পান্তা ভাত খেলে কি মোটা হয় বিস্তারিত জানুন

পান্তা ভাত খেলে কি মোটা হয়? এ সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। ১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে কত ক্যালরি জানেন কি? অনেকেই আছেন যারা মুটিয়ে যাওয়ার ভয়ে পান্তা ভাত খাওয়া ছেড়েই দিয়েছেন। কিন্তু পান্তা ভাতের উপকারিতা জানলে আপনিও আজ থেকে হয়তো পান্তা ভাত খাওয়া শুরু করে দেবেন।

পান্তা-ভাত-খেলে-কি-মোটা-হয়-বিস্তারিত-জানুন
প্রিয় পাঠক, আমরা আপনাদের জানাবো পান্তা ভাত খেলে মোটা হয় কিনা এবং প্রতি ১০০ গ্রাম পান্থা ভাতে ঠিক কি পরিমাণ ক্যালরি থাকে। সাথে আরো জানবেন পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ পান্তা ভাত খেলে কি মোটা হয়

পান্তা ভাত খেলে কি মোটা হয়

পান্তা ভাত খেলে কি মোটা হয়? এ প্রশ্ন হরহামেশা অনেকেই করে থাকেন। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন যে, পান্তা ভাত নিয়মিত খেলে ওজন কখনোই বাড়ে না বরং কমে। তাছাড়া পান্তা ভাত খেয়ে মোটা হওয়া বা না হওয়া অনেকটাই নির্ভর করবে আপনার খাবারের পরিমাণ, পান্তা ভাতের সাথে আপনি কি খাচ্ছেন, প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস এবং দৈনন্দিন ক্যালোরি খরচের ওপর। 

আরো পড়ুনঃ ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম কি বিস্তারিত জানুন

পান্তা ভাত মূলত আগের রাতের ভাত পানিতে ভিজিয়ে সকালে খাওয়া হয়। যা কিছুটা গাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিপাক সহায়ক এনজাইম ও প্রবায়োটিক উপাদান তৈরি করে। এদের মূল কাজ হলো শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করা। প্রতি ১০০ গ্রাম পান্তা ভাতের কমপক্ষে ৩ ট্রিলিয়ন মতো ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে। 

সাথে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়ামের পরিমাণ পান্তা ভাতে একেবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকে। যা একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রয়োজন মেটাবার জন্য পর্যাপ্ত। আবার গরম ভাতে যে পরিমাণ ফ্যাট থাকে পান্তা ভাতে সেই ফ্যাট প্রায় ৬ গুন কম থাকে। তাই এটি ওজন কখনোই বাড়ায় না বরং কমায়। 

পান্তা ভাতে ক্যালোরির পরিমাণ সাধারণ ভাতের মতই থাকে। তবে অনেক সময় আমরা পান্তা ভাতের সাথে তেলে রান্না করা ভাজি, আলু ভর্তা, ইলিশ মাছ, ডাল ইত্যাদি খেয়ে থাকি। যা সামগ্রিকভাবে আমাদের শরীরে ক্যালরির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই আপনি যদি পান্তা ভাতের সাথে উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার খান সেক্ষেত্রে আপনার ওজন ধীরে ধীরে বেড়ে যেতে পারে।

তবে সঠিক পরিমাণে পরিমিত তেল মশলা ও ব্যালেন্সড খাদ্যাভ্যাস মেনে পান্তা ভাত খেলে ওজন কখনোই বাড়বে না এতোটুকু বলতে পারি বরং এটি আমাদের হজমে সাহায্য করে। আরেকটি কথা, আপনি যদি ডায়েটে থাকেন বা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাহলে পান্তা ভাত খাওয়ার সময় এর সঙ্গের খাবার এবং পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখবেন।

১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে কত ক্যালরি

১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে কি পরিমাণ ক্যালরি থাকে। অনেকেই মনে করেন পান্তা ভাতে সাধারণ ভাতের থেকে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকে। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ভুল। বরং সাধারণ ভাতের থেকে পান্তা ভাতে ক্যালোরির পরিমাণ কিছুটা হলেও কম থাকে। সাধারণ রান্না করা ভাতে যেখানে প্রতি ১০০ গ্রামে ক্যালরি থাকে ১২০-১৩০, সেখানে পান্তা ভাতে থাকে ৮০-১১০ ক্যালোরি।

আরো পড়ুনঃ  জেনে নিন বিট লবনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে

কারণ, পান্তা ভাত তৈরি করতে সেদ্ধ ভাত সারা রাত ভর পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ফলে কিছুটা কার্বোহাইড্রেট পানির সাথে মিশে যায়। এছাড়া দীর্ঘ সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখার কারণে এতে প্রাকৃতিকভাবে কিছু ফার্মেন্টেশন ঘটে। যার ফলে ভাতে থাকা কিছু শর্করা আংশিকভাবে ভেঙে যায় এবং এতে ক্যালরির পরিমাণ হ্রাস পায়।

তবে ক্যালরির পরিমাণ ভাতের চালের ধরন, পানি ও লবণের পরিমাণ এবং ভাত কতটা সময় ভিজিয়ে রাখা রয়েছে তার ওপর নির্ভর করেও কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। তবে অন্যান্য খাবারের থেকে পান্তা ভাতে ক্যালরি অনেকটাই কম এ কথা নিশ্চিত করে বলতে পারি। সুতরাং পান্তা ভাত খেলে কি মোটা হয় নাকি হয় না এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন।  

পান্তা ভাতের উপকারিতা কি

পান্তা ভাতের উপকারিতা কি কি? জানলে আপনিও চমকে যাবেন। বিশেষ করে গরমকালে এই ভাত স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণই উপকারী। কারণ, এই ভাত শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং হজমে সাহায্য করে। এছাড়াও, নিয়মিত পান্তা ভাত খাওয়ার বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। চলুন পান্তা ভাতের উপকারিতা গুলো জেনে নিই-

