কত ভরি স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হয় জানুন

কত ভরি স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হয় জানেন চান? সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হবে জানেন কি? জানতে হলে আর্টিকেলটি এক্ষুনি একবার পড়ে নিন। নামাজের পরে যে ইবাদতকে ইসলাম সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে সেটি হল যাকাত।

কত-ভরি-স্বর্ণ-থাকলে-যাকাত-দিতে-হয়-জানুন
আজকে আমাদের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয়বস্তু কত ভরি স্বর্ণ এবং ঠিক কত টাকা থাকলে আমাদের যাকাত দিতে হবে। সাথে আরো আলোচনা করবো যাকাত ফরজ হওয়ার বেশ কিছু শর্ত সম্পর্কে। তাহলে চলুন আজকের মত আলোচনা শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ কত ভরি স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হয়

কত ভরি স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হয়

কত ভরি স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হয় এই হিসাব আমরা অনেকে জানি আবার অনেকেই জানিনা। আশা করছি আজকের আলোচনার মাধ্যমে আপনি এ সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাবেন। যাকাত ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং ফরজ ইবাদতের একটি স্তম্ভ। তাছাড়া পবিত্র কোরআনেও মহান আল্লাহতালা যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।
 
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, "তোমরা নামাজ আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর।" (সূরা বাকারা; ১১০) যাকাতের ক্ষেত্রে স্বর্ণ এবং রুপার নিসাব হল যথাক্রমে- ৭.৫ তোলা বা ৯৫.৭৪৮ গ্রাম এবং ৫২.৫ তোলা বা ৬৭০.২৪ গ্রাম। নিসাবের পরিমাপক মূলত স্বর্ণ এবং রুপা। যাকাতযোগ্য যে সমস্ত সম্পদ রয়েছে তার হিসাব মূলত এই দুই পরিমাপক দিয়েই করা হয়ে থাকে। 
 
কারণ, দেশি বৈদেশি মুদ্রা এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পণ্যের নিসাব নির্ধারণে দুস্থ, গরিব, ফকির, মিসকিনদের জন্য সবচেয়ে বেশি লাভ জনক যেটি হবে ঠিক সেটিকেই যাকাত পরিমাপক হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এটিই হলো ইসলামী শরীয়তের নির্দেশ। আপনার কাছে যদি শুধু রুপা থাকে কিন্তু রুপার নিসাব পূর্ণ হয়নি সেক্ষেত্রে তার ওপর যাকাত আবশ্যক হবে না।
 
একইভাবে আপনার নিকট স্বর্ণ থাকলে যদি স্বর্ণের নিসাব পূর্ণ হয় তবেই তার ওপর যাকাত ফরজ হবে। আবার ধরুন আপনার কাছে ন্যূনতম ৭.৫ ভরি স্বর্ণ নয় কিন্তু রুপা রয়েছে সেক্ষেত্রে রুপাকে পরিমাপক ধরে যাকাতের হিসাব করতে হবে। অর্থাৎ স্বর্ণ, রূপা এবং যাকাতযোগ্য যে সমস্ত সম্পদ রয়েছে সব মিলে যদি কমপক্ষে ৫২ তোলা রুপার মূল্যের পরিমাপ
কত-ভরি-স্বর্ণ-থাকলে-যাকাত-দিতে-হয়-জানুন
কিংবা তার বেশি হয় তাহলে আপনাকে সমুদয় সম্পদের মূল্যের ঠিক ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা ২.৫ শতাংশ যাকাত হিসেবে দিতে হবে। যাকাতের এই নিসাব ও পরিমাপক প্রত্যেক বছর প্রায় একই রকম হয়ে থাকে। সময়ের সাথে সাথে কখনো পরিবর্তন কিংবা বা কম বেশি হয় না। সুতরাং ২০২৫ সালেও যাকাতের নিসাব ঠিক একই থাকবে অর্থাৎ ৭.৫ ভরি।

কত ভরি স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হয়

সহজ কথায় বলতে গেলে ধরুন, ২০২৫ সালে বর্তমান বাজুসের ঘোষণা অনুযায়ী ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম পড়ে ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৫২৫ টাকা। যাকাত হিসেবে এই মানের স্বর্ণের ৭.৫ ভরির মূল্য হবে ১১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৯৩৮ টাকা। অর্থাৎ যাকাত আসবে ২৮ হাজার ৯৭৪ টাকা। আবার ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার বর্তমান বাজার মূল্য ২১০০ টাকা।
 
এই ২২ ক্যারেট রূপার ৫২ ভরি বা তোলার দাম আসবে ১ লক্ষ ১০ হাজার ২৫০ টাকা। সে হিসেবে যাকাত আসবে ২৭৫৭ টাকা। এই হিসাবটি ২০২৫ সালের বর্তমান বাজার মূল্য হিসেবে করা হয়েছে। তবে সোনা বা রুপার দাম অনুযায়ী পরবর্তীতে এই হিসাব কিছুটা কমবেশি হলেও হতে পারে। শুধু তাই নয়, আপনি যাকাতের টাকার সমতুল্য যে কোন প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দিলেও সেটি যাকাত হিসেবে গণ্য হবে।

সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হবে

সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে আমাদের যাকাত দিতে হবে এ প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। দেখুন, আপনার দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন মিটিয়ে এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বাদ দেবার পর যদি আপনার নিকট ৫২.৫ তোলা পরিমাণ রুপা কিংবা ৭.৫ ভরি পরিমাণ সোনা থাকে অথবা এর সমতুল্য ব্যবসায়িক পণ্যের মালিকানা থাকে তাহলে সেটি হল যাকাতের প্রকৃত নিসাব।
 
সহজ কথায় আপনার নিকট যদি ৫২.৫ তোলা পরিমাণ রুপা বা তার সমমূল্যের নগদ টাকা, বন্ড, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংকে জমাকৃত টাকা ফিক্সড ডিপোজিট হলে আসল টাকা কিংবা তার সমতুল্য ব্যবসায়ী পণ্য থাকলে অবশ্যই তার যাকাত আদায় করতে হবে। আবার ধরুন আপনার কাছে টাকা-পয়সা, স্বর্ণ, রুপা কিংবা বাণিজ্য দ্রব্য পৃথক বা সম্মিলিতভাবে নিসাব পরিমানে ছিল, 
 
কিন্তু বছরের মাঝে এই ধরনের সম্পদ আরো কিছু পাওয়া গেল সেক্ষেত্রে প্রাপ্য সম্পদ পুরনো সম্পদের সাথে যোগ করতে হবে এবং পুরনো সম্পদের বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের যাকাত দিতে হবে। আবার যদি কারো কাছে ৭.৫ ভরির কম সোনা এবং ৫২.৫ ভরির কম রুপা কিংবা আরো কিছু টাকা বা বাণিজ্য দ্রব্য আছে যা একত্রিত করলে ৫২.৫ ভরি রুপোর সমতুল্য হয় তাহলেও তার যাকাত দিতে হবে।
 
সুতরাং বুঝতেই পারছেন এই পরিমাণ অর্থ বা টাকা যদি আপনার কাছে এক বছর থাকে তাহলে তার ওপর যাকাত দেওয়া ফরজ। আরেকটি কথা মনে রাখবেন, এই পরিমাণ সম্পদের ওপর যদি এক বছর অতিবাহিত হয় সেক্ষেত্রে তার ৪০ ভাগের একভাগ অর্থাৎ ২.৫০ শতাংশ যাকাত দিতে হবে। হাজারে ২৫ টাকা কিংবা শতকরা ২.৫ টাকা হারে কিংবা এর সমতুল্য
 
