নবজাতকের পেট ফাঁপা দূর করার ঘরোয়া উপায় কি

নবজাতকের পেট ফাঁপা দূর করার ঘরোয়া উপায় কি জানতে চান? বাচ্চাদের পেটে গ্যাস হলে কি খাওয়া উচিত? জানতে হলে পুরো পোস্টটি একবার পড়ে নিন। শিশু জন্মের পরপরই পেটে গ্যাস জমতে পারে বা পেট ফেঁপে যেতে পারে। 

নবজাতকের-পেট-ফাঁপা-দূর-করার-ঘরোয়া-উপায়-কি
যা অনেক সময় অভিভাবকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করবো নবজাতকের পেট ফাঁপা দূর করার ঘরোয়া কিছু উপায় এবং সেই সাথে পেটে গ্যাস হলে বাচ্চাকে কি কি খাবার খাওয়ানো উচিত। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ নবজাতকের পেট ফাঁপা দূর করার ঘরোয়া উপায়

 নবজাতকের পেট ফাঁপা দূর করার ঘরোয়া উপায়

নবজাতকের পেট ফাঁপা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানতে চাই। নবজাতকের পেটে সাধারণত গ্যাস হলে পেট ফাঁপার মতো সমস্যা সৃষ্টি হয়। ফলে নবজাতক শিশু অস্বস্তিতে ভোগে এবং অনেক সময় কান্না করে। এই সমস্যা সাধারণত খাবার খাওয়ার পর পর পেটে বায়ু বা গ্যাস জমে অস্বস্তি সৃষ্টি হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। তবে প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া কিছু উপায় রয়েছে যেগুলি নবজাতকের পেট ফাঁপা দূর করতে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যেমন-
  • ঢেকুর তোলানো বা বারপিংঃ আপনার নবজাতকের পেট ফাঁপা দূর করার প্রাকৃতিক একটি উপায় হল সঠিক নিয়মে ঢেকুর তোলানো। অনেকেই আছেন যারা ঢেকুর তোলানোর পদ্ধতি সঠিকভাবে জানেন না। ফলে পেট ফাঁপার সমস্যা আরো বেড়ে যায়। এর জন্য প্রথমেই আপনি সোজা হয়ে বসে আপনার শিশুকে বুকের বিপরীতে এমন ভাবে নেবেন যেন শিশুর থুতনি আপনার ঠিক কাঁধের ওপর থাকে। 
  • এতে এক হাত দিয়ে আপনি বাচ্চাকে যেমন সাপোর্ট দিতে পারবেন তেমনি আরেক হাত কাপ আকৃতির করে পিঠে আলতোভাবে চাপ দিতে পারবেন। আবার আপনার শিশুকে কোলে বসিয়ে নিয়ে থুতনি ও বুক এক হাতে আলগা ধরে আরেক হাত দিয়ে পিঠের দিকে হালকা করে চাপ দেবেন। অনেক সময় পাকস্থলী থেকে গ্যাস বের হয়ে যায়। 
  • এরপরেও যদি আপনি মনে করেন আপনার শিশুর পেটে গ্যাস এখনো জমে আছে সে ক্ষেত্রে বলবো আপনার শিশুকে চিত করে শুইয়ে দিন এবং পেটে আলতো ভাবে চাপ দিন। সেই সাথে সাইকেলের প্যাডেল যেমন ঘোরে ঠিক সেভাবে আপনার শিশুর পা নড়াচড়া করানোর চেষ্টা করুন।
  • ঢেকুর তোলার এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে নবজাতকের ঢেকুরের সাথে বাতাস অনেকটাই বের হয়ে আসে। আবার কখনো কখনো ঢেকুরের সাথে দুধের কিছু অংশও বেরিয়ে আসতে পারে। তবে এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
  • পেট মালিশঃ নবজাতকের পেট মালিশ করার একটা আলাদা কায়দা রয়েছে। ঘড়ির কাঁটা যেভাবে ঘোরে ঠিক সেই দিকে পেটের মালিশ শুরু করতে হবে। অর্থাৎ আপনি ডান হাতের সাহায্যে বাম থেকে ডান দিকে অর্ধ বৃত্তাকারে মালিশ করতে থাকুন। অতঃপর বাম হাত দিয়ে মালিশ করে বৃত্ত পূর্ণ করুন। তবে খেয়াল রাখবেন, খুব জোর দিয়ে এই মালিশ করা যাবে না। সবসময় চেষ্টা করবেন হালকা হাতে মালিশ করতে।
  • স্ফুলিঙ্গঃ আপনি দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল শিশুর পেটের ওপর রাখুন। এরপর ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত বৃদ্ধাঙ্গুল দুটি একের পর এক ওঠানামা করাতে থাকুন। বৃদ্ধাঙ্গুলের সাহায্যে নাভির চারপাশে এবং নাভির নিচেও মেসেজ করতে থাকুন। তবে নাভির উপরে এবং নিচে দুইবারের বেশি মেসেজ কখনোই করবেন না।
  • হাটু উপরে করুনঃ এই পদ্ধতিতে পেট ফাঁপা দূর করতে প্রথমেই আপনার শিশুকে সোজা করে শুইয়ে দিন। এরপর হাঁটুর কাছ থেকে পা খানিকটা ধরে পেটের দিকে মুড়িয়ে নিন। এভাবে দুই পা একসাথে পেটের কাছাকাছি নিয়ে যাবেন এবং পাঁচ সেকেন্ড পর্যন্ত এভাবেই থাকতে দিন। প্রায় ৩-৪ বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নবজাতকের পেটে জমে থাকা গ্যাস খুব সহজেই বেরিয়ে আসে।
  • মুন ওয়াকিংঃ নবজাতকের পেটে গ্যাসের ব্যথা বা পেট ফাঁপলে আপনি মুন ওয়াকিং পদ্ধতিতে মালিশ করতে পারেন। এর জন্য আপনি শিশুর পেটে আঙ্গুল দিয়ে বাম থেকে ডান দিকে মেসেজ করতে থাকুন। আবার আঙ্গুলের সাহায্যে নাভির ওপর মুন ওয়াকিং এর মত করে মালিশ করতে পারেন। তবে মালিশ করার সময় অবশ্যই আপনার নখ কেটে নেবেন। যাতে করে শিশুর পেটে আঁচড় বা ব্যথা না লাগে।
  • সার্কুলার ম্যাসাজঃ সার্কুলার মেসেজের জন্য নাভির কাছাকাছি ডান দিক থেকে বাম দিকে বৃত্তাকারে অনবরত মালিশ করতে থাকুন। তবে পেটের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবেন না। খেয়াল রাখবেন, পুরো পেটের মাংসপেশি যেন মালিশ হয় সে কারণে সেই বৃত্তটিকে ধীরে ধীরে বড় করুন। তারপর আবার বাম থেকে ডান দিকে ম্যাসাজ করতে থাকুন।
  • শিশুকে উপুড় করে শুইয়ে দিনঃ শিশুকে উপুড় করে শুইয়ে দিলে অনেক সময় পেটের গ্যাস বেরিয়ে আসে। আপনি চাইলে শিশুর পেটে আলতো করে আঙ্গুলের ডগা দিয়ে উপর থেকে নিচের দিকে টেনে টেনে গ্যাস বের করে দিতে পারেন।
  • গরম পানির সেকঃ শিশুর পেট ফাঁপা এবং গ্যাস দূর করার জন্য গরম পানির সেক খুবই কার্যকরী। একটি পরিষ্কার তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে আপনি শিশুর পেটে আলতো ভাবে মালিশ করুন। এটি পেটের মাংসপেশি শিথিল করবে এবং পেট থেকে গ্যাস বের হতে সাহায্য করবে।
  • পেটের পজিশন পরিবর্তনঃ শিশুর পেটের গ্যাস বের করার জন্য পেটের পজিশন পরিবর্তনেরও দরকার পড়ে। অর্থাৎ আপনি আপনার শিশুকে পেটের উপর সোজা করে শোয়ালে তার পেটের গ্যাস বের হয়ে যেতে পারে। আবার শিশুকে আপনি কোলের ওপর নিয়ে হাঁটলেও পেটের বাতাস বের হয়ে যায় এবং শিশু আরাম পায়।
