পাকা কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে বিস্তারিত পড়ুন

পাকা কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি অবগত আছেন? কাঁঠাল পাতার উপকারিতা ঠিক কি কি জানতে চান?  বাংলাদেশে যত ফলমূল রয়েছে তার মধ্যে পুষ্টিগুণের দিক থেকে কাঁঠাল রয়েছে একেবারে উপরের সারিতে। 
পাকা-কাঁঠালের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-জানতে-বিস্তারিত-পড়ুন
সুমিষ্ট এই ফলটি প্রচুর পুষ্টিগুণে ঠাসা। কাঁঠাল খাওয়ার বিভিন্ন উপকারী ও অপকারী দিক এবং কাঁঠাল পাতার বেশ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে আজ আমরা আলোচনা করবো। সাথে আরো আলোচনা করবো কাঁঠালের মুচি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ পাকা কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা

পাকা কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা

পাকা কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি, আবার অনেকেই জানিনা। অথচ পুষ্টিকর ও সুস্বাদু এই ফলটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার বয়ে আনে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, থায়ামিন, নায়াসিন ফাইবার, শ্বেতসার, ফসফরাস রিবোফ্ল্যাভিন এবং জলীয় অংশ রয়েছে।
 
যা আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। পাকা কাঁঠালে থাকা ফাইবার পেটের হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পাকা কাঁঠাল শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়ক। কারণ, এতে প্রাকৃতিক চিনি ও কার্বোহাইড্রেট রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। আবার পাকা কাঠাল হাড় শক্ত করতেও পারে। 
 
কারণ, এতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে। শুধু কি তাই, ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও পাকা কাঁঠাল বেশ উপকারী। এছাড়াও পাকা কাঠালে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধে মুখ্য ভূমিকা রাখে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এর কিছু অপকারিতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে পেটে গ্যাস অম্বলের সমস্যা হতে পারে। 
 
তাছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও অতিরিক্ত কাঁঠাল খাওয়া ঠিক নয়। কারণ, এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। কখনো কখনো অতিরিক্ত কাঁঠাল খেলে আবার শরীরে অ্যালার্জি বা চুলকানিও হতে পারে। আবার যাদের হজম শক্তি দুর্বল তারা অতিরিক্ত কাঁঠাল খেলে পেট ফাঁপা বা বমির মত সমস্যায় পড়তে পারেন। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও কাঁঠাল খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।
 
যেহেতু এই ফলটি শরীরকে গরম করে, তাই অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে গ্রীষ্মকালে আপনার শারীরিক অস্বস্তি হতে পারে। তবে সব কিছু বিবেচনা করলে, পরিমিত পরিমাণে পাকা কাঁঠাল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত খাওয়া ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই আপনার শারীরিক অবস্থা বুঝে নিয়ম মেনে সীমিত পরিমানে কাঁঠাল খাওয়ার চেষ্টা করুন।

পাকা কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা

পাকা কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা অনেক, এর অপকারিতার থেকে। জাতীয় ফল কাঁঠাল খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টি গুণেও পরিপূর্ণ। ছোট থেকে বড় আমাদের সকলের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এই ফলটি। আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে নিই আমাদের দেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে-

