অপরাজিতা ফুলের চা এর উপকারিতা জানলে অবাক হবেন

অপরাজিতা ফুলের চা এর উপকারিতা জানতে আপনি নিশ্চয়ই আজকে আমাদের ওয়েবসাইটে এসেছেন। কিন্তু অপরাজিতা ফুলের চা কিভাবে বানায় জানেন কি? আমরা অনেকেই জানি আবার অনেকেই জানি না। 

অপরাজিতা-ফুলের-চা-এর-উপকারিতা-জানলে-অবাক-হবেন
না জানলেও চিন্তা নেই! আজ আমরা আপনাদের জানাবো অপরাজিতা ফুলের চা পানের উপকারিতা এবং দৃষ্টিনন্দন এই নীল চা কিভাবে বানাতে হয় সে নিয়ম সম্পর্কে। তাছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ ক্যাফেইন মুক্ত নীল চা খেতে কার না ভালো লাগে বলুন তো!

পোস্ট সুচিপত্রঃ অপরাজিতা ফুলের চা এর উপকারিতা

অপরাজিতা ফুলের চা এর উপকারিতা ও অপকারিতা

অপরাজিতা ফুলের চা, যা ব্লু টি নামেও পরিচিত। এটি একটি ভেষজ পানীয় যা অপরাজিতা ফুল দিয়ে তৈরি করা হয়। এই চা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কারণ, এতে ফাইটোকেমিক্যালস এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। বিশেষ করে পেন্টান্যাল, আলকালোয়েডস, টারনাটিনস, ট্যানিন, পলিফেনল, স্যাপোনিন, ফ্লাভোনয়েডস, ইনোসিটল, অ্যান্থোসায়ানিন ইত্যাদি।

আরো পড়ুনঃ  জেনে নিন বিট লবনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে

যা আমাদের শরীরের কোষগুলোকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। সাথে এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং স্মৃতিশক্তিও উন্নত করে। শুধু কি তাই ,অপরাজিতা চা মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতেও দারুন কার্যকরী। এটি আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখে এবং ভালো ঘুম আনয়ন করে। আবার এই চা আমাদের শরীরে প্রাকৃতিক ডিটক্স হিসেবেও কাজ করে।

সেইসাথে শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এই নীল চা  রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা ডাইবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাছাড়া হজম শক্তি বাড়াতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অপরাজিতা চায়ের ভূমিকা অনবদ্য। স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ও চুলের জন্যও অপরাজিতা চা সমানভাবে উপকারী। কারণ এতে রয়েছে আন্টি এজিং উপাদান। 

আবার চোখ ভালো রাখার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও আপনি পেতে পারেন এই অপরাজিতা চা পান করে। তবে এই চা পানের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতাও প্রয়োজন আছে। যেমন ধরুন অতিরিক্ত পরিমাণে অপরাজিতা চা পান করলে আপনার বমি বমি ভাব কিংবা মাথা ঘোরা হতে পারে। গর্ভবতী মা-বোনদের জন্য এই চা না করাই ভালো। কারণ, এতে জরায়ুর সংকোচন ঘটতে পারে।

আপনাদের যাদের রক্তচাপ কম থাকে তাদের জন্য এই চা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এটি রক্তচাপ আরও কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া আপনাদের যাদের ঔষধে এলার্জি আছে তাদের প্রথমে অল্প পরিমাণে এই চা খেয়ে শরীরের প্রতিক্রিয়া দেখা উচিত। যেকোনো ভেষজ চায়ের মতই এটি নিয়মিত এবং সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করাই ভালো।

অপরাজিতা ফুলের চা এর উপকারিতা

অপরাজিতা ফুলের চা শুধু চোখ ধাঁধানো রঙেই মন জয় করে না বরং এটি স্বাস্থ্য উপকারিতার এক অনন্য ভান্ডার। নীল চা বা অপরাজিতা ফুলের চা একেবারেই ক্যাফেইন মুক্ত হারবাল চা। আজকে আলোচনা শুরুতেই চলুন জেনে আসি অপরাজিতা ফুলের চা খাওয়ার জাদুকরী কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-

