জেনে নিন বিট লবনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে
বিট লবনের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি জানতে চান? বিট লবণ খেলে কি প্রেসার বাড়ে নাকি কমে? জানতে হলে এক্ষুনি আজকের পোস্টটি একবার পড়ে নিন। সাধারণ লবনের তুলনায় বিট লবণ তুলনামূলকভাবে কম ব্যবহৃত হয়। কিন্তু স্বাস্থ্যের পক্ষে এই লবণ ভীষণই উপকারী।
পোস্ট সূচিপত্রঃ বিট লবনের উপকারিতা ও অপকারিতা
- বিট লবনের উপকারিতা ও অপকারিতা
- বিট লবনের উপকারিতা
- বিট লবণ খেলে কি প্রেসার বাড়ে
- বিট লবণের ক্ষতিকর দিক
- বিট লবণ খাওয়ার নিয়ম
- বিট লবণ খেলে কি ওজন বাড়ে
- গর্ভাবস্থায় বিট লবণ খাওয়া যাবে কি
- বিট লবণ কিভাবে তৈরি হয়
- বিট লবণের দাম
- বিট লবণ কোথায় পাওয়া যায়
- বিট লবনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
বিট লবনের উপকারিতা ও অপকারিতা
বিট লবনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। অথচ এটি একটি প্রাকৃতিক খনিজ লবণ, যা স্বাদে কিছুটা ঝাঁঝালো ও কষা হয়। সেই সাথে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সহায়ক দাওয়াই হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বিট লবণ সাধারণত হিমালয় অঞ্চল থেকে আহরণ করা হয় এবং আয়ুর্বেদিক ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত হয়।বিট লবণে পর্যাপ্ত পরিমাণে, সোডিয়াম সালফেট, আয়রন, সোডিয়াম ক্লোরাইড, ফেরিক অক্সাইড, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফেরাস সালফেট ও ম্যাগনেশিয়াম এর মত উপকারী খনিজ উপাদান থাকে। বিট লবণ খেলে এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং পাশাপাশি খাবারের রুচিও বাড়ায়। তাছাড়া বমি বমি ভাব, গ্যাস, অম্বল বা পেট ফাঁপার মত সমস্যায় বিট লবণ খুবই কার্যকরী একটি উপাদান।
এটি অন্ত্রের চলাচল ঠিক রাখে। পাশাপাশি কোলেস্টেরল ডায়াবেটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সাহায্য করে। আবার ঠান্ডা লাগা, সর্দি কিংবা গলা ব্যথায় সামান্য কুসুম গরম পানিতে বিট লবণ মিশিয়ে গার্গল করলে তাতে বেশ আরাম পাওয়া যায়। শুধু কি তাই, বিট লবণ পানির সাথে মিশিয়ে খেলে শরীরের বিষাক্ত বিভিন্ন উপাদান বের হয়ে যায়, যা ডিটোক্সিফিকেশনে সহায়ক।
অন্যদিকে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং ব্রণ কমাতেও সাহায্য করে বিট লবণ। শুধু ত্বকই নয়, দাঁতের যে কোনো সমস্যা যেমন- দাঁতে ব্যথা বা মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও বিট লবণ বেশ উপকারী। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় বিট লবণ খেলে আপনার শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে।
আবার অতিরিক্ত বিট লবণ গ্রহণে আপনার কিডনির কার্যক্ষমতাও কমে যেতে পারে। অতিরিক্ত বিট লবণ আপনার শরীরকে ডিহাইড্রেট করতে পারে। ফলে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। আবার দাঁতের এনামেল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হয় যদি দীর্ঘদিন ধরে আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে বিট লবণ খেতেই থাকেন।
বিট লবনের স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা
এখানেই শেষ নয়, যাদের অ্যালার্জিক সমস্যা রয়েছে তারা অতিরিক্ত বিট লবণ খেলে ত্বকে লালচে দাগ, চুলকানি বা ফুসকুড়ির মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্যও এটি অতি সাবধানতার সাথে গ্রহণ করা উচিত। কারণ, এটি রক্তে সোডিয়াম বৃদ্ধি করে হৃদপিন্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
যা একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভস্থ শিশু উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। শিশুদের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত বিট লবণ খাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সুতরাং বিট লবণ উপকারী হলেও খাওয়ার সময় এটি পরিমিত পরিমানে ও সঠিক মাত্রায় সেবন করা উচিত। নিয়ম মেনে পরিমিত মাত্রায় বিট লবণ খেলে এর উপকারিতাই বেশি পাওয়া জায়।
বিট লবনের উপকারিতা
বিট লবনের উপকারিতা এবং অপকারিতা দুটো দিকই রয়েছে। আজকে আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে নিই খাবার হিসেবে বিট লবণ গ্রহণ করলে আপনি এর থেকে কি কি স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারেন-- হজম শক্তি বাড়ায়ঃ বিট লবণ প্রাকৃতিক পাচক গুণসম্পন্ন হওয়ায় এটি আমাদের পাচনতন্ত্রে পিত্তরস নিঃসরণ বাড়িয়ে হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এটি হজমের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উৎসেচক সক্রিয় করে। ফলে খাদ্য সহজে ভেঙে যায় এবং শরীর তা গ্রহণ করতে পারে।
- ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী করেঃ বিট নুনে থাকা খনিজ উপাদান আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী করে তোলে।
- এসিডিটির সমস্যা দূর করেঃ বিট লবণে থাকে ক্ষারধর্মী উপাদান। যা আমাদের পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিড দূর করতে সাহায্য করে। ফলে গ্যাস, অম্বল এবং বুক জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা প্রশমিত হয়। এসিডিটি থেকে মুক্তি পেতে আপনি খাবার খাওয়ার পর এক চিমটি বিট লবণ খেতে পারেন। তাতে উপকার মিলবে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ বিট লবণ খেলে এটি আমাদের অন্ত্রে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে, ফলে মল নরম থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আপনি নিয়মিত নিয়ম করে লেবু ও আদার রসের সাথে বিট নুন মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও এটি অন্ত্রের পেশিকে সক্রিয় করে তুলতে পারে যা পেট পরিস্কারে সাহায্য করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়কঃ সাধারণ লবণে সোডিয়াম মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে যা উচ্চ রক্তচাপের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু বিট লবণে সোডিয়াম এর পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম থাকে এবং এতে পটাশিয়াম থাকার কারণে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো কাজ করে। সুতরাং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনি সাধারণ লবণের পরিবর্তে খেতে পারেন বিট লবণ।
- ওজন হ্রাস করেঃ নিয়মিত বিট লবণ খেলে এটি হজম ও বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি করে। যা আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত জল ও বজ্র পদার্থ একসাথে বের করে দেয়। যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সুতরাং আপনারা যারা বাড়তি ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বা ওজন কমাতে চান তারা নিশ্চিন্তে বিট লবণ খেতে পারেন।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ আপনি কি জানেন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও দারুন কাজ করে বিট লবণ! কারণ, বিট লবন ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং রক্তে গ্লুকোজের ভারসাম্য বজায় রাখে। তবে ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বিট লবণ সেবন করা উচিত।
- ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখেঃ বিট লবণে রয়েছে বিভিন্ন খনিজ উপাদান যেমন- ম্যাগনেসিয়াম, সালফার ইত্যাদি। এই খনিজ উপাদান গুলো আমাদের ত্বকের গভীরে পুষ্টি সরবরাহ করতে থাকে এবং ত্বক আদ্র রাখে। শুধু তাই নয়, এটি রক্ত পরিশোধন করে যার ফলস্বরূপ ত্বকে ব্রণ ওঠার প্রবণতা কমে, ফুসকুড়ি কম হয় এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়। মোটকথা আমাদের ত্বকে ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে বিট লবণ।
- চুলের জন্য উপকারীঃ বিট লবণে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক খনিজ উপাদান চুলের গোড়া মজবুত করে, স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখে এবং খুশকি কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং চুল থেকে খুশকি দূর করতে আপনি বিট লবণ পানিতে মাথা ধুতে পারেন বা এর হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
- শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা উপশমেঃ আয়ুর্বেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে বিট লবণ ব্রঙ্কিয়াল নালীগুলোকে প্রশমিত করে এবং এতে জমে থাকা কফ সরাতে সাহায্য করে। ফলে ফুসফুস পরিষ্কার থাকে এবং শ্বাসনালীর উপর চাপ কমে।
- সাইনাস সমস্যায় আরামদায়কঃ অনেক সময় ঠান্ডা সর্দি লেগে আমাদের নাক বন্ধ হয়ে যায়। ফলে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। মাথা ব্যথা করতে থাকে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি গরম পানিতে বিট লবণ মিশিয়ে ভ্যাপার নিলে আপনার সাইনাস পরিষ্কার হবে, নাকের বন্ধ ভাব কমে আসবে এবং মাথা ব্যথা হ্রাস পাবে। কারণ, এটি নাকের মিউকাস পাতলা করে খুব সহজেই বের করে দেয়।
