুদিনা পাতা ভিজিয়ে এর চা তৈরি করেও খেতে পারেন। পুদিনার এই চা অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত এবং উপকারী।
  • আপনি পুদিনা পাতা কুচি কুচি করে সালাদের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে সালাদের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং খেতেও সুস্বাদু হবে।
  • যেকোনো ধরনের ফলের জুস বা স্মুদির সাথে আপনি পুদিনা পাতা যোগ করতে পারেন। এতে জুস খেতে আরো সুস্বাদু হবে।
  • আপনি মাংস রান্নাতেও ব্যবহার করতে পারেন পুদিনা পাতা।মাংস রান্নায় পুদিনা পাতা ব্যবহার করলে মাংসের স্বাদ আরো বেড়ে যায় এবং মাংসের তেলতেলেপনা ভাব কমে।
  • আপনি দইয়ের সাথে পুদিনা পাতা মিশিয়ে রাইতা তৈরি করে নিতে পারেন। এটি বিরিয়ানির সাথে খেতে দারুন লাগে।
  • আপনি চাইলে পুদিনা পাতা রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে মসলা হিসেবে রান্নার সাথে ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার রান্না করা খাবারের স্বাদ আরো বেড়ে যাবে।
ভুড়ি কমাতে পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম
  • পুদিনা জলঃ ভুড়ি কমাতে আপনি পুদিনা পাতা কুচি কুচি করে কেটে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। খুব বেশি নয় ৫-৬ মিনিট ভিজিয়ে রাখলেই হবে। এরপর পানি খেয়ে নেবেন তাইতো! ভুলেও না। বরং পুদিনা পাতা সহ এই পানি আপনি ফ্রিজে সারা রাতভর রেখে দিন এবং পরদিন এই পানি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এলে অল্প অল্প করে পান করুন। আপনি চাইলে এই পানির সাথে সামান্য লেবুর রস এবং শসা মিশিয়েও পান করতে পারেন। কিছুদিন পুদিনার এই জল ব্যবহারে আপনার ভুঁড়ি এমনিতেই কমে আসবে।
  • পুদিনা ও দইয়ের মিশ্রণঃ দই খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে। তবে এক্ষেত্রে মিষ্টি দই খাওয়া চলবে না। মিষ্টি দইয়ের পরিবর্তে আপনি টক দইয়ের সাথে পুদিনা পাতা কুচি কুচি করে মিশিয়ে নিতে পারেন। এটি আপনার পেটের জন্য যেমন উপকারী হবে তেমনি ওজন নিয়ন্ত্রণেও কাজ করবে।
  • পুদিনা পাতার চাঃ তা তো আপনি রোজই খান। কিন্তু মেদ বা ভুড়ি কমাতে আপনি খেতে পারেন পুদিনা পাতার চা। গরম জলে কয়েকটি শুকনো পুদিনা পাতা মিনিট দশে ফুটিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে এই চা। ভুড়ি কমাতে প্রতিদিন সকাল বিকাল এই পুদিনা তা আপনি পান করুন।
সম্মানিত পাঠক, আপনি পুদিনা পাতা কিভাবে এবং কোন উপায়ে খাবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দিয়েছি। তাই আর দেরি না করে আজ থেকেই উপরিউক্ত নিয়মে পুদিনা পাতার ব্যবহার শুরু করুন।

