ঐতিহাসিক মে দিবস কি এবং কেন পালন করা হয়
মে দিবস কি এবং কেন পালিত হয় জানেন! মে দিবস কত সাল থেকে পালিত হয় আমরা অনেকেই জানি না। তাহলে বলবো আর্টিকেলটি এক্ষুনি একবার মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন। মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস,
শ্রমজীবী
মানুষের অধিকার, মর্যাদা এবং ন্যায্য দাবির প্রতীক। আজ আমরা আলোচনা করবো মে
দিবস সম্পর্কে এবং এই দিনটি কেন পালন করা হয়। সাথে আরো আলোচনা করবো এর
গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ মে দিবস কি এবং কেন
- মে দিবস কি এবং কেন
- মে দিবস কত সাল থেকে পালিত হয়
- মে দিবসের ইতিহাস
- মে দিবসের স্লোগান কি
- প্রথম আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস কবে পালিত হয়
- মহান মে দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
- শ্রমিক দিবস কেন পালিত হয়
- মে দিবস নিয়ে কিছু কথা
- বাংলাদেশে প্রথম শ্রমিক দিবস পালন করার ইতিহাস
- পরিশেষে - মে দিবস কি এবং কেন
মে দিবস কি এবং কেন
মে দিবস কি এবং কেন আন্তর্জাতিকভাবে পালন করা হয় তা আমরা অনেকেই জানি আবার অনেকেই জানেন না। মে দিবস যা প্রতিবছর ১লা মে তারিখে পালিত হয় এবং এটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবেও পরিচিত। এই দিনটি মূলত শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও শ্রমের মর্যাদা বোঝাতে পালন করা হয়।মে
দিবসের ইতিহাস ১৮৮৬ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে ঘটে যাওয়া
"হে মার্কেট আন্দোলন" এর সাথে জড়িত। সেই সময় শ্রমিকরা দৈনিক ৮ ঘণ্টা কর্ম
দিবসের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে বেশ
কয়েকজন শ্রমিক নিহত হন এবং অনেককেই গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তীতে
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি
পায়। ঠিক এর পর থেকেই ১লা মে দিনটি শ্রমিকদের আত্মত্যাগ স্মরণে পালিত হয়ে
আসছে। যদিও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে ১৯২৩
সাল থেকে। মে দিবস শ্রমিক শ্রেণীর দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস বহন করে।
সেই
সাথে এটি শ্রমিকদের ঐক্য, সংহতি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার গুরুত্বকে বিশেষভাবে
তুলে ধরে। এই দিনে বিভিন্ন দেশে শ্রমিক সংগঠনগুলো মিছিল, সভা, সমাবেশ করার
মাধ্যমে তাদের দাবি ও অধিকারের কথা জানিয়ে থাকে। বিশেষ করে তারা বেতন
বৃদ্ধি, কর্মস্থলের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ও কাজের উপযুক্ত পরিবেশের
দাবি করে থাকে।
বিভিন্ন
দেশে এই দিনটি সরকারিভাবে ছুটি হিসেবে পালন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায়
বাংলাদেশও মে দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন করা হয়। গণমাধ্যমে এই দিবস
উপলক্ষে বিশেষ প্রতিবেদন ও অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়। সাথে প্রতিটি শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানেও মে দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
মে দিবস আসলে কি এবং কি কারনে পালিত হয়
ফলে
শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে এই দিনটি নতুন করে সমাজকে ভাবতে
শেখায়। শুধু তাই নয়, এটি ধনী ও গরিবের মাঝে একটি সেতু বন্ধন তৈরি করার
বার্তা দেয়। সে হিসেবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সমতার জন্য এটি একটি
গুরুত্বপূর্ণ দিন। তাই মে দিবস শুধুমাত্র একটি তারিখ বা সংখ্যা নয় বরং এটি
শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের প্রতীক।
এটি
আমাদের পুনরায় মনে করিয়ে দেয়, সকল শ্রমের সম্মান আছে এবং শ্রমিকদের
মর্যাদা রক্ষা করার দায়িত্ব সমাজের। এটি শুধুমাত্র শ্রমিকদের দিন হিসেবে