আরো পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

  • পান্তা ভাতের পুষ্টিঃ পান্তা ভাত মূলত মাইক্রোফ্লোরা সমৃদ্ধ। যা আমাদের শরীরে প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে অন্ত্রের সমস্যা, শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়ানো, হজমশক্তি উন্নত করতে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে এবং সুন্দর চুলের জন্য এটি কাজ করে। তাছাড়া এটি এমন একটি প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট যা গরমের সময় ডিহাইড্রেশন, শারীরিক ক্লান্তভাব, দুর্বলতা দূর করতে পারে।
  • হজম সহজ করেঃ পান্তা ভাতে প্রোবায়োটিক উপাদান থাকে, যা আমাদের অন্ত্রের হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। সুতরাং আপনার বদহজম কিংবা পেট ফাঁপার সমস্যা থাকলে আপনি নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করে পান্তা ভাত খেতে পারেন।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ আপনি যদি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চান তাহলে নিয়মিত পান্তা ভাত খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ, পান্তা ভাতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন ই আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে সাহায্য করে। শুধু তাই না, এটি বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ থেকে আমাদের শরীরকে সুরক্ষিত রাখে।
  • এসিডিটি কমায়ঃ এসিডিটি কমাতে পান্তা ভাত দারুন কাজ করে। এতে ল্যাকটিক এসিড থাকার কারণে এটি যেমন হজমে সাহায্য তেমনি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা গুলি যেমন-পেট ফোলা, পেটে ব্যথা ইত্যাদি দূর করে। তাছাড়া নিয়মিত পান্তা খেলে এটি পেটের সব ধরনের আলসার অতি দ্রুত সারিয়ে তোলে।
  • কোলেস্টেরল কমায়ঃ আপনি কি কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে পান্তা ভাত খেতে পারেন। কারণ, পান্তা ভাতে থাকা প্রবায়োটিক উপাদান গুলি আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তাছাড়া পান্তা ভাতে বেশ কিছু রেজিস্ট্যান্স স্টার্চ তৈরি হয় যা কিনা সিরাম কোলেস্টেরল কমাতে কাজ করে। এতে করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
  • শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেঃ গরমের দিনে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পান্তা ভাত। কারণ, পান্তা ভাত ঠান্ডা থাকার কারণে এটি খেলে শরীরও ঠান্ডা থাকে। ফলে অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
  • ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করেঃ পান্তাভাতে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। যা শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। এতে লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের অযাচিত বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যায়।
  • ত্বকের সুস্থতা ও উজ্জ্বলতায়ঃ "বিউটি সিক্রেট অফ এশিয়া" বলা হয় পান্তা ভাতকে। কারণ এই ভাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের ত্বকে কোলাজেন তৈরিতে কাজ করে। ফলে ত্বকের ইলাস্টিসিটি বেড়ে যায় এবং প্রাকৃতিকভাবে ত্বক হয় উজ্জ্বল, টানটান ও মসৃণ। সেই সাথে ত্বক থেকে বয়সের ছাপ কমাতেও দারুন কাজ করে পান্তা ভাত।
  • বাড়তি ওজন কমায়ঃ আপনারা যারা ওজন কমানোর জন্য ডায়েটে আছেন, তারা খাদ্য তালিকায় নিশ্চিন্তে পান্তা ভাত যোগ করে নিতে পারেন। কারণ, পান্তা ভাতে সাধারণ ভাতের তুলনায় ক্যালোরি কম থাকার কারণে খেলে ওজন কখনোই বাড়ে না বরং কমে। সুতরাং যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য পান্তা ভাত হতে পারে একটি ভালো খাদ্যের বিকল্প।
  • প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করেঃ পান্তা ভাতে রয়েছে পটাশিয়াম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। তাছাড়া পটাশিয়াম রক্তের প্রাকৃতিক সঞ্চালনকে উন্নত করে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য পান্তা ভাত বিশেষভাবে উপকারী।
  • শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করেঃ আপনি কি শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন কিংবা কোন কাজ করতে শক্তি পান না। তাহলে বলবো আজ থেকেই পান্তা ভাত খাওয়া শুরু করুন। কারণ, এতে থাকা কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট গুলি শরীরে দীর্ঘস্থায়ী শক্তি সরবরাহ করে। সে হিসেবে আমাদের শরীরে শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে পান্তা ভাত। বিশেষ করে যারা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেন কিংবা শারীরিক পরিশ্রম করেন তাদের জন্য পান্তা ভাত হতে পারে শক্তির উৎস।
  • শরীরের ফোলা ভাব কমায়ঃ অনেক সময় আমাদের শরীর বিশেষ করে হাত-পা ফুলে যায়। এই ফোলা ভাব থেকে আপনাকে পরিত্রাণ দিতে পারে পান্তা ভাত। কারণ, পান্তা ভাতে থাকার উপাদানগুলি শরীরের ভেতরে ইনফ্লামেশন বা ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি অস্টিওআর্থাইটিস বা আর্থাইটিসের মধ্যে রোগের উপসর্গ হ্রাস করতেও দারুণ কার্যকরী।
  • ডায়াবেটিসে উপকারীঃ পান্তা ভাতে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকে, যার ফলে এটি রক্তে শর্করার স্তর স্থিতিশীল রাখে। সুতরাং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই ভাত উপকারী একটি খাদ্য উপাদান। যা রক্তের শর্করা দ্রুত বাড়াতে সহায়ক নয়।
  • স্নায়ু শক্তি বৃদ্ধি করেঃ আপনি জেনে অবাক হবেন যে পান্তা ভাতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। যা স্নায়ুশক্তি বাড়াতে এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে। ফলে মানসিক চাপ বা উদ্বেগ অনেকটাই দূর হয়।
  • হরমোনাল ব্যালান্স ঠিক রাখেঃ পান্তা ভাতে থাকা ভিটামিন মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো আমাদের শরীরের হরমোনাল ভারসাম্য বজায় রাখে। বিশেষ করে মা-বোনদের মাসিক সমস্যার ক্ষেত্রে এটি বেশ সহায়ক।
  • প্রোবায়োটিক উপকারিতাঃ পান্তা ভাতে যে প্রবায়োটিক উপাদান থাকে তা আমাদের অন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের অন্তরে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং অন্ত্রের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে। তাছাড়া অন্ত্রের যেকোনো ধরনের অসুখ যেমন- ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা (IBS) কমাতে সাহায্য করে।
  • শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করেঃ প্রচন্ড গরমে আমাদের শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। ফলে শারীরিক অস্বস্তি, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি অনুভব হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি পান্তা ভাত খেতে পারেন। কারণ, পান্তা ভাতে থাকা জল গরমের সময় আমাদের শরীরের পানির ঘাটতি খুব সহজেই পূরণ করতে পারে।
  • লিভার কার্যক্ষম রাখেঃ নিয়মিত পান্তা ভাত খেলে লিভারকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। থলে লিভার থেকে টক্সিন পরিষ্কার হয় এবং লিভার সুস্থ কার্যক্ষম থাকে।
  • ভালো ঘুম হয়ঃ সাধারণত পান্তা ভাত খাওয়ার পর শরীর ঠান্ডা হয় এবং শরীরে আরাম অনুভূত হয়। যা ভালো ঘুমের ক্ষেত্রে সহায়ক। তাছাড়া মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতেও পান্তা ভাতের জুড়ি মেলা ভার।
  • মেজাজ ভালো রাখেঃ পান্তাভাতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান গুলি আমাদের মস্তিষ্কে সেরোটেনিনের মত রাসায়নিকের স্তর বৃদ্ধি করে। ফলে মেজাজ স্বাভাবিকভাবেই ভালো থাকে।