- ক্ষুধা বাড়ায়ঃ হজম শক্তি উন্নত করার পাশাপাশি বিট লবণ আমাদের লালা গ্রন্থিকে উদ্দীপ্ত করে, ফলে খিদে বেড়ে যায়। বিশেষ করে যারা খাবারের প্রতি রুচি পান না তাদের জন্য এবং শিশু ও রোগীদের ক্ষুধামান্দের ক্ষেত্রে বিট লবণ খুবই উপকারী।
- গলা ব্যথা দূর করেঃ অনেক সময় ঠান্ডা জনিত কারণে গলা ব্যথা হয়। গলা ব্যথা দূর করতে আপনি বিট লবণ ব্যবহার করতে পারেন। কারণ বিট লবণ গলা জীবাণমুক্ত করতে সাহায্য করে। এর জন্য আপনি গরম পানিতে বিট লবণ মিশিয়ে কিছুক্ষণ গার্গল করুন। দেখবেন আপনার গলার খুশখুসে ভাব ও গলা ব্যথা অনেকটাই কমে গেছে।
- বমি ভাব ও বমি প্রতিরোধে উপকারীঃ আপনার বমি বমির উদ্রেক হলে আপনি সাথে সাথে বিট লবণ ব্যবহার করুন। কেননা বিট লবণে থাকা সালফার যৌগ বমির উদ্রেক কমায় এবং বমির পর শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স পুনরুদ্ধারের সাহায্য করে। বিশেষ করে দূর পথের যাত্রা কালে আপনি সাথে বিট লবণ রাখতে পারেন।
- পানি শূন্যতা ও ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষা করেঃ প্রচন্ড গরমে আমাদের শরীর থেকে অনবরত ঘাম ঝরতে থাকে। ঘামের সাথে বেরিয়ে আসে সোডিয়াম ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ। ঠিক এই সময় বিট লবণ পানিতে মিশিয়ে পান করলে দ্রুত শরীরে ইলেকট্রোলাইট পূরণ হয় এবং শারীরিক ক্লান্তি ভাব দূর হয়।
- ডিটক্সিফিকেশন বা টক্সিন দূর করেঃ বিট লবণ আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ যেমন- লিভার ও কিডনি কার্যক্ষম রাখতে সাহায্য করে। ফলে রক্ত পরিষ্কার থাকে এবং শরীরের বিষাক্ত বিভিন্ন পদার্থ নিষ্কাশনে ম্যাজিকের মত কাজ করে বিট লবণ।
- পেটের ব্যথা ও খিচুনি কমায়ঃ আপনি কি মাঝে মাঝেই পেটে ব্যথা বা খিচুনি অনুভব করেন! তাহলে বলব বিট লবণ সেবন করুন। কেননা বিট লবণ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল স্পাজম হ্রাস করে। সুতরাং পেটের ব্যথা ও খিচুনি ভাব কমাতে আপনি গরম পানির সাথে বিট লবণ খেতে পারেন।
- ডায়রিয়ায় উপকারীঃ বিট লবণ খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া লবণ ও জল পুনরায় সরবরাহ করতে সহায়তা করে। তাই ডাইরিয়া ও জ্বরের সময় এটি ওআরএস এর বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
- আয়ুর্বেদিক ঔষধে ব্যবহৃত হয়ঃ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বিট লবণকে "সৌম্য লবণ" বলা হয়। এটি ত্রিদোষ যেমন- বায়, পিত্ত, কফ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং অনেক আয়ুর্বেদিক মিশ্রণ যেমন- জিরা লবণ, হিঙ্গবাস্টক চূর্ণ ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
- রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ বিট লবণ আমাদের শরীরে আয়রনের উৎস হিসেবে কাজ করে। কারণ, এতে কিছু পরিমাণ আয়রন ও ফলিক এসিড রয়েছে যা রক্তাল্পতা রোধে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে কাজ করে।
- শরীর সতেজ রাখেঃ বিট লবণে বিট লবণে বিদ্যমান খনিজ উপাদান গুলো আমাদের শরীরে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে। ফলে এটি শরীরের সকল ব্যাকটেরিয়া দূর করে দেয় এবং শরীর সতেজ রাখে।
- হাড় মজবুত করেঃ বিট লবণে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি ও প্রাকৃতিক খনিজ উপাদান রয়েছে। যে উপাদান গুলো আমাদের শরীরে হাড়ের গঠন ও হাড় মজবুত করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- ঘুমের সমস্যা দূর করেঃ আপনি কি নিদ্রাহীনতায় ভুগছেন? তাহলে নিয়মিত বিট লবণ খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ, শরীরে মেলাটোনিনের অভাব হলে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। ফলে নিয়মিত বিট লবণ খেলে এটি আপনার শরীরে মেলাটোনিনের মাত্রা স্থিতিশীল রাখে এবং ঘুমের সমস্যা দূর করে।
- শিশুদের জন্য উপকারীঃ অল্পবয়স্ক শিশুদের জন্য বিট লবণকে খুবই উপকারী হিসেবে ধরা হয়। কারণ, এটি শিশুর বদহজম এবং বুকে কফ জমা দূর করে। সুতরাং শিশুর শরীর ঠিক রাখতে এবং পাকস্থলী কার্যক্ষম রাখতে আপনার শিশুর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বিট লবণ যোগ করুন।
- শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করেঃ সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে আপনি এক গ্লাস পানিতে এক চিমটি বিট লবণ ও এক টুকরো লেবু মিশিয়ে পান করে ফেলুন। দেখবেন মুহূর্তেই আপনার শরীর চাঙ্গা হয়ে যাবে।
- রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখেঃ প্রতিদিন খাবার পাতে বিট লবণ খেলে শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। সুতরাং শরীরের রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত বিট লবণ খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে আপনার শরীর থেকে ব্লাড ক্লটস ও কোলেস্টেরনের সমস্যাও দূর হবে।
- মানসিক চাপ কমায়ঃ বিট লবনে থাকা এক ধরনের খনিজ উপাদান মানসিক চাপ কমাতে দারুন কার্যকরী। ফলে মানসিক চাপ কমাতে আপনি সাধারণ লবণের পরিবর্তে বিট লবণ খেতেই পারেন।
- পেট ফোলা কমায়ঃ খেতে খেতে বেশি খেয়ে ফেলার অভ্যাস আমাদের বাঙ্গালীদের মধ্যে অনেকেরই। ফলে অতিরিক্ত খেয়ে এরপর শুরু হয় হাসফাঁস। শুধু অতিরিক্ত খাওয়া নয় গরম কোষ্ঠকাঠিন্য এবং এলার্জি সমস্যা থেকেও পেট ফলার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই পেট ফোলা প্রতিরোধে আপনি খেতে পারেন বিট লবণ। কারণ, এই লবণ রয়েছে অ্যালকালাইন প্রপার্টি যা পেটের গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
- পা ফাটা দূর করেঃ ত্বকে আদ্রতার কারণে অনেক সময় আমাদের অনেকেরই পায়ের গোড়ালিতে ফাটল ধরে। এই সমস্যা দূর করতে পারে বিট লবণ। সেই সাথে শরীরের কোথাও ফুলে গেলে বা মোচড় লাগলেও আপনি বিট নুন ব্যবহার করতে পারেন।
- অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যঃ বিট লবনে থাকা বিটালেইন ও অন্যান্য উপাদান শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। যা জয়েন্টের ব্যথা ও অন্যান্য প্রদাহ জনিত সমস্যায় উপকারী।
বিট লবণ খেলে কি প্রেসার বাড়ে
বিট লবণ খেলে সত্যিই কি প্রেশার বাড়ে? এই প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। দেখুন বিট লবনও এক ধরনের লবণ। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই বিট লবণ খেলে প্রেসার বাড়তেই পারে। কারণ, এতে সোডিয়াম থাকে যা রক্তচাপ বৃদ্ধির অন্যতম একটি প্রধান কারণ। যদিও বিট লবণকে অনেক সময় সাধারণ লবনের থেকে স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে ধরা হয় তবুও এটি কিন্তু সম্পূর্ণরূপে সোডিয়াম মুক্ত নয়।আর সোডিয়াম শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে প্রবেশ করলে তা রক্তে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে। ফলে রক্তচাপও বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যারা ইতিমধ্যেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য অতিরিক্ত বিট লবণ খাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তবে বিট লবণে উপকারী কিছু খনিজ উপাদানও রয়েছে।
যেমন- পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি থাকার কারণে এটি সীমিত পরিমানে খেলে এর থেকে আপনি উপকারও পেতে পারেন। অনেকেই আবার বিট লবণ খাওয়া হজমের জন্য ভালো বলে মনে করেন। তাই পরিমিত পরিমাণে বিট লবণ খাওয়া বেশিরভাগ মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে বা যারা লো-সোডিয়াম ডায়েটে আছেন,
তাদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিট লবণ সেবন করাই ভালো। সুতরাং বুঝতেই পারছেন বিট লবণ সোডিয়ামযুক্ত হলেও অতিরিক্ত খেলে এতে আপনার প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। ঠিক সে কারণেই আপনি খেতে পারেন লো সোডিয়াম যুক্ত লবণ। যা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এই ধরনের লবণ খেলে আপনার প্রেসার বাড়ার আশঙ্কা অনেকটাই কম থাকবে।
বিট লবণ খাওয়ার নিয়মঃ
বিট লবণের ক্ষতিকর দিক
বিট লবনের ক্ষতিকর দিক কি কি? বিট লবনের উপকারিতার পাশাপাশি এর আবার বেশ কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। যা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। প্রিয় পাঠক, এবার চলুন জেনে নেই বিট লবনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে-- উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনঃ অতিরিক্ত বিট লবণ খাওয়ার ফলে শরীরের সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর সোডিয়ামের পরিমাণ বাড়লে এটি রক্তের ভলিউম ও চাপ উভয়ই বৃদ্ধি করে। যা রক্তচাপ বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে আপনারে হৃদরোগ, স্ট্রোক বা কিডনি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- কিডনি সমস্যাঃ অতিরিক্ত বিট নুন আপনার কিডনির উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, কিডনি অতিরিক্ত সোডিয়াম ফিল্টার করার চেষ্টা করে। এর ফলে কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- হৃদরোগের ঝুঁকিঃ উচ্চ রক্তচাপ হৃদয়ের অন্যতম প্রধান কারণ একথা আমরা সকলেই জানি। ফলে অতিরিক্ত বিট নুন খাওয়ার ফলে হৃদপিন্ডে চাপ বৃদ্ধি পায় যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- পানি ধরে রাখেঃ অতিরিক্ত বিট লবণ খেলে এটি শরীরে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে। এতে আপনার হাতে পায়ে ফোলা ভাব সৃষ্টি হতে পারে এবং শারীরিক অস্বস্তিও হতে পারে।
