তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত কি? জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এক্ষুনি একবার পড়ে নিন। আজ আমরা আলোচনা করতে চলেছি তাহাজ্জুদ সালাতের সঠিক সময় ও নিয়ম এবং এই সালাতের নিয়ত সম্পর্কে।

তাহাজ্জুদ-নামাজের-সময়-ও-নিয়ম-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
সাথে আরো আলোচনা করবো মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে। তাহলে চলুন তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কিত আপনার অজানা খুঁটিনাটি সকল তথ্য আজকের এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিন।

পোষ্ট সূচিপত্রঃ তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম কি? আমরা অনেকেই জানি আবার অনেকেই জানিনা। তাহাজ্জুদ নামাজ হল একটি অতিরিক্ত নফল নামাজ যা রাতের একটি বিশেষ সময় পড়া হয়। সাধারণত রাতের তৃতীয় প্রহর থেকে এই নামাজ আদায় করা হয়। ইসলামিক ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ। 
 
তাহাজ্জুদ নামাজের সবচেয়ে উত্তম সময় হলো রাতের শেষাংশ, যাকে "পঞ্চম প্রহর" বলা হয়। হাদীসে বর্ণিত আছে, রাতের তৃতীয় প্রহরে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা আসমান থেকে পৃথিবীতে নেমে এসে বান্দার দোয়া শোনেন। যা তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্বকে আরো বাড়িয়ে তোলে। তাই এই সময় বেশি করে আল্লাহর নিকট দোয়া করা উচিত।
 
তাহাজ্জুদ নামাজ মূলত দুই রাকাআত করে পড়া হয়। তবে এর সংখ্যা বাড়ানোও যায়। তাহাজ্জুদ নামাজের পূর্বে কোন ফরজ বা নফল নামাজ পড়ার কোন শর্ত নেই। তবে কিছু দোয়া আগে পড়া উত্তম। তাহাজ্জুদ নামাজের শুরুতে আপনি খুব ভালোভাবে অজু করে নেবেন। এরপর খুব মনোযোগ সহকারে একাগ্র চিত্তে নামাজ পড়বেন যেন তা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হয়।
তাহাজ্জুদ-নামাজের-সময়-ও-নিয়ম-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
নামাজের পর একজন মুসলমান বান্দা হিসেবে আপনি আল্লাহর প্রতি আরো তওবা ও মাফ চাইতে পারেন এবং বিভিন্ন দোয়া পড়তে পারেন। মুমিনরা তাহাজ্জুদ নামাজে আল্লাহর কাছে তার বিশেষ রহমত ও ক্ষমাপ্রার্থনা করে থাকেন। একজন প্রকৃত মুসলিম ঈমানদার বান্দা হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। 
 
যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েন তাদের জন্য একাধিক ফজিলত ও পুরস্কারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে পবিত্র কুরআনে। সুতরাং একে অভ্যাসে পরিণত করলে খুব সহজেই আপনি আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভ করতে পারেন। তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে একজন মুসলমান ব্যক্তি তার অন্তরের পরিশুদ্ধি ঘটিয়ে মহান আল্লাহ তাআলার আরও কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। তবে এটি একটি সুন্নত ইবাদত হওয়ায় না পড়লেও কোন গুনাহ নেই। 