  • শক্তির প্রধান উৎসঃ পাকা কাঁঠাল আমাদের শরীরে প্রাকৃতিক শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে। কারণ, এটি প্রাকৃতিক সুগার এবং কার্বোহাইড্রেটে ভরপুর। ফলে কাঁঠাল খেলে এটি শরীরের দ্রুত শক্তি যোগায় এবং শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করে। বিশেষ করে খেলাধুলা বা শারীরিক পরিশ্রমের পরে কাঁঠাল খেলে এটি শরীরে দ্রুত শক্তির যোগান দিতে পারে।
  • হজমের জন্য উপকারীঃ পাকা কাঁঠালে থাকা ডায়েটারি ফাইবার যেমন হজম শক্তি বাড়ায়, তেমনি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। আপনার যদি পেটে হজমের সমস্যা থাকে কিংবা বদহজম হয় তাহলে পাকা কাঁঠাল খেতে পারেন। কারণ, এটি অন্ত্র পরিষ্কার রাখে এবং ডাইজেস্টিভ এনজাইম সক্রিয় করে।
  • রোগ প্রতিরোধী শক্তিঃ পাকা কাঁঠাল প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। ফলে কাঁঠালের মৌসুমে নিয়মিত পাকা কাঁঠাল খেলে এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এতে করে ঠান্ডা, কাশি ভাইরাসজনিত রোগ, ইনফেকশন ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা যায়।
  • চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ চোখের যে কোন ধরনের সমস্যা বিশেষ করে চোখের দুর্বল দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে কাজ করে পাকা কাঁঠাল। কারণ, এই ফলটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ও ভিটামিন এ রয়েছে। যা আমাদের চোখের কর্নিয়ার জন্য উপকারী।
  • ত্বক ও চুলের জন্য উপকারীঃ আমাদের ত্বক ও চুলের জন্যও উপকারী পাকা কাঁঠাল। কারণ, এতে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই রয়েছে। এই দুটি উপাদানই আমাদের ত্বকের কোষ মেরামত করে এবং কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। একই সাথে চুলের গোড়া মজবুত করে এবং অকালে চুল পড়া বন্ধ করে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ পাকা কাঁঠাল একাধারে ওজন বাড়াতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। আপনারা যারা ওজন বাড়াতে চান তাদের জন্য আদর্শ ফল হতে পারে কাঁঠাল। কারণ, এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি এবং প্রাকৃতিক সুগার রয়েছে। আবার পাকা কাঁঠালে খাদ্য আঁশ রয়েছে যথেষ্ট। যা খেলে দীর্ঘক্ষন আপনার ভরা থাকবে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রতি প্রবণতাও কমবে। ফলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
  • হৃদযন্ত্রের সুস্থতায়ঃ হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে পাকা কাঁঠালের ভূমিকা অনবদ্য। কারণ, এতে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদপিন্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপ কমায়। তাছাড়া এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান হৃদরোগের ঝুঁকিও হ্রাস করে।
  • শরীরে রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করেঃ রক্তস্বল্পতায় ভুগলে আপনি নিয়মিত পাকা কাঁঠাল খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ, পাকা কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ফলেট থাকে। যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়। তাছাড়া মা-বোনদের মাসিক ও গর্ভাবস্থায়ও পাকা কাঁঠাল বিশেষভাবে উপকারী।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারীঃ যদিও পাকা কাঁঠালে প্রাকৃতিক সুগার থাকে এবং খেতে মিষ্টি, তবুও কাঁঠালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তুলনামূলকভাবে কম থাকে। ফলে পরিমিত পরিমাণে খেলে একটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয় বরং উপকারী হতে পারে। আরেকটি কথা, ডায়াবেটিস রোগীরা পাকা কাঁঠাল খেলে এ সময় অন্য কোন শর্করা জাতীয় খাবার খাবেন না।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেঃ নিয়মিত নিয়ম মেনে পাকা কাঁঠাল খেলে এটি আমাদের শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। কারণ, এতে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, ফ্লাভোনয়েডস্ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ করে। ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
  • মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার প্রয়োজনীয় দুটি উপাদান ম্যাগনেসিয়ামিন ও থায়ামিন। এই দুটি উপাদানই আপনি পেয়ে যাবেন পাকা কাঁঠালে। ম্যাগনেসিয়াম ও থায়ামিন থাকায় এটি স্নায়ু শান্ত রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়। ফলে ঘুম ভালো হয়।
  • হাড় মজবুত ও শক্তিশালী করেঃ পাকা কাঠালের পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস থাকার কারণে এটি আমাদের শরীরে হাড় গঠনে সাহায্য করে। সাথে এটি হাড় মজবুত ও শক্তিশালী করে তোলে। সুতরাং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধেও বেশ কার্যকরী এই পাকা কাঠাল।
  • ব্রণ ও চর্মরোগ প্রতিরোধেঃ ত্বকের ব্রণ ও চর্মরোগ প্রতিরোধেও পাকা কাঁঠাল উপকারী।আপনার ত্বকের যেকোনো চর্মরোগ প্রতিরোধে এবং ত্বক থেকে ব্রণ, ব্রনের কালো দাগ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন পাকা কাঁঠালের ফেসপ্যাক।
  • কিডনি ও লিভারকে ডিটক্স করেঃ পাকা কাঁঠাল খাওয়ার ফলে এর ডায়েটারি ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিডনি ও লিভার পরিষ্কার রাখে। সাথে কিডনি ও লিভার থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয়।
  • গর্ভাবস্থায় উপকারীঃ গর্ভাবস্থায় পাকা কাঁঠাল খাওয়া উপকারী। কিন্তু নিয়ম মেনে সীমিত পরিমানে খেতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় ফলে এবং আয়রন এই দুটি উপাদান একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভস্থ ভ্রুনের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। যা পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে পাকা কাঁঠালে।
  •  গর্ভাবস্থায় পাকা কাঁঠাল খেলে এটি ভ্রুনের সঠিক বিকাশে সহায়তা করে, মায়ের শরীরে রক্ত তৈরি করে এবং গর্ভকালীন সকল জটিলতা দূর করে। তাছাড়া স্তন্যদানকারী মায়েরা নিয়মিত তাজা পাকা কাঁঠাল খেলে বুকে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
পাকা-কাঁঠালের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-জানতে-বিস্তারিত-পড়ুন
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ আপনাদের যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে অল্প পরিমাণে পাকা কাঁঠাল খেতে পারেন। কারণ, পাকা কাঁঠাল খেলে রক্তচাপ অনেকটাই স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • অ্যান্টি এজিং প্রভাবঃ অ্যান্টি এজিং এর প্রভাব আমাদের ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ কমায়, ত্বকের বলিরেখা দূর করে এবং তারুণ্য ধরে রাখে। যার পুরোটাই আপনি পেতে পারেন পাকা কাঁঠাল খাওয়ার মাধ্যমে।
  • শ্বাসযন্ত্র সুরক্ষিত রাখেঃ পাকা কাঁঠালের সাথে বিভিন্ন ভিটামিন ও অন্যান্য খনিজ উপাদান ঠান্ডা কাশি বিভিন্ন ফ্লু থেকে তো রক্ষা করেই, সাথে ফুসফুসের সংক্রমণে রোধেও সহায়তা করে।
  • পিরিয়ডের সমস্যা দূর করেঃ মা বোনদের পিরিয়ড চক্র নিয়মিত রাখতে প্রয়োজন ভিটামিন বি-৬। এই উপাদানটি মহিলাদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো কাজ করে। সুতরাং পিরিয়ড জনিত সমস্যা সমাধানে আপনি খেতে পারেন পাকা কাঁঠাল।
  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ পাকা কাঁঠালে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বিশেষ করে থায়ামিন ও নিয়াসিন মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলিকে বেশ সক্রিয় সতেজ রাতে সাহায্য করে। ফলে স্মৃতিশক্তি স্বাভাবিকভাবেই আগের তুলনায় বৃদ্ধি পায়।
  • বমি বমি ভাব ও গ্যাস্ট্রিক দূর করেঃ আপনি জেনে অবাক হবেন যে, পাকা কাঁঠালের রস বমি বমি ভাব কমাতে এবং এসিডিটির সমস্যায় বিশেষভাবে উপকারী।
  • শিশুদের পুষ্টিতে সহায়কঃ শিশুদের জন্যও পাকা কাঁঠাল, পুষ্টিকর, এনার্জি বুস্টিং এবং উপকারী একটি ফল। কারণ, এতে যে ফাইবার ও ভিটামিন রয়েছে তা শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া আপনার শিশুর বয়স যদি ৬ মাস পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে ৬ মাস বয়সের পর থেকে আপনার শিশুকে কাঁঠালের রস খাওয়াতে পারেন। এতে আপনার শিশুর অতিরিক্ত ক্ষুধা যেমন নিবারণ হবে তেমনি অন্যদিকে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হবে।
  • রক্ত পরিষ্কার রাখেঃ রক্ত পরিশুদ্ধ করতেও পাকা কাঠাল দারুন কার্যকরী। এতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তের বিষাক্ত টক্সিন দূর করে। ফলে পাকা কাঁঠাল খেলে একদিকে রক্ত যেমন পরিশুদ্ধ হয় তেমনি অন্যদিকে পুরো শরীর সুস্থ থাকে।
  • রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করেঃ কাঁঠালে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, যা আমাদের রক্তে শর্করা বা সুগারের পরিমাণ খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
  • অনিদ্রা রোগ দূর করেঃ পাকা কাঁঠালে থাকা ম্যাগনেসিয়াম উপাদানটি আমাদের শরীরকে শিথিল করতে সাহায্য করে। ফলে ঘুম ভালো হয়। তাই ঘুমের সমস্যা সমাধানে আপনি নিশ্চিন্তে পাকা কাঁঠাল খেতে পারেন।
  • হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করেঃ থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো কপার। ঠিক সে কারণেই কাঁঠালে থাকা কপার থাইরয়েড গ্রন্থি ভালো রাখতে সক্ষম।
  • পাইলস দূরে রাখেঃ পাইলসের কষ্ট সেই বোঝে যে এর ভুক্তভোগী। পাইলসের এই যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনি কাঁঠাল খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ, নিয়মিত পাকা কাঁঠাল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। যার ফলে পাইলস কোনভাবেই বাড়তে পারে না। সেই সাথে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে।
  • কোলেস্টেরল মুক্তঃ কাঁঠালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি-৬ হয় এবং ক্যালরি থাকলেও এতে কোলেস্টেরল নেই বললেই চলে। সুতরাং কাঁঠাল খেলে আপনার কোলেস্টেরল তো বাড়বেই না বরং উপকার মিলবে।
  • রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ঠিক রাখেঃ কাঁঠালে থাকা ক্যালসিয়াম শুধুমাত্র হাড়ের গঠনে কাজ করে না বরং এটি আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করে।
  • দাঁতের মাড়ি শক্ত করেঃ কাঁঠালে যেহেতু ভিটামিন সি রয়েছে, ফলে পাকা কাঁঠাল খেলে এটি আমাদের দাঁতের জন্য উপকারী। বিশেষ করে দাঁতের মাড়ি শক্ত করে।
  • শারীরিক প্রদাহ কমায়ঃ কাঁঠালে থাকে ক্যারোটিনয়েড। এই উপাদানটি আমাদের শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এবং হৃদ রোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়।