আরো পড়ুনঃ  বরই পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যঃ অপরাজিতা ফুলে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন, প্রোনথোসায়ানিডিনস এবং কোয়াসের্টিন আমাদের শরীরের কোষের ক্ষতি রোধ করে এবং বয়সজনিত সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে। বিশেষ করে এটি বিভিন্ন ধরনের ফ্রি রেডিকেল থেকে কোষগুলোকে রক্ষা করে এবং স্কিন এজিং কমাতে কাজ করে।
  • শরীর সতেজ রাখেঃ সারাদিনের কর্মব্যস্ততা এবং ক্লান্তি দূর করতে আপনি দিনের শুরুতেই এক কাপ অপরাজিতা ফুলের চা খেয়ে নিতে পারেন। এতে সারা দিন ধরে আপনার শরীর থাকবে সতেজ এবং ফুরফুরে।
  • মানসিক চাপ দূর করেঃ স্নায়ু শান্ত রাখতে অপরাজিতা চা ম্যাজিকের মত কাজ করে। কারণ, এতে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান গুলো মস্তিষ্কের চাপ কমায়, মানসিক স্বস্তি প্রদান করে এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। ফলে মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করতে আপনি অপরাজিতা ফুলের চা খেতে পারেন।
  • স্মৃতিশক্তি বাড়ায়ঃ নিয়ম মেনে অপরাজিতা ফুলের চা খেলে এটি আমাদের ব্রেইনে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং মস্তিষ্কের কোষগুলির কার্যকারিতা উন্নত করে। যা স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ বাড়াতে সহায়তা করে। এর ফলে অ্যালজাইমার বা ডিমেনশিয়ার মত মানসিক রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। তাছাড়া এতে থাকা এসিটাইলকোলাইন স্নায়ু শান্ত এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস প্রতিরোধ করে।
  • হৃদরোগ প্রতিরোধেঃ হৃদরোগের সমস্যা প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী প্রাকৃতিক উপাদান হলো অপরাজিতা ফুলের চা। যেহেতু অপরাজিতা ফুলের চা রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাড়ায় এবং শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। সুতরাং এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও দারুন কাজ করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ অপরাজিতা ফুলের চায়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ পরিমাণের বাড়িয়ে দেয় এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
  • ত্বক ও চুলের যত্নেঃ অপরাজিতা ফুলের চায়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্থোসায়ানিন চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সেই সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং অকালপক্বতা রোধেও ম্যাজিকের মত কাজ করে অপরাজিতা চা।
  • ওজন কমাতেঃ আপনি কি আপনার বাড়তি ওজন নিয়ে চিন্তিত? তাহলে বলবো অপরাজিতা ফুলের চা খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ, এই চা শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে এবং ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। এর ফলে শরীরের ওজন কমতে থাকে।
  • হজম সহজ করেঃ পেটের হজম প্রক্রিয়া সহজ করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আপনি খেতে পারেন অপরাজিতা ফুলের চা। কারণ এটি পাকস্থলী স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখে এবং পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
  • ডিটক্সিফিকেশনঃ নিয়মিত নিয়ম করে অপরাজিতা ফুলের চা খেলে এই চা আমাদের শরীরের টক্সিন পরিষ্কার করে এবং লিভারের কার্যক্ষমতা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অপরাজিতা ফুলের চা বেশ উপকারী। কারণ,  অপরাজিতা ফুলের চা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট, গ্লুকোজ শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়।
  • ভালো ঘুমের জন্য সহায়কঃ অপরাজিতা ফুলের চা যেমন মস্তিষ্ককে প্রশান্ত করে তেমনি এটি ভালো ঘুমও আনয়ন করে। সুতরাং নিদ্রাহীনতার সমস্যা থাকলে আপনি রাতে অপরাজিতা ফুলের চা খেতে পারেন। এতে ঘুম ভালো হবে এবং নিদ্রাহীনতার সমস্যা দূর হবে।
  • পিরিয়ডের সমস্যা দূর করেঃ নিয়ম মেনে অপরাজিতা ফুলের চা খেলে এটি মহিলাদের মাসিক চক্র ঠিক রাখে এবং পিরিয়ডের সময় যেকোনো ধরনের প্রদাহ বা ব্যথা প্রশমিত করে। তাছাড়া হরমোনাল ভারসাম্য বজায় রাখতেও এই চা বেশ সহায়ক।
  • আন্টি ক্যান্সার প্রভাবঃ অপরাজিতা ফুলে থাকা বিশেষ কিছু উপাদান আমাদের শরীরে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে। বিশেষ করে ক্যান্সারের কিছু প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে অপরাজিতা ফুলের চা।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ আপনার হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে নিশ্চিন্তে অপরাজিতা ফুলের চা খেতে পারেন। কারণ, এটি রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে এবং হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার ঝুঁকি হ্রাস করে।
  • শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করেঃ যেকোনো ধরনের ঠান্ডা লাগা সর্দি-কাশি, হাঁপানির সমস্যায় অপরাজিতা ফুলের চা বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি শ্বাস নালীর প্রদাহ কমিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা সমাধানে খুব ভালো কাজ করে।
  • আন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যঃ অপরাজিতা ফুলের চায়ে থাকা এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য আমাদের শরীরের প্রদাহ কমাতে এবং প্রদাহ জনিত যেকোনো রোগ যেমন- আর্থাইটিস বা বাতের ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। ফলে এই চা আমাদের পেইন কিলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমায়।
  • পায়ের ফোলা ভাব দূর করেঃ অনেক সময় আমাদের শরীরের পানি জমে শরীর ফুলে যায়। বিশেষ করে পায়ে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। আপনার পা ফোলা সমস্যা প্রতিরোধে আপনি আজ থেকেই নিয়ম করে অপরাজিতা ফুলের চা খাওয়া শুরু করুন। কারণ, অপরাজিতা রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া উন্নত করে। ফলে পায়ের ফোলা ভাব কমে যায়।