নয় বরং সামাজিক ন্যায় ও মানবাধিকারের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত। সুতরাং মে
দিবস একদিকে যেমন অতীতের সংগ্রামের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় ঠিক অন্যদিকে
বর্তমানেও শ্রমিকদের নায্য দাবি আদায়ের প্রেরণা যোগায়।
মে দিবস কত সাল থেকে পালিত হয়
মে দিবস ঠিক কত সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে এ বিষয়ে আমরা অনেকেই অবগত নই। মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস প্রথমবার ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের শ্রমিকদের শ্রমঘন্টা কমানোর দাবিতে একটি ধর্মঘটের মাধ্যমে উদযাপিত হয়। ওই সময়ে শ্রমিকরা ৮ ঘন্টা কাজের দাবী জানান।যেটি
"৮ ঘন্টা কাজ, ৮ ঘন্টা বিশ্রাম, ৮ ঘণ্টা বিনোদন" স্লোগান হিসেবেও প্রচারিত
হয়। প্রথমদিকে এই আন্দোলন সফল না হলেও এরপর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত
দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজবাদী সম্মেলনে মে দিবসের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
ঠিক এরপর ১৮৯০ সালে প্রথম মে দিবস পালিত হয় ইংল্যান্ড, জার্মান, ফ্রান্স
সহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে।
সময়ের
সাথে সাথে মে দিবসের জনপ্রিয়তা দিনকে দিন বেড়ে যায় এবং বিশ্বের নানা
দেশে এটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবেও পালিত হতে শুরু করে। বিশেষ করে ইউরোপ,
লাতিন আমেরিকা, এশিয়া এবং আফ্রিকার অনেকগুলো দেশে বিভিন্ন ধরনের মিছিল,
সভা, সমাবেশ করার মাধ্যমে এ দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হয়।
বাংলাদেশে
১৯২৩ সালে প্রথম মে দিবস পালন করা হয়, যখন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে
শ্রমিকদের পক্ষে একটি বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে এটি বাংলাদেশে
ব্যাপকভাবে উদযাপিত হতে শুরু করে। সুতরাং শ্রমিকদের সংহতি এবং সংগ্রামের
প্রতীক হিসেবে মে দিবস বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক দিবস হয়ে
উঠেছে।
মে দিবসের ইতিহাস
মে দিবসের ইতিহাস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনটি শ্রমিকদের অধিকার, সংগ্রাম এবং তাদের শ্রমের মূল্য স্বীকৃতি দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মে দিবসের ইতিহাস জানতে আপনাকে ফিরে যেতে হবে ঠিক উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। হ্যাঁ উনিশ শতকের গোড়ার দিকের কথাই বলছি। সংগ্রাম আন্দোলনের মাধ্যমে পৃথিবী থেকে এক সময় দাস প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেলেও শ্রমিকদের কাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা ছিল না।ঠিক
তখনও শ্রমিকরা ছিল শোষিত বঞ্চিত। কলকারখানায় একজন শ্রমিককে চাকরি টিকিয়ে
রাখতে হলে সপ্তাহে অন্তত ৬ দিন গড়ে ১০-১৫ ঘন্টা অমানুষিকভাবে কাজ করতে
হতো। তার বিনিময়ে মিলতো খুবই সামান্য মজুরি। সাথে নিরাপত্তাহীন, পরিবেশের
সাথে খাপ খাইয়ে কাজ করতে যেয়ে মৃত্যু, আঘাত, রোগ-সংক্রমণ ছিল তাদের
নিত্যদিনের সঙ্গী।
কিন্তু
একটা সময়ে এসে শ্রমিকদের টনক নড়ে এবং তারা ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবি উত্থাপন
করে। আমেরিকায় ১৮৮০ সালে সর্বপ্রথম এই দাবিটি উত্থাপিত হয়। এরই
ধারাবাহিকতায় ১৮৮৪ সালে শ্রমিক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয় Federation of
organised trades and Labour unions of the United States and Canada।
পরবর্তীতে ১৮৮৬ সালে এই সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় federation of
labour।
এই
সংঘটির মাধ্যমেই শ্রমিকরা সকলে মিলে একত্রিত হয়ে ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে
আন্দোলন শুরু করেছিল। কিন্তু মালিক পক্ষ রীতিমতো শ্রমিকদের এই দাবি উপেক্ষা