কাঁঠাল খেলে কি ক্ষতি হয়

কাঁঠাল খেলে কি ক্ষতি হয় সেটিও আমাদের জেনে রাখা জরুরী। পাকা কাঁঠালের শুধু উপকারীতাই নয় বরং এর বেশ কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। বিশেষ করে আপনি যদি নিয়ম না মেনে খান সেক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো বেশি দেখা দেয়। এবার চলুন জেনে নিই অতিরিক্ত পাকা কাঁঠাল খেলে আপনার কি কি ক্ষতি হতে পারে-

  • বদহজমঃ কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় অতিরিক্ত খেলে আপনার স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। ফলে পেট ভারী হয়ে থাকা, অস্বস্তি অনুভব করা এমনকি বুকে জ্বালা পোড়াও হতে পারে।
  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাঃ ফাইবার ও সুগার বেশি থাকায় অতিরিক্ত কাঁঠাল খেলে অন্ত্রে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি হয়। যা আপনার পেট ফাঁপার কারণ হতে পারে।
  • ডায়রিয়ার সমস্যাঃ মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে কাঁঠাল খেলে থাকা ফাইবার আপনার অন্ত্রে গিয়ে মল নরম করে ফেলতে পারে। এতে আপনার ডায়রিয়াও হতে পারে।
  • ডায়াবেটিসে ঝুঁকিপূর্ণঃ পাকা কাঁঠাল যেহেতু প্রাকৃতিক সুগারে ভরপুর। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা অতিরিক্ত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে। তাই পাকা কাঁঠাল খাওয়ার পরে ওই দিন অন্তত শর্করা জাতীয় খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
  • এলার্জিঃ পাকা কাঁঠাল খেলে অনেক সময় এলার্জিও হয়। তবে সবার ক্ষেত্রে না। বিশেষ করে যারা কাঁঠালের প্রতি খুব সংবেদনশীল তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। অতিরিক্ত কাঁঠাল খেলে শরীর ফোলা ভাব, শ্বাসকষ্ট, ত্বকে চুলকানি ইত্যাদি এলার্জির প্রতিক্রিয়া আপনার শরীরে পরিলক্ষিত হতে পারে।
  • ওজন বাড়তে পারেঃ যারা ওজন কমানোর জন্য ডায়েটে আছেন তাদের অতিরিক্ত কাঁঠাল খাওয়া মোটেও উচিত না। কারণ, কাঁঠাল প্রচুর পরিমাণ ক্যালরিতে ভরপুর। অতিরিক্ত খেলে আপনার শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা হয়ে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে কাঁঠাল খাওয়ার সাথে সাথে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করলে তাতে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারেঃ যদিও কাঁঠাল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, কিন্তু কাঁঠাল খাওয়ার পরে আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে না খান সেক্ষেত্রে উল্টো আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। কারণ, কাঁঠালে যেহেতু প্রচুর ফাইবার থাকে ঠিক সে কারণে অতিরিক্ত ফাইবার গ্রহণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যায়।
  • ত্বকে ফুসকুড়ি বা ব্রনের সমস্যাঃ কাঁঠাল যেহেতু গ্রীষ্মকালীন একটি ফল, ফলে স্বাভাবিকভাবে অতিরিক্ত কাঁঠাল খেলে শরীরে গরম ভাব সৃষ্টি হয়। এতে করে আপনার ত্বকে ব্রণ ফুসকুড়ি উঠতে পারে।
  • মাইগ্রেনের সমস্যাঃ কাঁঠালের কিছু বায়ু একটিভ উপাদান যেমন টায়ামিন বা টিরামিন থাকে, যা মাইগ্রেন প্রবন মানুষদের মাথা বথা বাড়াতে পারে।
  • অতিরিক্ত তন্ত্রাভাবঃ পাকা কাঁঠাল অতিরিক্ত খেলে আপনার ঘুম স্বাভাবিকের থেকে বেশি হতে পারে। কারণ, কাঁঠালে ট্রিপটোফ্যান থাকে, যা অতিরিক্ত খেলে শরীরে ঘুমের ভাব তৈরি হয়।
  • রক্তচাপ কমে যেতে পারেঃ কাঁঠাল প্রাকৃতিকভাবে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু অতিরিক্ত খেলে বিপদজনকভাবে আপনার রক্তচাপ আরো কমে যেতে পারে। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরিমিত পরিমাণে কাঁঠাল খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • হরমোনের ভারসাম্যতাঃ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁঠালের কিছু যৌগ এস্ট্রোজেনের মত আচরণ করতে পারে। যা অতিরিক্ত খেলে আপনার শরীরে হরমোনাল ভারসাম্যহীনতা ঘটতে পারে।
  • লিভারে চাপ বাড়েঃ অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার লিভারের ওপর চাপ তৈরি করে। ফলে আপনারা যারা সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য কাঁঠাল খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। সেদিকে খেয়াল রাখাটাও জরুরী।
  • রেনাল স্ট্রেস বা কিডনির উপর চাপঃ কাঁঠালে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি যা অতিরিক্ত খেলে আপনার কিডনির ওপর এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে যারা কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা কাঁঠাল সীমিত পরিমানে খাবেন।
  • মলদ্বারে চুলকানিঃ কাঁঠাল অতিরিক্ত ফাইবার এবং গরম প্রকৃতির ফল হওয়ায় খুব বেশি পরিমাণে খেলে কখনো কখনো মলদ্বারে জ্বালাপোড়া বা চুলকানিও হতে পারে।
  • সার্জারির পরঃ কাঁঠাল ক্ষতিকর যে কোন সার্জারির পরে কাঁঠাল খেলে আপনার বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ, সার্জারির পর প্রত্যেকটা রোগীকেই কিছু না কিছু ঔষধ দেওয়া হয়। কাঁঠাল খেলে সেসব ঔষধ কাঁঠালের সাথে বিক্রিয়া করে ঔষধের কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে। তাই চেষ্টা করবেন সার্জারির আগে এবং পরে কাঁঠাল না খেতে। 
  • গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর হতে পারেঃ গর্ভকালীন সময়ে কাঁঠাল খেলে খুব বেশি সমস্যা হয় না বরং মা এবং তার অনাগত সন্তানের জন্য কাঁঠাল উপকারি। কিন্তু অতিরিক্ত খেলে আপনার গর্ভকালীন জটিলতা বাড়তে পারে। তাই এই সময় চেষ্টা করবেন খুব অল্প পরিমাণে কাঁঠাল খাওয়ার। বিশেষ করে ব্রেস্ট ফিডিং করানোর সময় অতিরিক্ত কাঠাল কখনোই খাবেন না।
  • রক্ত সংক্রান্ত রোগঃ আপনাদের যাদের রক্ত সংক্রান্ত কোনো রোগ আছে তারা কাঁঠাল একেবারেই খাওয়া উচিত না। এতে রক্ত সংক্রান্ত জটিলতা আরো বেড়ে যাবে।
কাঁঠাল খাওয়ার পর যেসব খাবার খাবেন নাঃ
  • ঢেঁড়সঃ কাঁঠাল খাওয়ার পর ঢেঁড়স কিংবা ঢেঁড়স দিয়ে কোন সবজি খাওয়া ঠিক না। কারণ, কাঁঠালে থাকা অক্সালেট ঢেঁড়সের সাথে মিশে আপনার ত্বকে ফুসকুড়ি কিংবা ত্বক জ্বালাপোড়ার মত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • পানঃ যাদের প্রতিবেলা খাবার খাওয়ার পর পান খেতে অভ্যস্ত তাদের বলব কাঁঠাল খাওয়ার পর অন্তত পান খাওয়া এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে পাকা কাঁঠাল খাওয়ার পরে পান খাবেন না। কারণ, কাঁঠালের মধ্যে থাকা অক্সালেট আপনার পানির সাথে মিশে পেটের সমস্যা করতে পারে।
  • পেঁপেঃ কাঁঠাল খাওয়ার পর পেঁপে বা পেঁপে দিয়ে রান্না করা কোন সবজি খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ, পেঁপেতে থাকা ক্যালসিয়াম আর কাঁঠাল এ থাকা অক্সালেট এই দুটো উপাদান একসাথে মিশে আপনার পেটে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।
  • দুধঃ কাঁঠাল খাওয়ার পর গরুর দুধও এড়িয়ে চলুন। কারণ কাঁঠাল খাওয়ার পর পর দুধ খেলে আপনার বমি বমি ভাব হতে পারে। এমনকি এসিডিটি ও হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাথে ত্বকে সাদা সাদা দাগও হতে পারে।
  • মধুঃ অনেকেই আছেন যারা কাঁঠাল খাওয়ার পর মধু খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ, কাঁঠাল খাওয়ার পর পর বা কাঁঠাল খাওয়ার সাথে মধু খেলে তাতে রক্তের শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে।
প্রিয় পাঠক, জানিয়ে দিলাম কাঁঠাল খাওয়ার বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। এই ক্ষতিকর দিকগুলোর কথা মাথায় রেখে আপনি আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা বুঝে প্রতিদিন নিয়ম করে সীমিত পরিসরে কাঁঠাল খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাতে ভালো উপকার মিলবে।