অপরাজিতা-ফুলের-চা-এর-উপকারিতা-জানলে-অবাক-হবেন
  • শক্তি বৃদ্ধি করেঃ অপরাজিতা শরীরকে শিথিল করার পাশাপাশি আমাদের শরীরের শক্তি ও শক্তির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং শরীরের অস্থিরতা দূর করতে এবং শক্তি বাড়াতেও দারুন কার্যকরী এই চা।
  • হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখেঃ শরীরে হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করতে বিশেষ করে নারীদের জন্য যারা হরমোনাল সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এই চা বিশেষভাবে উপকারী।
  • শরীরের জ্বালা ভাব দূর করেঃ আপনার শরীরে কিংবা হাত বা পায়ের তালুতে কি অহেতুক জ্বালাপোড়া হয়? তাহলে নিয়ম করে অপরাজিতা চা খান। নিয়মিত অপরাজিতা চা পান করলে এটি শরীরের জ্বালাপোড়া দূর করে।
  • অ্যাজমা প্রতিরোধেঃ অপরাজিতা ফুলের চায়ে বিদ্যমান স্যাকোনিন স্যাপোনিন ও ফ্লাভোনয়েড যৌগ শ্বাসকষ্ট বিশেষ করে অ্যাজমা প্রতিরোধে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
  • রক্তের ফ্যাট দূর করেঃ অপরাজিতা ফুলের চা আমাদের শরীরে হাইপারলিপিডেনিয়া বা রক্তে অতিরিক্ত চর্বি জমা থেকে খুব সহজেই রক্ষা করতে পারে।
  • ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়ঃ নিয়মিত নিয়ম মেনে নীল চা বা অপরাজিতা ফুলের চা পান করলে এটি আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা (এলডিএল) কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা(এইচডিএল) বৃদ্ধি করে। ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, এবং রক্ত জমাট বাঁধার মতো সমস্যার ঝুঁকি কমে।
  • যকৃত ভালো রাখেঃ সম্প্রতি গবেষণায় টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, শরীর মুটিয়ে যাওয়ার কারণে যকৃতে যে ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তা প্রতিরোধে অপরাজিতা চা দারুন কার্যকরী।
  • বমি বমি ভাব দূর করেঃ আপনার বমি বমি ভাব এর উদ্বেগ হলে আপনি তৎক্ষণাৎ এক কাপ অপরাজিতা ফুলের চা খেয়ে নিন। তাতে বমি বমি ভাব কমবে। তবে অতিরিক্ত খেলে আবার ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।

অপরাজিতা ফুলের চা এর অপকারিতা

অপরাজিতা ফুলের চা এর অপকারিতাও রয়েছে বেশ কিছু। অপরাজিতা ফুলের চা বর্তমানে হারবাল চায়ের জগতে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত পরিমানে অপরাজিতা চা গ্রহণ করলে আপনার শরীরে এর বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন ধরুন-