রান্নায় পুদিনা পাতার ব্যবহার

পুদিনা পাতার শুধু ক্ষতিকর দিকই নয়, বরং রান্নায় পুদিনা পাতার ব্যবহার করলে এটি রান্না করা খাবারের স্বাদ আরো দ্বিগুণ পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। পুদিনাপাতা রান্নায় একটি জনপ্রিয় এবং সুগন্ধি উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শুধু স্বাদ বৃদ্ধির জন্য নয় বরং রান্নায় পুদিনা পাতা ব্যবহারের বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে। এবার চলুন রান্নায় পুদিনা পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিন-
  • রান্নায় আপনি অন্যান্য মসলার মত পুদিনা পাতাও ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য পুদিনা পাতা রোদে শুকিয়ে ভালো করে গুড়ো করে নিন এবং মশলা হিসেবে রান্নায় ব্যবহার করুন। এতে আপনার রান্নার স্বাদ আরো বেড়ে যাবে।
  • বিরিয়ানি, পোলাও এবং কারী জাতীয় খাবারে পুদিনা পাতা ব্যবহার করলে এগুলো খেতে আরো সুস্বাদু হয়।
  • রান্নায় পুদিনা পাতা ব্যবহার করলে রান্না করা খাবারের স্বাদ এবং গন্ধ দুটোই বৃদ্ধি পায়। আপনি সালাদ, স্যুপ, স্যান্ডউইচ ছাড়াও আরো অন্যান্য বিভিন্ন পদের সাথে পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
  • আপনি যেকোনো ধরনের চাটনি বা আচার তৈরিতেও পুদিনা পাতার ব্যবহার করতে পারেন।
  • যেকোনো ধরনের মাংস রান্নায় মাংসের সাথে আপনি পুদিনা পাতা ব্যবহার করতেই পারেন। এতে রান্না করা মাংসের স্বাদ ও গন্ধ দুটোই বাড়বে।
  • আপনি চাইলে চা তৈরিতেও পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
  • তাছাড়া সালাদ, বোরহানি সহ যেকোনো ধরনের শরবত পুদিনা পাতা ব্যবহার করলে এটি খেতে আরো সুস্বাদু হয়।
রান্নায় পুদিনা পাতা ব্যবহারের টিপস
  • রান্নায় পুদিনা পাতা ব্যবহারের প্রধান টিপস হল আপনার রান্না যখন শেষ পর্যায়ে চলে আসবে ঠিক তখন খাবারের সাথে এই পুদিনা পাতা যোগ করবেন। তাতে পুদিনা পাতার তাজা গন্ধ এবং স্বাদ অটুট থাকবে।

পুদিনা পাতার জুসের উপকারিতা

পুদিনা পাতার নানাবিধ ক্ষতিকর দিক এড়াতে এই পাতা দিয়ে আপনি জুস তৈরি করেও খেতে পারেন।। পুদিনা পাতার জুস একটি সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর পানীয়। এর বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন পুদিনা পাতার জুসের উপকারিতা সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিন-
  • পুদিনা পাতার জুস আপনার পেটের জন্য উপকারী। বিশেষ করে এটি পেটের মাংসপেশিকে শিথিল রাখে এবং হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।
  • আপনার শ্বাসকষ্ট হলে কিংবা ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ হয়ে গেলে আপনি পুদিনা পাতার জুস খান। এতে শ্বাসকষ্ট দূর হবে।
  • নিয়মিত পুদিনা পাতার জুস খেলে এটি আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে। ফলে আপনার মেদ বা ভুড়ি কমে।
  • শুধু তাই নয়, পুদিনা পাতার জুস খেলে এটি দীর্ঘক্ষণ আপনার পেট ভরা রাখে। যা অতিরিক্ত খাবারের প্রতি আপনার চাহিদা কমায়।
  • পুদিনা পাতার জুসের তাজা গন্ধ ও স্বাদ আপনার মস্তিষ্কে একটা প্রশান্তি এনে দেয় এবং মনকে সতেজ করে। সুতরাং মানসিক চাপ উদ্বেগ কমাতে এই জুস অত্যন্ত উপকারী।
  • পুদিনা পাতার জুসে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি এবং ভিটামিন ডি। যার গুনে আপনি বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমণ থেকে খুব সহজেই রক্ষা পেতে পারেন।
  • পুদিনা পাতার জুসে থাকে রোজমেরিনিক এসিড নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আপনার শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া কমাতে কাজ করে।
  • নিয়মিত পুদিনার জুস পান করলে এটি আপনার রক্তকে পরিশোধিত করে।
  • গর্ভকালীন সময়ে সকালের শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে আপনি নিয়ম করে পুদিনা পাতার জুস খেতে পারেন। কারণ, এই সময় পুদিনা পাতার জুস খেলে মর্নিং সিকনেস অনেকটাই কমে যায়।
  • পুদিনা পাতার জুসে ব্যাকটেরিয়া বিরোধী এবং প্রদাহ রোধী উপাদান থাকে। বিধায় এটি যেকোনো ধরনের ওরাল ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে।
  • ঠান্ডা কাশি প্রতিরোধেও পুদিনা পাতার জুস বেশ উপকারী। এর জন্য গরম পানিতে কয়েক ফোটা পুদিনার রস দিয়ে সেই ভাপটুকু নাক দিয়ে টেনে নিন। এতে আপনার নাক পরিষ্কার হবে।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম পুদিনা পাতার জুস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। পুদিনা পাতার জুস খেলে শরীর যেমন সুস্থ থাকে তেমনি শরীরে একটা সতেজতা অনুভব হয়।

রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার

রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। তাছাড়া ত্বকের সমস্যাই ভুগছেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে। ত্বকের ব্রণ কালো দাগ শুষ্কতা ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন পুদিনা পাতা। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে পুদিনা পাতা তাকে কিভাবে ব্যবহার করা যায়? তাহলে চলুন এবারে ত্বকের যত্নে পুদিনা পাতার কিছু ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিন--
  • ব্রণ দূর করতেঃ সাধারণত যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের ব্রণের সমস্যা বেশি দেখা যায়। কিন্তু আপনি কি জানেন পুদিনা পাতার অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য আপনার এই ব্রণ দূর করতে পারে। এর জন্য আপনি পুদিনা পাতার পেস্ট আপনার ব্রণের ওপর শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানিতে ত্বক ধুয়ে ফেলুন।
  • ত্বকের ক্ষত নিরাময়েঃ যেকোনো ধরনের ক্ষত নিরাময় পুদিনা পাতার রস বেশ উপকারী। ত্বকের ক্ষতস্থান সারাতে আপনি পুদিনা পাতার রস লাগাতে পারেন। কারণ, এই পাতায় রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য যা আপনার ত্বকে মশার কামড়, চুলকানি, কাটা ছেঁড়া ইত্যাদি খুব সহজেই দূর করতে পারে।
  • ত্বকের বলিরেখা দূর করতেঃ আপনার ত্বকের বলিরেখা দূর করতে পুদিনা পাতা পেস্ট করে ত্বকে লাগান। এর কিছুক্ষণ পর সাধারণ তাপমাত্রার পানিতে ধুয়ে ফেলুন। ব্যবহারে আপনার ত্বকের বলি রেখা দূর হবে
  • ত্বক ঠান্ডা রাখতেঃ অনেকের ত্বকে খুব জ্বালাপোড়া হয়। জ্বালাপোড়া থেকে রেহাই পেতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন পুদিনা পাতার রস লাগান এবং মিনিট বিশেক পর ত্বক ধুয়ে ফেলুন। আপনার ত্বক ঠান্ডা থাকবে
  • ত্বকের ডার্ক সার্কেল দূর করতেঃ আপনার চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতে পারে এই পুদিনা পাতা। কারণ, পুদিনা পাতাতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। চোখের কালো দাগ দূর করতে রাতে ঘুমানোর আগে আপনি পুদিনা পাতা বেটে চোখের নিচে লাগিয়ে রাখুন। পরদিন সকালবেলা ধুয়ে ফেলুন।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেঃ পুদিনা আপনার ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে পেতে পুদিনা পাতার রসের সাথে টক দই এবং টমেটোর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগান। এতে আপনার ত্বক উজ্জ্বল হবে।
  • ত্বক পরিষ্কার রাখতেঃ পুদিনা পাতা ব্যবহারে এটি আপনার ত্বকের লোমকূপ থেকে ময়লা অপসারণ করে এবং ত্বক কোমল ও হাইড্রেটেড রাখে। এর জন্য আপনি পুদিনা পাতা বেটে এর সাথে ওটের গুড়া মিশিয়ে ভালো করে ত্বকে ম্যাসাজ করুন। ত্বকে লাগানোর প্রায় ২০ মিনিট পর ত্বক ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার ত্বক পরিষ্কার থাকবে।