কাঁঠাল পাতার উপকারিতা

কাঁঠাল পাতারও রয়েছে বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা। শুনে নিশ্চয় অবাক হয়েছেন! অবাক হলেও সত্যি। কাঁঠাল এমন একটি গাছ যার পাতা, ফল, বিচি কোন কিছুই ফেলনা নয়। আবার কাঁঠাল গাছের পাতা শুধুমাত্র সৌন্দর্য বর্ধক হিসেবেই নয় বরং ভেষজ উপাদান হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদিক ও প্রাচীন চিকিৎসা বিদ্যায় কাঁঠাল পাতার ব্যবহার চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। তাহলে চলুন এবার পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন-
  • অ্যান্টি ডায়াবেটিস যৌগঃ কাঁঠাল পাতায় থাকা বিশেষ ধরনের অ্যান্টি ডায়াবেটিস যৌগ ইনসুলিন নিঃসরণে সহায়তা করে। এটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া বছরের পর বছর ধরে কাঁঠাল পাতার রস বা শুকনো গুঁড়ো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
  • হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়কঃ কাঁঠাল পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্লাবণয়েডস যা শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে। তাছাড়া এটি হৃদপিণ্ডে প্লাক জমতে বাধা প্রদান করে। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।
  • দাঁতের সমস্যায় কার্যকরঃ আপনাদের যাদের দাঁতের সমস্যা আছে অর্থাৎ দাঁতের ব্যথা কিংবা দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া তারা নিশ্চিন্তে কাঁঠালের পাতা ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, কাঁঠাল পাতা চিবালে বা তার নির্যাস ব্যবহার করলে তাদের মাড়ি শক্ত হয় এবং দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ হয়। আবার এতে প্রাকৃতিক এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকার কারণে মুখগহ্বরের জীবাণু দূর হয়।
  • ব্রংকাইটিস ও হাঁপানিতে উপকারীঃ আপনাদের যাদের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য প্রাকৃতিক একটি ভেষজ উপাদান হলো কাঁঠালপাতা। কারণ, কাঁঠাল পাতার নির্যাস শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ গ্রাস করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এটি মিউকাস কমায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ করে তোলে।
  • চুল পড়া ও খুশকি প্রতিরোধেঃ খুশকি থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন কাঁঠাল পাতার নির্যাস। কারণ, কাঁঠাল পাতার নির্যাস মাথায় ব্যবহার করলে স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বেড়ে যায় এবং তা অতিরিক্তচুল পড়া রোধ করে। এটি খুশকি প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
  • ত্বকের যত্নেঃ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কাঠাল পাতা ত্বকে ব্যবহার করলে এটি আমাদের ত্বক থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং সেই সাথে ত্বকের ব্রণ ফুসকুড়ি রেস ইত্যাদি প্রতিরোধে সাহায্য করে। সুতরাং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে আপনি কাঁঠাল পাতার পেস্ট বানিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।
  • জ্বর কমাতেঃ সহায়ক আপনি কি জানেন, গ্রাম্য চিকিৎসায় এখনো কাঁঠাল পাতার রস পানির সাথে সিদ্ধ করে ব্যবহৃত হয় জ্বর কমাতে। কারণ এই পাতার ঠান্ডা প্রকৃতি শরীরের তাপমাত্রা কমাতে খুব ভালো কাজ করে।
  • পাকস্থলীর সমস্যা দূর করেঃ এসিডিটি, গ্যাস, অম্বল, হজম শক্তির সমস্যা ইত্যাদি দূর করতে পারে কাঁঠাল পাতার নির্যাস। নিয়মিত এই পাতার রস খেলে পাচনতন্ত্র সুস্থ থাকে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়কঃ কাঁঠাল পাতায় থাকা ফাইটোকেমিক্যাল এবং পলিফেনলস আমাদের শরীরের কোষে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্থ করে।
  • ক্ষতস্থানে ব্যবহারঃ শরীরের যে কোন ক্ষতস্থানে কাঠাল পাতা থেঁতলে লাগালে তাতে ক্ষতস্থানের প্রদাহ কমে এবং ব্যাথার উপশম হয়। তাছাড়া কাঁঠাল পাতায় জীবাণু নাশক গুণ থাকায় এটি ব্যবহার করলে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম থাকে।
  • বাড়তি আয়ের সুযোগঃ কাঁঠাল গাছের পাতা দিয়ে বাড়তি আয় করাও সম্ভব। কারণ, কাঁঠাল বছরে একবার ফলন হলেও কাঁঠালের পাতা সারা বছরব্যাপী বিক্রি করে কৃষকরা বাড়তি আয়ের সুযোগ পায়।
  • ছাগলের খাবারঃ কাঁঠালপাতা ছাগলের খাবার উপযোগী একটি খাদ্য উপাদান হল কাঁঠালের পাতা। বিশেষ করে এটি ছাগলের খুবই পছন্দের একটি খাবার। আবার কাঁঠাল পাতা বেশি খেলেও ছাগলের কোন সমস্যা হয় না বরং পাচনক্রিয়া উন্নত হয় এবং হজম ভালো হয়। সাথে ছাগলের মুখে রুচি বাড়ে এবং মাংসপেশিও শক্তিশালী হয়।

কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম

কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম কি কি? পাকা কাঁঠালের উপকারিতা পেতে এবং অপকারিতা এড়াতে আপনাকে বেশ কিছু নিয়ম মেনে কাঁঠাল খেতে হবে। নিয়ম গুলো হল-
  • পাকা কাঁঠাল নির্বাচন করুনঃ পাকা কাঁঠাল খাওয়ার সময় আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে কাঁঠালটি যেন অতিরিক্ত নরম বা পঁচা না হয়। কাঁঠাল কাটার পর খোলা অবস্থায় খুব বেশিক্ষণ রাখবেন না। আর ফ্রিজে রাখতে হলে কাঁঠালের কোয়া আলাদা করে বক্সে রেখে দিন।
  • পরিমাণ মতো খাওয়াঃ পাকা কাঠাল অত্যন্ত সুস্বাদু এবং মিষ্টি স্বাদ যুক্ত হওয়ায় আমরা অনেক সময় বেশি খেয়ে ফেলি। তবে এতে প্রাকৃতিক সুগার থাকার কারণে অতিরিক্ত খেলে গ্যাস্ট্রিক বা পেট ফুলে যাওয়া, ডায়রিয়া, রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণের ফলে ওজনও বেড়ে যেতে পারে।
  • কাঁঠাল খাওয়ার পরিমাণঃ যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ব্যক্তি অর্থাৎ যাদের ডায়াবেটিস, প্রেসার, ক্রনিক রোগ কিংবা কোলেস্টেরলের কোন সমস্যা নেই তারা প্রতিদিন অনায়াসে ২-৩ বা ৫-৬ কোয়া কাঁঠাল খেতেই পারেন। তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের কাঁঠাল খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে কাঁঠাল খাওয়া উচিত। কারণ, এটি একটি মিষ্টি ফল। আর খেলেও আপনি ঐদিন যে কোনো শর্করা জাতীয় খাবার বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
  • খালি পেটে কাঁঠাল খাওয়া এড়িয়ে চলুনঃ খালি পেটে কাঁঠাল খেলে আপনার শরীরের স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হতে পারে। ফলে গ্যাসের সমস্যা এবং পাকস্থলীতে অস্বস্তি তৈরি হতে পারে। তাছাড়া খালি পেটে মিষ্টি ফল খেলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রাও দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। তাই চেষ্টা করবেন খালি পেটে কাঁঠাল না খেয়ে খাবার খাবার অন্তত ১-২ ঘন্টা পর খেতে।
  • পানি খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকুনঃ অনেক সময় কাঁঠাল খাওয়ার পর পরই ঠান্ডা পানি খেলে পেটে ব্যথা, পেট ফোলা, এমনকি সর্দি কাশিও হতে পারে। কারণ কাঁঠাল একটি গরম প্রকৃতির ফল। তাই কাঁঠাল খাওয়ার সাথে সাথে ঠান্ডা পানি খেলে শরীরের ভেতরে সাময়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। ঠিক সে কারণে আপনি কাঁঠাল খাওয়ার অন্তত ২০-৩০ মিনিট পর পানি পান করুন। যদি খুবই পিপাসা লাগে সেক্ষেত্রে পানি হালকা কুসুম গরম করে পান করতে পারেন।
  • রাতে কাঁঠাল না খাওয়াই ভালোঃ রাতে কাঁঠাল খাওয়া আপনার হজমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। কারণ রাতে শরীরের বিপাক ক্রিয়া দিনের তুলনায় ধীরগতির হয়। ফলে কাঁঠালের মত ভারী ফল ঠিকমতো হজম হতে চায় না। এর ফলে আপনার পেট ফাঁপা, বুক জ্বালাপোড়া, গ্যাস-অম্বল হতে পারে। সে হিসেবে কাঁঠাল খাওয়ার উপযুক্ত সময় হল সকাল বা বিকেলের দিকে।
  • কাঁঠালের সাথে অন্যান্য খাবার না খাওয়াঃ বেশ কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো পাকা কাঁঠাল খাওয়ার পর পর খাওয়া বারণ। বিশেষ করে দুধ, ঢেড়স,মধু, পেঁপে এবং পান এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। আর খেলেও কাঁঠাল খাওয়ার অন্তত এক ঘন্টা পরে খেতে পারেন।
প্রিয় পাঠক, জানিয়ে দিলাম কাঁঠাল খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম সম্পর্কে। কাঁঠাল খাওয়ার সময় উপরে উক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে আপনার শরীর পাবে উপকার আর না মানলে হতে পারে বিপরীত ফল। তাই পরিমাণ মতো খাওয়া, সময় মত খাওয়া এবং খাওয়ার পর কিছু নিয়মমেনে চলা এই ছোট বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন।