যে কোন প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী কিনে দিলেও সেটি যাকাত হিসেবে গণ্য হবে। যাকাত মূলত হিজরী বা চন্দ্র বছরের হিসাব করে দিতে হয়। চন্দ্র বছর হয় ৩৫৪ দিনে। সে হিসেবে এই ৩৫৪ দিনের হিসেব মতে ২.৫ শতাংশ যাকাত দিতে হবে। তবে কেউ যদি হিজরী বা চন্দ্র বছর হিসেব করতে না পারেন সেক্ষেত্রে ইংরেজি বছর হিসেবে ৩৬৫ দিনের হিসেবে ২.৫৭ বা ২.৬ শতাংশ যাকাত প্রদান করতে হবে। কারণ, ইংরেজি বছরে ১০-১২ দিন বেশি হয়ে যায়। আর এই বাড়তি দিনগুলোর যাকাতের পরিমাণ দাঁড়ায় ০.০৭ -০.০৭৫।

যাকাত কত প্রকার ও কি কি

যাকাত কত প্রকার ও কি কি তা আমাদের প্রত্যেকেরই জেনে রাখা উচিত। যাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ যা মুসলিমদের উপর ফরজ। দারিদ্র দূরীকরণ সম্পদের সুষম বন্টন এবং সমাজের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার একটি অন্যতম উপায় হল যাকাত। যাকাতের প্রকারভেদ মূলত ২ টি। একটি ফরজ যাকাত এবং অপরটি সুন্নত যাকাত। এবার চলুন এই দুই প্রকার যাকাত সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিই -
  • ফরজ যাকাত 
ফরজ যাকাত হল ওই যাকাত যা প্রত্যেক মুসলিমকে একটি নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হওয়ার পর অবশ্যই প্রদান করতে হবে। ফরজ যাকাতের মাধ্যমে ধনসম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ অর্থাৎ ২.৫ শতাংশ হারে গরিব ও অসহায়দের মধ্যে বন্টন করা হয়। ফরজ যাকাতের মূল উদ্দেশ্য হলো ধনসম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা। যাতে করে তারা আর্থিকভাবে উপকৃত হয়। ফরজ যাকাতের আবার বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন-
  • প্রথম শর্ত, যাকাত প্রদানের জন্য ব্যক্তির কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সম্পদ থাকতে হবে যা নিসাব নামে পরিচিত।
  • দ্বিতীয় শর্ত, এক বছর ধরে যে সম্পদ আপনার কাছে সঞ্চিত রয়েছে ঠিক তার উপরেই যাকাত দিতে হবে।
  • তৃতীয় শর্ত, যাকাত প্রদানের আগে আপনার সমস্ত ঋণ পরিশোধ করতে হবে। কারণ, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যাকাত দানে কখনোই বাধ্য নয়।
এছাড়াও আপনার কাছে যদি এক বছর ধরে ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ বা তার সমতুল্য পরিমাণ টাকা থাকে তবে সেখান থেকে আপনাকে ২.৫% যাকাত দিতে হবে। আবার ব্যবসায়িক সম্পদ এবং গবাদিপশু যেমন- উট, গরু, ছাগল এগুলোর ওপরেও যাকাত দিতে হবে যদি তা নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে যায়।
  • সুন্নত যাকাতঃ
সুন্নত যাকাত হলো এক প্রকার ঐচ্ছিক যাকাত। যা ফরজ যাকাতের পাশাপাশি বা তার বাইরেও আপনি দিতে পারেন। অর্থাৎ ফরজ যাকাত দেওয়ার পর যদি আপনার আরো ধন-সম্পদ থেকে থাকে তবে আপনি ঐচ্ছিক বা গরীব, অসহায়, অনাথ বা মসজিদে দান করতে পারেন। সুন্নত যাকাত দানের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি অতিরিক্ত পূণ্য অর্জন করতে পারেন।
  • ফিতরা বা যাকাতুল ফিতরঃ
ফিতরা বা যাকাতুল ফিতর মূলত রমজান মাসের শেষে অর্থাৎ ঈদুল ফিতর নামাজের আগে প্রদান করতে হয়। যাকাতুল ফিতরের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গরিবদের মধ্যে বন্টন করা হয়। যাতে তারা ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারে। এটি সাওমের অপূর্ণতা পূর্ণ করার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাকাতুল ফিতর বা ফিতরার আবার বেশ কিছু শর্তাবলী রয়েছে। যেমন-
  • যাকাতুল ফিতর অবশ্যই রমজান মাসের শেষে ঈদের পূর্বে প্রদান করতে হবে।
  • ফিতরা ব্যক্তিগতভাবে দিতে হবে এবং এটি প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। যদি তিনি সীমিত পরিবার খরচের সামর্থ্য রাখেন তবুও।
  • ফিতরা অবশ্যই নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ, শস্য দানা, সোনা, রুপা কিংবা এর সমমূল্যের নগদ টাকা হতে হবে।
প্রিয় দীনি ভাই ও বোনেরা, জানিয়ে দিলাম যাকাতের প্রকারভেদ গুলো। তাছাড়া আপনার কাছে কত ভরি সোনা থাকলে যাকাত প্রদান করতে হবে তা ইতিমধ্যেই জেনেছেন। যাকাত সমাজের মধ্যে সহানুভূতি, পরস্পরের প্রতি দয়া এবং দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি করে। যার ফলে শান্তিপূর্ণ ও সুন্দর সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে ওঠে।

নিসাব পরিমাণ সম্পদ কত টাকা ২০২৫

নিসাব পরিমান সম্পদ কত টাকা এই প্রশ্ন আপনার মনে আসতেই পারে। কিন্তু তার আগে আপনাকে জানতে হবে নিসাব অর্থ কি? নিসাব একটি আরবি শব্দ। নিসাব হলো যাকাত যোগ্য সম্পদের যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য শরীয়ত নির্ধারিত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ বা অর্থ। আবার সম্পদের প্রকারভেদে এই নিসাবের পরিমাণও কম বেশি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
 
যেমন- সোনার ক্ষেত্রে যাকাতের নিসাব ২০ মিসকাল যা হিসেব মতে ৭.৫ ভরি বা ৮৭.৪৮ গ্রাম সোনার সমতুল্য। আবার রুপার ক্ষেত্রে এই নিসাব হবে ২০০ দিরহাম। যা ৫২ ভরি বা ৬১২.৩৬ গ্রাম রুপার সমতুল্য। এই পরিমাণ স্বর্ণ কিংবা রূপা থাকলে আপনাকে অবশ্যই যাকাত দিতে হবে। তবে সোনা এবং রুপার দরদাম যেহেতু ওঠানামা করে, 
 
সেক্ষেত্রে এর সঠিক হিসাব পেতে আপনি যখন দান করবেন ঠিক তখন জেনে নেবেন। হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা প্রতি ৪০ দিরহামে ১ দিরহাম যাকাত দিবে এবং ২০০ দিরহাম পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কোন যাকাত নেই। আর ২০০ দিরহাম পূর্ণ হলে ৫ দিরহাম পর্যন্ত যাকাত দিতে হবে। ছাগলের ক্ষেত্রে যাকাতের নিসাব হলো, 
 
প্রতি ৪০ টি ছাগলের জন্য একটি বকরি। কিন্তু ছাগলের সংখ্যা যদি ৩৯ টি হয় সেক্ষেত্রে যাকাত দেওয়া ফরজ নয়। আবার গরুর ক্ষেত্রে প্রতি ৩০টি গরুর জন্য একটি পূর্ণ বয়স্ক বাছুর এবং ৪০টি গরুর জন্য পূর্ণ বয়স্ক দুটি বাছুর যাকাত দিতে হবে। তবে আপনার গবাদি পশু যদি কৃষিকাজে নিয়োজিত হয় সেক্ষেত্রে যাকাত দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
 