- অম্বল ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাঃ বিট লবণ পাকস্থলীতে এসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত বিট লবণ খেলে এটি অম্বল গ্যাস্ট্রিক এসিডিটি এবং বুক জ্বালা পোড়ার সমস্যার কারণ হতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধিঃ যারা ওজন কমাতে চান তাদের অতিরিক্ত বিট লবণ না খাওয়াই ভালো। কারণ, বিট লবণ খেলে এটি শরীরে পানি আটকে রাখে ফলের শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং অনেক সময় শরীর ফুলেও যেতে পারে।
- হাড়ের ক্ষয়ঃ অতিরিক্ত বিট লবণ খাওয়ার ফলে শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। আর সোডিয়ামের মাত্রা বেশি হলে শরীর থেকে ক্যালসিয়ামও বের হতে থাকে, যা হাড়ের ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিস এর ঝুঁকি বাড়ায়।
- ত্বকের সমস্যাঃ অতিরিক্ত বিট লবণ গ্রহণে আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এমনকি ত্বকে ব্রণ বা চুলকানির সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
- হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করেঃ স্বাভাবিকভাবেই সোডিয়ামের অতিরিক্ত উপস্থিতি আমাদের শরীরে হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। বিশেষ করে এড্রেনাল হরমোন ও থাইরয়েডে এর প্রভাব বেশি পড়ে।
- ডিহাইড্রেশনঃ বেশি পরিমাণে বিট লবণ খেলে শরীরে পানির চাহিদা বেড়ে যায়। যদি সেই অনুযায়ী পানি আপনি না খান তাহলে আপনার ডিহাইড্রেশন, মাথা ঘোরা কিংবা শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
- নিদ্রাহীনতা ও মানসিক চাপঃ আপনি কি জানেন অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ আমাদের নার্ভ সিস্টেমকে উত্তেজিত করে তোলে। এতে উদ্বেগ বেড়ে যায়, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়।
- গর্ভবতী নারীদের জন্য ক্ষতিকরঃ গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত বিট লবণ গ্রহণ না করাই ভালো কেননা এই সময় অতিরিক্ত লবণ খেলে হাই ব্লাড প্রেসার এর ঝুঁকি থাকে। যা মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকরঃ ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত বিট লবণ সেবন করা মোটেও সুখকর নয়। কেননা বিট লবণ রক্তে সোডিয়াম লেভেল বাড়িয়ে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা হ্রাস করতে পারে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
- পেটের সমস্যাঃ পিংক সল্ট বা বিট লবণ বেশি খেলে আপনার পেট ফাঁপা, এসিডিটি, অম্বল বা পেটের যেকোনো ধরনের অস্বস্তি আরো বেড়ে যেতে পারে।
- মাইক্রো পোলিউট্যান্টসঃ বিট লবণে ছোট ছোট কিছু ভারী ধাতু এবং দূষক পদার্থ থাকে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে বিট লবণ সেবন করলে এটি আপনার শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
- খরচ বেশিঃ সাধারণ লবনের তুলনায় লবণের দাম তুলনামূলকভাবে অনেকটাই বেশি। কিন্তু দাম হিসেবে এর বাড়তি কোন স্বাস্থ্যগত সুযোগ-সুবিধা তেমন একটা নেই বললেই চলে। সুতরাং এটি টাকার অপচয় ছাড়া আর কিছুই না।
- নকল পিংক সল্টঃ বর্তমান সময়ে বাজারে আসল বিট লবণ পাওয়াটাই কঠিন। কারণ, বাজারে যে পিংক সল্ট পাওয়া যায় তা বেশিরভাগই ভেজাল যুক্ত। আর এতে ক্ষতিকর উপাদানই বেশি থাকে।
- ফ্লুরাইড বেশি থাকেঃ একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিট লবনের প্রতি মিলিয়নে প্রায় আড়াইশো শতাংশ ফ্লুরাইড থাকে। যা পটাশিয়াম কিংবা সোডিয়াম যে কোন ধরনের ফ্লুরাইড হতে পারে এবং এটি প্রচুর পরিমাণে টক্সিন সমৃদ্ধ। সে হিসেবে প্রতি এক চা চামচ বিট লবণে থাকে ০.৫৬ গ্রাম ফ্লুরাইড। এই ফ্লুরাইড আমাদের শরীরের হাড়, থাইরয়েড গ্রন্থি, এবং জয়েন্ট এর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
- আয়োডিনের অভাবঃ বিট লবণে আয়োডিন একেবারেই থাকে না। ফলে বিট লবণ খেলেও এর থেকে আপনি আপনার শরীরে আয়োডিনের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন না। বরং শরীরে আয়োডিনের ঘাটতিই থেকে যাবে।