কাঁঠালের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা

কাঁঠালের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা দুটো দিকই রয়েছে। অনেকেই আছেন যারা পাকা কাঁঠাল খেতে পছন্দ করেন না কিন্তু এর বিচি খেতে পছন্দ করেন। কাঁঠালের এই ভরা মৌসুমে আপনি কাঁঠাল না খেলেও এর বিচি খেতে পারেন। বাজারে কাঁঠালের বিচি কেজি দরে বিক্রি করতেও দেখা যায়। কাঁঠালের বিচির রয়েছে বাদামের মতো টেক্সচার।
তাছাড়া বর্ষাকালে আগুনে সেকা কাঁঠালের বিচি আর চা হলে বিকেলের রাস্তায় আর কিছুই লাগেনা। প্রিয় পাঠক, এবার চলুন জেনে নেই কাঁঠালের বিচি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে-
কাঁঠালের বিচি খাওয়ার উপকারিতাঃ
  • পুষ্টি উপাদানঃ প্রথমেই জানিয়ে দিই কাঁঠালের বিচি পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে। কাঁঠালের বিচি পুষ্টি উৎপাদনে ভরপুর। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মিনারেল ভিটামিন স্টার্চ এবং প্রোটিন রয়েছে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে এক আউন্স বা মাত্র ২৮ গ্রাম কাঁঠালের বিচিতে ৫৩ ক্যালোরি, 
  • কার্বোহাইড্রেট ১১ গ্রাম, ফাইবার ০.৫ গ্রাম এবং প্রোটিন ২ গ্রাম আছে। আর দৈনিক পুষ্টি চাহিদার ভিত্তিতে এতে ৮% রাইবোফ্লাভিন, ম্যাগনেসিয়াম ৫%, ফসফরাস ৪% এবং থায়ামিন থাকে ৭%।
  • থায়ামিন ও রিবোফ্ল্যাভিনঃ কাঁঠালের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে থায়ামিন ও রিবোফ্ল্যাভিন থাকার কারণে এই দুটি উপাদান আমাদের শরীরের শক্তি সঞ্চয়ের পাশাপাশি নার্ভ সিস্টেম, মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র, মাংসপেশি ইত্যাদি সক্রিয় রাখে।
  • ক্ষুধা নিবারণ করেঃ ফাইবার এবং রেজিস্ট্যান্স স্টার্চও রয়েছে কাঁঠালের বিচিতে। এই উপাদানগুলো আমাদের শরীরে সহজে হজম হতে চায় না। কিন্তু অন্ত্রে থাকা কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়ার খাবার হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও ফাইবার এবং স্টার্চ শরীরের অতিরিক্ত ক্ষুধা নিবারণেও কাজ করে। সেই সাথে রক্তে শর্করের মাত্রা কমায় এবং হজম ক্রিয়া সহজ করে।
  • এন্টি মাইক্রোবিয়াল প্রভাবঃ বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁঠালের বিচিতে এন্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান রয়েছে। বিশেষ করে কাঁঠালের বীজের পৃষ্ঠতলে ছোট ছোট কিছু কনা থাকে। যেগুলো এক ধরনের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এই এজেন্ট গুলো আমাদের শরীরে I কোলাইয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম।
  • আন্টিক্যান্সার উপাদানঃ কাঁঠালের বিচিতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্টের মধ্যে রয়েছে স্যাপোনিন্স, ফ্লাভোনোয়েডস এবং ফেনোলিকস। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো আমাদের শরীরে যেকোনো ধরনের ইনফ্লামেশনের বিরুদ্ধে খুব সহজে লড়াই করতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। তাছাড়া সম্প্রতি এক টেস্টটিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে, কাঁঠালের বীজের নির্যাস ক্যান্সার যুক্ত রক্তনালীর গঠন প্রায় ৬১% হ্রাস করতে পারে।
  • হজম সহজ করেঃ অন্যান্য ফলের মতো কাঁঠালের বিচিতে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার দুটোই রয়েছে। এই ধরনের ফাইবার অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে অদ্রবণীয় ফাইবারগুলো প্রিপারায়োটিক হিসেবে কাজ করে। এই ফাইবারগুলো খেয়েই বেঁচে থাকে উপকারী ব্যাকটেরিয়া গুলো। এছাড়া অন্ত্রের পোস্টগুলোতে বিশেষ ধরনের পুষ্টি উৎপাদন সরবরাহ করে হজম ক্রিয়া সহজ করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যাও বিতাড়িত হয় চিরকালের জন্য।
  • কোলেস্টেরল কমায়ঃ এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, কাঁঠালের বিচি খেলে এটি আমাদের শরীরে রক্ত থাকা খারাপ কোলেস্টেরল কমায় আর ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে। পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও কমে।
  • প্রোটিনের উৎসঃ কাঁঠালের বিচিতে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন থাকার কারণে এটি আমাদের বেশি গঠনে সাহায্য করে। তাছাড়া শরীরের অপুষ্টির চাহিদাও পূরণ হয় কাঁঠালের বিচি খাওয়ার মাধ্যমে।
  • ত্বকের বলিরেখা দূর করেঃ ত্বকের বলিরেখা দূর করতে কাঁঠালের বিচির রয়েছে যাদুকরি গুণ। কারণ, এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রী রেডিকেল থেকে রক্ষা করে। ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে এবং বলিরেখা দূর হয়।
  • চুলের যত্নেঃ চুলের যত্নেও কাঁঠালের বিচি বেশ উপকারী। কারণ, এতে রয়েছে ভিটামিন এ। যা চুলের আগা ফেটে যাওয়া রোধ করে। তাছাড়া কাঁঠালের বিচিতে থাকা প্রোটিন ও আয়রন চুলে অনেকটা টনিক হিসেবে কাজ করে।
  • রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়ায়ঃ যারা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁঠালের বিচি খান। কারণ, এতে রয়েছে আয়রন। যা খুব সহজেই রক্তস্বল্পতা দূর করতে পারে।
  • মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করেঃ কাঁঠালের বিচি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস এবং প্রোটিনে ভরপুর। এই দুটি উপাদান আমাদের মস্তিষ্কে কেমিক্যালের ভারসাম্য বজায় রাখে। ফলে মানসিক দুশ্চিন্তা দূর হয়।
  • দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখেঃ কাঁঠালের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকার কারণে এটি আমাদের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে এবং রাতকানাসহ চোখের যে কোন সমস্যা দূর করে।
কাঁঠালের বিচির অপকারিতাঃ
  • কাঁচা কাঁঠালের বিচিতে এক ধরনের প্রাকৃতিক টক্সিন থাকতে পারে। যা হজমের সমস্যা বা বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং কাঁঠালের বিচি কাঁচা না খেয়ে আপনি খুব ভালো করে রান্না করে বা ভেজে খান। তাতে উপকার পাবেন।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁঠালের বিচি খেলে আপনার পেট ফেটে যেতে পারে। সাথে গ্যাস সহ পেটের অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।
  • কাঁঠালের বিচিতে যেহেতু প্রোটিন ও শর্করা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে, তাই অতিরিক্ত ফেলে আপনার ওজনও বাড়তে পারে।
  • কাঁঠালের বীজে পটাশিয়াম বেশি থাকায় এটি কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বিশেষ করে আপনাদের যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা কম পরিমাণে কাঁঠালের পিছে খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • কিছু কিছু মানুষের কাঁঠালের নিজের প্রতি এলার্জি থাকতে পারে। আবার কখনো কখনো এলার্জির সাথে এনাফ্লাক্সিসও হতে পারে।
  • আপনি যদি ওষুধ সেবন করে থাকেন বিশেষ করে ডায়াবেটিসের ঔষধ সেবন করলে কাঁঠালের বিচি না খাওয়াই ভালো। কারণ, এটি আপনার ঔষধের সাথে বিক্রিয়া করে রক্ত পাতলা করে দিতে পারে। খুব ভালো হয় যদি আপনি আপনার চিকিৎসকের সাথে এ বিষয়ে পরামর্শ করে নেন।
  • ছোট বাচ্চাদের কাঁঠালের বিচি খাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ অনেক সময় কাঁঠালের বিচি গেলে ফেলার কারণে এটি গলায় আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কাঁঠালের বিচি খেলে কি ওজন বাড়ে