জমির ফসল বা শস্যের ক্ষেত্রে যাকাত হলো আপনার জমি যদি শুধুমাত্র নদ-নদীর পানি বা বৃষ্টির পানি দ্বারা সিঞ্জিত হয়ে চাষাবাদ হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই যাকাত হিসেবে উশর প্রদান করতে হবে। কিন্তু জমিতে ফসল ফলানোর জন্য যদি  আলাদাভাবে পানি সেচ করতে হয় সেক্ষেত্রে যাকাত দিতে হবে ২০ ভাগের ১ ভাগ।

১ লাখ টাকায় যাকাত কত ২০২৫

কত ভরি স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হবে তা জেনেছেন কিন্তু ১ লাখ টাকায় যাকাত কত? তা কি জানেন? দেখুন ২০২৫ সালে ১ লাখ টাকায় আপনাকে কত টাকা যাকাত দিতে হবে তা গণনা করতে হলে প্রথমেই আপনাকে মনে রাখতে হবে যাকাত দেওয়ার হার সম্পর্কে। অর্থাৎ আপনি যে সম্পত্তির ওপর বা টাকার উপর যাকাত দেবেন সেটির মূল্য ২.৫% হিসেবে গণনা করতে হবে। এবার চলুন ১ লাখ টাকায় কত টাকা যাকাত দিতে হবে তা আমরা ক্যালকুলেশন করি-
  •  ১ লাখ টাকায় যাকাতঃ
ধরুন, আপনার কাছে ১ লক্ষ টাকা আছে এবং ইসলামী শরীয়াহ মতে এর ২.৫% যাকাত হিসেবে প্রদান করতে হবে। তাহলে ক্যালকুলেশন হবে-
১,০০,০০০ × ২.৫ ÷ ১০০
= ১,০০,০০০× ০.০২৫
= ২৫০০ টাকা
সুতরাং ১ লাখ টাকায় আপনাকে যাকাত দিতে হবে ২৫০০ টাকা।
অনুরূপভাবে ১ কোটি টাকার যাকাত হবে
১০,০০০০০০ × ২.৫ ÷ ১০০
= ১০, ০০,০০০০ × ০.০২৫
= ২৫০,০০০
অর্থাৎ ১ কোটি টাকায় আপনাকে যাকাত দিতে হবে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা 

১ ভরি স্বর্ণের যাকাত কত ২০২৫

১ ভরি স্বর্ণের যাকাত কত দিতে হয়? ২০২৫ সালে (২২ ক্যারেট) ১ ভরি স্বর্ণের দাম যদি ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৫২৫ টাকা হয় তাহলে তাহলে ইসলামী শরিয়াহ্ অনুযায়ী সেই পরিমাণ স্বর্ণের যাকাতের ক্যালকুলেশন হবে-
  • ১ ভরি স্বর্ণের যাকাত হিসাবঃ
যাকাত = মোট সম্পত্তি × ২.৫ ÷ ১০০
= ১,৫৪,৫২৫ × ২.৫ ÷ ১০০
= ১,৫৪,৫২৫ × ০.০২৫
= ৩,৮৬৩ টাকা
সুতরাং আপনার ১ ভরি স্বর্ণ থাকলে এবং স্বর্ণের ভরি ১,৫৪,৫২৫ টাকা হলে সেই পরিমাণ স্বর্ণে আপনার যাকাত দিতে হবে ৩,৮৬৩ টাকা। আবার ২১ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম পড়বে ১,৪৪,৪০০ টাকা। সে হিসেবে ২১ ক্যারেটের ৭ ভরি স্বর্ণের যাকাত হবে ২৭০৭৫ টাকা। আবার ১৮ ক্যারেটের প্রতি স্বর্ণের দাম বর্তমানে ১,২৩, ৭৬৭ টাকা।
 
একইভাবে ১৮ ক্যারেটের ৭ ভরি স্বর্ণের যাকাতের পরিমাণ হবে ২৩,২০৭ টাকা। তবে স্বর্ণের এই বাজার মূল্য বর্তমান সময় অনুযায়ী করা হয়েছে। সময় ভেদে স্বর্ণের দাম পরিবর্তিত হলে এই হিসেবেও কিছুটা কম বেশি হতে পারে। সুতরাং কত ভরি স্বর্ণ থাকলে আপনাকে কত টাকা যাকাত দিতে হবে আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

১০ ভরি সোনার যাকাত কত ২০২৫

১০ ভরি সোনার যাকাত কত দিতে হয় তা অনেকেই জানতে চান। ১০ ভরি সোনার যাকাত হিসাব করতে হলে প্রথমে আমাদের স্বর্ণের মোট মূল্য বের করে নিতে হবে এবং তার ওপর যাকাতের পরিমাণ বের করতে হবে। এবার চলুন ১০ ভরি সোনার যাকাত কত হবে তা ক্যালকুলেশন করে বের করি-
  • ১০ ভরি সোনার মোট মূল্য হিসাবঃ
প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম = ১৫,৪৫২৫ টাকা
তাহলে ১০ ভরি স্বর্ণের মোট দাম হবে = ১০ × ১৫৪৫২৫
= ১৫,৪৫,২৫০ টাকা
সুতরাং ১০ ভরি স্বর্ণের দাম ১৫,৪৫,২৫০ টাকা।
  • ১০ ভরি স্বর্ণে যাকাতের পরিমাণঃ
ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী স্বর্ণের যাকাত ২.৫% বা ১/৪০। তাহলে যাকাত হবে,
১৫,৪৫,২৫০ × ২.৫% = ৩৮, ৬৩১.২৫ টাকা
সুতরাং বুঝতেই পারছেন ১০ ভরি সোনার যাকাত হবে ৩৮,৬৩১.২৫ টাকা। যা সোনার মোট মূল্যের ইসলামী শরীয়াহ্ মোতাবেক ২.৫% হারে হিসাব করা হয়েছে। তবে স্বর্ণের ভরির দামের ওপর নির্ভর করে এই হিসাব পরিবর্তিত হতে পারে।