করে। দাবি উপেক্ষার প্রতিবাদে ১৮৮৬ সালের ১লা মে ঢালাই শ্রমিক সিলভিসের
নেতৃত্বে আমেরিকা জুড়ে ধর্মঘট ডাকা হয়। যার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু ছিল
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহর।
বলে
রাখি, American federation of labour সংঘটি ১৮৮৪ সালে শ্রমিকদের দৈনিক ৮
ঘন্টা দৈনিক মজুরি নির্ধারণের জন্য প্রস্তাব পাস করে। সেই সাথে মালিক ও
বণিক পক্ষকে এই প্রস্তাবটি কার্যকরের জন্য ১৮৮৬ সালের ১লা মে পর্যন্ত
সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো বণিক পক্ষ মালিকপক্ষের
থেকে কোন ধরনের সাড়া না পেয়ে তারা ধীরে ধীরে আরো প্রতিবাদী হয়ে ওঠে।
মে দিবসের ইতিহাস
ঠিক
এই সময়ই তৎকালীন "এলার্ম" নামক একটি পত্রিকায় শ্রমিকদের নিয়ে একটি কলাম
ছাপানো হয়। কলমটিতে বলা হয় "একজন শ্রমিক ১০ ঘণ্টা কাজ করুক কিংবা ৮
ঘণ্টাই কাজ করুক না কেন সে দাস হিসেবেই বিবেচিত"। এতে শ্রমিকদের আন্দোলন
যেন আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। সাথে শ্রমিক সংগঠনগুলোর সাথে
বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক দলগুলোও যোগ দিতে শুরু করে।
এদিকে
১লা মে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু
দুঃখজনক হলো মালিক এবং বণিক উভয়ই ঐ প্রস্তাবটি নাকচ করে। ফলে
স্বাভাবিকভাবেই ১লা মে দিনটি মোকাবেলার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে পুলিশ ও
প্রতিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। আবার স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও তৎকালীন
শিকাগো সরকারকে অস্ত্র ও জনবল সংগ্রহ করার জন্য অর্থ দিয়ে সহায়তা করতে থাকে।
সেই
সাথে ধর্মঘট আহ্বানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য শিকাগোর একটি
বাণিজ্যিক ক্লাব "ইলিনয়" প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ভারী মেশিনগান কেনার অর্থ
যোগান দেয়। এতকিছুর পরেও ১৮৮৬ সালে ১লা মে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে
প্রায় ৩ লক্ষ শ্রমিক তাদের কাজ ফেলে রাস্তায় নামে। অবশেষে
মিটিং, মিছিল, ধর্মঘট সবকিছু মিলিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে পহেলা মে।
আন্দোলনের
গতি বাড়ার সাথে সাথে এতে শ্রমিকের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এরপর ৪ মে
আন্দোলন চলাকালীন অবস্থায় সন্ধ্যাবেলায় শিকাগো "হে" মার্কেট নামক
বাণিজ্যিক এলাকায় মিছিলের উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়। মিছিল শুরুর আগে
শ্রমিক নেতা স্পিজ এবং আগস্ট জড়ো হওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কথা বলছিলেন।
ঠিক এই সময়অবস্থানরত পুলিশের দলের কাছে একটি বোমা বিস্ফোরিত
হয়।
তাতে
পুলিশ সহ মোট ৬ জন নিহত এবং ১১ জন আহত হন। বিস্ফোরণের পর পুলিশ বাহিনী
শ্রমিকদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করে, যা রূপ নেয় সংঘর্ষে।
এদিকে শ্রমিক নেতা স্পিজ এবং আগস্ট এর বিরুদ্ধে পুলিশ হত্যা মামলায়
অভিযুক্ত করা হয় এবং স্পীজ সহ মোট ৬ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। ঠিক
এভাবেই আন্দোলন এবং বহু শ্রমিকের প্রাণের বিনিময়ে ১লা মে শ্রমিকদের দাবি আদায়ের দিন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
"দুনিয়ার মজদুর এক হও"
মে দিবসের স্লোগান কি
মে দিবসের স্লোগান কি? মে দিবস শ্রমিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন রেলি, সভা, সমাবেশ ইত্যাদির জন্য স্লোগানের প্রয়োজন পড়ে। মে দিবস বা শ্রমিক দিবসের স্লোগানগুলো সাধারণত শ্রমিকদের অধিকার, ন্যায্যতা এবং ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এবার চলুন মে দিবসের বেশ কিছু জনপ্রিয় স্লোগান জেনে নিই -"দুনিয়ার মজদুর এক হও"