কাঁঠালের বিচি খেলে কি ওজন বাড়ে? অনেকেই জানতে চান। দেখুন কাঁঠালের বিচি খেলে ওজন বাড়বে কিনা তা নির্ভর করবে আপনি প্রতিদিন কতটা পরিমাণে খাচ্ছেন এবং আপনার সামগ্রিক খাদ্যাভাসের উপরে। কাঁঠালের বিচি পুষ্টিগুনে ভরপুর। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন বি, আয়রন এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান রয়েছে।
 
আবার স্বাস্থ্যের জন্যও বেশ উপকারী কাঁঠাল বীজ। কারণ, এটি হজমে সাহায্য করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। আবার ফাইবার থাকার কারণে এটি দীর্ঘক্ষণ আপনার পেট ভরা রাখে। ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রতি চাহিদা কমে। ফলে আপনার ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে এতে কিছু পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালরি থাকে, 
 
যা অতিরিক্ত খেলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে আপনি যদি কাঁঠালের বিচি অতিরিক্ত তেল মশলা সহযোগে রান্না করে খান, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার শরীরেও ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যাবে। তাতে আপনার ওজনও বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে কাঁঠালের বিচি সেদ্ধ করে বা হালকা ভাপে রান্না করে খেলে তা ওজন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।তবে আপনি যদি ডায়েট কন্ট্রোলে থাকেন,
 
তাহলে দিনে ৮-১০ টির বেশি কাঁঠালের বিচি খাওয়া উচিত নয়। মনে রাখবেন, ওজন বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব। তাই ব্যায়াম না করলে এবং অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করলে যে কোন খাবারেই আপনার ওজন বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে কাঁঠালের বিচিও ব্যতিক্রম নয়।

তবে আপনি যদি কাঁঠালের বিচিকে সুষম খাদ্য হিসেবে গ্রহন করেন এবং একই সাথে নিয়মিত শরীর চর্চা বা শারীরিক পরিশ্রম  করেন, সেক্ষেত্রে কাঁঠালের বিচি খেলেও ওজন বাড়ার কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না। অন্যথায় হিতে বিপরীত হতে পারে। সম্মানিত পাঠক, এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কাঁঠালের বিচি খেলে আপনার ওজন বাড়বে নাকি কমবে।

কাঁঠাল খাওয়ার সঠিক সময়

কাঁঠাল খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা উচিত। যে সময় মেনে কাঁঠাল খেলে শারীরিক কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে না। সেদিক থেকে বিবেচনায় কাঁঠাল খাওয়ার সঠিক সময় হল দুপুরের খাবারের পর বা বিকেলের সময়। কারণ, এই সময় গুলোতে আমাদের শরীরের হজম শক্তি তুলনামূলকভাবে বেশি সক্রিয় থাকে অন্যান্য সময়ের থেকে।
 
তাছাড়া কাঁঠাল ভারী ও মিষ্টি ফল হওয়ায় এটি খুব সহজে হজম হয়ে যায়। অন্যথায় আপনি যদি সকালে কাঁঠাল খান তবে আপনার পেটের অস্বস্তি হতে পারে। আবার রাতে খেলেও হজমে সমস্যা হতে পারে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। ঠিক সে কারণেই দুপুরে বা বিকেলে পাকা কাঁঠাল খেলে আমাদের শরীর কাঁঠালে থাকা সুগার ও ফাইবারকে সহজ ভাবে গ্রহণ করতে পারে এবং তা শক্তিতে রূপান্তরিত করে। ফলে শারীরিক ক্লান্তি কাটে।