নগদ টাকার যাকাতের হিসাব ২০২৫

নগদ টাকার যাকাতের হিসাব সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে হলে আমাদের প্রথমেই যাকাতের শর্ত এবং এর হিসাব পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিতে হবে। নগদ টাকার যাকাতের জন্য হিসেব করা হয় মোট সঞ্চিত অর্থের ২.৫%। তো চলুন আপনাদের সুবিধার্থে এবার নগদ টাকার যাকাতের হিসাব সম্পর্কে বা বিস্তারিত আলোচনা করছি -
কত-ভরি-স্বর্ণ-থাকলে-যাকাত-দিতে-হয়-জানুন
নগদ টাকার যাকাতের হিসাবঃ নগদ টাকার যাকাতের খুবই সরল একটি পদ্ধতি। আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি যাকাতের পরিমাণ হলো সঞ্চিত টাকার ২.৫% অর্থাৎ এক চতুর্থাংশ শতাংশ। এর জন্য আপনাকে আপনার সঞ্চিত টাকার মোট পরিমাণ প্রথমে বের করে নিতে হবে, এরপর তার ২.৫% নির্ধারণ করতে হবে।
  • হিসাব পদ্ধতিঃ
মনে করুন, আপনার কাছে ১০,০০,০০০ টাকা সঞ্চিত আছে। এখন এই দশ লক্ষ টাকার ওপর যাকাত হবে-
১০,০০০,০০ × ০.০২৫ = ২৫০০০ টাকা
সুতরাং আপনার ১০,০০০,০০ টাকার উপর যাকাত প্রদান করতে হবে ২৫ হাজার টাক।
  • উদাহরণ সহঃ
ধরুন আপনার ১২ মাসের মধ্যে আপনার কাছে মোট ৫,০০,০০০ টাকা সঞ্চিত ছিল এবং এই টাকা এক বছরের জন্য আপনার কাছে স্থায়ী ছিল। এখন এর ওপর যাকাত হিসাব করা হবে নিম্নোক্তভাবে-
যাকাতের পরিমাণ ৫,০০,০০০ × ০.০২৫ = ১২,৫০০
সুতরাং ৫,০০,০০০ টাকাই আপনাকে ১২৫০০ টাকা যাকাত প্রদান করতে হবে। আশা করছি নগদ টাকার যাকাতের হিসাব কিভাবে করবেন তা বুঝতে পেরেছেন। প্রিয় পাঠক, নগদ টাকা বা সঞ্চিত সম্পত্তির উপর যাকাত দেওয়ার জন্য বিশেষ কিছু শর্ত এবং নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হয়। যেমন-
  • যাকাত দেওয়ার জন্য আপনার কাছে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পত্তি বা সম্পদ থাকতে হবে যা নিসাব নামে পরিচিত। বর্তমান সময়ে যাকাত দেওয়ার জন্য সোনা বা রুপার মূল্য ভিত্তিতে এই নাসাব নির্ধারিত হয়ে থাকে।
  • সাধারণত সোনার নিসাব হিসেবে ৭.৫ তোলা বা প্রায় ৮৮৫ গ্রাম সোনা ধরা হয়। এবং রুপার নিসাব হিসেবে ২১ তোলা রুপা বা ৫৩৫ গ্রাম ধরা হয়।
  • যাকাত দেওয়ার জন্য যে সম্পদ রয়েছে সেটি সম্পূর্ণরূপে আপনার মালিকানাধীন হতে হবে। আপনি যদি কোন সম্পত্তি অন্য কারো কাছে ধার দেন বা ঋণ হিসেবে রাখেন তবে সেই সম্পত্তির উপর যাকাত দিতে হবে না।
  • যাকাত দেওয়ার জন্য আপনার কাছে যে টাকা থাকবে সেটা অন্তত এক বছরের জন্য স্থিতিশীল হতে হবে। অর্থাৎ আপনি যে নগদ টাকাটির ওপর যাকাত দিচ্ছেন সে টাকা আপনার কাছে এক বছর স্থায়ী ভাবে থাকতে হবে। যদি টাকার পরিমান এক বছর পর নিসাব কম হয় সেক্ষেত্রে যাকাত দিতে হবে না।
সম্মানিত পাঠক, নগদ টাকার যাকাত হিসাব করা বেশ সহজ হলেও তার সঠিকভাবে হিসাব করে অত্যন্ত জরুরি। কারণ, যাকাত শুধুমাত্র আপনার ওপর অর্পিত দায়িত্ব নয় বরং এটি এক ধরনের আত্মশুদ্ধি, সমাজের কল্যাণ এবং ইসলামিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ

ঠিক কত ভরি স্বর্ণালংকার থাকলে যাকাত দিতে হয় তা জেনেছেন কিন্তু কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ তা কি জানেন? মানব সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকেই কিন্তু পৃথিবীতে যাকাতের বিধান প্রচলিত ছিল। এর একমাত্র কারণ হলো মহান রাব্বুল আলামিন পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী এমন ভাবে করেছেন,
 
যেখানে ধনী এবং দরিদ্র এই দুই শ্রেণীর মানুষই যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে। আর যাকাত হলো ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা এক মুসলিমের সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ দান হিসেবে গরিবদের মাঝে বন্টন করা হয়। যাকাত যেমন সম্পদে পরিশুদ্ধতা আনে তেমনি সামাজিক দায়িত্ব পালন করারও একটি উপায় হিসেবে কাজ করে। 
 
যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য যেসব সম্পদ প্রয়োজন হয় সেগুলি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে এবং এই সম্পদের উপর যাকাত দেওয়ার নির্দিষ্ট কিছু শর্তাবলী রয়েছে। এবার চলুন আমরা বিস্তারিতভাবে জেনে নিই কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ করা হয়েছে-
  • মনে রাখবেন, সব সম্পদ কিংবা দ্রব্য সামগ্রীর উপর যাকাত ফরজ নয়। কেবলমাত্র সোনা, রুপা, নগদ টাকা, গৃহপালিত পশু এবং ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহৃত পণ্যের ওপর যাকাত ফরজ।
  • যদি আপনার যাকাত দেওয়ার সমপরিমাণ সোনা-রুপা থাকে তাহলে সেটি সবসময় কিংবা কালে ভদ্রে ব্যবহার করেন কিংবা না করেন সকল ক্ষেত্রেই আপনাকে যাকাত দিতেই হবে।
  • অলংকার ছাড়াও সোনা রুপার অন্যান্য সামগ্রীর ওপর যাকাত ফরজ।
  • আপনার জামা কাপড় কিংবা অন্য কোন সামগ্রীতে যদি সোনা রুপার কারুকার্য থাকে তাহলেও সেটি যাকাতের অন্তর্ভুক্ত হবে। অর্থাৎ যে পরিমাণ সোনা, রুপা কারুকার্যে ব্যবহৃত হয়েছে তারও যাকাত দিতে হবে অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে। তবে স্বর্ণ এবং রুপা ছাড়া অন্যান্য ধাতুর অলংকারের ওপর যাকাত ফরজ নয়।
  • সোনা রুপা ছাড়া হীরা, মুক্তা, মনি ইত্যাদি বহু মূল্যবান পাথর যদি ব্যবসায়িক পণ্য না হয় তাহলে সেগুলোর উপর যাকাত ফরজ হবে না।
  • আপনার মৌলিক প্রয়োজন শেষে যদি অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণও টাকা পয়সা থাকে এবং তা আপনার নিকট এক বছর স্থায়ী হয় তাহলে বছর শেষে সেটির যাকাত আদায় করা ফরজ হবে।
  • আবার আপনার যা ব্যাংক ব্যালেন্স রয়েছে, বন্ড, ফিক্সড ডিপোজিট, সার্টিফিকেট ইত্যাদি যাকাতের অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ, এগুলো নগদ টাকা পয়সার মতই। সুতরাং এগুলোর ওপর যাকাত ফরজ হয়।
  • কিন্তু যেকোনো ধরনের ওয়াকফ সম্পত্তি, দৈনন্দিন জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিসপত্র, সরকারি যেকোনো সম্পত্তি, বসবাসের ঘরবাড়ি, দৈনন্দিন চলাফেরার যে কোন বাহন বা গাড়ি, মালিকানাধীন জমি ইত্যাদির ওপর যাকাত ফরজ নয়।
  • আপনি যদি টাকা পয়সা ব্যবসায় না খাটিয়ে শুধু শুধু রেখে দেন তবুও সেটির উপর যাকাত খরচ হবে।
  • আবার বিক্রয়ের উদ্দেশ্য ছাড়া আপনি যদি কোন জমি ক্রয় করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার ক্রয় কৃত জমির উপর যাকাত ওয়াজিব নয়।
  • আপনি যদি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে কোন জমি বা ফ্ল্যাট কিনে থাকেন তাহলে প্রতিবছর সেই জমি বা ফ্ল্যাটের বাজার মূল্য বিবেচনা করে যাকাত দিতে হবে। ধরুন আপনি ৫ লক্ষ টাকায় একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। কিন্তু এক বছরের মাথায় ওই ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে ৭ লাখ টাকা হয়ে গেছে। তাহলে আপনাকে ওই সাত লাখ টাকার উপর যাকাত আদায় করতে হবে।
  • আপনি যদি হজের উদ্দেশ্যে টাকা সঞ্চিত রাখেন কিংবা ছেলে মেয়ের বিয়ে-শাদী উপলক্ষে টাকা সঞ্চয় করে রাখেন সেটিও যাকাতের অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ সঞ্চিত অর্থ নিসাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর অতিবাহিত হলে সেটি যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে যুক্ত হবে। তবে এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি আপনার সঞ্চিত অর্থ খরচ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে যাকাত ফরজ হবে না।
  • আপনার দোকানপাটে ব্যবসায়িক কাজে যদি দ্রব্য সামগ্রী রাখা থাকে এবং এর মূল্য যদি নিসাব পরিমানে হয় তাহলে তার ওপর যাকাত ফরজ।
  • ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে আপনি যদি কোন কিছু ক্রয় করে রাখেন যেমন- স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি, ফ্ল্যাট, মুদি সামগ্রী, স্বর্ণালঙ্কার, ঘরের ফার্নিচার, গাড়ি, হার্ডওয়ার সামগ্রী, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, কাপড়-চোপড়, নির্মাণ সামগ্রী ইত্যাদি বাণিজ্য দ্রব্য বলে বিবেচিত হবে এবং এর মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে তার যাকাত দেওয়া ফরজ।
  • আবার নিসাবের অতিরিক্ত পরিমাণ সোনা রুপা, অর্থ-সম্পদ, টাকা-পয়সা, ও বাণিজ্য দ্রব্যের যাকাত আনুপাতিক হারে প্রদান করতে হবে।
  • আবার ধরুন আপনার কাছে স্বর্ণা লঙ্কার, টাকা পয়সা কিংবা বাণিজ্য দ্রব্য পৃথক বা সম্মিলিতভাবে ছিল নিসাব পরিমাণে। কিন্তু বছরের মাঝে এসে আরও কিছু সম্পদ পাওয়া গেল বা বেড়ে গেল। সেক্ষেত্রে নতুন প্রাপ্ত সম্পদ আপনার পুরাতন যাকাত যোগ্য সম্পদের সাথে যোগ হবে এবং পুরাতন সম্পদের বছর পূর্ণ হলে তবেই সমুদয় সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ হবে।
  • বছরের শেষ এবং শুরুতে যদি নিসাব পূর্ণ থাকে সেক্ষেত্রে যাকাত অবশ্যই আদায় করতে হবে। মনে রাখবেন, বছরের মাঝে নিসাব কমে যাওয়া এটি ধার্তব্যের মধ্যে পড়ে না। আবার যদি বছরের মাঝে আপনার সব সম্পদ নষ্ট হয়ে যায় এবং পুনরায় যদি নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক হয়ে যান সেক্ষেত্রে ওই সময় থেকে ধরে নতুন করে বছরের হিসাব শুরু করতে হবে এবং এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর যাকাত আদায় করতে হবে।
  • কৃষিজ যেকোনো ফসল বা পণ্য, ফলমূল, ইত্যাদির ক্ষেত্রে যাকাত আদায়ের জন্য মালিকের দখলে এক বছর থাকা প্রধান শর্ত নয়। বরং এক্ষেত্রে ফসল যখন আহরিত হবে ঠিক তখন তার ওপর যাকাত বা উশর ধার্য করা হয়। তবে উৎপাদিত ফসল বা পণ্য বছর শেষে অতিরিক্ত হলে তার উপর যাকাত দিতে হবে না। কিন্তু ফসল বিক্রির টাকার সাথে যদি অন্যান্য যাকাতের সম্পদ থাকে তাহলে তার সাথে মিলিয়ে নিসাব পরিমাণে হলে যাকাত দেওয়া বাধ্যতামূলক।
  • যদি স্বর্ণে ব্যবহারিত খাদ স্বর্ণের তুলনায় কম হয় তাহলে খাদ কিন্তু স্বর্ণের হিসেবে চলে যায়। এক্ষেত্রে স্বর্ণ এবং খাদ একত্রে হিসেব করে যাকাত দিতে হবে।
  • আপনার ডায়মন্ড রয়েছে কিন্তু সেটি ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে না। তাহলে সেই ডায়মন্ডের ওপর যাকাত ফরজ হবেনা। অনুরূপভাবে, মা বোনদের ব্যবহারিত শাড়ির ওপর যাকাত আসবে না।