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সূচি ২০২৫

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সূচী এবং এটি কোন নিয়মে পড়তে হয় তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলে সহজে বুঝতে পারবেন। সাধারণত এশার নামাজ আদায়ের পর থেকে তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ের সময় শুরু হয় এবং রাতের শেষভাগ পর্যন্ত এই নামাজ আদায়ের সুযোগ থাকে। তবে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের সর্বোত্তম সময় হলো রাতের শেষ ভাগ অর্থাৎ ফজরের নামাজের আগ পর্যন্ত। যে সময়টাকে রাতের এক তৃতীয়াংশ অংশ ধরা হয়। এবার চলুন তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সঠিক সময় আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি-
  • তাহাজ্জুদ নামাজের সময়
এশার নামাজের পরেঃ
  • তাহাজ্জুদ নামাজের সময় শুরু হয় মূলত এশার নামাজের পর থেকে। আপনি চাইলে এশার নামাজের পরেও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে পারেন।
  • আপনি যদি এশার নামাজের পরপর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে নিতে চান তাহলে এশার নামাজের পর কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে কিংবা দোয়া, কুরআন তেলাওয়াত কিংবা আপনার দৈনন্দিন জীবনের কাজ সেরে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে ফেলতে পারেন।
রাতের শেষ তৃতীয়াংশঃ
  • তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সবচেয়ে উত্তম সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। এর মানে হলো রাতের মোট সময়কে যে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয় এবং তৃতীয় ভাগের পর এটি আদায় করা শ্রেষ্ঠ।
  • উদাহরণস্বরূপ, ধরুন যদি রাত ১২ ঘন্টার হয় তাহলে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ হবে ৩ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত।
ফজরের আগেই শেষ করা উচিতঃ
  • তাহাজ্জুদ নামাজের শেষ সময় হলো ফজরের আজান হওয়ার আগ পর্যন্ত। সুতরাং ফজরের আযান শুরু হওয়ার আগেই আপনাকে তাহাজ্জুদ নামাজ শেষ করতে হবে।
  • কারণ, ফজরের আজান শুরু হলে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় শেষ হয়ে যায় এবং ঠিক তখন থেকে সুবহে সাদিক শুরু হয়ে যায়।
  • তাহাজ্জুদ নামাজের সময়সূচী
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় মূলত নির্ভর করে রাতের সময়ের ওপর। রাতের সময়ের উপর ভিত্তি করে আপনি নিম্নলিখিত সময়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারেন-
  • রাত ৯:০০ - ১২:০০ টাঃ এশার নামাজের পরপর তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে চাইলে আপনি এশার নামাজের পরে কিছু সময় গ্যাপ দিয়ে রাত ১২:০০ টার মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজ শেষ করতে পারেন।
  • রাত ১২:০০ - ৩:০০ টাঃ মধ্যরাতে অর্থাৎ রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ এবং মাঝের সময়। এ সময়ও তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা উত্তম।
  • রাত ৩:০০ - ৫:০০ টাঃ তাহাজ্জুদ নামাজের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ফজরের আযানের আগ পর্যন্ত।
সম্মানিত পাঠক, তাহাজ্জুদ নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নফল নামাজ যা মুসলমানদের জন্য বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত। এই নামাজ শুধুমাত্র আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম তা কিন্তু নয় বরং জীবনের অনেক সমস্যার সমাধান এবং আত্মিক শান্তি লাভেরও একটি উপায় বলতে পারেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম বা কিভাবে এই নামাজ পড়তে হয় সে সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। এই নামাজ অত্যন্ত মর্যাদা পূর্ণ যা আল্লাহর কাছে বিশেষ নৈকট্য লাভের জন্য পড়া হয়। হাদিসে এসেছে, যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে তাদের জন্য আল্লাহতালা বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন। এবার চলুন তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিন-