- দাঁতের ক্ষতিঃ অতিরিক্ত পরিমাণে বিট নুন খাওয়ার ফলে আপনার দাঁতের ক্ষতি হতে পারে এমনকি দাঁতের এনামেল নষ্ট হতে পারে।
- এলার্জিক প্রবণতা বাড়ায়ঃ কিছু কিছু মানুষের বিট লবণে থাকা আইরন ও ম্যাগনেসিয়াম এর প্রতি সংবেদনশীলতা থাকতে পারে। কেননা অতিরিক্ত খনিজ আমাদের শরীরের জন্য মোটেও উপকারী নয়। যার ফলস্বরূপ এনার্জি প্রবণতা দেখা দিতে পারে এবং শারীরিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
বিট লবণ খাওয়ার নিয়ম
বিট লবণ খাওয়ার নিয়ম কি? অনেকেই জানতে চান। বিট লবনের উপকারিতা পেতে এবং এর অপকারিতা এড়াতে আপনাকে সঠিক নিয়ম মেনে বিট লবণ খেতে হবে। এবার চলুন দেখে নিই আপনি বিট লবণ কোন নিয়মে এবং কি কি উপায় খেতে পারেন-বিট লবণ খাওয়ার নিয়মঃ
- বিট লবণ খাওয়ার পরিমাণঃ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ১-২ চা চামচ বা ১.৫-৩ গ্রাম পর্যন্ত বিট লবণ খাওয়া উচিত। কিন্তু অবশ্যই এর বেশি খাবেন না। তাতে আপনার রক্তচাপ কিডনি এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে
- সকালে খালি পেটেঃ আপনি সকালে কুসুম এক গ্লাস গরম পানিতে আধা চা চামচ বিট লবণ মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে প্রতিদিন নয়, সপ্তাহে তিন চার দিনই যথেষ্ট।
- খাবারের সাথেঃ বিভিন্ন ধরনের চাট, লাচ্ছি, ডাবের জল, সালাদ, ফল কিংবা দইয়ের সাথে খুব অল্প পরিমাণে বৃদ্ধ নুন মিশিয়েও খেতে পারেন। এতে খাবারের স্বাদ বেড়ে যাবে এবং হজমেও সাহায্য করবে।
- রাতে খাবারের আগেঃ আপনি চাইলে রাতে খাবারের আগেও বিট লবণের ডিটক্স পানীয় বা জিরা জল খেতে পারেন। হালকা খাওয়ার সময় এটি খুব ভালো কাজ করে। সাথে পেটের গ্যাস কমায় এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। তবে রাতে খাওয়ার পর বিট নুন না খাওয়াই ভালো। এতে আবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
- দুপুরে খাবারের সাথেঃ দুপুরে খাবারের সাথেও আপনি সীমিত পরিমাণে বিট লবণ খেতেই পারেন। এতে খাবারের স্বাদ আরো দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে যাবে।
- ঠান্ডা কাশির সময়ঃ ঠান্ডা বা সর্দি হলে, মাথা ব্যথা কিংবা নাক বন্ধ হলে আপনি বিট লবণ জলে গার্গল করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে দিনে ২ বার গার্ড গোল করলেই চলবে। তাতে ঠান্ডা লাগা দূর হবে।
- হজমের সমস্যা দূর করতেঃ হজম সহজ করতে আপনি বিট লবণ, লেবু এবং গরম পানি একসাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে এই পানিয়টি সকালে খালি পেটে খাওয়াই ভালো।
- গরম পানিতেঃ বিট নুন মিশিয়ে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে আধা চা চামচ বিট লবণ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে পারেন।
- লেবু পানি বা ডিটক্স ড্রিংকেঃ লেবুর রস, বিট লবণ এবং এর সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে একসাথে পান করলে এটি আপনার শরীরে ডিটক্স পানীয় হিসেবে কাজ করে। যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।অন্যান্য বিভিন্ন খাবারের সাথেঃ চাট মসলা তৈরিতে, বিভিন্ন ফলের সালাদে বিট নুন ছিটিয়ে, বিভিন্ন ফল যেমন- আম, পেঁপে, তরমুজ, আনারস ইত্যাদির সাথে কিংবা দইয়ের সাথে বিট নুন ও জিরা গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন।
- রান্নায় ব্যবহারঃ চাট, চাউমিন, পকুড়া, দই বড়া, পানিপুরি, স্মুদি ইত্যাদি স্ট্রেট গুড টাইপ খাবারেও আপনি সাধারণ লবনের বিকল্প হিসেবে বিট লবণ ব্যবহার করতে পারেন।
- জিরা জলের সাথেঃ জিরা সিদ্ধ করা পানিতে আপনি সামান্য বিট নুন মিশিয়ে খান। এতে হজম ভালো হবে।
- মেদ কমাতে বিট নুনের পানীয়ঃ এই পানীয়টি কেবলমাত্র একটি সাধারণ পাত্রে তৈরি করলেই চলবে না বরং এর জন্য প্রয়োজন মুখ বন্ধ করা একটি কাঁচের বোয়াম। যাতে এর ভেতর বাতাস না ঢুকতে পারে। এবার বয়াম টিতে আপনি ৩ কাপ পরিমাণ পানি এবং ২ চা চামচ বিট লবণ ভালো করে মিশিয়ে সারারাত মুখ বন্ধ করে রেখে দিন।
- পরদিন সকালে এই বিট নুনগোলা পানি থেকে ২ চা চামচ পানি তুলে একটি গ্লাসে নিন এবং এর সাথে খানিকটা গরম পানি মিশিয়ে নিন। ব্যাস, এবারে এই মিশ্রণটি পান করুন। নিয়মিত এই পানীয়টি খেলে আপনার মেদ অচিরেই কমে যাবে।
বিট লবণ খেলে কি ওজন বাড়ে