  • তরমুজের রসঃ নবজাতকের পেটের গ্যাস এবং পেট ফাঁপা কমাতে আরেকটি কার্যকরী উপাদান হলো তরমুজের রস। এটি পেটের হজম ক্রিয়া যেমন উন্নত করে তেমনি পেটের মধ্যে জমে থাকা অতিরিক্ত বাতাস খুব সহজে বের করে দেয়। তবে খুব অল্প পরিমাণে তরমুজে রস ব্যবহার করতে হবে। আপনার শিশু যদি একেবারেই ছোট হয় সেক্ষেত্রে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
  • সরষে তেল বা নারিকেল তেলের মালিশঃ শিশুর পেট মালিশ করার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান হল সরিষা বা নারিকেল তেল। সরষে বা নারিকেল তেল দিয়ে পেট মালিশ করলে এতে পেটের গ্যাস দূর হয় এবং শিশুর পেটের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় থাকে।
  • শিশুকে বারবার খাওয়ানোঃ নবজাতক শিশুর পেট ফাঁপা কমানোর জন্য আপনি শিশুকে একেবারে বেশি পরিমাণে না খাইয়ে বারে বারে অল্প পরিমাণে খাওয়ান। এতে করে আপনার শিশুর পেটের অতিরিক্ত গ্যাস কমবে এবং পেটও ভালো থাকবে।
  • খাওয়ার সময় মাথা উঁচু রাখাঃ আপনি শিশুকে যখন খাওয়াবেন তখন আপনার শিশুর মাথা উঁচু অবস্থায় রাখার চেষ্টা করবেন। যাতে খাবার সহজে হজম হয় এবং গ্যাসের সমস্যা দূর হয়।
  • শিশুর পেট চেপে ধরাঃ আপনার শিশু যখন অতিরিক্ত অস্বস্তি অনুভব করবে ঠিক তখন হালকা করে পেট চেপে ধরুন। এতে পেটের গ্যাস সহজে বেরিয়ে আসবে। তবে অবশ্যই এটি আলতো ভাবে করতে হবে।
নবজাতকের-পেট-ফাঁপা-দূর-করার-ঘরোয়া-উপায়-কি
  • কুসুম গরম পানিতে স্নান করানোঃ অনেক সময় কুসুম গরম পানিতে স্নান করানোর ফলে শিশুর পেটের গ্যাস কমে যায়। কারণ, গরম পানির প্রভাবে পেটের মাংসপেশী শিথিল হয় এবং গ্যাস বেরিয়ে আসে।
  • নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ানোঃ শিশুর খাওয়ানোর সময় নির্দিষ্ট থাকলে পেটে গ্যাসের সমস্যা কিংবা পেট ফাঁপা সমস্যা কম হয়। অর্থাৎ আপনার শিশুকে খাওয়ানোর সময় খুব বেশি দীর্ঘ বা খুব কম করবেন না।
  • কুসুম গরম তেলে পেট ম্যাসাজঃ কিছু মেথি বা তুলসী পাতা গুঁড়ো করে তাতে হালকা তেল মিশিয়ে আপনার শিশুর পেটে ম্যাসাজ করতে থাকুন। তেল কিছুটা গরম করে পেটের উপর মেসেজ করলেও গ্যাস বেরিয়ে যেতে পারে।
  • শিশুর পোশাকঃ আপনি আপনার শিশুকে খুব টাইট পোশাক না পরিয়ে হালকা ও আরামদায়ক ঢিলেঢালা পোশাক পরান। কারণ, টাইট পোশাক পরালে এটি শিশুদের পেটের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং তাতে পেটে গ্যাস জমার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।
  • বুকের দুধ খাওয়ানোর পর বুর্প করানোঃ আপনার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পর অবশ্যই তাকে বুর্প করানোর চেষ্টা করুন। কারণ, দুধ খাওয়ার সময় শিশুর পেটে বাতাস ঢুকে যেতে পারে যার ফলে পেট ফাঁপা হতে পারে। এর জন্য আপনি শিশুকে হালকা পিঠ চাপড়ে বা সোজা করে বসিয়ে বুর্প করান।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ খাওয়ানোঃ আপনি আপনার শিশুকে সময় মত পর্যাপ্ত পরিমাণে নিয়ম করে বুকের দুধ খাওয়ান। যাতে অতিরিক্ত দুধ পেটে জমে না যায়। কারণ, অতিরিক্ত দুধ খাওয়ালে শিশুর পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয়।
  • পেটের ওপর বেলেল খেলনা ব্যবহারঃ শিশুদের খেলার জন্য নানা ধরনের বেলেন খেলনা ব্যবহার করতে পারেন। এতে তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে এবং পেটের গ্যাস কমতে সাহায্য করবে।
  • শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসঃ এর ওপর নজর রাখুন কখনো কখনো শ্বাস-প্রশ্বাসের অস্বাভাবিকতার জন্য পেটে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। তাই চেষ্টা করুন শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে।
  • শিশুকে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রাখুনঃ দুধ খাওয়ানোর পর আপনার শিশুকে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রাখার অভ্যাস করুন। এতে তার পাকস্থলী থেকে বাতাস বের হয়ে যাবে এবং পেট ফাঁপা কমে আসবে।
  • মন্টেসরি পদ্ধতিতে পেট ভাজ করাঃ শিশুকে পেটের উপর শোয়ালে অনেক সময় গ্যাস বের হয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে শিশুকে কখনো একা রেখে শোয়াবেন না।
  • কোলিক ম্যাসাজঃ শিশুর পেট ফাঁপা কমানোর জন্য আরেকটি বিশেষ ধরনের ম্যাসাজ রয়েছে আপনি 'আই লাভ ইউ' আকারে নবজাতকের পেটে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে পেটের গ্যাস অনেকটাই বের হয়ে আসার সম্ভাবনা থাকে।
  • কান্না থামানঃ আপনার শিশু যত কাঁদবে তার মুখ দিয়ে পেটে ঠিক তত পরিমাণই গ্যাস বা বাতাস ঢুকে যাবে। তাই শিশু কান্না করলে দ্রুত কান্না থামানোর চেষ্টা করতে হবে।
প্রিয় পাঠক, উপরিউক্ত এই সমস্ত ঘরোয়া উপায় গুলো অনুসরণ করার পরেও যদি আপনার শিশুর পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা না কমে তাহলে দেরি না করে অতিসত্বর একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।

বাচ্চাদের পেটে গ্যাস হলে কি খাওয়া উচিত

বাচ্চাদের পেটে গ্যাস হলে ঠিক কি কি খাবার খাওয়ানো উচিত এ নিয়ে আমরা অনেক সময় চিন্তায় পড়ে যাই। অনেকেই আবার বাচ্চার পেটের গ্যাস কমাতে এন্টাসিড খাওয়াতে শুরু করেন। ভুলেও এই কাজ করবেন না। এতে আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের অবস্থার আরো অবনতি হতে পারে। বরং এন্টাসিডের পরিবর্তে আপনি আপনার শিশুর খাদ্য তালিকায় যোগ করে নিন উপকারী কিছু খাবার। যেগুলো নিয়মিত খেলে আপনার শিশুর পেটের সকল সমস্যা উধাও হয়ে যাবে। এবার তাহলে চলুন খাবার গুলো কি কি সে সম্পর্কে জেনে রাখুন-