পান্তা-ভাত-খেলে-কি-মোটা-হয়-বিস্তারিত-জানুন

  • মেটাবলিজম বাড়ায়ঃ নিয়ম মেনে পান্তা ভাত খেলে এটি শরীরে মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে। যার ফলে শরীর বেশি ক্যালরি ঝরাতে পারে। এতে করে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
  • গরমের তৃষ্ণা নিবারণ করেঃ গরমের দিনে পান্তা ভাত শরীরের তৃষ্ণা মেটাতে সাহায্য করে এবং শরীরকে শীতল রাখে। ঠিক এ কারণেই পান্তা ভাতকে বডি রি হাইড্রেটিং ফুড হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়।
  • অ্যানিমিয়া দূর করেঃ আপনি কি জানেন পান্তা ভাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম। যা আমাদের শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর করতে পারে। ফলে রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে বা অ্যানিমিয়া দূর করতে আপনি পান্তা ভাত খেতেই পারেন। তাছাড়া রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতেও কাজ করে আয়রন।
  • শরীরের ক্লান্তি ভাব কমায়ঃ পান্তা ভাতের ভিটামিন বি ১২ শরীরের ক্লান্তি ভাব কমাতে কাজ করে এবং শরীরকে সতেজ ও চনমনে রাখে।
  • হাড় শক্ত করেঃ আমাদের শরীরে হাড় শক্ত করার কাজ করে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, যা আপনি পেতে পারেন পান্তা ভাত খেয়ে। এছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম শরীর নিঃসৃত বিভিন্ন ধরনের এনজাইমকে সক্রিয় করে তোলে।
  • শরীরের প্রদাহ দূর করেঃ পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে বিটা সিটোস্টেরোল এবং ক্যাম্পে স্টেরোলের মত মেটাবোলাইটস রয়েছে যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ নিমিষেই দূর করতে পারে।
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমেঃ পান্তা ভাতের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে অপ্রয়োজনীয় কোষের বৃদ্ধি রোধ করে। ফলে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধে এটি একটি প্রাকৃতিক দাওয়াই হিসেবে কাজ করে।
  • স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য উপকারীঃ ফারমেন্টেশন এর কারণে পান্তা ভাতে ল্যাকটিক এসিড তৈরি হয়। এটি স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। কারণ, স্তন্যপান করানো মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • ভিটামিনের উৎসঃ আমাদের শরীরে যে ধরনের ভিটামিন প্রয়োজন তার সবটাই রয়েছে পান্তা ভাতে। বিশেষ করে ভিটামিন বি- ৬ এবং ভিটামিন বি- ১২ এর ভালো উৎস হলো পান্তা ভাত, যা আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য জরুরি।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ পান্তা ভাত যেহেতু হজম প্রক্রিয়ার সহজ করে সেহেতু এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সাহায্য করে। ফলে শরীর দিন দিন আরো সজীব ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক

পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। এটি অনেকের কাছে হালকা ও সহজপাচ্য খাবার হিসেবে বিবেচিত। তবে এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে বিশেষ করে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খান কিংবা সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করে খান। এবার চলুন পান্তা ভাতের বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে রাখুন-