পুদিনা পাতা কোথায় পাওয়া যায়

পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক ও উপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই জানতে চান পুদিনা পাতার কোথায় পাওয়া যায়। তাহলে জেনে রাখুন, আপনি পুদিনা পাতা স্থানীয় বাজারে এবং সবজির দোকানে খুব সহজেই পেয়ে যাবেন। আবার বর্তমানে অনলাইনে বেশ কিছু ই-কমার্স সাইট এবং কৃষক বাজারের প্লাটফর্মেও তাজা পুদিনা পাতা পাওয়া যায়। 
 
সেখান থেকেও আপনি পুদিনা পাতা সংগ্রহ করতে পারেন। অনলাইনে পুদিনা পাতা অর্ডার করার সুবিধা একটাই তা হল এরা আপনার বাড়িতে এসে ডেলিভারি দিয়ে যাবে। তাছাড়া কিছু হারবাল শপ থেকেও আপনি পুদিনা পাতা পেতে পারেন। আবার বর্তমানে বিভিন্ন সুপারমার্কেটে প্যাকেট জাত শুকনো পুদিনা পাতা পাওয়া যায়। আপনি চাইলে শুকনো পুদিনা পাতাও নিতে পারেন।

পুদিনা পাতার চা এর উপকারিতা

পুদিনা পাতার চা এর উপকারিতা কি? পুদিনা পাতার বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর দিক এড়াতে আপনি এই পাতা দিয়ে চা তৈরি করেও খেতে পারেন। পুদিনা পাতার চায়ের রয়েছে বিশেষ কিছু স্বাস্থ্যগুণ। তো চলুন পুদিনা পাতার চা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন-
পুদিনা-পাতার-ক্ষতিকর-দিক-সম্পর্কে-জানতে-বিস্তারিত-পড়ুন
  • পুদিনা পাতার চা আপনার পাচনতন্ত্রের জন্য ভীষণই উপকারী। কারণ, এই চা আপনার পেটের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে কাজ করে।
  • আপনার খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম, কম পরিমাণে পানি পান করা, ত্বকের সমস্যা এর সবকিছু থেকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র পুদিনা পাতার ভেষতা।
  • প্রতিদিন এক কাপ করে পুদিনা পাতার চা খেলে এতে থাকা মেন্থল আপনার ক্যান্সার প্রতিরোধ করবে। বিশেষ করে এই চায়ের গুনে আপনি প্রোস্টেট ক্যান্সার থেকে বাঁচতে পারেন।
  • পুদিনা পাতার চা নিয়মিত পান করলে এই চায়ের ভেষজ গুণ আপনার শরীরের শক্তি বাড়িয়ে দেয়।
  • পুদিনা পাতায় রয়েছে সব থেকে কম ক্যালোরি এবং কোলেস্টেরল। এই পাতার চা আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতেও খুব ভালো কাজ করে।
  • নিয়মিত নিয়ম করে সকাল বিকাল দুবেলা পুদিনা পাতার চা পান করলে আপনার ঘুম ভালো হবে এবং সেই সাথে অনিদ্রা দূর হবে।
  • আপনার যেকোনো ধরনের মানসিক চাপ, অফিসে কাজের চাপ, পারিবারিক অশান্তি ইত্যাদি সবকিছু থেকে মুক্তি পেতে নিয়ম করে পুদিনা পাতার চা খান।
  • আপনারা যারা নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ জনিত সমস্যায় ভুগছেন, বিভিন্ন ধরনের টুথপেস্ট ব্যবহার করেও দুর্গন্ধ দূর করতে পারছেন না। তারা আজ থেকেই পুদিনা পাতার চা খাওয়া শুরু করুন। কারণ, পুদিনা চায়ে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যটা আপনার মুখের ভেতরের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
  • নিয়ম করে পুদিনা পাতার চা খেলে আপনার হাতে পায়ের ব্যথা, গাটের ব্যথা ইত্যাদি সব ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন শুধুমাত্র এক কাপ পুদিনা পাতার চায়ের গুনে।
  • মাইগ্রেনের সমস্যা দূর করতে পুদিনা পাতার চা ভীষণই কার্যকরী। মাথা ব্যথা দূর করতে আপনি প্রতিদিন সকালে পুদিনা পাতার চা পান করুন। এতেই আপনার মাথাব্যথা গায়েব হয়ে যাবে।
  • শারীরিক ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং অবসন্নতা কমাতে আপনি চুমুক দিন পুদিনা পাতার চায়ে। এতে নিমিষের মধ্যে আপনার শারীরিক দুর্বলতা কেটে যাবে।
  • পুদিনা পাতার চা ত্বকের জন্যও উপকারী। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং ব্রণের সমস্যা দূর করতে আপনি নিয়মিত এই চা পান করুন।
পুদিনা পাতার চা তৈরি করবেন যেভাবে
  • পুদিনা পাতার চা তৈরি করতে আপনি প্রথমেই চায়ের জল ভালো করে ফুটিয়ে নিন। এরপর গরম জলে আপনি ৫-৭ শুকনো পুদিনা পাতা, কালিজিরা, আদা কুচি এবং গোলমরিচ দিয়ে মিনিট দশেক ফুটিয়ে নিন। ব্যাস এরপর চায়ের সাথে স্বাদমতো মধু যোগ করে পান করুন। আপনি চাইলে শুকনো পুদিনা পাতার পরিবর্তে তাজা পুদিনা পাতাও ব্যবহার করতে পারেন।

চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা

চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতাও কম নয়। শুধু ত্বক নয় বরং চুলের ক্ষেত্রেও পুদিনা পাতা সমান ভাবে উপকারী। এবার চলুন তুলে পুদিনা পাতা ব্যবহারের কিছু উপকারিতা জেনে নিন--
  • স্ক্যাল্প উন্নত করেঃ পুদিনা পাতার এন্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আপনার মাথার ক্যাল্পের যেকোনো ধরনের ইনফেকশন দূর করতে পারে।
  • চুল পড়া বন্ধ করেঃ নিয়মিত পুদিনা পাতা চুলে ব্যবহার করলে এটি আপনার মাথার স্ক্যাল্প শীতল রাখে এবং অতিরিক্ত চুল পড়া রোধ করে।
  • রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করেঃ পুদিনা পাতার পেস্ট চুলে ব্যবহার করলে এটি আপনার চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। যা কিনা আপনার মাথায় নতুন চুল গজাতে সহায়ক।
  • চুলের তৈলাক্ততা কমায়ঃ আপনি কি জানেন পুদিনা পাতার প্রাকৃতিক তেল নিয়ন্ত্রণে কাজ করে? অর্থাৎ এটি আপনার স্কাল্পের তৈলাক্ত ভাব কমায়। ফলে দীর্ঘদিন চুল পরিষ্কার থাকে।
  • খুশকি দূর করেঃ আপনি কি খুশকির সমস্যায় জর্জরিত? তাহলে বলব আজ থেকেই পুদিনা পাতার পেস্ট ব্যবহার শুরু করুন। কারণ পুদিনার এন্টিফাঙ্গাল গুণ খুব সহজেই খুশকি দূর করতে পারে এবং এটি মাথার ত্বকের চুলকানি কমায়।
  • চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেঃ নিয়মিত পুদিনা পাতার ব্যবহারে এটি আপনার চুলের উজ্জ্বলতা এবং সৌন্দর্য দুটোই বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি চুলকে নরম ও মসৃণ করতেও সাহায্য করে এই পুদিনা পাতা।

পুদিনা পাতার অন্য নাম কি

পুদিনা পাতার অন্য নাম কি অনেকেই জানেন না। পুদিনা পাতার ইংরেজি নাম হল Mint এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম হল Mentha spicata. পুদিনা এক ধরনের গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। ভারত সহ বিভিন্ন দেশে এটি বিভিন্ন স্থানীয় নামে পরিচিত। বাংলা ভাষায় এটি পুদিনা এবং হিন্দিতে পুদীনা নামে পরিচিত। এই পাতার ঔষধি গুন এবং রান্নায় ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ পরিচিত এবং জনপ্রিয়।