আরো পড়ুনঃ  বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে বিস্তারিত জেনে নিন

  • পাচন সমস্যাঃ অতিরিক্ত পরিমাণে অপরাজিতা চা পান করলে আপনার পাচন সমস্যা অর্থাৎ গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাঁপা, পেটে ব্যথা এমনকি ডায়রিয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ, অপরাজিতা ফুলে থাকা কিছু কিছু যৌগ পেটের স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
  • রক্তচাপ কমে যাওয়াঃ আপনার যদি নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অপরাজিতা পান না করাটাই স্বাস্থ্যসম্মত। কেননা অপরাজিতা চা রক্তচাপ কমাতে ভালো কাজ করে। ফলে লো প্রেসার যাদের রয়েছে তারা এই চা সেবন থেকে দূরে থাকুন।
  • মূত্র বর্ধক প্রভাবঃ অপরাজিতা ফুলের চা আমাদের শরীরে প্রাকৃতিক ডিউরেটিক হিসেবে কাজ করে। যার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। এতে করে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ ও পানি বেরিয়ে গিয়ে আপনার ডিহাইড্রেশনও হতে পারে।
  • গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণঃ একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অপরাজিতা ফুল গর্ভাশয়ে সংকোচন সৃষ্টি করতে পারে। ফলে গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মা-বোনদের এই চা না খাওয়াই উত্তম। এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে অপরাজিতা ফুলের চা খেলে জরায়ু সংকোচনের সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।
  • হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়ঃ অপরাজিতা ফুলে রয়েছে ফাইটো এস্ট্রোজেন। যার প্রভাবে আমাদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে।
  • ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়াঃ আপনারা যারা এন্টিকোয়াগুলেন্ট, ডায়াবেটিস বা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ খান তাদের জন্য অপরাজিতা চা বিপদজনক হতে পারে। কারণ, এই চা আপনার ওষুধের সাথে বিক্রিয়া করে ঔষধের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। ফলে আপনার শারীরিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
  • ত্বকে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়াঃ অপরিচিত ফুলে থাকার বিশেষ ধরনের যৌগ আপনার শরীরে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে অতিরিক্ত পরিমাণে অপরাজিতা চা খেলে এই সমস্যা হতে পারে।
  • ঘুম নষ্ট করেঃ যদিও অপরাজিতা ফুলের চা ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক এবং মস্তিষ্ক শান্ত রাখে, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি আপনার স্নায়ুতন্ত্রে উত্তেজনা তৈরি করতে পারে। যার ফলস্বরূপ আপনার অনিদ্রা বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
  • বাচ্চাদের জন্য অনুপযুক্তঃ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য অপরাজিতা ঠিক আছে, কিন্তু ছোট বাচ্চাদের জন্য অপরাজিতা চা মোটেও নিরাপদ নয়। কারণ, তাদের দেহে অপরাজিতা ফুলের শক্তিশালী ফ্ল্যাভোনয়েড ও এন্টিঅক্সিডেন্ট বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে।
  • বমি বমি ভাবঃ বমি বমি ভাব কমাতে অপরাজিতা চা সাহায্য করে। কিন্তু অনেক সময় খালি পেটে অপরাজিতা ফুলের চা পান করলে বমি বমি ভাব হয় এবং শারীরিক অস্বস্তি হতে পারে।
  • স্তন্যদানকারী মায়ের দুধের ওপর প্রভাবঃ স্তন্যদানকারী মা অপরাজিতা ফুলের চা পান করলে মায়ের শরীরেও এর হরমোনাল প্রভাব পড়তে পারে। ফলে বুকের দুধের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে। তাই এই সময় অপরাজিতা চা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
  • অতিরিক্ত ঘুম বা ঝিমঝিম ভাবঃ অপরাজিতা চায়ের স্নায়ুবিরোধী গুন থাকায় অতিরিক্ত সেবনে আপনার ঘুম ঘুম ভাব বা শরীর ঝিমোতে পারে।
  • রক্তপাতের ঝুঁকিঃ এই চা রক্তক্ষরণ করে বলে অতিরিক্ত খেলে আপনার ছোট ক্ষত থেকেও দীর্ঘ সময় ধরে রক্তপাত হতে পারে। ফলে রক্তচাপের ঝুঁকি এড়াতে আপনি সীমিত পরিমানে অপরাজিতা চা পান করুন।
  • ত্বকের রঙে অস্বাভাবিক পরিবর্তনঃ মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে অপরাজিতা চা সেবনে আপনার ত্বকে রং পরিবর্তনের মত হালকা প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে পেট বা চোখের নীচে কালচে ছাপ পড়তে পারে।
  • অতিরিক্ত চিনির ব্যবহারঃ অনেকে অপরাজিতা বা নীল চায়ের স্বাদ বাড়াতে অতিরিক্ত চিনি বা মধু মিশিয়ে খান। যা আপনার ডায়াবেটিস বা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
  • শরীরে ব্যাকটেরিয়ার জন্মঃ বর্তমানে কম বেশি সকলে অপরাজিতা ফুল রোদে শুকিয়ে সেই ফুল গরম পানিতে ফুটিয়ে যা তৈরি করে খাচ্ছে। কিন্তু ফুলটি যদি রোদে ঠিকঠাক মত শুকানো না হয় সেক্ষেত্রে এতে শরীরের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সহজেই জন্ম নেবে। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।