  • পুষ্টি উপাদানের ক্ষয়ঃ পান্তা ভাত যেহেতু দীর্ঘ সময় পানিতে ভিজে রেখে তৈরি করা হয় তাই এতে ভাতের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যেমন - বি-১, বি-২, বি- ৬ সহ অন্যান্য খনিজ উপাদান গুলো পানিতে বের হয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় ফলে। ফলে নিয়মিত পান্তা ভাত খেলেশরীরে অপুষ্টি দেখা দিতে পারে।
  • ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের বৃদ্ধিঃ পান্তা ভাত দীর্ঘ সময় রেখে দিলে এতে ফরমেন্টেশন হয়, যা জীবাণুর বংশ বৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। বিশেষ করে সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে এতে ই-কোলাই, সালমোনিলা বা ছত্রাক জন্ম নিতে পারে। এসব জীবাণু অন্ত্রের যেকোনো সমস্যা বিশেষ করে ডায়রিয়া আমাশয় এর জন্য দায়ী।
  • এসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাঃ সাধারণত ফারমেন্টেসন প্রক্রিয়ায় ল্যাক্টিক অ্যাসিড তৈরি হয়, যা পেটে অম্লতার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে নিয়মিত পান্তা ভাত খেলে আপনার অম্বল, বুক জ্বালাপোড়া, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
  • শরীরে শক্তির ঘাটতি দেখা দেয়ঃ পান্তা ভাত অনেকটাই "এম্পটি ক্যালোরি" সরবরাহ করে। অর্থাৎ এতে ক্যালোরি থাকলেও প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন এবং মিনারেল অনেকটাই কম থাকে। ফলে দেহে প্রয়োজনীয় শক্তির অভাব দেখা দিতে পারে বিশেষ করে যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন।
  • দাঁতের ক্ষয় ও মুখের দুর্গন্ধঃ পান্তা ভাত কিছুটা এসিডিটি বা অম্ল ধর্মের হয়ে থাকে। ফলে একটানা দীর্ঘদিন যাবৎ খেলে আপনার দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। যদি খাওয়ার পর ঠিকমতো মুখ পরিষ্কার না করেন।
  • অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণঃ পান্তা ভাত খাবার অপরিহার্য একটি উপাদান হলো লবণ। যারা পাতে লবন খান না তাদেরও বাধ্য হয়ে পান্তা।ভাতে লবণ খেতেই হয়। অনেকে আবার পান্তা ভাতের সাথে অতিরিক্ত লবণ বা লবণ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভর্তা তৈরি করে খান। এতে করে শরীরের সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে আপনার উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির সমস্যা এমনকি হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে।
  • হজমের সমস্যা ও বদ হজমঃ পান্তা ভাত সকলের পেটে সহজে হজম হয় না, বিশেষ করে যাদের পাচন তন্ত্র দুর্বল প্রকৃতির। এতে বদহজম, পেট ফাঁপা কিংবা পেট ব্যথা হতে পারে।
  • ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাঃ যদিও পান্তা ভাত খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না, কিন্তু পান্তা ভাতের সাথে অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, লবণযুক্ত ভর্তা ইত্যাদি খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে ক্যালরি বেড়ে ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।
  • বিষাক্ত ছত্রাকঃ পান্তা ভাত দীর্ঘ সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর যদি আপনি সঠিকভাবে ধুয়ে না খান তাহলে এতে ছত্রাক জন্মাতে পারে। যা বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করতে পারে। এটি আপনার লিভারের ক্ষতি করতে পারে।
  • শরীরে ক্লান্তি ভাব আসেঃ পান্তা ভাত ১২ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে ফর্মেন্টেশন হলে সেখানে কিছুটা অ্যালকোহলের মত উপাদান তৈরি হয়। যা খেলে শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে, ক্লান্তি অনুভূত হয় এবং সহজেই ঘুম চলে আসে।
  • ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেঃ আপনাদের যাদের শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি তারা পান্তা ভাত খাওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। তবে, পান্তা ভাত ডায়াবেটিসে রোগীদের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া খেলে কিনা এ নিয়ে এখনও গবেষণা চলমান রয়েছে।
  • গর্ভাবস্থায়ঃ গর্ভকালীন সময়ে পান্তা ভাত না খাওয়াই ভালো কেননা এতে আপনার গর্ভস্থ ভ্রুনের ক্ষতি হতে পারে এবং সন্তানের ওজন হ্রাস পারে।
  • ভিটামিন বি ১২ এর অভাবঃ ভিটামিন বি-2 যেহেতু প্রাণিজ উৎস থেকে বেশি আসে তাই শুধুমাত্র পান্তা ভাত খেলে আপনার শরীরে এই ভিটামিনের ঘাটতি থেকে যাবে। এতে করে অ্যানিমিয়া বা স্নায়ুবিক সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
  • প্রোটিনের অভাবঃ পান্তা ভাতে প্রয়োজন এর তুলনায় প্রোটিন থাকে কম পরিমানে। যারা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করে তাদের জন্য পান্তা ভাত পর্যাপ্ত প্রোটিন সরবরাহ করতে পারে না। এতে করে আপনার শারীরিক দুর্বলতা বা ক্লান্তি ভাব বেড়ে যেতে পারে।