  • টক দইঃ আপনার শিশুর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় জায়গা করে দিতে হবে দধিকে এবং অবশ্যই সেটি টক দই হতে হবে। কারণ, দুগ্ধজাত খাবারের মধ্যে রয়েছে ল্যাকটোব্যাসিলাসের ভান্ডার। এই উপাদান অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা দিনকে দিন বাড়াতে থাকে। ফলে অন্ত্র থাকে সুস্থ এবং কোলোনের হাল ফিরতে শুরু করে। যদিও বাচ্চারা মিষ্টি দই খেতেই বেশি পছন্দ করে। তবে অতিরিক্ত মিষ্টি দই খেলে কোন উপকার তো মিলবেই না উল্টো শরীরের আরো ক্ষতি হবে। তাই চেষ্টা করুন আপনার বাচ্চাকে টক দই খাওয়ানোর।
  • হাই ফাইবার জাতীয় খাবারঃ শিশুকে হাই ফাইবার জাতীয় খাবার আপনি নিয়মিত খাওয়াতে পারেন। তাতে কোন অসুবিধা নেই। কারণ, অন্ত্রো সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে ফাইবার যুক্ত খাবারের জুড়ি মেলা ভার। ফাইবার যুক্ত খাবার নিয়মিত খেলে এটি যেমন হজম শক্তি বাড়ায় তেমনি পেটের একাধিক জটিল অসুখ দূরে রাখে। তাই বলবো আপনার বাচ্চার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন হাইফাইবার খাবার হিসেবে ঢেঁকি ছাটা চাউল, ডালিয়া, ওটস ইত্যাদি রাখার চেষ্টা করুন।
  • ব্রকলিঃ ভিটামিন সি এর অফুরন্ত ভান্ডার হলো ব্রুকলি। ব্রকলিতে যে ভিটামিন রয়েছে তা শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এতে যে পরিমাণ ফাইবার রয়েছে তা অন্ত্রের স্বাভাবিক হাল ফেরাতে দারুন কাজ করে। ফলে গ্যাস এসিডিটি কিংবা পেট ফাঁপা এই রোগ গুলো আপনার বাচ্চার ধারে কাছে আসার সুযোগই পায় না। এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যাও দূর হয়। সুতরাং আজ থেকে আপনার শিশুর খাদ্য তালিকায় ব্রকলির মতো পুষ্টিকর একটি সবজিকে যোগ করে ফেলুন।
  • আদা জলঃ বাচ্চার পেটে গ্যাস হলে তাকে যত দ্রুত সম্ভব আদা জল পান করানোর অভ্যাস করুন। এর জন্য আপনি এক কাপ জলে এক টুকরো আদা ফেলে খুব ভালো করে ফুটিয়ে নিন। অতঃপর এই মিশ্রণটি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসলে তা ছেকে নিয়ে আপনার শিশুকে খাওয়ান। দেখবেন ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই পেটের গ্যাস অম্বল এসিডিটি গায়েব হয়ে যাবে।
  • কাঁচা আদাঃ অনেক বাচ্চারাই আদা জল খেতে পছন্দ করে না। ফলে বেগ পোহাতে হয় মা-বাবাকে। সন্তান যদি আদা-জল খেতে না চায় সেক্ষেত্রে আপনি শুধু কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে বলুন। তাতেও গ্যাসের প্রকোপ কমে যাবে।
  • জোয়ানে কমাবে গ্যাসঃ গ্যাসের সমস্যা কমাতে জোয়ান খুব ভালো কাজ করে এ কথা আমরা কম বেশি সকলেই জানি। ফলে আপনার সন্তানের পেটের গ্যাসের সমস্যা দূর করতে জোয়ানের মত ভেষজ উপাদান ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য আপনি সামান্য পানির সাথে চা চামচের ১ চামচ জোয়ান চিবিয়ে আপনার সন্তানকে খেয়ে ফেলতে বলুন। জোয়ান খাওয়ার ঠিক মিনিট বিশেক এর মধ্যেই এসিড সমস্যাও দূর হবে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পানঃ শিশুর পেটে অতিরিক্ত গ্যাস হলে আপনি আপনার সন্তানকে অল্প অল্প করে পানি পান করান। তাতে গ্যাসের প্রকোপ অনেকটাই কমে যাবে। যদিও বাচ্চারা নিজে থেকে পানি পান করতে একেবারেই চায়না। তাই এক্ষেত্রে আপনাকেই এগিয়ে আসতে হবে। তাতে আপনার সন্তানের পেটে গ্যাসের কষ্ট লাঘব হবে।
  • মিষ্টি আলুঃ আপনি জেনে অবাক হবেন যে, নিয়মিত মিষ্টি আলু খেলে এটি গ্যাসের সমস্যাকে অনেকটাই কাবু করে ফেলে। তাছাড়া মিষ্টি আলুতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ। ফলে নিয়মিত মিষ্টি আলু খাওয়ার অভ্যাস করলে গ্যাস এসিডের সমস্যা যেমন পিছু নিতে পারে না তেমনি আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যের হালও ফিরে খুব দ্রুত।
  • পেঁপেঃ গ্যাস কমানোর জন্য পেঁপে অত্যন্ত উপকারী। পেঁপেতে পেপাইন নামক এক প্রকার এনজাইম থাকে। যা পাঁচন প্রক্রিয়া সহজ করে এবং গ্যাসের সমস্যা কমাতে কাজ করে। সুতরাং আপনার বাচ্চাকে নিয়মিত পেঁপে খাওয়াতে পারেন গ্যাসের সমস্যা থেকে বাঁচাতে।
  • খিচুড়িঃ খিচুড়ি সাধারণত সহজপাচ্য এবং পেটের সমস্যা কমাতে খুব ভালো কাজ করে। তবে অবশ্যই কম মসলা ব্যবহার করে খিচুড়ি রান্না করতে হবে।
  • সেদ্ধ আলুঃ সেদ্ধ আলু খাওয়ালে এটি বাচ্চাদের পেটে খুব সহজেই হজম হয়ে যায় এবং গ্যাসের সমস্যা কমতে শুরু করে। তবে তেলে ভাজা আলু খাওয়ানো থেকে আপনার শিশুকে বিরত রাখুন।
  • সেদ্ধ গাজরঃ গাজর হজম প্রক্রিয়া সহজ করে। কারণ, গাজরে থাকা সেলুলোজ পেটের গ্যাস কমাতে ম্যাজিক এর মত কাজ করে। সুতরাং আপনার বাচ্চাকে গ্যাস অম্বল থেকে বাঁচাতে নিয়মিত সেদ্ধ গাজর খাওয়াতে পারেন।
  • সিদ্ধ মিষ্টি কুমড়াঃ মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা খাদ্য আঁশ থাকে। এই ফাইবার পেটের হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে এবং গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
  • পাকা কলাঃ কলাও বেশ সহজপাচ্য এবং গ্যাসের প্রকোপ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। কারণ, কলাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম। যা পেটের পেশিগুলোকে শান্ত রাখে এবং গ্যাস দূরীকরণে কাজ করে।
  • আপেলঃ কলার পাশাপাশি আপনি আপেলও খাওয়াতে পারেন। আপেলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার এবং পেকটিন যা পেটের গ্যাস প্রতিরোধে দারুন কার্যকরী। তবে আনারস, আম এই ফলগুলো গ্যাস বাড়াতে পারে। সে ব্যাপারে সজাগ থাকবেন
  • কপির স্যুপঃ শুধুমাত্র বাঁধাকপি রান্না বা ভেজে খেলে তাতে পেটে গ্যাসের উদ্রেক হতে পারে। তাই চেষ্টা করুন আপনার সন্তানকে বাঁধাকপি না ভেজে হালকা রান্না করে স্যুপ করে খাওয়াতে। কারণ, বাধাকপির স্যুপ  খুব সহজে পেটে হজম হয়ে যায় এবং এতে গ্যাসের যন্ত্রণা কমে।
  • তরমুজঃ তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার থাকে। যা পেটের গ্যাস বের করে দিতে সাহায্য করে। সুতরাং পেটে গ্যাসের সমস্যা হলে আপনার সন্তানকে তরমুজ খাওয়ান। এতে পেটের তাপমাত্রা কমবে এবং পেট ঠান্ডা থাকবে।
  • পালং শাকঃ পালং শাক পেটের পক্ষে এবং হজমের জন্য খুবই উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং ভিটামিন রয়েছে যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।
  • মধুঃ পেটের গ্যাস নিরাময়ে প্রাকৃতিক এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান হিসেবে কাজ করে মধু। তাই বলবো পেটের গ্যাস কমাতে বিভিন্ন ধরনের ফলমূলের পাশাপাশি আপনার সন্তানকে মধু খাওয়ান। এটি সহজে হজমযোগ্য এবং পেটের তাপমাত্রা কমায়।
  • লেবুঃ লেবুতে সাইট্রিক এসিড এবং ভিটামিন সি থাকার কারণে এটি হজমে খুব ভালো কাজ করে। তাছাড়া লেবুর রস পান করলে নিমেষের মধ্যেই পেটের গ্যাস দূর হয়ে যায় এবং হজম ক্রিয়া সহজ হয়। আপনার সন্তান যদি শুধু লেবুর রস খেতে না চায় সেক্ষেত্রে লেবুর রস সামান্য পানির সাথে গুলিয়ে লেবু জলও পান করাতে পারেন। তাতেও অসুবিধা নেই।
  • সবুজ মটরঃ প্রাকৃতিক ফাইবার সমৃদ্ধ হলো সবুজ মটর। যা খেলে এটি পেটের গ্যাস অনায়াসেই বের করে দিতে পারে। সবুজ মটর নিয়মিত খেলে এটি পেটের হজমের পক্ষে যেমন সহায়ক তেমনি শরীরের কার্যকারিতাও বৃদ্ধি করে।
সম্মানিত পাঠক, উপরিউক্ত এই খাবারগুলি সাধারণত বাচ্চাদের পেটের গ্যাস কমাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তবে একটি কথা, আপনার বাচ্চার স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং বয়স বুঝে উপযুক্ত খাবার নির্বাচন করবেন। কারণ, প্রতিটি বাচ্চার হজম ক্ষমতা আলাদা হয়। তাই যে কোন খাবার খাদ্য তালিকায় নতুন যোগ করার পূর্বে সবচেয়ে ভালো হয় যদি একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেন।