- এটি একটি ঐতিহাসিক স্লোগান, যা শ্রমিক শ্রেণীর ঐক্যের ডাক দেয়। এই স্লোগানটি প্রথম ব্যবহার করা হয় কমিউনিস্ট আন্দোলনে এবং এর মাধ্যমে বোঝানো হয় শ্রেণীবিভক্ত সমাজে শ্রমিকদের বিশ্বব্যাপী একত্রিত হয়ে নিজেদের অধিকার আদায় করতে হবে।
- এই স্লোগানটির মাধ্যমে শ্রমিক ও মালিকের সমন্বয়ে দেশের উন্নতির আহবানের কথা জানায়।
- এই স্লোগানটির মাধ্যমে শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যে ঐক্য গঠনের আহ্বান জানানো হয়।
- এই স্লোগানটি মূলত শ্রমিকদের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের দাবির প্রতিফলন। সাথে শ্রমের সঠিক মূল্য এবং প্রাপ্য মজুরি নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়।
- এই স্লোগানটি শ্রমিকদের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়। শ্রমিক ছাড়া যে কোন উন্নয়ন সম্ভব নয় বরং তারাই প্রতিটি উৎপাদনের ভিত্তি এই স্লোগানের মূল কথা।
- আমাদের অধিকার এই ঐতিহাসিক স্লোগানটি ১৮৮৬ সালের শিকাগোর হে মার্কেট আন্দোলনের স্মৃতি বহন করে। এটি মূলত শ্রমিকদের কাজের সময়ের বন্টনের দাবি তুলে ধরে।
- এই স্লোগানটি শ্রমিকদের মধ্যে সংহতি ও সম্মিলিত আন্দোলনের প্রেরণা যোগায়। এটি বুঝায় যে, একতা থাকলে যেকোনো দাবি যে কোন মূল্যে আদায় করা সম্ভব।
- মূল উদ্দেশ্য হলো শ্রমিকদের শ্রমের মূল্য দেওয়া তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলা এবং তাদের ওপর অত্যাচার বা নিপীড়ন না করা।
- এনজয় দ্য ডে, ইট ইজ দা ফার্স্ট ডে অফ মে।
- অন দ্য ফার্স্ট ডে অফ মে, ডোন্ট লেট জাস্টিস ডিলে।
- সুইট এপ্রিল সাওয়ারস, ডু ব্রিং মে ফ্লাওয়ার্স।
- মে জয় কাম ইওর ওয়ে, দিস ফাস্ট ডে অফ মে।
- এ ভিক্টরি ফর ওয়ান ইজ এ ভিক্টরি ফর অল।
প্রথম আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস কবে পালিত হয়
মে দিবস এবং এই দিবসটি কেন পালিত হয় তা আমরা জেনেছি, কিন্তু প্রথম আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস কবে পালিত হয় জানেন! আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস এবং মে দিবস দুটো একই। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসকেই মে দিবস হিসেবে ধরা হয়।যা প্রথম পালিত হয় ১৮৮৬ সালের ১ লা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে। সেই সময় শ্রমিকরা দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।১৮৮৬
সালে হাজার হাজার শ্রমিক শিকাগো রাস্তায় নেমে আসে। এই আন্দোলনের একটি
গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল "হে মার্কেট" বিক্ষোভ, যা ৪ মে সংঘটিত হয়।"হে
মার্কেট" বিক্ষোভে বোমা বিস্ফোরণ ও পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক নিহত
হয়। পরবর্তী সময়ে এই ঘটনা আন্তর্জাতিক শ্রম আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠে।
পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয়
আন্তর্জাতিক
শ্রমিক সম্মেলনে ১লা মে কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশেও এটি "আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস" বা মে দিবস হিসেবেই পালিত হয়।
শুধু বাংলাদেশ নয় এরপর থেকে বিশ্বের বহু দেশে দিনটি শ্রমিকদের অধিকার ও
মর্যাদার দাবিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিবছর পালন করা হয়। বলা যেতে পারে,
এটি শ্রমজীবী মানুষের সংহতি ও সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক স্মারক হয়ে রয়েছে।
মহান মে দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