নামাজের প্রস্তুতিঃ
  • তাহাজ্জুদ নামাজের পূর্বে অজু করে পাক-পবিত্র হওয়ার আবশ্যক। শুধু তাহাজ্জুদ নামাজ নয় বরং প্রত্যেকটি নামাজের পূর্বে ওজু করে পাক পবিত্র হতে হবে। কারণ, যে কোন নামাজের পূর্বে সুন্নত অনুযায়ী শুদ্ধতা বা পবিত্রতা রক্ষা করা জরুরী।
  • ওযু করার পর নামাজে দাঁড়িয়ে আপনি তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য নিয়ত করে নিতে হবে। যেমন- "আমি দুই রাকাআত তাহাজ্জুত নামাজ পড়ার নিয়ত করছি।"
তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাআত সংখ্যাঃ
  • তাহাজ্জুদ নামাজ সাধারণত ২ রাকাআত করে পড়া হয়। তবে এর নির্দিষ্ট কোন বাধ্যবাধকতা নেই। আপনি চাইলে ৮ রাকাআত, ১২ রাকাআত কিংবা ২০ রাকাআত পর্যন্তও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারেন।
  • এর মানে হলো আপনি ২, ৪, ৮, ১২, ২০ কিংবা এর অধিক রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে পারেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া সুন্নত। আপনি এর বেশি বা কমও পড়তে পারেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মঃ
প্রথম রাকাআতঃ
  • নামাজের শুরুতেই আপনি তাকবীরে তাহরিমা "আল্লাহু আকবার" বলে নিয়ত করে হাত বেঁধে নিন।
  • এরপর ছানা পড়ে সূরা ফাতিহা পড়ুন।
  • সূরা ফাতিহা পড়ার পর আপনার ইচ্ছামত আপনি যেকোনো একটি সূরা পড়ে নিন। তবে চেষ্টা করবেন বড় সূরা বা বড় আয়াত পড়ার। কারণ, এই নামাজে বড় সূরা পড়া উত্তম।
  • এরপর পর্যায়ক্রমে রুকু ও সিজদা করুন এবং বৈঠকে বসে তাশাহুদ, দরুদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা পাঠ করুন।
  • সবশেষে প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বাম দিকে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করুন।
দ্বিতীয় রাকাআতঃ
  • প্রথম রাকাআতের পর কিছু সময় আপনি বিশ্রাম নিতে পারেন। এই সময় আপনি কুরআন তেলাওয়াত বা অন্যান্য দোয়া পাঠ করতে পারেন। কারণ, তাহাজ্জুদ নামাজে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আপনি দীর্ঘ সময় ধরে ইবাদতে মশগুল থাকতে পারেন। এরপর আপনি দ্বিতীয় রাকাআত শুরু করতে পারেন।
  • অতঃপর, দ্বিতীয় রাকাআতের ক্ষেত্রেও ঠিক প্রথম রাকাআতের মতই প্রথমেই হাত বেঁধে সূরা ফাতিহা পাঠ করুন। এক্ষেত্রে বলে রাখি, দ্বিতীয় রাকাআতের শুরুতে পুনরায় ছানা পড়ার প্রয়োজন নেই।
  • অতঃপর অন্যান্য সুরা বা আয়াত পড়ুন।
  • এরপর রুকু সিজদার পালা। রুকু, সিজদা ও তাহাজ্জুদ নামাজের অন্যান্য অংশে আপনি বিশেষ দোয়া পাঠ করতে পারেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দোয়াটি হলো, "আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা।"
  • আবারো রুকু, সিজদা শেষ করে বৈঠকে বসে আগের মতই তাশাহুদ, দরুদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা পড়ে পর্যায়ক্রমে ডানে, বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করুন।
এভাবে সঠিক নিয়মে ২ রাকাআত করে আপনি সর্বোচ্চ ২০ রাকাআত পর্যন্ত তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতে পারেন। আরেকটি কথা, আপনি যদি এশার নামাজের পরে বিতরের নামাজ পড়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়ার পর আলাদা করে বিতর নামাজ পড়ার কোন দরকার নেই। তখন ২ রাকাআত থেকে শুরু করে ৮ রাকাআত পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লেই চলবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম সম্পর্কে এতক্ষণ জেনেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে হলে নফল নামাজের জন্য আপনাকে নিয়ত করতে হবে। নামাজের নিয়ত ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, নামাজের নিয়ত ইবাদত স্বীকৃতির প্রথম শর্ত। আপনি নিয়ত মনে মনে করতে পারেন আবার চাইলে মুখে বলেও করতে পারেন।
 