নবজাতকের পেটে গ্যাস হলে বোঝার উপায়

নবজাতকের পেটে গ্যাস হলে বোঝার উপায় কি? নবজাতকের পেট ফাঁপা দূর করার ঘরোয়া উপায় আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। কিন্তু নবজাতকের পেটে গ্যাস হলে আপনি কিভাবে বুঝবেন! নবজাতকের পেটের গ্যাস অনেকেই বুঝতে পারে আবার অনেকেই পারে না। দেখুন, সহজ কথায় বলতে গেলে
নবজাতক শিশুর পেটে গ্যাস হলে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয় দেবে। যা দেখে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার শিশুর পেটে গ্যাস জমেছে। তো চলুন এবারে আপনার নবজাতকের পেটে গ্যাস হলে কিভাবে বুঝবেন সে লক্ষণগুলো জেনে নিন-
  • অতিরিক্ত কান্নাঃ নবজাতকের পেটে গ্যাস জমেছে এটি বোঝার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল কান্না বা অস্থিরতা। কারণ, শিশুর পেটে গ্যাস হলে সাধারণত তারা অস্বস্তি অনুভব করে এবং কান্না শুরু করে দেয়। গ্যাসের কারণে তাদের পেটে যে চাপ সৃষ্টি হয় তাতে কষ্ট পায় এবং অনবরত কান্না করতেই থাকে। কান্নার ফলে অনেক সময় মুখ লাল হয়ে যায় এবং পেট মোচরাতে থাকে।
  • পেট শক্ত হয়ে থাকা বা ফুলে থাকাঃ অনেক সময় পেটে গ্যাস হয়ে থাকার কারণে আপনার শিশুর পেট ফুলে থাকতে পারে কিংবা শক্ত হয়ে যেতে পারে। গ্যাস জমে পেটের মধ্যে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হলে এটি পেটের বিভিন্ন অংশে চাপ সৃষ্টি করে এবং পেট অনেক সময় ফুলে ওঠে। যা শিশুর জন্য কষ্টদায়ক। সুতরাং আপনার শিশুর পেটে গ্যাস রয়েছে তা পেট শক্ত বা ফোলা দেখেও আপনি সনাক্ত করতে পারেন।
  • পা মচকানো বা পেটের দিকে টান দেওয়াঃ অনেক সময় শিশুর পেটে গ্যাস হলে তারা পা মোচকাতে থাকে কিংবা পেটের দিকে পা টেনে আনতে চেষ্টা করে। এর মাধ্যমে শিশুরা মূলত পেট থেকে গ্যাস মুক্ত করার চেষ্টা করে। সুতরাং নবজাতকের পেটে যে গ্যাস রয়েছে তা বোঝার আরেকটি সাধারণ লক্ষণ হল পা টান দেওয়া বা মচকানো।
  • ঘুমের সমস্যাঃ স্বাভাবিকভাবেই পেটে গ্যাসের কারণে শিশুর ঘুমে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। ফলে শিশুর ঘুম চক্রে সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং তারা ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথে কান্না জুড়ে দেয়। তাছাড়া পেটে গ্যাসের কারণে নবজাতক শান্তি মত ঘুমাতে পারে না এবং কিছুক্ষণ পর পর ঘুম ভেঙ্গে যায়।
  • খাওয়ার পর অস্বস্তি বা বিরক্তিভাবঃ খাবার খাওয়ার পর যদি আপনার শিশু অস্বস্তি বোধ করে কিংবা বিরক্তি ভাব দেখায় তাহলে বুঝবেন আপনার শিশুর পেটে গ্যাস হয়েছে। অনেক সময় গ্যাসের সমস্যা হলে খাবার খাওয়ার পরপরই শিশুর মধ্যে শারীরিক অস্বস্তি বা বিরক্তি ভাব দেখা দেয়। আবার খাবার খাওয়ার পর পর তারা অতিরিক্ত কান্না শুরু করে দিতে পারে। কারণ, তখন পেটে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়।
  • ঘাড় বা মাথা ঘোরানোঃ কিছু কিছু শিশুর পেটে গ্যাস হলে তারা মাথা ঘোরাতে থাকে এবং ঘাড় ঝুঁকতে পারে। এটিও শিশুর পেটে গ্যাস হওয়ার অস্বস্তের একটি লক্ষণ এবং পেটের চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি উপায় মাত্র।
  • পেটের দিকে চাপ প্রয়োগঃ অনেক সময় গ্যাসের কারণে শিশুরা তাদের পেটের দিকে চাপ দিতে পারে। যেমন- পেট চেপে ধরতে পারে বা হাত দিয়ে পেটের চারপাশে মৃদু চাপ দিতে পারে। নবজাতকের পেটে গ্যাস বোঝার এটিও আরেকটি লক্ষণ।
  • শরীর গরম থাকাঃ পেটে গ্যাসের কারণে নবজাতকের শরীরের তাপমাত্রা খানিকটা বৃদ্ধি পেতে পারে। যদিও এটি খুব একটা সাধারণ লক্ষণ নয়, তবে কিছু শিশুর গ্যাসের কারণে শরীর গরম হতে পারে এবং তারা অসুস্থ হয়েও যেতে পারে। সুতরাং আপনার শিশুর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক আছে কিনা সেটি প্রতিদিন প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করুন।