পান্তা ভাত খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতাঃ

  • যে পাত্রে পান্তা ভাত সংরক্ষণ করবেন সেটি সঠিকভাবে ঢাকা দিয়ে ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করুন।
  • পান্তা ভাত ভিজিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করুন।
  • ৮-১০ ঘন্টার বেশি সময় ভাত পানিতে ভিজিয়ে রাখা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
  • পান্তা ভাত খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনি ভালোভাবে এর গন্ধ ও রং দেখে নিন। যদি দুর্গন্ধ হয় বা অস্বাভাবিক রঙের হয় তাহলে খাবেন না।
  • শিশু বৃদ্ধ এবং গর্ভবতী নারীদের জন্য প্রতিদিন পান্তা ভাত না খাওয়াই ভালো।

প্রিয় পাঠক, প্রচন্ড গরমে স্বস্তি পেতে আপনি পান্তা ভাত মাঝে মাঝে খেতেই পারেন, তবে সেটি অবশ্যই পরিষ্কার পানি দিয়ে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে তবেই খাবেন।

পান্তা ভাত খাওয়ার নিয়ম

পান্তা ভাত খাওয়ার নিয়ম কি? মোটামুটি কম বেশি সকলেই পান্তা ভাতের সাথে পরিচিত কিন্তু শহুরে জীবনে অনেকেই আছেন যারা পান্তা ভাতের সাথে খুব একটা পরিচিত না। বিধায় কিভাবে খেতে হয় সেই নিয়ম সম্পর্কেও জানেন না। আপনার সুবিধার্থেই আজ পান্তা ভাত খাবার নিয়ম কয়েকটি ধাপে জানিয়ে দিচ্ছি। দেখে নিন-

  • ভাত রান্না করাঃ পান্তা ভাত তৈরির জন্য প্রাথমিক ধাপ হিসেবে আপনাকে প্রথমে সাদা ভাত রান্না করে নিতে হবে। এর জন্য সাধারণত সেদ্ধ ভাতের চাল ব্যবহার করাই ভালো। চেষ্টা করবেন ভাত কিছুটা নরম করে রান্না করতে যাতে পানির সাথে খুব সহজেই গলে যায়।
  • ভাত ঠান্ডা করাঃ ভাত রান্না হয়ে গেলে তা একেবারে ঠান্ডা করে নিন। কারণ, গরম ভাত সরাসরি পানিতে ভিজিয়ে রাখলে তা পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গ্রামাঞ্চলে সাধারণত রাতে খাবার পর অবশিষ্ট যে ভাত থাকে তাতেই পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয় পান্তার জন্য।
  • ভাত পানিতে ভিজিয়ে রাখাঃ ভাত একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেলে একটি পরিষ্কার পাত্রে নিয়ে তাতে পরিমাণমতো পানি যোগ করুন। আপনি চাইলে পানির সাথে সামান্য লবণ বা কয়েক ফোটা লেবুর রসও মিশিয়ে রাখতে পারেন। এতে পান্তা ভাতের স্বাদ আরো বেড়ে যাবে। পানি যোগ করার পর পাত্রটি একটি ঢাকনার সাহায্যে ভালো করে ঢেকে সারা রাত ভর প্রায় ৮-১২ ঘন্টা রেখে দিন।
  • কাঙ্খিত পান্তা ভাতঃ ব্যস্ত দিন সকালবেলা আপনার খাওয়ার জন্য পান্তা ভাত একেবারে তৈরি। এই ভাত অনেকটা ঠান্ডা খুব হালকা টক স্বাদযুক্ত হয় কিছুটা ফার্মেন্টেড হওয়ার কারণে।
  • অতিরিক্ত পানি ঝরিয়ে ফেলুনঃ আপনারা যারা কোম্পানিতে পান্তা ভাত খেতে চান তারা অতিরিক্ত পানি ঝরিয়ে নিতে পারেন। আবার কেউ কেউ পানিসহ খেতেই বেশি পছন্দ করেন।
  • ভর্তা ও অন্যান্য খাবার যোগ করুনঃ পান্তা ভাত সাধারণত কাঁচামরিচ এবং পেঁয়াজ দিয়েই খাওয়া যায়। তবে অনেকেই আছেন যারা আবার বিভিন্ন ধরনের ভর্তা বিশেষ করে শুকনা মরিচ দিয়ে আলু ভর্তা, বেগুন পোড়া, ডাল ভর্তা, ইলিশ মাছ ভাজা ইত্যাদি দিয়ে খেতে পছন্দ করেন।
  • পরিবেশন করুনঃ সবশেষে একটি থালায় পান্তা ভাত পরিবেশন করুন এবং ভাতের এক পাশে লবণ, ভর্তা, ভাজি, লেবু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ সকল উপাদান একসাথে প্লেটের সাজিয়ে নিয়ে খেতে বসে পড়ুন। চাইলে আপনি সামান্য সরিষার তেলও ভাতের উপর ছিটিয়ে নিতে পারেন। আর মাটির থাল হলে তো আরো মজা। তাতে গ্রাম্য ঐতিহ্যের স্বাদ কিছুটা হলেও উপভোগ করতে পারবেন।