সম্মানিত পাঠক, উপরিউক্ত অপকারিতা গুলো এড়াতে আপনি প্রতিদিন নিয়ম করে সীমিত পরিমাণে এই চা পানের অভ্যাস গড়ে তুলুন। তাতে অপকারিতার থেকে উপকারিতাই বেশি পাবেন এ কথা হলফ করে বলতে পারি।

অপরাজিতা ফুলের চা কিভাবে বানায়

বর্তমান সময়ে অপরাজিতা ফুলের চা খুবই জনপ্রিয় এবং স্বাস্থ্যসম্মত একটি ভেষজ পানীয়। এই চায়ে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ নানান পুষ্টি উপাদান। প্রিয় পাঠক, এবার আপনাকে জানিয়ে দেবো আপনি অপরাজিতা ফুলের চা কিভাবে খুব সহজেই বানিয়ে নিতে পারবেন। তো চলুন চা বানানোর পুরো প্রক্রিয়াটি মনোযোগ সহকারে দেখে নিন-
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ

  • পানি- ৪ কাপ
  • এলাচের পরিমাণ- ২ টি
  • আদা- ২ টুকরো
  • দারুচিনি- ১ টি
  • মধু বা চিনি - স্বাদমতো
  • লেবুর রস- ১ চা চামচ এবং
  • অপরাজিতা ফুল- তাজা অপরাজিতা ফুল হলে ৮-১০টি এবং শুকনো হলে ৫-৬ টি।

প্রস্তুত প্রণালীঃ
প্রথমেই একটি পরিষ্কার প্যানে ৪ কাপ পানি নিয়ে চুলায় ফুটতে দিন। পানি ফুটে উঠলে তাতে একে একে একটি দারুচিনি, ২ টুকরো আদা, ২টি এলাচ এবং ৫-৬ টি শুকনো অপরাজিতা ফুল যোগ করুন। এক্ষেত্রে বলে রাখি, অপরাজিতা ফুলের নিচের সবুজ অংশটি অবশ্যই ফেলে দেবেন। অতঃপর ৫-৬ মিনিট পর্যন্ত পানি খুব ভালোমতো ফুটিয়ে নিন এবং চুলার আঁচ বন্ধ করে দিন।

এই পর্যায়ে চুলার আঁচ বন্ধ করে চা ঢাকনা দিয়ে ১০ মিনিটের মত ঢেকে রাখুন। তবে সতর্ক থাকবেন চায়ের পানি যেন ১০ মিনিটের বেশি অবশ্যই না ফোটে। তাতে চা একেবারে তেতো হয়ে যাবে। চুলার আঁচ বন্ধ করার ঠিক ১০ থেকে ১২ মিনিট পর এই চা কাপে ঢেলে পরিবেশন করুন। অতিরিক্ত স্বাদের জন্য আপনি মধু কিংবা চিনি চায়ের সাথে যোগ করতে পারেন। 