  • নিঃশ্বাসের পরিবর্তনঃ নিঃশ্বাসের পরিবর্তন দেখেও আপনি অনেক সময় আন্দাজ করে নিতে পারেন আপনার শিশুর পেটে গ্যাস হয়েছে কিনা। কারণ, শিশুর পেটে গ্যাস হলে তাদের নিঃশ্বাসে কিছুটা পরিবর্তন আসে। অর্থাৎ নবজাতক ঘন ঘন বা দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে। এটি পেটে গ্যাসের অস্বস্তির আরেকটি লক্ষণ।
  • অস্বাভাবিকভাবে চুপ থাকাঃ কিছু নবজাতকের পেটে গ্যাস হলে তারা স্বাভাবিকের থেকে অস্বাভাবিকভাবে দীর্ঘক্ষণ চুপ থাকে। তারা কোন কান্না কিংবা অস্বস্তি প্রকাশ না করলেও পেটের গ্যাস তাদের শান্ত থাকতে বাধ্য করে।
  • মুখে হাত দেওয়া বা চোষাঃ যদিও শিশুরা তাদের মুখে হাতে আঙ্গুল চুষতে অনেকটাই অভ্যস্ত। কিন্তু পেটে গ্যাস হলে শিশুরা তাদের মুখে হাত কিংবা আঙ্গুল ঢুকিয়ে অনবরত চুষতে থাকে।
  • বমন হওয়াঃ বমি বমি ভাব কিন্তু বমি হওয়া এটিও শিশুর পেটে গ্যাস হওয়ার আরেকটি লক্ষণ। কারণ, শিশুর পেটে অতিরিক্ত গ্যাস থাকলে তার পেটের মধ্যে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। ফলে তারা বমিও করে দিতে পারে।
  • শরীরের কাঁপুনিঃ গ্যাসের কারণে নবজাতকের শরীরে কখনো কখনো কম্পন বা কাঁপুনি দেখা যেতে পারে। এটি তাদের অস্বস্তি বা চাপের প্রতিফলন মাত্র।
  • পেটে গড় গড় শব্দ করাঃ যখন আপনার নবজাতকের পেটে গ্যাস জমে ঠিক তখন পেটের ভেতর গড় গড় বা অন্যরকম শব্দ হতে পারে। এই শব্দ শুনে আপনি সহজেই ধরে নিতে পারেন শিশুর পেটে গ্যাস হয়েছে।
  • পেটের ওপর হাত রাখায় অস্বস্তিঃ পেটে গ্যাসের চাপ সৃষ্টি হলে কিছু শিশু গ্যাসের কারণে পেটের উপর হাত রাখতে অস্বস্তি বোধ করে। আবার যদি কেউ শিশুর পেটে হাত দেয় সেটিও অপছন্দ করে।
  • মুখের মাধ্যমে বাতাস বের করাঃ অনেক সময় শিশুরা মুখ দিয়ে বাতাস বের করতে থাকে। কারণ, পেটে গ্যাস জমে থাকার কারণে শিশুটি বেলাচল হয়ে মুখের মাধ্যমে বাতাস বের করে।
  • মলের রং পরিবর্তনঃ গ্যাসের কারণে যেহেতু শিশুর পেটে হজমের সমস্যা হয় সেহেতু মলের রং এবং গন্ধও পরিবর্তিত হয়ে যায়। আবার কখনো কখনো বা আপনার শিশু নরম বা জলের মতো মল ত্যাগ করতে পারে। এটিও নবজাতকের পেটে গ্যাস হওয়ার অন্যতম একটি লক্ষণ।
  • খাওয়ার প্রতি অনীহাঃ গ্যাসের সমস্যার কারণে শিশুরা সাধারণত দীর্ঘ সময় খাওয়ার প্রতি অনিহা ভাব দেখায়। আবার পেটে ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও খাবার খেতে চায় না।
  • শিশুর মুখ কালো বা সাদা হয়ে যাওয়াঃ পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের চাপ সৃষ্টি হলে কিছু কিছু শিশুর মুখ গ্যাসের কারণে অস্বাভাবিকভাবে কালো বা সাদা হয়ে যেতে পারে। এটি মূলত গ্যাস জমাটের কারণেই হয়ে থাকে।
  • ঢেকুর তোলাঃ পেটে গ্যাস হলে নবজাতক স্বাভাবিকের থেকে অতিরিক্ত পরিমাণ ঢেকুর তুলতে থাকে। এই ঢেকুর তোলা দেখেও আপনি বুঝে নিতে পারেন পেটে গ্যাস হয়েছে কিনা।
  • দুই পা উপরের দিকে তুলে রাখাঃ পেটে গ্যাস হওয়ার কারণে শিশু অস্বস্তিতে ভুগতে থাকে এবং এর ফলস্বরূপ দুই পা সর্বদা উপরের দিকে তুলে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
পরিশেষে বলবো, নবজাতক শিশুর পেটে গ্যাস জামার লক্ষণ গুলি বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি এই লক্ষণ গুলি আপনার নবজাতকের মধ্যে লক্ষ্য করে থাকেন তাহলে প্রথমত শিশুকে কোলে নিয়ে হালকা পেটে চাপ দিতে পারেন বা পেট ম্যাসাজ করে দিতে পারেন। তাতে নবজাতক কিছুটা হলেও আরাম পাবে। তবে সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় সেক্ষেত্রে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