মে দিবস কি এবং কেন পালিত হয় আমরা এতক্ষণ জেনেছি। এবার আমরা জানবো মহান মে দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে। আজ মহান মে দিবস। এই দিবসটি মূলত শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের ইতিহাসকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। ১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমিকদের আন্দোলনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মে দিবস প্রতিষ্ঠিত হয়।এই
আন্দোলন ছিল শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের শোষণের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ। এই
রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পর থেকেই ১লা মে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের স্মরণে পালিত
হয়ে আসছে গোটা বিশ্বব্যাপী। মে দিবসের মূল লক্ষ্য হলো শ্রমিকদের ন্যায্য
অধিকার মজুরি ও নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করা। এই দিনটি শ্রমিকদের ঐক্য ও
সংহতির প্রতীক।
বাংলাদেশ
সহ বিশ্বের প্রায়ই সব দেশেই এই দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করা
হয়। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন এই দিনে র্যালি, সভা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে
থাকে। এটি শ্রমিকদের মাঝে একটি জাগরণ সৃষ্টি করে এবং তাদের ন্যায্য অধিকার
সম্পর্কে আবারও সচেতন করিয়ে দেয়। মে দিবস আমাদের শেখায় শ্রমের যথাযোগ্য
মর্যাদা দিতে হবে এবং শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
এটি
কেবলমাত্র একটি দিবস নয় বরং এটি একটি সংগ্রামের প্রতীক। শুধু তাই নয়, এই
দিনটি শ্রমিকদের আত্মবিশ্বাস ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার উৎসাহ প্রদান করে।
বিশেষ করে আমাদের সমাজের সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য মে দিবসের
তাৎপর্য অপরিসীম। শ্রমিক ছাড়া কোন উন্নয়ন সম্ভব নয়- প্রতিবছর এই বার্তা
নিয়েই মে দিবস হাজির হয়।
শ্রমিক দিবস কেন পালিত হয়
শ্রমিক দিবস কেন পালিত হয়? শ্রমিক দিবস মূলত শ্রমিকদের অধিকার,মর্যাদা ও ন্যায্যমজুরির দাবিতে সংঘটিত হওয়া আন্দোলনের স্মরণে পালিত হয়। ১৮৮৬ সালের পয়লা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে হাজার হাজার শ্রমিক তাদের কর্ম ঘন্টা কমানোর দাবিতে ধর্মঘট করে। যা পরবর্তীতে "হে মার্কেট ট্রাজেডি" নামে ইতিহাসে পরিচিতি লাভ করে।এই
আন্দোলনে অনেক শ্রমিক আহত ও নিহত হন ঠিকই। কিন্তু এর ফলে বিশ্বব্যাপী
শ্রমিক অধিকার আন্দোলন আরো জোরদার ও সোচ্চার হয়ে ওঠে। তাই শ্রমিক দিবস
শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষায় প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়। পাশাপাশি এই
দিনটিতে বিভিন্ন দেশে শ্রমিক সংগঠন, শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান সহ
রেলি,
আলোচনা সভা ও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সংহতি
প্রকাশ করে থাকে। এটি কেবল শুধু একটি সাধারণ ছুটির দিন নয় বরং শ্রমিক
শ্রেণীর সংগ্রাম ও অর্জনের ইতিহাস স্মরণ করবার একটি দিন। এখন নিশ্চয়ই
বুঝতে পেরেছেন শ্রমিক দিবস বা মে দিবস সম্পর্কে এবং এই দিবসটি কেন পালিত
হয়।
মে দিবস নিয়ে কিছু কথা
মে দিবস নিয়ে কিছু কথা থেকেই যায়। আজ পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। এটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস নামেও পরিচিত, যা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের প্রতীক। ১৮৮৬ সালে শিকাগোর হে মার্কেট আন্দোলন থেকে এর সূচনা হলেও, এই আন্দোলনের প্রভাব বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হয়েছে। এই দিনটি শ্রমিকদের কাজের সময়,তাদের
নায্য মজুরি এবং নিরাপদ কর্ম পরিবেশের দাবি আদায়ের প্রতীক হয়ে
দাঁড়িয়েছে। অনেক দেশে আবার মে দিবস উপলক্ষে শ্রমিকদের জন্য নীতিমালা
প্রণয়ন ও আইনগত সুবিধাও নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে বাস্তবতায় এখনো বহু