কাঁঠালের মুচি খাওয়ার উপকারিতা

কাঁঠালের মুচি খাওয়ার উপকারিতা জানলে আপনি হয়তো আজ থেকেই কাঁঠালের মুচি খাওয়া শুরু করবেন। এটি সাধারণত কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে, ভাজি বা ভর্তা করে খাওয়া হয়। শুধু স্বাদেই নয়, এর স্বাস্থ্য উপকারিতাও অনেক। এতক্ষণ আমরা পাকা কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। এবার চলুন জেনে নিই কাঁঠালের মুচি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-
পাকা-কাঁঠালের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-জানতে-বিস্তারিত-পড়ুন
  • কাঁঠালের মুচিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ থাকার কারণে এটি পেটের অজম সহজ করে। সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পেট পরিষ্কার রাখে।
  • কাঁঠালের মুচিতে গ্লাইসেমিক সূচক সবচেয়ে কম থাকে। এটি অতি ধীরে ধীরে হজম হয়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় না। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
  • আপনি জেনে অবাক হবেন যে, কাঠালের মুভিতে থাকা পটাশিয়াম এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাঁঠালের মুচির ভূমিকা অনবদ্য। কেননা এতে রয়েছে ভিটামিন সি ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা শরীরের রোগ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
  • কোলেস্টেরনের সমস্যায় কাঁঠালের মুচি দারুন কাজ করে। কারণ, কাঁঠালের মুক্তির আঁশ কোলেস্টেরল শোষণ কমায় এবং শরীর থেকে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হ্রাস করে। যা হার্টের জন্য উপকারী।
  • ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের মত উপাদান রয়েছে কাঁঠালের মুচিতে। যা হাড়ের গঠন মজবুত করে এবং অস্টিওপোরোসিস এর ঝুঁকি কমায়।
  • মুচিতে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • শুধু কি তাই, কাঁঠালের কচি মুচিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস আমাদের শরীরে কোষের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে।
  • কাঁঠালের মুচি অপুক্ত হলেও এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি থাকে। যা আমাদের ত্বক উজ্জ্বল রাখতে, ত্বকের বলিরেখা দূর করতে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
  • কাঁঠালের মুচির খাদ্য আশ হালকা এবং সহজপাচ্য হওয়ায় পাকস্থলী এটি খুব সহজে হজম করতে পারে। ফলে এসিড রিফ্লেক্স বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় না বললেই চলে।
  • অপরিপক্ক কাঁঠালের মুচিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট। যা আমাদের শরীরে শক্তির ভালো উৎস হিসেবে কাজ করে এবং দীর্ঘ সময় ধরে শরীরকে সক্রিয় রাখে।
  • চুলের গোড়া মজবুত করতে প্রয়োজন ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং জিংক। আর এই প্রত্যেকটি উপাদান আপনি খুঁজে পাবেন কাঁঠালের মুচিতে।
  • আবার কাঁঠালের কিছু ফাইটো নিউট্রিয়েন্টসও রয়েছে, যা হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। বিশেষ করে নারীদের জন্য এটি উপকারী।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম কাঁঠালের মুচি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। কাঁঠালের মুচি শুধুমাত্র রসনা তৃপ্তির জন্যই নয় বরং এটি প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি খাদ্য উপাদান। তাই নিয়মিতভাবে আপনি যদি আপনার খাদ্য তালিকায় কাঁঠালের মুচি যোগ করতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুনে বেড়ে যাবে।

কাঁঠালের বৈজ্ঞানিক নাম কি

কাঁঠালের বৈজ্ঞানিক নাম কি? কাঁঠালের বৈজ্ঞানিক নাম হল Artocarpus heterophyllus. এটি মোরাসি (Moraceae ) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি ট্রপিকাল ফল। যা মূলত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কাঁঠাল প্রচুর পরিমাণে জন্মে থাকে। কাঁঠাল ফল বিশ্বের সবচেয়ে বড় গুচ্ছফল হিসেবে পরিচিত, যার ওজন ৮০ পাউন্ড পর্যন্তও হয়ে থাকে।
 
কৃষিবিদরা কাঁঠালকে মাল্টিপারপাস ফলও বলে থাকেন। কারণ, এটি কাঁচা অবস্থায় এবং পাকা উভয় অবস্থায়ই অনায়াসে খাওয়া যায়। কাঁচা কাঁঠালের ভেতরের অংশ শক্ত ও আঁশযুক্ত হয়ে থাকে, যা সাধারণত সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। এটি প্রচুর প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং নিরামিষ ভোজীদের জন্য মাংসের একটি বিকল্প খাদ্য উপাদান হতে পারে।
 
অপরদিকে পাকা কাঁঠাল খুবই মিষ্টি স্বাদের সুঘ্রাণ যুক্ত হয় এবং এর ভেতরের কোষগুলো নরম ও রসালো হয়। যা ফল হিসেবে সরাসরি খাওয়া যায়। এছাড়া কাঁঠালের বীজও প্রচুর পুষ্টিগুনে ভরপুর এবং তরকারি হিসেবে সবজীর সাথে রান্না করে খাওয়া যায়। অনেকেই আছেন যারা পাকা কাঁঠাল না খেলেও এর বীজ খেতে স্বাচ্ছন্দ্যদ বোধ করেন।

কাঁঠালের পুষ্টিগুণ

কাঁঠালের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে এবার আপনাদের জানাবো, পাকা কাঁঠাল খাওয়ার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা এবং অতিরিক্ত কাঁঠাল খাওয়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। এবার চলুন প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা কাঠালে কি পরিমান পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা আপনার সুবিধার্থে নিচে একটি ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো-
পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
খাদ্য শক্তি ৬৯.৭০-১১২.৮০ কিলোক্যালরি
ভিটামিন এ ১৭৫.০০-৫৪০.০০ IU
ভিটামিন সি ১০.০০ মিলিগ্রাম
রাইবোফ্লাভিন ০.০৫-০.৪ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ৩৮.০-৪১.০ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম ১.০০-৪১.০০ মিলিগ্রাম
থায়ামিন ০.০৩-০.০৯ মিলিগ্রাম
আয়রন ০.৫০-১.১০ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ২৭.০০ মিলিগ্রাম
খনিজ দ্রব্য ০.৮৭-০.৯০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ২০.০-৩৭.০ মিলিগ্রাম
খাদ্য আঁশ ১.০০-১.৫০ গ্রাম
ফ্যাট ০.১০-০.৪০ গ্রাম
শ্বেতসার ১৬.০-২৫.৩৫ গ্রাম
আমিষ ১.২০-১.৯০ গ্রাম
পানি ৭২.০০-৯৪.০০ গ্রাম

পাকা কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

পাকা কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা আমরা এতক্ষণ বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। প্রিয় পাঠক, গোঁফে তেল দিয়ে অপেক্ষা করার প্রহর শেষ। কারণ, গ্রীষ্মকালীন ফল কাঁঠালের মৌসুম ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। কাঁঠালের সুমিষ্ট স্বাদ ও ঘ্রাণের জন্য অনেকের কাছেই এটি একটি প্রিয় ফল।
 
তাছাড়া ফলটি প্রচুর পুষ্টিগুনেও ঠাসা। আবার অনেকেই পাকা কাঁঠাল খেতে পছন্দ করেন না। যারা কাঁঠাল খেতে পছন্দ করেন না তাদেরকে বলব অন্তত কাঁঠালের পুষ্টিগুণের কথা বিবেচনা করে হলেও কাঁঠালের মৌসুমে নিয়মিত কাঁঠাল খাওয়ার চেষ্টা করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url