২ বছরের বাচ্চাদের পেটে গ্যাস হলে করণীয়

২ বছরের বাচ্চাদের পেটে গ্যাস হলে করণীয় কি কি? ২ বছরের বাচ্চাদের পেটে গ্যাস হওয়া খুব সাধারন একটি সমস্যা। পেটে গ্যাস হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অস্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়া, অতিরিক্ত বাতাস খাওয়া এবং খাদ্যাভাসের ত্রুটি। এছাড়া পেটে গ্যাস জমে গেলে আপনার বাচ্চা ক্রমাগত কেপে কেঁপে উঠতে পারে, 
কান্না করতে পারে বা পেটের নিচের দিকে চাপ অনুভব করতে পারে। এই ধরনের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে বেশ কিছু সহজ ও কার্যকরী উপায় রয়েছে। যা মা-বাবা বা অভিভাবকরা আপনার সন্তানের জন্য অনুসরণ করতে পারেন। যেমন-
  • হালকা ম্যাসাজ করাঃ আপনি আপনার বাচ্চার পেটের চারপাশে হালকা হাতে আলতো ভাবে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে পেট থেকে গ্যাস বের হয়ে যেতে পারে। আবার ঘোরানোর গতিতে পেটের মধ্যে গ্যাস অপসারণের চেষ্টাও করতে পারেন। যেমন- পেটের উপর হাত দিয়ে গোলাকার গতিতে ম্যাসাজ করার।
  • মলমূত্র নির্গমন নিশ্চিত করাঃ ২ বছরের বাচ্চাদের পেটে গ্যাস জমার আরেকটি কারণ হলো সঠিক সময়ে মলত্যাগ না করা কিংবা প্রসাবে জটিলতা। তাই বাচ্চাকে নিয়মিত সঠিক সময়ে মলত্যাগের অভ্যাস করান।
  • টানা হাটানোঃ পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে বাচ্চাকে ধীরে ধীরে পিঠে তুলে হাটানোর চেষ্টা করুন। এতে গ্যাস বের হতে সুবিধা হয়। তবে হাঁটার সময় খেয়াল রাখবেন বাচ্চার পেটে যেন অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।
  • গ্যাস রিলিফ ড্রপসঃ বাজারে বেশ কিছু বিশেষ ক্যাশ রিলিফ ড্রপস পাওয়া যায়। যেগুলো বাচ্চাদের জন্য নিরাপদ। যেমন সাইমেথিকোণ নামক একটি উপাদান গ্যাস কমাতে ব্যবহৃত হয়। তবে এই ড্রপস ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই ব্যবহার করবেন।
  • খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন আনুনঃ কিছু কিছু খাবার রয়েছে বিশেষ করে দুধ,কলা, শসা, মটরশুটি, ফুলকপি, অতিরিক্ত চিনি ইত্যাদি খাবার অতিরিক্ত খাওয়ালে এগুলো আপনার বাচ্চার পেটে গ্যাস তৈরি করতে পারে। সুতরাং এই খাবারগুলো আপনার বাচ্চার পেটের জন্য সমস্যা তৈরি করলে সেগুলি খাওয়ানোর পরিমাণ কমিয়ে দিন। সেই সাথে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মায়ের খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনাটাও জরুরী।
  • তরল খাবার দেওয়াঃ পেটে গ্যাস হওয়ার পর আপনি আপনার বাচ্চাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে পারেন। এতে পেট পরিষ্কার থাকবে। তবে অতিরিক্ত পানি খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। এতে গ্যাস আরো বেড়ে যেতে পারে।
  • মাতৃ দুধ বা ফর্মুলা দুধের পরিমাণ সামঞ্জস্য করাঃ বাচ্চা যদি মায়ের বুকের দুধ খায় সেক্ষেত্রে মায়ের খাদ্যাভাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাথে মায়ের খাদ্য তালিকা থেকে গ্যাস তৈরি করা খাবার একেবারে বাদ দিতে হবে। আর আপনার বাচ্চা যদি বুকের দুধ না খেয়ে ফর্মুলা দুধ খায় তবে দুধের ধরন পরিবর্তন করে দেখতে পারেন। কারণ, কিছু ফর্মুলা দুধ পেটে গ্যাস তৈরি করে আবার কিছু দুধ আছে যেগুলো পেটে গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
  • ধীরে ধীরে খাওয়ানঃ আপনার বাচ্চাকে অতি দ্রুত খাবার খাওয়াবেন না। কারণ, এতে বাতাস খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পেটে গ্যাস জমতে পারে। ঠিক সে কারণেই বাচ্চাকে ধীরে ধীরে এবং বারে বারে খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। এতে গ্যাসের সমস্যা কম হবে।
  • বাচ্চাকে হাটানঃ পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা হলে আপনার বাচ্চাকে হারানোর চেষ্টা করতে পারেন। কারণ, হাটালে পেটের চাপ কমতে থাকে এবং গ্যাস বের হতে সুবিধা হয়।
প্রিয় পাঠক, বাচ্চাদের পেটে গ্যাস হওয়া যদিও একটি সাধারন সমস্যা তবুও এটি তাদের জন্য অনেক সময় অস্বস্তির কারণ হতে পারে। তবে সঠিক খাদ্য, সহজ কিছু পদক্ষেপ এবং হালকা ম্যাসাজের মাধ্যমে এ সমস্যা সহজেই মোকাবেলা করা সম্ভব। তাছাড়া ঘরোয়া উপায়ে নবজাতকের পেট ফাঁপা কিভাবে দূর করবেন তা খানিক আগেই আজকের আলোচনায় জেনেছেন।

পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর ওষুধ

পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর কমানোর ওষুধ হিসেবে বেশ কিছু কার্যকরী ঔষধ রয়েছে যা অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন। সবচেয়ে প্রচলিত ঔষধ গুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টাসিড যেমন- পেপসিড বা গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড রিডিউসার যা পাকস্থলীর অতিরিক্ত গ্যাস কমাতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে গ্যাসের ব্যথাও প্রতিরোধ করে। এটি মূলত পেটের অ্যাসিড লেভেল কমাতে সহায়তা করে।
 
আবার সিমেথিকন ভিত্তিক ওষধ যেমন- সোমাকল বা ম্যাথিকোন গ্যাসের ফুসকুড়ির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। কারণ, এটি গ্যাস বুদবুদ গুলিকে ভেঙে দেয়। ফলে পেটে অস্বস্তিও কমে যায়। এছাড়াও রয়েছে প্যানক্রিয়াস নামক এক ধরনের এনজাইম। যা খাবার হজম এবং গ্যাসের ব্যথা দূর করে। এই ৩টি ওষুধ মূলত পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী। তবে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হলে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

বাচ্চাদের গ্যাসের ওষুধের নামের তালিকা ও দাম

নবজাতকের পেট ফাঁপা দূর করার বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই বাচ্চাদের গ্যাসের ওষুধের নামের তালিকা ও দাম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? অনেকেই আছেন যারা বাচ্চাদের গ্যাসের ওষুধের নামই জানেন না। আবার নাম জানলেও দাম সম্পর্কে খুব একটা ধারণা নেই। ঠিক সে কারণেই আপনার সুবিধার্থে আজ আমরা বাচ্চাদের গ্যাসের বেশ কিছু ঔষধের নাম এবং এর দাম সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দেবো। তাহলে চলুন নিম্নলিখিত একটি ছকের মাধ্যমে বাচ্চাদের গ্যাসের ঔষধের নাম এবং দাম সম্পর্কে জেনে নিন-
সিরাপের নাম কোম্পানির নাম সম্ভাব্য দাম
সিডাল sidal ৮০-১২০ টাকা
সিপলেক্স siplex ১০০-১২০ টাকা
সিমেথ zenith ৩০ টাকা
ফ্লাটুনিল acme ৩৫ টাকা
সিমেট beximco ৩০ টাকা
নিওড্রপ neodrop ৩০ টাকা
লেফোম lefoam ৩০ টাকা
গ্যাসনিল gasnil ৩০ টাকা
ফ্লাকোল flacol ৩৫ টাকা
পেডিকন pedicon ৩০ টাকা
সিমিকন semecon ৪৬ টাকা
নওনেহাল harbal ৭৫ টাকা