  • আপনি যদি ব্যবসার নিয়তে কোন জমি কিনে থাকেন সেক্ষেত্রে প্রত্যেক বছর তার বাজার মূল্য হিসেবে যাকাত আদায় করতে হবে।
  • ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ছাড়া ক্রয়কৃত জমি ক্রয় করার পর যদি বিক্রয় করার নিয়ত করেন তবুও তার ওপর যাকাত ফরজ হবে না। কারণ, ওই জমি ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে খরিদ করা হয়নি। তবে হ্যাঁ বিক্রয়ের পর যদি এর মূল্য নিসাব পরিমাণ হয় তাহলে বছরান্তে এর যাকাত আদায় করতে হবে।
  • যেকোনো খালি জায়গায় রোকনকৃত কোন গাছের যাকাত দিতে হয় না। তবে বিক্রির পর তার মূল্য যদি নিসাব পরিমাণে হয় কিংবা সেই মূল্য অন্য অর্থের সাথে মিশে নিসাব পূর্ণ হলে যাকাত আদায় করতে হবে।
  • নিজের এবং নিজের পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় খরচ ছাড়া আপনার ব্যবসায়িক পণ্য কিংবা দোকানের মাল পত্রের মূল্য যদি হিসাব পরিমাণে হয় তাহলে বছরান্তে যাকাত আদায় করা জরুরী।
  • আপনি যদি ঋণগ্রস্থ হন সে ক্ষেত্রে সর্বমোট হিসাব থেকে ঋণের টাকা বাদ দিলে অবশিষ্ট যে টাকা থাকে এবং সেটি যদি নিসাব পরিমাণ হয় তাহলে যাকাত দিতে হবে। আর নিসাব পরিমাণে না হলে যাকাত দিতে হবে না।
  • কাউকে নগদ টাকা ঋণ দিলে এবং সেই টাকার পরিমাণ যদি নিসাব পরিমান হয় তাহলে ঋণদাতাকে অবশ্যই ওই টাকার যাকাত আদায় করতে হবে। শুধু তাই নয়, ঋণের টাকা হাতে চলে আসার পর বিগত বছরগুলোর যাকাতও একই সাথে আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে টাকা হাতে আসার পূর্বে যদি যাকাত আদায় করতে চান তাহলেও আদায় করা যাবে।
  • যেকোনো ধরনের কল-কারখানা, ফ্যাক্টরির মালিকের ওপর, ফ্যাক্টরির যন্ত্রপাতি কিংবা বিল্ডিং এর মূল্যের ওপর যাকাত ফরজ নয়। যদি কাঁচামাল, মালপত্র বাকিতে বিক্রয় করা হয়েছে এমন হয় এবং তার মূল্য উসুল করা সম্ভব এবং সেটি যদি নিসাব পরিমাণ হয় তাহলে তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে।
  • আপনার নিজের ব্যবহৃত গাড়ি কিংবা ব্যবসার কাজে ব্যবহারিত গাড়ির মূল্যের ওপর যাকাত ফরজ নয়। তবে এর মাধ্যমে উপার্জিত ভাড়ার অর্থ যাকাতের মূল অর্থের সাথে যোগ করতে হবে।
  • বাড়ি ভাড়া দেওয়া কিংবা মার্কেটের মূল্যের ওপর কখনোই যাকাত আসবেনা। তবে এগুলো থেকে উপার্জিত অর্থ নিসাব পরিমাণে হলে তার যাকাত আদায় করতে হবে।
  • আপনার যে সমস্ত সম্পদের ওপর যাকাত দেওয়া ওয়াজিব কিন্তু ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত যে কারণেই হোক না কেন যাকাত আদায় করা হয়নি, ওই মাল যদি চুরি বা ধ্বংস হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে ওই সম্পদের উপর যাকাত দিতে হবে না। তবে যাকাত দিতে বিলম্ব করায় গুনাহর জন্য তওবা করে নেওয়া জরুরি।
  • আপনি সমিতি ও ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছেন এবং তা যদি নিসাব পরিমানে হয় তাহলে তার ওপর বছরান্তে যাকাত ফরজ। কিন্তু সুদি ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে সেই জমাকৃত টাকা থেকে যে সুদ আসবে সেটি সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব। কারণ, সুদের টাকার উপর যাকাত কখনোই ফরজ হয় না।
  • যেকোনো ধরনের ফলমূল, শাকসবজি ইত্যাদির উপর যাকাত ফরজ নয়। তবে এগুলো যদি আপনি টাকার বিনিময় বিক্রি করেন সেক্ষেত্রে মূল্যের ওপর নিসাব পূর্ণ হলে এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর যাকাত ফরজ হবে।
  • যেকোনো ধরনের গৃহপালিত পশু পাখি যেমন- গরু, ছাগল ভেড়া, মহিষ, উট এই সমস্ত প্রাণী যদি মাঠে চড়ে খেয়ে বেড়ায় এবং ব্যবসার জন্য লালন-পালন করেন এবং তা নিসাব পরিমানে হয় তাহলে তা যাকাতের অন্তর্ভুক্ত হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, উটের নিসাব ন্যূনতম ৫টি, গরুর নিসাব ৩০ টি এবং ছাগলের নিসাব ৪০ টি।
  • মুদি দোকানদার, খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রেতা কিংবা মেশিনারি দোকানদার এই জাতীয় ব্যবসায়ীদের প্রধান কর্তব্য হলো ছোট বড় সকল অংশের মূল্য নির্ধারণ করে নেবে যাতে কোন কিছু বাদ না পড়ে যায়। যদি পরিমাণ নির্ণয়ে জটিলতা দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে সতর্কতামূলকভাবে বেশি দাম ধরে যাকাত আদায় করতে হবে। যাতে সে সম্পূর্ণভাবে দায়িত্ব মুক্ত থাকতে পারে।
  • যেকোনো দোকানের ডেকোরেশন, তাক, আলমারি ইত্যাদির ওপর যাকাত ফরজ নয় কিন্তু বিক্রি করার জন্য দোকানে যে সমস্ত পণ্য রয়েছে সেগুলোর মূল্য যদি নিসাব পরিমান হয় তাহলে অবশ্যই যাকাত ফরজ। এক্ষেত্রে যাকাত হিসাব করার সব থেকে সহজ একটি পদ্ধতি হলো- বছরের একটি নির্দিষ্ট
  • দিন তারিখে আপনি হিসেব করে দেখলেন আপনার দোকানে পাঁচ লক্ষ টাকার পণ্য রয়েছে। ওই বছর অতিবাহিত হওয়ার পর আবারো আনুমানিক পণ্যের মূল্য ধরে দেখলেন শুরুতে যে পরিমাণ সম্পদ ছিল তা নিসাব পরিমাণ এবং এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর যে পণ্য আছে সেটিও নিসাব পরিমান। সেক্ষেত্রে সমুদয় সম্পদের উপর আপনাকে আড়াই শতাংশ হারে যাকাত প্রদান করতে হবে।
  • হারাম সম্পদ বলতে সাধারণত অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ যেমন- চুরি, ডাকাতি, ঘুষ, ছিনতাই, রাহাজানি, অবৈধ কোন ব্যবসা ইত্যাদির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদকে বোঝায়। আর হারাম পন্থায় অপরিচিত সম্পদের মালিক ওই ব্যক্তি নয়। সেটি খরচের অধিকারও তার নেই। যাকাত যেহেতু একপ্রকার খরচ,
  • তাই ফকিহ্গন বলেছেন হারাম সম্পদ হতে যাকাত আদায় করা যাবে না। হয় অবৈধ পন্থায় অর্জিত সকল সম্পত্তি প্রকৃত মালিককে ফেরত দিতে হবে। আর যদি মালিক চিহ্নিত না হয় সে ক্ষেত্রে সওয়াবের নিয়ত ব্যতিরেকে টোটাল সম্পদ গরিব মিসকীনদের মাঝে বন্টন করে দিতে হবে।
  • কারোর সম্পদ যদি বিদেশে কোন ব্যাংকে থাকে কিংবা কেউ যদি বিদেশে ব্যবসা করে তবে ওই সম্পত্তির উপর যাকাত ফরজ।
প্রিয় পাঠক, কত ভরি স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হয় এবং কোন কোন সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ করা হয়েছে তা এতক্ষণ বিস্তারিত আলোচনা করলাম। উপরিউক্ত এই সমস্ত সম্পদের ওপর আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমানে যাকাত প্রদান করতে হবে যা ইসলামী বিধান অনুসারে নির্ধারিধারিত