অর্থাৎ আপনি নামাজ শুরু করার আগে আপনার মনের মধ্যে এই ইচ্ছা পোষণ করবেন যে আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ পড়বেন। এই নিয়ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্তরের সংকল্প। কারণ, নিয়ত ছাড়া নামাজ কখনই কবুল হবে না। নিয়ত মুখে বলার প্রয়োজন নেই তবে আপনি চাইলে বলতেও পারেন। 
 
যেমন- আউজুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজিম, "আমি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য কেবলামুখী হয়ে তাহাজ্জুদ নামাজের ২ রাকাআত নফল নামাজ আদায় করছি আল্লাহু আকবার।" আবার আপনি এভাবেও নিয়ত করতে পারেন। যেমন- "আমি আল্লাহ তালার সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করছি।" আবার আপনি চাইলে আরবিতেও নিয়ত করতে পারেন।
 
আরবিতে নিয়ত হবে- "নাওয়াইতু আন উছওয়াল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা, রাকাতাই ছলাতিত তাহাজ্জুদি সুন্নাতু রাসূলুল্লাহি তা'য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিস শারিফাতি আল্লাহু আকবার।" আরবি নিয়ত না পারলেও সমস্যা নাই। আপনার যে ভাষা সে ভাষাতে নিয়ত করলেই হবে। এখানে খেয়াল রাখবেন, আপনি যে রাকাআত নামাজ পড়ছেন তা ভালোভাবে নির্ধারণ করতে হবে যেমন- ২ রাকাআত কিংবা ৪ রাকাআত।

তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা

তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা, অনেকেই জানতে চান তাহাজ্জুদ নামাজে কি কি সূরা পড়তে হয়। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার সময় আপনি সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর তার সাথে যে কোন সূরা পড়তে পারেন। তবে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পরে যদি সূরা এখলাছ ৪ বার পড়ে রুকুতে যান সে ক্ষেত্রে বেশি সওয়াব পেতে পারেন।
 