নবজাতকের পেটে গ্যাস হলে করণীয় কি

নবজাতকের পেটে গ্যাস হলে করনীয় কি? নবজাতক শিশুর পেটে গ্যাস হলে মা-বাবারা অনেক সময় চিন্তিত হয়ে পড়েন। কিন্তু এতে চিন্তিত হওয়ার বিশেষ কোনো কারণ নেই। কারণ, এটি একটি সাময়িক সমস্যা। কিছুদিন পর অথবা তিন থেকে চার মাস পরে এই সমস্যা আপনা আপনি ঠিক হয়ে যায়। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন নবজাতকের পেটে গ্যাস হলে কি কি করবেন তা জেনে রাখুন-
নবজাতকের-পেট-ফাঁপা-দূর-করার-ঘরোয়া-উপায়-কি
  • প্রথমেই আপনার শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সঠিক পদ্ধতি জানতে হবে। অর্থাৎ নবজাতক এবং মায়ের দুধ খাওয়ানোর অবস্থান ঠিকঠাক মত হতে হবে। খেয়াল রাখবেন দুধ খাওয়ানোর সময় আপনার শিশুর মাথাটা যেন খানিকটা উঁচু থাকে।
  • শিশুকে শুইয়ে বুকের দুধ ফর্মুলা দুধ না খাওয়ানাই ভালো। কারণ শুনে দুধ খাওয়ালে তাতে পেটে বেশি বাতাস ঢোকার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং আপনার শিশুকে শুয়ে থেকে দুধ খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
  • বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় আপনি অবশ্যই শিশুর অবস্থান এবং নিপলের দিকে খেয়াল করুন। যাতে করে শিশু যেন পেছনে দিকে বেঁকে না থাকে এবং নিপলটি যেন মুখে সঠিকভাবে বসানো হয়।
  • আপনি চেষ্টা করবেন শিশুকে সবসময় বুকের দুধ খাওয়াতে। বাজারে যে ফর্মুলা দুধ পাওয়া যায় সেটি খাওয়ানো একেবারে ঠিক নয়। কারণ, ফর্মুলা দুধে এমন কিছু উপাদান সংযুক্ত থাকে যা নবজাতকের পেটে গ্যাসের সৃষ্টি করে।
  • আপনি যতটা সম্ভব চেষ্টা করবেন ফিডারে দুধ না খাওয়াতে। কারণ, ফিডারের মাধ্যমে দুধ খাওয়ালে শিশুর পেটে বাতাস ঢোকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • দুধ খাওয়ানোর পর শিশুকে শুইয়ে দেবেন না। বরং সোজা করে আপনার কাঁধে নিয়ে ১০-১৫ মিনিট হাঁটতে থাকুন এবং হাত দিয়ে আপনার শিশুর পিঠ আলতো ভাবে চাপড়াতে থাকুন। অর্থাৎ এভাবে শিশুর ঢেঁকুর তোলানোর চেষ্টা করুন। যেটি বারপিং নামে পরিচিত। এভাবে করলে শিশুর পেটে থাকা গ্যাস খুব সহজেই বেরিয়ে যায় এবং বাচ্চাও আরাম পায়।
  • আবার আপনি চাইলে নবজাতকের পেট ও শরীরে ম্যাসাজও করতে পারেন। তাতে অনেক সময় ভালো উপকার পাওয়া যায়। যেমন ধরুন নবজাতকের কিছুক্ষণ উপর করে শুয়ে রাখা। আবার শিশুর পেটে আপনার আঙ্গুলের সাহায্যে আলতো ভাবে উপর থেকে নিচ অব্দি টেনে টেনে বাতাস বের করে দেওয়া। এভাবেও পেটের গ্যাস বেরিয়ে আসে।
  • আপনার শিশু যেহেতু বুকের দুধ পান করে সেহেতু আপনার খাদ্যাভ্যাসের দিকেও নজর রাখা জরুরি। অর্থাৎ যেসব খাবারে গ্যাস হবে সেসব খাবার পরিহার করে চলবেন। বিশেষ করে অতিরিক্ত শর্করা, দুগ্ধজাত খাবার কিংবা অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলবেন।
  • শিশু অত্যধিক পরিমাণে অস্বস্তি বোধ করলে আপনি শিশুর শরীর হালকা কুসুম গরম পানিতে মুছে দিলে বা গোসল করিয়ে দিলে পেট থেকে গ্যাস বের হওয়ার প্রক্রিয়া অনেকটাই সহজ হয়।
  • নবজাতকের ক্ষুধার জন্য কান্না শুরুর আগেই খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করুন। কারণ, ক্ষুধার কারনে তাড়াতাড়ি খাওয়ার ফলে শিশু বেশি বেশি ঢোক গিলতে শুরু করে। সাথে বাতাসও।
  • আপনি চেষ্টা করবেন আপনার শিশুকে নিরিবিলি শান্ত পরিবেশে খাবার খাওয়াতে। তাতে নবজাতকের খাবার খাওয়ার গতি কম থাকে।
  • আবার আপনার শিশুকে চিত করে শুনিয়ে দিয়ে দুই পা দু হাতে ধরে আস্তে আস্তে সাইকেল প্যাডেল করার মতো বেশ কিছুক্ষণ নাড়তে থাকুন। পেটের গ্যাস বের হতে এটিও দারুন কাজ করে।
  • আপনি আপনার শিশুকে হাটুর উপর পেটে ভর দিয়ে শুইয়ে দিয়ে পিঠেও ম্যাসাজ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন শিশুর মাথা যেন বেশি না ঝোঁকে। সাথে আরেক আহাদ দিয়ে শিশুকে নিজের সাপোর্টে রাখুন।
  • অনেক সময় সিমেথিকোণ ড্রপ খাওয়ালেও গ্যাসের জন্য উপকার পাওয়া যায়। তবে এই ড্রপ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে তবেই খাওয়ানো উচিত।
  • আপনার শিশুর বয়স ৬ মাস হয়ে গেলে বাড়তি খাবার দেওয়ার সময় যেসব খাবারে গ্যাস হয় সেসব খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিন।
  • ভাত বা খিচুরি খাওয়াতে চাইলে সেটি শক্ত না করে নরম করে খাওয়ান। আবার ফলমূল খাওয়ালে সেটি টুকরো করে বা জুস করে দিন।
  • আপনার শিশুকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, নবজাতক যত বেশি কান্না করবে ততই পেটে বাতাস ঢোকার সম্ভাবনা থাকবে এবং এ বাতাস ঢোকার কারণেই পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হবে।
  • যদি গ্যাসের সমস্যা একেবারেই না কমে কিংবা দীর্ঘস্থায়ী হয় সেক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। কারণ, কখনো কখনো অতিরিক্ত গ্যাস এটি আপনার নবজাতকের অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যারও ইঙ্গিত হতে পারে।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম নবজাতকের পেটে গ্যাস হলে তার করণীয় সম্পর্কে। এই দিকনির্দেশনা গুলো অনুসরণ করলে আপনার শিশুর পেটের গ্যাস অনেকটাই কমানো সম্ভব। তাছাড়া আপনি ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে নবজাতকের পেট ফাঁপা দূর করতে পারবেন তা ইতিমধ্যেই আমরা আপনাকে জানিয়ে দিয়েছি।