বিট লবণ খেলে কি ওজন বাড়ে? এই বিষয়ে অনেকেই জানতে চান। দেখুন বিট লবণ খাওয়ার ফলে আপনার ওজন সরাসরি বাড়বে না। তবে এটি আপনার শরীরের ওপর কিছু নেতিবাতে প্রভাব ফেলতে পারে, যা ওজন বৃদ্ধির সাথে পরোক্ষভাবে জড়িত। বিট লবনে সোডিয়াম এর পরিমাণ কম থাকে বলে অনেকেই সাধারণ লবনের পরিবর্তে এই লবণ ব্যবহার করে থাকেন।তা বলে একেবারেই সোডিয়াম নেই তা কিন্তু না। ফলে সোডিয়াম নেই ভেবে অতিরিক্ত বিট নুন খেলে এটি আপনার শরীরে পানি জমার কারণ হতে পারে। যা সাময়িকভাবে আপনার ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। আবার কখনো কখনো শরীর ফুলে যেতে পারে বা ফোলা মনে হতে পারে। আবার বিট লবণে কিছু কিছু খনিজ উপাদান বেশি থাকলেও এর পরিমাণ খুবই কম।
যা ওজন কমানোর পক্ষে খুব একটা কার্যকরী নয়। তবে স্বাভাবিক ও পরিমিত পরিমাণে বিট লবণ খেলে তাতে কখনোই ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই বলবো ওজন যদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাহলে যেকোনো ধরনের লবণ সেটি হোক বিট লবণ কিংবা সাধারণ লবণ তা পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। মনে রাখবেন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামি হল ওজন নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি।
গর্ভাবস্থায় বিট লবণ খাওয়া যাবে কি
গর্ভাবস্থায় বিট লবণ খাওয়া যাবে কি? হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় বিট লবণ খাওয়া সাধারণভাবে নিরাপদ হতে পারে। তবে কিছু বিষয় বিবেচনায় রেখে এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই উত্তম। কারণ বিট লবণে প্রাকৃতিক বিভিন্ন ধরনের উপাদান যেমন- পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রন থাকে, যা শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে।বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় শরীরে কিছু কিছু খনিজের চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে বিট লবণ কিছুটা হলেও উপকারে আসতে পারে। তবে বিট লবণে সোডিয়ামের মাত্রা সাধারণ লবণের থেকে খুব একটা কম নয়। তাই অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ বা শরীরে পানি জমার মত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ঠিক সে কারণেই বিট লবণকে সাধারণ লবণের বিকল্প হিসেবে
আপনি মাঝে মাঝে খেতেই পারেন। তাতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু অতিরিক্ত বা প্রতিদিন বেশি পরিমাণে খাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তাছাড়া গর্ভকালীন সময়ে যেহেতু প্রতিটি নারীর শারীরিক চাহিদা ও অবস্থা ভিন্ন ভিন্ন হয়, তাই যে কোন নতুন খাদ্য গ্রহণের আগে একজন চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ এবং বুদ্ধিমানের কাজ। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
বিট লবণ কিভাবে তৈরি হয়
বিট লবণ কিভাবে তৈরি হয় জানেন কি? বিট লবনের নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা জানলেও বিট লবণ কিভাবে তৈরি করা হয় সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। এবার তাহলে চলুন দেখে নিই বিট লবণ কিভাবে তৈরি করা হয়-- প্রাকৃতিক উৎস থেকে উত্তোলনঃ বিট লবণ সাধারণত প্রাকৃতিক খনিজ লবণ শিলা বা রক সল্ট থেকে পাওয়া যায়। এটি মূলত প্রাচীন সমুদ্র গুলোর মধ্যে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে জমে থাকা লবণাক্ত পানি থেকে সৃষ্টি হয়। তখনকার সমুদ্রের লবণ ভূগর্ভের চাপের কারণে ক্রিস্টালাইজড হয়ে যায়, যা পরবর্তীতে ভূতাত্বিক কারণে ভূতলে আটকে যায় এবং খনিজরূপে জমা থাকে।
- ভূগর্ভস্থ খনিঃ বিট লবণ সাধারণত ভূগর্ভের খনি থেকে উত্তোলন করা হয়। বিশেষ করে হিমালয়ান পর্বতমালার নিচে খনিজ স্তরে এটি পাওয়া যায়। কাজে দায়িত্বরত শ্রমিকরা এসব স্তর থেকে লবণ খুড়ে বের করেন যা স্ফোটিকাকৃত এবং কঠিন হয়।
- লবণ উত্তোলনঃ বিট লবণ উত্তোলনের জন্য বিশেষ ধরনের প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়। সাধারণ হাতে বা বিভিন্ন ধরনের মেকানিক্যাল যন্ত্র ব্যবহার করে লবণের বড় বড় স্পটিক গুলো খনির মধ্য থেকে আলাদা করে নেওয়া হয় এবং একত্রিত করা হয়।
- প্রক্রিয়াজাতকরণঃ এরপর প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিট লবণ কে পরিষ্কার করা হয় যাতে এতে মাটি এবং অন্যান্য অপদ্রব্য না থাকে। সাধারণত বিট লবণকে প্রাকৃতিক অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়। কারণ, এর প্রাকৃতিক মিনারেল কনটেন্ট গুরুত্বপূর্ণ। তবে কখনো কখনো অপ্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান বা ময়লা দূর করতে এটি শোধনের প্রয়োজন পড়ে।