পুদিনা চাষ পদ্ধতি

পুদিনা চাষ পদ্ধতি খুবই সহজ এবং সুবিধাজনক। আপনি চাইলে আপনার নিজ বাড়ির ছাদের এক ছোট্ট কোণে, বেলকানিতে অথবা বারান্দার গ্রিলের সাথে এই পুদিনা পাতার চাষ করতে পারেন। এবার চলুন আপনি টবে কিভাবে পুদিনা পাতার চাষ করবেন সে সম্পর্কে জেনে রাখুন-
  • টব নির্বাচনঃ তবে পুদিনা পাতা চাষ করতে আপনি কি প্রথমেই ৮-১২ ইঞ্চি গভীর ও ১২-১৬ ইঞ্চি প্রসস্থ একটি টব নির্বাচন করতে হবে। কারণ, পুদিনা পাতার শিকড় খুব দ্রুত বাড়ে।
  • মাটি তৈরিঃ এবার টবের মাটি তৈরির জন্য ২ কেজি কবর, ৪ কেজি দো আঁশ মাটি এবং ফেলে দেয়া কিছু চা পাতা ও শুকনো গবর একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এতে মাটি বেশ উর্বর হবে।
  • পুদিনা চারা রোপনঃ আপনি যে কোন নার্সারি থেকে পুদিনা পাতার চারা পেয়ে যাবেন। কিন্তু মজার বিষয় হলো এই গাছের পুরনো কোন ডাল শিকড় সহ কেটে টবে লাগালেই কিছুদিনের মধ্যেই তা পাতায় ভরে যাবে। ফলে প্রথম দিকে পুদিনা গাছ সংগ্রহ করলেও পরবর্তীতে চারার জন্য অন্য কোথাও আপনাকে যেতে হবে না।
  • জল ও সার প্রয়োগঃ খেয়াল রাখবেন টবের মাটি যেন সবসময় আদ্র থাকে এবং জলাবদ্ধতা না হয়। সাধারণত আদ্র পরিবেশে পুদিনা পাতা ভালো জন্মে। সেই সাথে প্রতি মাসে হালকা জৈব সার প্রয়োগ করতে পারেন এতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হবে।
  • কাটা ছেঁড়াঃ গাছের উচ্চতা যখন ৬-৮ ইঞ্চি হবে ঠিক তখন নিয়মিত এর ডাল পালা কাটতে শুরু করুন। এতে নতুন শাখা প্রশাখা বৃদ্ধি পাবে।
  • পুদিনা পাতা সংগ্রহঃ পুদিনা পাতা সংগ্রহ করার সময় কেবল বাইরের পাতাগুলো এবং শাখা গুলি কেটে নিন যাতে গাছের বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম আপনি টবে কিভাবে পুদিনা পাতা চাষ করতে পারেন। টবে পুদিনা চাষ করলে খুব সহজে আপনার রান্নায় এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনে তাজা পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারবেন।

পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক  সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক  সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। যা পড়ে আপনি নিশ্চয়ই উপকৃত হয়েছেন আশা রাখছি। পুদিনা এমন একটি ভেষজ যা খাবারে সুগন্ধ যোগ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে। ত্বক, শরীর এবং চুল এই তিনটির জন্যই পুদিনা পাতা খুবই উপকারী একটি ভেষজ। শুধু কি তাই, নানা ধরনের অসুখ দূর করতেও রয়েছে এই পাতার ঔষধি গুণ। 
 
সেই সাথে প্রচন্ড গরমে একটু স্বস্তি পাওয়ার জন্য এই পুদিনা পাতার এক গ্লাস পানীয় যথেষ্ট। আবার দামেও বেশ সহজলভ্য এই পাতা। তাই পুদিনা পাতার উপকারিতা পেতে আপনি আজ থেকেই আপনার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় যোগ করে ফেলুন উপকারী এই ভেষজ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url