যেসব কারণে শিশুর পেটে গ্যাস হয়

যেসব কারণে শিশুর পেটে গ্যাস হয় তা আমাদের সকলেরই জেনে রাখা উচিত। শিশুর পেটে গ্যাস হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের পাচনতন্ত্র পুরোপুরি বিকশিত না হওয়া এবং তাদের খাওয়ার ধরন বা পরিবেশের কারণেও অনেক সময় পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয়। এবার চলুন শিশুর পেটে গ্যাস হওয়ার কারণগুলো বিস্তারিত জেনে নিন-
  • প্রথমেই জানিয়ে দেই, বুকের দুধ খাওয়া শিশুদের থেকে ফিডারে দুধ খাওয়া শিশুদের মধ্যে গ্যাসের সমস্যা বেশি হয়। কারণ, ফিডারে দুধ খাওয়ার সময় পেটে বাতাস বেশি ঢোকে। এটি শিশুর জন্য খুবই অস্বস্তিকর।
  • বাজারজাতকৃত ফর্মুলা মিল্ক ফিডারের মাধ্যমে খাওয়ালে বোতলে অতিরিক্ত ফেনা বা বাতাস জমে। যা শিশুর পেটে গ্যাস সৃষ্টির জন্য দায়ী।
  • আবার শুধুমাত্র পেটে বাতাস ঢোকার কারণেই যে গ্যাস হয় তা একেবারেই নয়। বরং শিশুদের অপরিপক্ক পরিপাকতন্ত্র অনেক সময় খাবারের বিপাকক্রিয়ায় উপজাত হিসেবেও গ্যাসের সৃষ্টি হয়।
  • অনেক শিশু রয়েছে যারা শুধুমাত্র ফিডারে দুধ খায়। সেক্ষেত্রে ফিডারের নিপলের ছিদ্র বড় হলে অতিরিক্ত পরিমাণ দুধ বাচ্চার পেটে চলে যায়। পাশাপাশি অতিরিক্ত বাতাস ও শিশুর পেটে প্রবেশ করে এবং গ্যাসের সৃষ্টি হয়।
  • আবার মায়ের বুকের দুধ কম আসলে কিংবা ফিডারের ছিদ্র যদি ছোট হয় সেক্ষেত্রে দুধের পরিমাণ কম আসে। আর দুধের পরিমাণ কম আসার ফলে বাচ্চার পেটে অতিরিক্ত বাতাস প্রবেশ করে। যা পেটে গ্যাসের উদ্রেগ করে।
  • এছাড়াও মায়ের বেশ কিছু সমস্যার কারণেও শিশুর পেটে গ্যাস হতে পারে। যেমন- মায়ের কষ্টকাঠিন্য, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া ইত্যাদির কারণে।
  • বেশিরভাগ নবজাতক শিশু মাতৃদুগ্ধই পান করে। সুতরাং মায়ের খাওয়া-দাওয়ার ওপরেও অনেক সময় শিশুর পেটের গ্যাস নির্ভর করে। শুধু তাই নয়, অনেক দেরি করে না খেয়ে থাকার কারণে এবং ঠিকঠাক মতো দুধ পান না করানোর ফলেও শিশুর পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।
  • আবার অনেক সময় অতিরিক্ত বুকের দুধ খাওয়ার ফলে মায়ের বুকের দুধে থাকা ল্যাকটোজ ভেঙে পেটে গ্যাস তৈরি হয়।
  • ছয় মাস বয়সে যখন শিশুকে বাড়তি খাবার হিসেবে খিচুড়ি সেদ্ধ ডিম সেদ্ধ ডাল দেওয়া হয় ঠিক তখন এই খাবারগুলো থেকেও পেটে গ্যাসের আবির্ভাব হতে পারে। তাই প্রত্যেক মায়ের উচিত এই সময়ে শিশুর খাবার-দাবারের প্রতি বিশেষ নজর রাখা।
  • আপনার শিশুর ঘুম পর্যাপ্ত না হলে পেটে গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন একটি নিরিবিলি পরিবেশে।
  • শিশুকে খাওয়ানোর সময় সঠিক পজিশনে না থাকা এবং শুয়ে থাকা অবস্থায় দুধ খাওয়ালে পেটে গ্যাস জমতে পারে।
  • আবার আপনার শিশুর শারীরিক বা হরমোনাল পরিবর্তনও পেটে গ্যাস সৃষ্টির জন্য দায়ী।
  • আপনার শিশুর বয়স অনুযায়ী খাবারের ধরনও গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে। যেমন আপনার শিশুকে যদি অল্প বয়সে ভারী খাবার দেয়া হয় তবে তার পাচনতন্ত্র এ খাবার হজম করতে পারে। না ফলে গ্যাস হতে পারে।
  • শিশুর পরিবেশের তাপমাত্রার পরিবর্তন ও তাদের পাচনতন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে। অর্থাৎ তাপমাত্রার হেরফেরের কারণে শিশুর পেটে অস্বস্তি বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
  • ছয় মাস বয়সের পর বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুকে বাড়তি খাবার দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এতেও অনেক সময় পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে কিছু সবজি যেমন- ব্রকলি, বাঁধাকপি ইত্যাদি। আবার শাকসবজি মিশিয়ে শিশুর জন্য অনেক সময় খিচুড়ি তৈরি করা হয়। এতে শাক সবজির পরিমাণ বেশি হলে তাতেও গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • গ্যাস প্রতিরোধে অনেক সময় শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয়। এই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে পেটের ভারসাম্য যেমন নষ্ট হয় তেমনি অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি হয়।
  • আবার কখনো কখনো শিশুর শারীরিক বা হরমোনাল পরিবর্তনেও শিশুর পেটে গ্যাস হয়।
  • পেট পূর্ণ থাকা সত্ত্বেও শিশুকে অতিরিক্ত পানি খাওয়ানোর ফলে পেটে গ্যাস জমতে পারে।
  • আবার কখনো কখনো শিশুর পেটে গ্যাসের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য বা গ্যাসটোইনস্টেস্টাইনাল সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে
  • শিশুর স্থানান্তর বা ভ্রমণের ফলে পেটে গ্যাস হতে পারে। কারণ, এটি তাদের পাঁচন প্রক্রিয়াকে নানাভাবে প্রভাবিত করে।
  • শিশু দীর্ঘক্ষণ শুয়ে থাকলে পেটের আঙ্গুলের অবস্থা কীন সঠিকভাবে না থাকার কারণে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • আবার শিশুকে কিছু বিশেষ ধরনের ওষুধ যেমন- অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য চিকিৎসা শিশুর পেটে গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে। কারণ এসব ওষুধ শিশুর পাচনতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত করে।
উপরিউক্ত এই সমস্ত কারণে আপনার শিশুর পেটে গ্যাস হতে পারে। পেটে গ্যাস সাধারণত শিশুর বয়স, তাদের শারীরিক পরিস্থিতি, দুধ খাওয়ার অভ্যাস এবং পরিবেশের উপর নির্ভর করে। আর পেটে গ্যাস হলে পেট ফাঁপার সম্ভাবনাও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এই পেট ফাঁপা দূর করার বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যা আমরা আজকের আর্টিকেলে শুরুতেই আলোচনা করেছি।

১ বছরের শিশুর পেটে গ্যাস

এক বছরের শিশুর পেটে গ্যাস হওয়া খুব সাধারণ একটি সমস্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুর হজম প্রক্রিয়ায় সঠিকভাবে কাজ না করার কারণে এমনটা হয়ে থাকে। শিশুদের পেটের গ্যাস মূলত মায়ের বুকের দুধ বা অন্যান্য খাবারের কারণে হয়ে থাকে। বিশেষ করে যদি তারা ঠিকভাবে খাবার না খায় বা খাবারের সাথে বাতাস টেনে নেয়।
 
এই গ্যাসের কারণে শিশুর শারীরিক অস্বস্তি, ঘুমের ব্যাঘাত, খাওয়ার সময় অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যেতে পারে। আবার গ্যাসের কারণে শিশুর পেটে ব্যথাও হতে পারে। এমনকি পেট শক্ত হয়ে ফুলেও যেতে পারে। আবার অনেক সময় শিশু দীর্ঘক্ষণ অনবরত কান্না করতে পারে। গ্যাসের এই সমস্যা সমাধানে আপনি শিশুকে খানিকটা সময় ধরে কোলে ঘেসে
 
বা উল্টো করে সোজা অবস্থায় রেখে শিশুর পিঠে আলতো ভাবে চাপড়াতে থাকুন প্রায় ৫-১০ মিনিট। তাতে পেটের গ্যাস অনেকটাই বেরিয়ে যাবে এবং আপনার শিশুও স্বস্তি পাবে। আর যদি গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যায় বা দীর্ঘস্থায়ী হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

নবজাতকের পেট ফাঁপা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে লেখকর মন্তব্য

নবজাতকের পেট ফাঁপা দূর করার ঘরোয়া উপায় আমরা এতক্ষন বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনার নিকট বোধগম্য হয়েছে। শিশুর পেটে গ্যাসের সমস্যা বা পেট ফাঁপা এটি সাময়িক একটি সমস্যা। প্রায় কম বেশি সকল শিশুর এই সমস্যা হয়র থাকে। ফলে এতে অধিক চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই।
 
তবে এ সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় সেক্ষেত্রে আপনার উচিত অতি দ্রুত একজন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক শিশুর পরিচর্যা করা। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url