- বিট লবণের গোলাপি রংঃ বিট লবনের গোলাপী রং মূলত এতে থাকা আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ উপাদানের কারণে হয়ে থাকে। এই রং প্রাকৃতিক ভাবেই তৈরি হয় এবং এটি লবণের উপাদানকে বিশেষভাবে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর করে তোলে।
- ধূলা ও মিশ্রণ পরিষ্কার করাঃ বিট লবণ কখনো কখনো ধুলা ও মাটি থেকে পরিষ্কার করা হয়, কিন্তু রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কখনো পরিশোধিত করা হয় না। অর্থাৎ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে শোধন করার জন্য এটি মেশিনে পরিষ্কার করা হয় এবং তারপরে শুরু হয় প্যাকেজিংয়ের কাজ।
- প্যাকেজিং ও বিতরণঃ প্রক্রিয়াজাত করার পর বিট লবণকে বিভিন্ন আকারে প্যাকেজিং করা হয় এবং বাজারে বিতরণ করা হয়। বিশেষ করে এটি খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বেশি বিক্রি করা হয় যেমন- রান্নার জন্য।
- লবণ পোড়ানোঃ কিছু কিছু অঞ্চলে বিট লবণকে অতিরিক্ত বিশুদ্ধ করতে আবার তা সিদ্ধ বা পোড়ানো হয়। এটি সিদ্ধ লবণ বা পোড়া লবণ নামেও পরিচিত। আবার অনেক সময় ঔষধে গুণ বৃদ্ধির জন্যও এটি করা হয়।
- শুকনো এবং গুড়ো করাঃ সবশেষে লবণ শুকিয়ে গুড়ো করে রাখা হয়। কখনো কখনো এতে বিভিন্ন ভেষজ উপাদান যেমন ধরুন- হিং, জিরা, ত্রিফলা ইত্যাদি মিশিয়ে ঔষধি বিট লবণ বানানো হয়।
বিট লবণের দাম
বিট লবনের দাম কত হয়? বিট লবনের দাম সাধারণত এর মান, বিশুদ্ধতা, উৎপত্তিস্থান এবং বাজার চাহিদার উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আপনি বাজারে বিট লবণ বিভিন্ন আকারে পাবেন। যেমন ধরুন- গুঁড়ো বিট লবণ,দানাদার বা বড় টুকরোর বিট লবণ। এর প্রতি কেজি বিপ্লবনের দাম সাধারণত ৫০-২০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।তবে গুণগত মান বেশি হলে যেমন খাঁটি হিমালয়ের পিংক সল্ট হলে তার দাম আরো বেশি হতে পারে। কখনো কখনো এই দাম প্রতি কেজি ৩০০-৫০০ টাকা পর্যন্তও হতে পারে। আবার আপনি যদি অনলাইন বা অর্গানিক স্টোর থেকে বিট লবণ ক্রয় করতে চান সেক্ষেত্রে এর দাম আরো কিছুটা বেশি হতে পারে। কারণ, এসব লবণ অধিকতর প্রক্রিয়াজাত,
ব্র্যান্ডেড এবং পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং এ বিক্রি করা হয়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাথরের আকারে বিট লবণ বিক্রি হলে তার দাম তুলনামূলকভাবে কম হয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন বিট লবণের দাম নির্ভর করবে আপনি কোথা থেকে কিনছেন, কি ধরনের লবণ কিনছেন এবং কি পরিমান কিনছেন তার ওপর।
বিট লবণ কোথায় পাওয়া যায়
বিট লবনের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনেছেন কিন্তু বিট লবন কোথায় পাওয়া যায় জানেন কি? হয়তো জানেন না। বিট লবণ একটি প্রাকৃতিক খনিজ লবণ, যা সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চল খনন করে সংগ্রহ করা হয়। এটি মূলত ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় বিশেষ করে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের খেওড়া খনি থেকে পাওয়া যায়।যা পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ও বৃহৎ লবণ খনি হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া বিট লবণ উৎপাদনের মূল কাঁচামাল নেপাল, ভারত এবং বাংলাদেশের বেশ কিছু নির্দিষ্ট জায়গা থেকেও পাওয়া যায়। বিট লবণ সাধারণত গোলাপি বা হালকা লালচে রঙের হয়ে থাকে, যা এতে থাকা আয়রন অক্সাইডের কারণে হয়। বর্তমানে আমাদের দেশের বাজারেও বিট লবণ বেশি সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বড় বড় সুপার শপ, কাঁচাবাজার কিংবা অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোতেও খুব সহজেই বিট লবণ পাওয়া যায়।
বিট লবনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
বিট লবনের উপকারিতা ও অপকারিতা আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। বিট লবণ মূলত একটি প্রাকৃতিক খনিজ যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকার বয়ে আনলেও অতিরিক্ত গ্রহণে আপনার শারীরিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।তাই বলবো অতিরিক্ত বিট লবণ ব্যবহার না করে আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা বুঝে প্রতিদিন পরিমাণ মতো এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বিট লবণ গ্রহণ করাই শ্রেয়। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে চোখ রাখুন আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটে। আর্টিকেলটি এতক্ষণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url