কারণ, তাহাজ্জুদ নামাজে যত লম্বা কেরাত পড়তে পারবেন তত ফজিলত বেশি। ঠিক সে কারণেই সূরা ফাতিহার পরে আপনি দীর্ঘ যে কোন সূরা দিয়ে নামাজ আদায় করার চেষ্টা করবেন। এছাড়াও আপনি আরো যে যে সূরা পড়তে পারেন-
  • সূরা আল ফালাক্বঃ সূরা আল ফালাক মূলত রাতের অন্ধকার এবং শত্রুর দৃষ্টি থেকে নিরাপত্তা লাভের জন্য একটি দোয়া। এটি যে কোন বিপদ বা খারাপ জিনিস থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারে। সুতরাং তাহাজ্জুদ নামাজে সূরা আল ফালাক্ব পড়ে আপনি আল্লাহর নিকট সুরক্ষা চাইতে পারেন।
  • সূরা আল-নাসঃ সূরা আল নাস মানুষকে শয়তান এবং এর খারাপ প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখে। সুতরাং রাত্রিকালীন তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য সূরা আল নাস ভীষণই ফজিলত পূর্ণ একটি সূরা।
  • সূরা আল ইনশিরাহঃ সূরা আল ইনশিরাহ মহান আল্লার ত্রাণ ও সাহায্যকে তুলে ধরে এবং বিশ্ববাসীকে বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার আশ্বাস দেয়। সুতরাং তাহাজ্জুদ নামাজে সূরা আল ইনশিরা পড়া অত্যন্ত লাভজনক। কারণ, এটি একটি আল্লাহর সাহায্য ও প্রসস্থতার জন্য দোয়া।
  • সূরা তোহাঃ সূরা ত্বহা পবিত্র কুরআনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সূরা যা মহান আল্লাহ তাআলার শক্তি ও দয়া প্রকাশ করে। এই সূরাটি তাহাজ্জুদ নামাজে আপনি পড়তে পারেন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করে সাহায্য প্রার্থনা করতে পারেন।
  • সূরা মূলকঃ সুরা মুলক তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য বিশেষ ফজিলতপূর্ণ একটি সূরা। এটি মূলত রাতের সূরা এবং জান্নাতের সৌন্দর্য ও দুনিয়ার শাস্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে বর্ণনা করে।
  • সূরা আল ইমরান (৩:১৯০-১৯১)ঃ সূরা আল ইমরানের এই আয়াতটি গভীর রাতে তাহাজ্জুদ নামাজে আদায় করা খুবই ফজিলতপূর্ণ। কারণ, এতে আল্লাহর সৃষ্টির বিস্ময়, তার দয়া এবং শক্তি সম্পর্কে চিন্তা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই সূরাটি রাতের সময় গভীর চিন্তা ও এবাদতের জন্য অত্যন্ত উপযোগী একটি সূরা।
  • সূরা আল বাকারা ২:২৫৫ - আয়াতাল কুরসিঃ আয়াতুল কুরসি কুরআনের সব থেকে শক্তিশালী আয়াত হিসেবে পরিচিত এবং এটি আল্লাহর শক্তি জ্ঞান ও আধিপত্য সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা দেয়। আপনি তাহাজ্জুদ নামাজে
  • সূরা আল-দাহরঃ এটি পবিত্র কুরআনের দীর্ঘতম একটি সূরা। যা ত্যাগ, সহানুভূতি এবং মুমিনদের জন্য প্রতিদান দেওয়ার কথা বলে। জান্নাতের বর্ণনাও রয়েছে নিখুঁতভাবে। সুতরাং আল্লাহর তাআলার কাছে সাহায্য ও পরিত্রাণ চাওয়ার জন্য তাহাজ্জুদ নামাজে আপনি সূরা আল দাহর পাঠ করতে পারেন।
সম্মানিত পাঠক, এই সূরাগুলো ছাড়াও আপনি সূরা আল ইসলাহ ( ২:২৮৫-২৮৬), সূরা আশ-শুরা (৪২:১১) এই সূরাগুলোও তাহাজ্জুদ নামাজে পাঠ করতে পারেন। উপরিউক্ত সূরা ও আয়াতগুলি তাহাজ্জুদ নামাজে পড়ার অভ্যাস করলে আপনি আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং যেকোনো ধরনের বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা করতে পারেন। তাছাড়া তাহাজ্জুদ নামাজ আপনি কখন কিভাবে পড়বেন সেই নিয়ম খানিক আগেই জেনেছেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত কি? তাহাজ্জুদ নামাজ আপনি কখন কোন নিয়মে পড়বেন তা এতক্ষণ আমরা জেনেছি। এবার আমরা জানবো তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে। ইসলামী জীবনধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল তাহাজ্জু্দের নামাজ। মহান আল্লাহ তা'আলা এই নামাজের মাধ্যমে তার বান্দাদের বিশেষ মর্যাদা এবং নেকি প্রদান করে থাকেন। তাহাজ্জুদ নামাজের বিভিন্ন ফজিলত যা কোরআন ও হাদিসেও উল্লেখ করা আছে। তো চলুন তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন-
আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদা লাভঃ
  • তাহাজ্জুদ নামাজ মহান আল্লাহ তাআলার অত্যন্ত প্রিয় এবাদত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, "আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় কর, এটা তোমার জন্য অতিরিক্ত পুরস্কার হবে। আশা করা যায় যে, তোমাকে তোমার প্রতিপালক একটি প্রশংসনীয় স্থান দান করবেন।" ( সূরা ইসরা, ১৭:৭৯)
  • এখানে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের বিশেষ মর্যাদা দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যারা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করবে।
নেকির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়ঃ
  • নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে বান্দা তার নীতির পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে। হাদিসে এসেছে, "যে ব্যক্তি রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে, আল্লাহ তার জীবনকে পূর্ণ করবেন।" (সুনান ইবনে মাজাহ)।
  • এছাড়াও আরেকটি হাদিসে এসেছে, "যারা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েন, তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা একটি বিশেষ অগ্নিদূত প্রেরণ করেন।" (সহীহ মুসলিম)
দোয়া কবুলের মাধ্যমঃ
  • দোয়া কবুলের একটি সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো তাহাজ্জুতের নামাজ। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, "তোমরা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ো, কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির সুন্নত ছিল এবং তোমাদের রবের কাছে তা একটি বড় মর্যাদা।"( সহীহ মুসলিম)