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি জানেন কি? আমাদের প্রতিদিনের দৈহিক ইবাদতের মধ্যে যেমন নামাজ গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি ভাবে আর্থিক ইবাদতের মধ্যে অতীব গুরুত্বপূর্ণ হলো যাকাত। তবে যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত পূর্ণ হতে হয়। এ শর্ত গুলো পূরণ হলে তবেই যাকাত প্রদান ফরজ হয়ে যায়। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন আমরা জেনে নিই যাকাত ফরজ হওয়ার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত সম্পর্কে-
  • মুসলিম হওয়াঃ যাকাত ফরজ হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে যে ব্যক্তি যাকাত দিবে তাকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে। কাফেরের ওপর কখনোই যাকাত ফরজ নয়। কারণ, ইসলামিক বিধান অনুসারে মুসলমান ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীর ব্যক্তিদের ওপর যাকাত ফরজ নয়। সুতরাং মুসলিম ছাড়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সহ অন্য ধর্মাবলীর মানুষ যাকাত প্রদানে বাধ্য নয়।
  • বালেগ হওয়া (বয়: প্রাপ্ত হওয়া)ঃ যাকাত ফরজ হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো বালেগ হওয়া। আর বালেগ বা বয়:প্রাপ্ত হতে হলে একজন ব্যক্তির বয়স সাধারণত ১৫ বছর বা তার বেশি হতে হবে। শিশুদের উপর যাকাত ফরজ নয় কারণ, তাদের সম্পত্তি সম্পূর্ণভাবে তাদের অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • যদি কোন শিশু বড় হয়ে যাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পত্তি অর্জন করে এবং হিজরী ক্যালেন্ডারের একটি বছর সম্পন্ন করে তবে তখন সে যাকাত দেওয়ার উপযুক্ত হবে। আবার বালেগ হওয়া না হলে যদি কোন ব্যক্তি অপ্রাপ্তবয়স্ক থেকে যায় সেক্ষেত্রে তার ধনসম্পত্তি বা ধন দৌলতের যাকাতের কোনো হিসাব হয় না। এক্ষেত্রে তার অভিভাবকরা বা আইনগত প্রতিনিধি তার সম্পত্তি থেকে যাকাত প্রদান করতে পারে উপরোক্ত শর্ত পূরণ করে।
  • বিবেক-বুদ্ধি সম্পূর্ণ হওয়াঃ যাকাত ফরজ হওয়ার আরেকটি শর্ত হল যে ব্যক্তি যাকাত দেবেন তাকে অবশ্যই স্বাভাবিক বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ হতে হবে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি মানসিকভাবে স্বাভাবিক এবং সচেতন না যেমন- পাগল বা মানসিক ভারসাম্যহীন অসুস্থ ব্যক্তি তার উপর যাকাত ফরজ নয়। এমন ব্যক্তির ওপর যাকাতের কোন দায়িত্ব থাকে না। তবে কোন ব্যক্তির মানসিক অবস্থা সুস্থ থাকলে এবং যদি সে বালেগ হয় তাহলে তার ওপর যাকাত অবশ্যই ফরজ।
  • নিসাব পরিমান সম্পত্তি থাকাঃ যাকাত ফরজ করার জন্য অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পত্তি থাকতে হবে। নিসাব হলো সেই পরিমান সম্পত্তি যার উপর যাকাত ফরজ হয়। অর্থাৎ ইসলামী বিধান অনুসারে যদি কোন ব্যক্তির নিসাব পরিমাণ সম্পত্তি থাকে এবং হিজরী বর্ষের এক পূর্ণ বছর অতিবাহিত হয় তবে তার ওপর যাকাত ফরজ। বর্তমানে নিষাদ পরিমান সম্পত্তি সোনার ক্ষেত্রে ৭.৫ তোলা বা ৯০ গ্রাম সোনা এবং রুপার ক্ষেত্রে ৫৪০ গ্রাম রুপা ধরা হয়।
  • এক বছর সম্পূর্ণ হওয়ার (হিজরি বছর)ঃ যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পত্তির উপর একটি পূর্ণ বছর অর্থাৎ ১২ মাস অতিবাহিত হতে হবে। যদি কেউ যাকাত দেওয়ার যোগ্য সম্পত্তি অর্জন করে এবং এক হিজরি বছর পার হয় তবে সেই ব্যক্তি তার সম্পত্তির উপর যাকাত প্রদানে বাধ্য।
  • স্বাধীনচেতা হওয়াঃ যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সময়ের মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিকে স্বাধীনচেতা এবং মুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ দাস দাসীর উপর যাকাত কখনোই ফরজ নয়।
  • সম্পদের উপর পূর্ণ মালিকানা থাকাঃ যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত হিসেবে আপনার সম্পদের উপর আপনার পূর্ণ মালিকানা থাকতে হবে। কারণ, যে সম্পদের উপর আপনার কর্তৃত্ব নাই অর্থাৎ অসম্পূর্ণ মালিকানার উপর যাকাত কখনোই ফরজ হয় না।
  • ঋণগ্রস্থ না থাকাঃ যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত পূরণের জন্য আপনাকে অবশ্যই ঋণ পরিশোধ করে ঋণ মুক্ত হতে হবে। কেননা ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি হিসাব পরিমান সম্পত্তির মালিক হলেও তার ওপর যাকাত ফরজ হবেনা। তবে ঋণ পরিশোধ করার পর যদি তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পত্তি থাকে তাহলে তাকে যাকাত আদায় করতে হবে।
  • জীবিত থাকাঃ যাকাত ফরজের আরেকটি অন্যতম প্রধান শর্ত হলো জীবিত থাকা। কেননা মৃতের সম্পদ থেকে কোনভাবেই অনাদায়ী যাকাত আদায় করা আবশ্যক না। তবে মৃত্যুর আগে যদি কোন ব্যক্তি তার যাকাত আদায়ের জন্য ওসিয়ত করে যায় সেক্ষেত্রে ওয়ারিশদের জন্য তার পক্ষ থেকে যাকাত প্রদান করতে হবে। সুতরাং ওসিয়ত না করে গেলে যাকাত আদায় আবশ্যক নয়। কিন্তু ওয়ারিশরা চাইলে আদায় করতে পারে।
  • যৌথ মালিকানা ভুক্ত সম্পদের যাকাতঃ যদি কোন সম্পদের দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মালিকানা থাকে সেক্ষেত্রে যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত হিসেবে প্রত্যেককে নিজ নিজ অংশের যাকাত প্রদান করতে হবে।
  • সাজাপ্রাপ্ত আসামির যাকাতঃ কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি সে হাজতি হোক বা সাজাপ্রাপ্ত যেই হোক না কেন যদি তার নিসাব পরিমান সম্পদ থেকে থাকে তাহলে তাকে যাকাত দিতে হবে। এটিও যাকাত ফরজ হওয়ার একটি শর্ত।
  • মুসাফিরের যাকাতঃ সফরের কারণেও যাকাত রোহিত হয় না। কারণ, একজন মুসাফির ব্যক্তি যদি তার নিজ দেশে নিশাত পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হন তাহলে তাকেও ওই সম্পদের যাকাত দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির দেশের প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষা না করে তার পক্ষ থেকে তার আত্মীয়-স্বজন কিংবা নিকট আত্মীয় যাকাত আদায় করবেন।
  • মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদঃ আপনার সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পরে যদি অতিরিক্ত সম্পদ থাকে তবেই যাকাত ফরজ হবে।
  • সম্পদ বর্ধনযোগ্য হতে হবেঃ যাকাতের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো দরিদ্র গরিব মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা করা। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহতালা চান না আদায় করে একজন ধনী ব্যক্তি ও দরিদ্র হয়ে যাক। এক্ষেত্রে আপনার সম্পদ যদি বর্ধনশীল না হয় এবং বছরের পর বছর ধরে যাকাত আদায় করা হতে থাকে তাহলে ধনী ব্যক্তিও একটা সময়ে দরিদ্র হয়ে পড়বে। সুতরাং যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত হিসেবে সম্পদ বর্ধনশীল হতে হবে।
প্রিয় পাঠক, জানিয়ে দিলাম যাকাত ফরজ হওয়ার বেশ কয়েকটি শর্ত সম্পর্কে। যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তগুলো যথাযথভাবে পূর্ণ হলে মুসলিমদের ওপর যাকাত দেওয়া ফরজ হয়ে যায়। যা তাদের ইসলামী দায়িত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাছাড়া কয় ভরি সোনা থাকলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে তা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি।