আবার আপনি চাইলে চা খাওয়ার আগ মুহূর্তে লেবুর রসও যোগ করে নিতে পারেন। লেবুর রস যোগ করার পর চা কিন্তু একেবারে বেগুনি বর্ণ ধারণ করবে। আবার আপনি যদি অপরাজিতা চা একেবারে ঠান্ডা করে খেতে চান সে ক্ষেত্রে ঠান্ডা চায়ের জন্য কাপে কয়েক টুকরো বরফ রাখতে পারেন। এই বরফের ওপরে ঢালতে হবে গরম নীল চা। অপরাজিতা চা বেশি পরিমাণে বানিয়ে আপনি ফ্রিজে ২-৩ দিনের জন্য অনায়াসে সংরক্ষণ করতে পারেন।

অপরাজিতা ফুলের চা কখন খাওয়া উচিত

অপরাজিতা ফুলের চা কখন খাওয়া উচিত? অপরাজিতা ফুলের চা খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা জেনেছেন কিন্তু আপনি কি জানেন এই ফুলের চা খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি। এবার চলুন জেনে নিন অপরাজিতা ফুলের চা ঠিক কখন খাওয়া উচিত-

  • সকালে খালি পেটেঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে আপনি এক কাপ নীল চা বা অপরাজিতা চা খেতে পারেন। সকালে খালি পেটে নীল চা খেলে এটি আপনার শরীর থেকে টক্সিন পরিস্কার করবে, হজম শক্তি বাড়াবে এবং সারাদিন ভর আপনাকে সতেজ রাখবে।
  • দুপুরের খাবারের পরেঃ দুপুরে খাবারের পরে অর্থাৎ বিকেলের দিকে ঠিক ৩-৫টা এই সময়ের মধ্যে আপনি অপরাজিতা ফুলের চা পান করতে পারেন। কারণ, দুপুরে খাবারের পর এই সময় যা খেলে এটি আপনার পেটের হজম সহজ করবে এবং দুপুরের ক্লান্তি ভাব দূর করবে।
  • রাতের খাবারের পরেঃ রাতে খাবারের পরে অর্থাৎ ঘুমানোর আগে ঠিক ৯-১০ তার মধ্যে আপনি এক কাপ অপরাজিতা চা খেয়ে নিতে পারেন। এই সময় চা খেলে আপনার ঘুম ভালো হবে এবং দুশ্চিন্তা দূর হবে। আর সব থেকে বড় কথা হল সারা রাতভর এটি আপনার নার্ভ সিস্টেমকে রিল্যাক্স রাখবে।

কখন অপরাজিতা চা না খাওয়াই ভালোঃ

  • যদি আপনার অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকে তাহলে খালি পেটে অপরাজিতা চা খাবেন না।
  • প্রতিদিন ২ কাপের বেশি অপরাজিতা ফুলের চা না খাওয়াই স্বাস্থ্যসম্মত।
  • আপনারা যারা লো ব্লাড প্রেসারে ভুগছেন তারা এই চাসেবন এড়িয়ে চলুন। আর একান্তই খেতে চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই খাবেন।
  • গর্ভবতী মহিলা বা যাদের হরমোন সমস্যা রয়েছে তারাও এই চা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক খাবেন।

কোন কোন ফুলের চা খাওয়া যায়

কোন কোন ফুলের চা খাওয়া যায় জানেন কি? দিনের শুরুতেই এক কাপ ধোঁয়া ওঠা গরম চা যেমন মনে এনে দেয় প্রশান্তি তেমনি সারা দিনভর শরীর রাখে তরতাজা এবং চনমনে। কিন্তু বর্তমান সময়ে দুধ চা এবং রং চা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ফুলের চা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই চা কেবলমাত্র স্বাদের জন্য নয় বরং স্বাস্থ্য উপকারিতা জন্যও বিশেষভাবে বিবেচিত।

আমরা সচরাচর চা গাছ থেকে তোলা পাতা কিংবা গ্রিন টি এর সাথে বেশ পরিচিত। এছাড়াও রয়েছে আদা চা, লেবু চা, তুলসি চা এবং মেথি চা। এই সমস্ত চায়ের গুণের কথা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। যারা চা খোর কিংবা অতিরিক্ত চা খেতে পছন্দ করেন তাদের ওজন কমানোর রসদও মিলতে পারে এই চা থেকেই। 