শ্রমিক শোষিত হচ্ছে, কম মজুরি এবং অনিরাপদ কর্ম পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য
হচ্ছেন।
বিশেষ
করে উন্নয়নশীল দেশে শিশুশ্রম, অস্থায়ী চাকরি ও শ্রমিক সংগঠনের
অনুপস্থিতি এখন বড় একটি সমস্যা। শ্রম আইন অনেক সময় শুধুমাত্র কাগজে-কলমের
মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। অপরদিকে মালিকপক্ষ ও সরকারের মধ্যে যোগসাজসের ফলে
শ্রমিকদের দাবি উপেক্ষিত থেকেই যায়। মে দিবস বছরে একদিন তাদের কথা মনে
করিয়ে দিলেও,
বছরের
বাকি দিনগুলোই তাদের কষ্ট অব্যাহতই থাকে। তবে এই দিবস সচেতনতা বৃদ্ধিতে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এটি শ্রমিকদের মধ্যে ঐক্য ও প্রতিবাদের স্পৃহা
জাগায়। মে দিবস আংশিকভাবে শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট নাটক করতে পেরেছে বটে! তবে
তা এখনো অসম্পূর্ণ।
বাংলাদেশে প্রথম শ্রমিক দিবস পালন করার ইতিহাস
মে দিবস কি এবং দিবসটি পালন করার পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস আমরা ইতিমধ্যেই আজকের আলোচনায় জেনেছি। কিন্তু আপনি কি জানেন বাংলাদেশের প্রথম শ্রমিক দিবস পালন করার ইতিহাস সম্পর্কে। বাংলাদেশে প্রথম শ্রমিক দিবস পালনের ইতিহাস শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।আন্তর্জাতিকভাবে
১লা মে দিবস হিসেবে পালিত হলেও বাংলাদেশে এটি প্রথম পালন করা হয় ১৯৬০
সালের পর থেকে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের
লক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠন সক্রিয় ছিল। বিশেষ করে ঢাকার টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জ,
খুলনা এবং চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের মাঝে মে দিবস নিয়ে সচেতনতা
বাড়তে থাকে।
তারাও
৮ ঘণ্টা কাজ, ন্যায্য মজুরি এবং কাজের নিরাপদ পরিবেশের দাবী তোলে। এসময়
শ্রমিক ইউনিয়ন গুলোর প্রভাব বাড়তে থাকে এবং তারা মে দিবস পালনের উদ্যোগ
নেয়। এরপর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এই দিনটি আরো
অধিক গুরুত্ব পায়। সে হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বার মে দিবস
সরকারিভাবে স্বীকৃতি পায় ১৯৭২ সালে,
বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। তিনি শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য
শ্রমিক বান্ধব নীতি গ্রহণ করেন এবং মে দিবসকে জাতীয়ভাবে পালনের নির্দেশ
দেন। এরপর থেকে প্রতিবছর ১লা মে বাংলাদেশে "আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস"
হিসেবে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করে নানা কর্মসুচির মাধ্যমে দিনটি উদযাপন
করা হয়।
পরিশেষে - মে দিবস কি এবং কেন
মে দিবস কি এবং কেন পালন করা হয় এতক্ষণ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। মে দিবস মূলত শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার প্রতীক। সুতরাং মে দিবস শুধু একটি দিন নয়, এটি শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, ত্যাগ ও অধিকার আদায়ের ইতিহাস বহন করে। সাথে মে দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় শ্রমিক ছাড়া কখনোই একটি দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।তাই
মে দিবসের মূল বার্তা হল শ্রমের মর্যাদা দিতে হবে শোষণ বন্ধ করতে হবে এবং
ন্যায়ের ভিত্তিতে একটি মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে। এই উপলক্ষে আমাদের
সকলের প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত শ্রমিকদের প্রতি সম্মান দেখানো, তাদের
সমস্যাগুলোর সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক
সমাজ গড়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করা। এটাই প্রত্যাশা সকলের।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url