যাকাতের মাসারিফ কয়টি ও কি কি

যাকাতের মাসারিফ কয়টি ও কি কি? অনেকেই জানেন আবার অনেকেই জানেন না। কিন্তু যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে যাকাতের মাসারিফ জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। মাসারিফ মূলত একটি আরবি শব্দ। যার অর্থ হলো ব্যয় করার খাত। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় যাদেরকে যাকাত দেওয়া হয় ঠিক তাদেরকে যাকাতের মাসারিফ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
তাছাড়া যাকাতের মাসারিফ অর্থাৎ আপনি কোন কোন খাতে যাকাত দেবেন সেটিও মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যাকাতের মাসারিফ মূলত ৮ টি। এবার চলুন যাকাতের মাসারিফ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন-
  • দরিদ্র অভাবগ্রস্থ ফকিরঃ ফকির হল সেই ব্যক্তি যিনি তার নিজের জীবিকার জন্য উপযুক্ত অর্থ বা সম্পদ উপার্জন করতে পারেন না। তিনি এতটাই দরিদ্র যে তার দৈনন্দিন জীবনের মৌলিক চাহিদা যেমন- খাবার, কাপড়চোপড়, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি পূরণের জন্য যাকাতের প্রয়োজন। 
  • এই শ্রেণীর মানুষ মূলত তারাই যারা সম্পূর্ণরূপে দরিদ্রগ্রস্থ এবং যাদের আয়ের কোন উৎস নেই। সুতরাং তারা যাকাতের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয়তা খুব সহজেই পূরণ করতে পারে। শুধু তাই নয়, জীবিকা অর্জনে যে কোনো অক্ষম ব্যক্তি, ইয়াতিম শিশু, পঙ্গু ব্যক্তি, বিধবা, শারীরিকভাবে দুর্বল, যেকোনো দুর্ঘটনা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার এমন ব্যক্তিদের মাঝেও সাময়িকভাবে যাকাতের খাত থেকে সাহায্য করা যেতে পারে।
  • মিসকিনঃ মিসকিনও একজন দরিদ্র ব্যক্তি। তবে তার অবস্থান ফকিরের চেয়ে খানিকটা আলাদা। মিসকিন হলেন এমন ব্যক্তি যিনি জীবিকার জন্য কিছু আয় করেন কিন্তু তার আয়ের পরিমাণ এতটাই নগণ্য যে সেই আয় দিয়ে তিনি তার পরিবারের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারেন না। বিশেষ করে যারা একেবারে নিঃস্ব এবং অভাবগ্রস্থ থাকা সত্ত্বেও সম্মানের ভয়ে অন্য কারোর দ্বারস্থ হতে পারেন না তাদেরকেই মিসকিন বলে। সুতরাং মিসকিনের জন্যও যাকাত প্রদান করা যেতে পারে
  • যাকাত সংগ্রহকারী বা আমিলঃ আমি হল সেই ব্যক্তি যিনি যাকাত সংগ্রহ, যাকাত আদায়, রক্ষণাবেক্ষণ, হিসাব পত্র ঠিক রাখা এবং বিতরণের কাজ করেন। তারা যাকাতের অর্থ সংগ্রহের পর সঠিকভাবে তা সংশ্লিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য নিযুক্ত থাকেন। তাদের জন্য যাকাতের একটি অংশ প্রদান করা হয়। কারণ, তারা যাকাতের কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং এর জন্য তাদের শ্রম ও সময় উভয়ই ব্যয় করতে হয়। সুতরাং তারা আর্থিক সঙ্গতি সম্পন্ন হলেও যাকাত থেকে তাদেরকে পারিশ্রমিক দেওয়া যাবে।
  • মুআল্লাফাতুল কুলুব বা যাদের মন জয় করতে হবেঃ মুয়াল্লাফাতুল কুলুব হলো সেই ব্যক্তি যারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন অথবা ইসলাম সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। অর্থাৎ সদ্য মুসলমান হয়েছেন এমন ব্যক্তির বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরণে এবং ইসলামিক প্রতি অবিচল মনোভাব রাখার উদ্দেশ্যে তাদের যাকাত দেওয়া যাবে।
  • এই ধরনের ব্যক্তিদের যাকাত দেওয়া হলে তারা ইসলামের প্রতি আরো আগ্রহী হন এবং ইসলাম গ্রহণের পক্ষে তাদের স্থিতি শক্তিশালী হয়। ইসলামের একেবারে প্রাথমিক যুগে এই ধরনের ব্যক্তিদের যাকাত দেওয়ার বিধান চালু ছিল।
  • গোলাম বা মুক্তিকামি দাসঃ গোলাম বলতে বোঝানো হয়েছে মূলত দাস দাসীর কথা। যাদের দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অর্থের প্রয়োজন। এই সমস্ত দাসদের মুক্তির মূল্য পরিশোধের জন্য যাকাত দেওয়া যেতে পারে। তবে বর্তমানে দাস-দাসী প্রথা চালু না থাকার কারণে এই খাতে যাকাত বন্টন করা হয় না।
  • গারিম বা ঋণগ্রস্থঃ গারিম হল সেই ব্যক্তি যিনি ঋণে বিপর্যস্ত। অর্থাৎ যারা অসীম ঋণের মধ্যে আটকে পড়েছেন এবং তাদের ঋণ পরিশোধ করার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন তাদের জন্য যাকাত প্রদান করা যেতে পারে। তবে ঋণ যদি তাদের নিজের ভুলবশত বা অপব্যয়ের কারণে হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে যাকাত নাও দেওয়া হতে পারে। সুতরাং ঋণগ্রস্থদের মধ্যে শুধুমাত্র সেই সব ব্যক্তি যাকাতের উপযুক্ত যারা সত্যিকার অর্থে আর্থিক সংকটে আছেন এবং ঋণ পরিশোধের জন্য সহায়তা প্রয়োজন।
  • ফি সাবিলিল্লাহ বা আল্লাহর পথেঃ ফি সাবিলিল্লাহ যার অর্থ হলো আল্লাহর পথে জিহাদ। ফি সাবিলিল্লাহ হলো একটি বিশেষ শ্রেণী যেখানে ইসলামিক কাজকর্ম, শিক্ষা, দাওয়াহ, ধর্মীয় প্রচারণা এবং মুসলিম সমাজের কল্যাণে যারা কাজ করে থাকেন তাদের যাকাত দেওয়া যেতে পারে। এই কাজগুলো সাধারণত ইসলাম প্রচার ও প্রসারের সাথে সম্পৃক্ত
  • এবং আল্লাহর পথে কাজ করতে উৎসাহিত করা হয়। এই শ্রেণীতে আসা ব্যক্তিরা মূলত ধর্মীয় কাজকর্মে যেমন- মসজিদ নির্মাণ, ইসলামী শিক্ষা বিস্তার কিংবা ইসলাম প্রচারের কাজে নিয়োজিত থাকেন। সুতরাং ইসলামের খিদমতে নিয়োজিত এই সকল ব্যক্তিদের যাকাত থেকে সাহায্য করা যাবে।
  • পথযাত্রী বা ইবনে সাবিলঃ ইবনে সাবিল হল সেই ব্যক্তি যারা সফরে বেরিয়ে পড়েছেন এবং যাত্রাপথে তার প্রয়োজনীয় খরচ পূরণে আর্থিক সংকটে পড়েছেন। তারা যদি অল্প সময়ের জন্য পথচারী হন এবং তাদের সাথে কোন টাকা পয়সা না থাকে সেক্ষেত্রে তাদের জন্য যাকাত প্রদান করা যেতে পারে। যাতে করে তারা তাদের যাত্রা চালিয়ে যেতে পারে। পথযাত্রীদের এই দুঃসময়ে সহায়তা করতে পারে কেবলমাত্র যাকাত।
প্রিয় পাঠক, জানিয়ে দিলাম যাকাতের মাসারিফ বা ব্যয়ের মোট ৮টি প্রধান শ্রেণী। যাকাত সঠিকভাবে বিতরণ করতে হলে এই শ্রেণিগুলোর প্রতি যত্নশীল হতে হবে এবং এই সমস্ত মানুষের দুঃখ, দুর্দশা, লাঘব দূর করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করতে হবে। তাছাড়া কয় ভরি স্বর্ণ থাকলে আপনাকে যাকাত প্রদান করতে হবে তা ইতিমধ্যেই আজকের আলোচনার মাধ্যমে জেনে গেছেন।

শেষ কথা - কত ভরি স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হয়

কয় ভরি স্বর্ণ থাকলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে আশা করছি আজকের আর্টিকেলে আলোচনার মাধ্যমে তা জানতে পেরেছেন। ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় স্তম্ভে রয়েছে যাকাত। এটি ইসলামিক এক গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক অবদান যা মুসলমানদের উপর ফরজ। পবিত্র কোরআনে যেমন ৮২ বার নামাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঠিক তেমনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৮২ বার 

যাকাতেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যাকাত প্রদান শুধুমাত্র আর্থিক সাহায্য করাই নয় বরং এটি আত্মবিশ্বাস এবং সমাজে ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠার একটি মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। সুতরাং যাকাত একদিকে যেমন ধর্মীয় কর্তব্য তেমনি অন্যদিকে ধন সম্পদকে বিশুদ্ধ করে। মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে যাকাত দান করার তৌফিক দান করুক। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url