তাছাড়া আপনি জেনে অবাক হবেন যে, আপনার শরীরে জমে থাকা বাড়তি মেদ কমাতে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চা উপকারী। কি শুনে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন! এই ফুলের চায়ে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আপনি হয়তো কখনো ভাবতেও পারেননি। তবে বিষাক্ত নয় কেবলমাত্র এমন ফুল চায়ের জন্য নির্বাচন করতে হবে।

যেমন ধরুন- গোলাপ ফুল, চন্দ্রমল্লিকা, জুই ফুল, নীল অপরাজিতা, জবা ফুল, জেসমিন ফুল এবং গাদা ফুল। এই সমস্ত ফুল আপনার বাড়ির আঙিনায় থাকলে সেখান থেকেই চায়ের জন্য আপনি পাপড়ি সংগ্রহ করতে পারেন। আর বিশেষ করে বাড়ির ফুলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কম থাকে। কেননা এতে কোন কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। 

কেবলমাত্র পাপড়ি সংগ্রহ করে রোদে ভালো করে শুকিয়ে আপনি চা পাতার মতোই দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করতে পারেন। যখন ইচ্ছা হবে ঠিক তখনই একটা গরম পানিতে শুকনো ফুলের পাপড়ি ফেলে খেয়ে নিতে পারেন বিভিন্ন ধরনের ফুলের চা। এছাড়াও ল্যাভেন্ডার চা, লিলি ফুলের চা, হিবিসকাস চা, ক্যামোমাইল চা এই প্রত্যেকটি ফুলের চায়ের নিজস্ব ঘ্রাণ এবং উপকারিতা রয়েছে।

অপরাজিতা ফুলের চা কোথায় পাওয়া যায়

অপরাজিতা ফুলের চা কোথায় পাওয়া যায় যা আমরা অনেকেই জানিনা। অপরাজিতা ফুলের চা এর স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা ভেবে অনেকেই এই চা সেবন করতে চান, কিন্তু জানেন না ঠিক কোথায় পাওয়া যায়। আর চিন্তা নেই! আজকে আমরা আপনাকে জানিয়ে দেবো অপরাজিতা ফুলের যা আপনি কোথায় কোথায় পাবেন।

আমাদের দেশের বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেমন ধরুন- দারাজ, রকমারি চট্টগ্রামের 'থার্টি সেডস অব টি', ঢাকার কিছু অর্গানিক পণ্যের দোকান, আজকের ডিল এবং হেলথ ফুড শপে আপনি সহজেই এই ফুলের চা পেয়ে যাবেন। এছাড়াও ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে অনেক হোম বেইজেড পেজ রয়েছে যারা এই চা সরবরাহ করে থাকে। আবার গ্রামীণ লোকালয় যেখানে অপরাজিতা ফুলের চাষ হয়।

সেখান থেকেও আপনি কাঁচা ফুল সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে চা তৈরি করে নিতে পারেন। আবার আন্তর্জাতিকভাবে চাইলে আপনি আমাজন, ইবে, বা অন্য যেকোনো হারবাল প্রোডাক্ট সাইট থেকেও অপরাজিতা ফুলের চা অর্ডার করতে পারেন। সুতরাং আপনি চাইলেই ঘরে বসেই খুব সহজে অনলাইন বা স্থানীয় বাজার থেকে অপরাজিতা ফুলের চা সংগ্রহ করে নিতে পারেন।

অপরাজিতা ফুলের চা খেলে কি হয়

অপরাজিতা ফুলের চা খেলে কি হয়? এই প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। দেখুন আমাদের শরীরের জন্য অপরাজিতা ফুলের চায়ের নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। অর্থাৎ এই ফুলের চা খেলে শরীরে নানা ধরনের উপকার পাওয়া যায়। বিশেষ করে হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে,

অপরাজিতা-ফুলের-চা-এর-উপকারিতা-জানলে-অবাক-হবেন
অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে বা চর্বি কমাতে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে, এবং আমাদের শরীরে কোলাজেনের মাত্রা বাড়াতে এই চা দারুন উপকারী। নীল চা দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এই চা নিয়মিত পান করলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমে। সাথে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। 