  • এছাড়া হাদিসে আরও এসেছে, " তাহাজ্জুদ নামাজে বান্দা যখন তার দোয়া ও মনের আকাঙ্ক্ষা আল্লাহর কাছে জানায়, তখন আল্লাহ তাকে অনেক বেশি দামে পূর্ণ করেন।" ( সহিহ বুখারী)
অসুস্থতা থেকে মুক্তি লাভঃ
  • মানুষের জীবনে কঠিন মুহূর্তে এক মহান উপশম হলো তাহাজ্জুতের নামাজ। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন যে ব্যক্তি রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে, তার কাছে আল্লাহ তায়ালা কোন বিপদ বা সমস্যা আসতে দেবেন না।" ( সহিহ মুসলিম)
  • এছাড়াও হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, "রমজানের পর রোজা রাখার উত্তম সময় মহররম মাস আর ফরজ নামাজের পর উত্তম নামাজ রাতের নামাজ অর্থাৎ তাহাজ্জুদ।" (সহিহ মুসলিম হাদিস২৭২৫)
মানসিক প্রশান্তি লাভের উপায়ঃ
  • নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে এটি হৃদয়কে শান্তি ও প্রশান্তিতে পরিপূর্ণ করে তোলে। কেননা যখন একজন মুমিন ব্যক্তি রাতে তাহাজ্জত নামাজের মাধ্যমে একাকী আল্লাহর সাথে কথা বলে তার মধ্যে এক ধরনের আধ্যাত্মিক প্রশান্তি চলে আসে।
প্রিয় বান্দার মর্যাদা লাভঃ
  • মহান আল্লাহতালা তাহাজ্জুদ নামাজ কে তার প্রিয় বান্দাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। রাসুলুল্লাহ ( সা:) বলেন, "তোমরা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ো, কেননা তা তোমাদের আগে সৎ লোকদের সুন্নত।" (সুনান তিরমিজি)
  • আবার হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, "ফরজ নামাজের পর সব নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হল তাহাজ্জুদ নামাজ তথা রাতের নামাজ।" (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)
নির্জন সময়ে আল্লাহকে স্মরণঃ
  • তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে বান্দা একাকী আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং তার স্মরণে মগ্ন থাকে। এতে সে অতি দ্রুত আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভ করে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, "রাতে উঠো এবং আমাকে স্মরণ করো, কেননা রাতের সময় ইবাদত করার মধ্যে মুমিনদের জন্য অনেক বড় উপকারিতা রয়েছে।" (সূরা আল দাহর, ৭৬:২৬)
জীবনের সফলতা ও উন্নতি লাভঃ
  • তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত এতটাই যে এটি আমাদের জীবনকে সর্বদা সফলতার দিকে পরিচালিত করে। যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহ তাআলা তাদের জীবনকে সুখী সফল ও শান্তিময় করে দেন।
  • পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন, "আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়বে। এটা তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব। অচিরেই তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।" (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত ৭৯)
পর্দার আড়ালে রহমত পাওয়াঃ
  • একটা হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, "আল্লাহ তাআলা প্রতিরাতে পৃথিবীর আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, 'কেউ কি আছে আমার কাছে কিছু চাওয়ার জন্য?' আমি তাকে তা দান করব।" (সহীহ বুখারী)
  • আবার হযরত আবু উমামা (রা:) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা:) বলেছেন," তোমরা কিয়ামুল লাইলের প্রতি যত্নবান হও। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী সালেহীন এর অভ্যাস এবং রবের নৈকট্য লাভের বিশেষ মাধ্যম। আর তা পাপরাশি মোচনকারী এবং গোনাহ থেকে বাধা প্রদানকারী।" (জামে তিরমিজি, হাদিস ৩৫৪৯)
  • এটি সেই সময় যখন আল্লাহ তার বান্দার নিকটে চলে আসেন, বান্দার দোয়া কবুল করেন এবং তাদের সকল গুনাহ মাফ করে মনের আশা পূর্ণ করেন।
জান্নাত লাভের উপায়ঃ
  • জান্নাত লাভের অন্যতম উপায় হল নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা। নবী কারীম (সা:) বলেছেন, "নিশ্চয়ই জান্নাতে রয়েছে এমন কিছু প্রাসাদ, যার বাইরে থেকে ভেতর অংশ দেখা যাবে, ভেতর থেকে বাইরের অংশ দেখা যাবে। এগুলো আল্লাহ তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন, যারা মানুষকে খাবার খাওয়ায়, কোমল ভাষায় কথা বলে, ধারাবাহিকভাবে রোজা রাখে, সালামের প্রসার ঘটায় এবং রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন তারা নামাজে দাঁড়িয়ে যায়।" ( মুসনাদে আহমাদ ২২৯০৫)
সম্মানিত পাঠক, সুতরাং বুঝতেই পারছেন তাহাজ্জুদ নামাজ একটি বিশেষ এবাদত। যা বান্দাকে মহান আল্লাহর কাছে পুরস্কৃত করার জন্য অন্যতম একটি উপায়। এই তাহাজ্জুদ নামাজ কেবলমাত্র একজন মুসলমানের জীবনে বরকতই আনয়ন করে না বরং তার ঈমান ও আধ্যাত্মিক উন্নতিতেও সাহায্য করে। তাই প্রত্যেক মুসলমানকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল এই প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। তাহলে জেনে রাখুন, আলেম-ওলামাদের মতে তাহাজ্জুদ নামাজের বিধান সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা বা নফল। সুতরাং তাহাজ্জুদ নামাজ বা রাতের নামাজ হলো একটি নফল ইবাদত। অর্থাৎ এই নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তবে ফরজ নয়। ফরজ নামাজের পর অন্যান্য সকল
 