শুধু কি তাই, পেটের সমস্যা কমাতেও দারুন কার্যকরী এই অপরাজিতা চা। আবার অপরাজিতা ফুলে থাকা বিশেষ কিছু যৌগ যা চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে কাজ করে। এটি যেমন শরীরের রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে তেমনি ত্বকও উজ্জ্বল রাখে। এছাড়াও চুলের গোড়া মজবুত করতেও দারুণ কার্যকরী এই অপরাজিতা চা। 

যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে খেতে পারেন অপরাজিতা চা। সুতরাং আপনাদের যাদের চা খাওয়ার অভ্যাস আছে তারা একটু চাইলেই অভ্যাস কিছুটা পরিবর্তন করে নীল চা বা অপরাজিতা চা খাওয়া শুরু করতে পারেন। কারণ, চিকিৎসকদের ভাষ্য মতে এই নীল রঙের অপরাজিতা চাতেই লুক্কায়িত আছে দীর্ঘজীবী হওয়ার অমৃত সুধা। 

এছাড়াও আপনার মানসিক অবসাদ ও দুশ্চিন্তা দূর করতে, শ্বাসকষ্টের প্রদাহ কমাতে, কিডনি ও লিভার সুরক্ষিত রাখতে, নিদ্রাহীনতা দূর করতে, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে এবং শরীর চাঙ্গা রাখতে ডায়েট লিস্টে য়াজ থেকেই যোগ করে নিতে পারেন অপরাজিত চায়ের এই অমৃত পানীয়কে। যা আপনার স্বাস্থ্যর পক্ষে উপকারী হবে।

অপরাজিতা ফুলের চা এর দাম

অপরাজিতা ফুলের চা এর দাম সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। এর দাম সাধারণত উৎপত্তিস্থান, প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি এবং প্যাকেটের ওজন অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। কারণ, এর দাম পণ্যের গুণমান, উৎপাদনের ধরন এবং ব্র্যান্ডের উপর অনেকাংশেই নির্ভিশীল। স্থানীয় বাজারে বা অনলাইন প্লাটফর্মে আপনি ২৫ গ্রাম অপরাজিতা ফুলের চা পেয়ে যাবেন ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে। 

আর ৫০ গ্রাম প্যাকেট পেতে পারেন ৩৫০-৫০০ টাকার মধ্যে। আবার বিদেশি ব্রান্ড বা প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের অপরাজিতা চা হলে এর দাম আরো বেশি হতে পারে। বিশেষ করে এতে যদি অন্যান্য বিভিন্ন হারবাল উপাদান যেমন ধরুন- লেমন ব্রাশ, তুলসী বা আদা মিশিয়ে মিক্সড হারবাল চা হিসেবে বিক্রি করা হয়। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

সাদা অপরাজিতা ফুলের চা এর উপকারিতা

নীল অপরাজিতা ফুলের চা যেমন পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ঠিক তেমনি সাদা অপরাজিতা ফুলের চাও একই রকম গুণাগুণ সম্পন্ন। দুটো ফুলই clitoria ternatea নামক গাছ থেকে পাওয়া যায়, শুধুমাত্র রংয়ের ভিন্নতা রয়েছে। নীল অপরাজিতার মতো সাদা অপরাজিতা ফুলেও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্লাভোনোয়েডস এবং এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকে। যা আমাদের শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে, 

লিভার ভালো রাখতে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে, নিদ্রাহীনতার দূর করতে, মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। আবার অনেক হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় সাদা অপরাজিতা ফুলকে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়। যদিও নীল অপরাজিতা ফুলের চা তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায় এবং জনপ্রিয়, কিন্তু সাদা ফুলের চাও সমানভাবে উপকারী।

অপরাজিতা ফুলের চা এর উপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

অপরাজিতা ফুলের চা এর জাদুকরী কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এই চা শুধু দেখতে দৃষ্টিনন্দন তা নয় বরং এটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি চা। এই নীলাভ চায়ের ব্যবহার ভারতীয় আয়ুর্বেদ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সঠিক নিয়মে খাওয়া হলে অপরাজিতা চা শরীর ও মনের জন্য এক অনন্য ভেষজ উপহার। এটি প্রাকৃতিক ক্যাফেইন মুক্ত চা এবং রং ও স্বাদে চমৎকার। তবে একটি কথা মনে রাখবেন, অপরাজিতা ফুলের চা যতটা উপকারী ঠিক ততটাই সাবধানতার সাথে গ্রহণ করাও জরুরী। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url