সুন্নত এবং নফল নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সবচেয়ে বেশি। হাদিসে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তাহাজ্জুদ নামাজের উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা:) নিজে যেমন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেছেন, তেমনি তার সাহাবীদেরও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের প্রতি উৎসাহিত করেছেন।
তাহাজ্জুদ-নামাজের-সময়-ও-নিয়ম-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
আবার তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত এই অর্থে যে, রাসূলুল্লাহ (সা:) নিয়মিত পড়েছেন। কারণ, রাসুলুল্লাহ (সা:) এর যে কোন আমল যদি কোন বান্দা অনুসরণ করে তাহলে সেটি সুন্নাহ বলে গণ্য হয়। আবার ফরজ ছাড়া যতক্ষণ ইবাদত রয়েছে সবগুলোই নফল ইবাদতের মধ্যে পড়ে। সে হিসেবে মহান আল্লাহ তাআলা শুধুমাত্র পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকে ফরজ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। 
 
এছাড়া বাকি যত সালাত রয়েছে সবগুলো নফল। সে হিসেবে নফল সালাত হুকুমের মধ্যে আসেনি। কিন্তু ওলামায়ে কেরামগণ সুন্নাহকে হুকুমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আর হুকুম হলো বিধান। রাসুল ( সা:) এর সুন্নাহ মূলত দুই প্রকারের। এর একটি হলো সেই সুন্নাহ যার উপর অধিক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এবং অপরটি হল অতিরিক্ত সুন্নাহ হিসেবে যে সুন্নাহ প্রমাণিত হয়েছে। 
 
তাহাজ্জুদ হল এই পর্যায়ের একটি সালাত। সুতরাং তাহাজ্জুদ নামাজ নফল কারণ এটি ফরজ বা ওয়াজিব নয়। আবার যেহেতু রাসূল (সা:) এই সালাত আদায় করেছেন সেই হিসেবে এটি সুন্নাহ। তাহাজ্জুদ নামাজ ২ রাকাআত থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ রাকাআত পর্যন্ত পড়া যায়। যেহেতু তাহাজ্জুদ একটি নফল নামাজ সেহেতু আপনি আপনার ইচ্ছামত এর থেকে কম বেশি করে পড়তে পারেন। তবে সবচেয়ে উত্তম হলো ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত এটি জেনে রাখাও জরুরী। সাধারণভাবে এশার নামাজের পর থেকেই তাহাজ্জুদ নামাজের সময় শুরু হয় এবং এই সময় রাতের শেষ ভাগ পর্যন্ত থাকে। অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজের সময় এশার নামাজের পর থেকে রাতের শেষ তৃতীয়াংশে অর্থাৎ রাত ১২টা থেকে শুরু হয়ে ফজরের আজান পর্যন্ত চলতে থাকে।
 
এই নামাজ রাতের মাঝামাঝি সময়ে শুরু করতে হয় এবং ফজরের আজানের আগে শেষ করতে হয়। সে হিসেবে এই সময়টি আপনি রাত ১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ধরতে পারেন। তবে তাহাজ্জুদ নামাজের সবচেয়ে উত্তম সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। যেটি প্রায়ই রাত ৩টার দিকে শুরু হয় এবং ফজরের আজান পর্যন্ত থাকে। এই সময় তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া উত্তম

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কোন দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম এবং সময় সম্পর্কে জেনেছেন। কিন্তু তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কোন দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয় কেউ কেউ আবার তা জানতে চান। তাহাজ্জুদ নামাজের বিশেষ কিছু দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হতে পারে। কারণ, এই সময় আল্লাহর রহমত বিশেষভাবে বর্ষিত হয়। রাতের তৃতীয় প্রহরে সমস্ত পৃথিবী যখন নীরব এবং মানুষ ঘুমিয়ে থাকে,
 
ঠিক তখন আল্লার প্রতি বান্দার প্রার্থনা বিশেষভাবে কবুল হয়ে যায়। এই সময় দোয়া করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া হলো- "আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিসমিকাল আযীম আল আ'যম।" এর অর্থ হল, "আল্লাহ যেই নামের মাধ্যমে তোমার কাছে ডাকা হলে তুমি উত্তর দাও, যে নামের মাধ্যমে চাওয়া হলে তুমি দান করো
 
এবং যে নামের মাধ্যমে অনুগ্রহ করা হলে তুমি রহমত করো, তুমি আমার গুনাহ মাফ করো, আমাকে রহমত দাও, আমার কাজ সহজ করো এবং আমার দোয়া কবুল করো।" এই দোয়াটি তাহাজ্জুদ নামাজের শেষ রাকাআতের পর পড়লে আল্লাহর কাছ থেকে মনের সকল ইচ্ছা পূরণের জন্য রহমত প্রাপ্তি সম্ভব।

মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজ কখন পড়বেন এবং এই নামাজের নিয়ম সম্পর্কে আপনি ইতিমধ্যেই অবগত হয়েছেন। কিন্তু মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম কি আলাদা? অনেকেই তা জানতে চান। এর উত্তর হল না। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে একই রকম। তেমন কোন পার্থক্য নাই বললেই চলে। 
 
অর্থাৎ আপনি দুই রাকাআত, দুই রাকাআত করে মোট ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারেন। একান্তই যদি সময় না থাকে সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র ২ রাকাআত নামাজ আদায় করলেই চলবে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) কমপক্ষে ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তবে মহিলাদের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেমন-
  • পবিত্রতাঃ নামাজ পড়ার পূর্বে অবশ্যই পবিত্রতা বজায় রাখতে হবে। যেমন- ওযু করা কিংবা পোশাক পরিচ্ছদ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
  • পোশাক পরিচ্ছদঃ মহিলাদের নামাজ আদায়ের সময় শরীর পুরোপুরি আবৃত রাখতে হবে। অর্থাৎ সালাতের সময় পর্দা রক্ষা করার জরুরী। বিশেষ করে মাথা, গলা ও বুক হিজাব বা কাপড় দ্বারা আবৃত থাকবে। মহিলাদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যেন নামাজের সময় শালীনতা বজায় থাকে।
  • পিরিয়ড জনিত সমস্যাঃ মহিলাদের পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে অথবা সন্তান ধারণকারী সময়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় না করলেও চলবে। বরং এই সময় তাদের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ, এই সময় নামাজ পড়লে নামাজ মঞ্জুর হয় না।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও নিয়ম সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজ অন্যতম। তাহাজ্জুদ নামাজ মুসলিমদের জন্য বিশেষ মর্যাদা ও বরকতের এক উৎস। যে নামাজের মাধ্যমে একজন মুসলমান ব্যক্তি মহান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের সুযোগ পায়।
 
কুরআন ও হাদিসেও তাহাজ্জুদ নামাজের বিশেষ গুরুত্ব বর্ণিত আছে। সুতরাং এক কথায় বলতে গেলে তাহাজ্জুদ নামাজ হল আত্মবিশ্বাস, শান্তি এবং আল্লাহর কাছাকাছি আসার একটি পথ। তাই আসুন আজ থেকে আমরা নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার অভ্যাস গড়ে তুলি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url