পান্তা ভাত খেলে কি ওজন কমে

পান্তা ভাত খেলে কি ওজন কমে? দেখুন, পান্তা ভাত খেলে ওজন কমার সম্ভাবনা থাকলেও এটি সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করবে আপনি কতটা পরিমাণে, কিভাবে খাচ্ছেন তার উপর। পান্তা ভাত খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে যে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে তা হজম শক্তি বাড়ায় এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য কার্যক্ষম রাখে।

আর হজম ভালো হলে শরীরের স্বাভাবিকভাবেই ফ্যাট জমার সম্ভাবনা কম থাকে। তাছাড়া পান্তা ভাতে ক্যালোরির তুলনামূলকভাবে কম থাকে সাধারণ ভাতের থেকে। সেই সাথে এতে অতিরিক্ত পানি থাকার কারণে এটি দীর্ঘ সময় আপনার পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে অতিরিক্ত খবর খাওয়ার প্রতি প্রবণতা কমে। সে হিসেবে পান্তা ভাত খেলে ওজন কমবে এটিই স্বাভাবিক।

কিন্তু আপনি যদি পান্তা ভাতের সাথে অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত খাবার ,ভাজাভুজি, ভর্তা ইত্যাদি যোগ করে খান তাহলে আপনার ওজন কমার পরিবর্তে বেড়ে যেতে পারে। তাই বলব ওজন কমাতে চাইলে শুধুমাত্র পান্তা ভাতের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে একটি পরিমিত, সুষম এবং নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস মেনে চলুন।

পান্তা ভাত খেলে কি গ্যাস হয়

পান্তা ভাত খেলে কি গ্যাস হয়? বিশেষ করে যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা এ বিষয়ে বেশি জানতে চান। তাহলে জেনে রাখুন, স্বাভাবিকভাবে পান্তা ভাত খাওয়ার ফলে গ্যাসের সমস্যা হয় না। তবে আপনার যদি আগে থেকেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে থাকে সেক্ষেত্রে পান্তা ভাত খাওয়ার ফলে আপনার কিছুটা গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

এটি মূলত নির্ভর করবে আপনার হজম ক্ষমতা এবং রোজকার খাদ্যাভাসের ওপর। তাছাড়া পান্তা ভাতের মধ্যে থাকা স্টার্চ এবং প্রোবায়োটিক উপাদান আমাদের শরীরে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সাথে প্রতিক্রিয়া করে অনেক সময় গ্যাসের সৃষ্টি করে। এই ভাত যেহেতু ফারমেন্টেশান মাধ্যমে তৈরি করা হয় ফলে এতে কিছুটা এসিড এবং গ্যাস উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়াও থাকতে পারে।

আবার যারা খুব বেশি তেল বা মসলা যুক্ত খাবার দিয়ে পান্তা ভাত খান তাদের গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা আরো বেড়ে যায়। এছাড়াও পান্তা ভাতে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় কিছু কিছু মানুষের পাচনতন্ত্র অতিরিক্ত ফুলিয়ে দেয়। ফলে গ্যাস বা বদহজমও হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ খাবার হিসেবে পান্তা ভাত পেটে খুব একটা গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে না, যদি না আপনার কোন অন্তর্নিহিত সমস্যা থাকে।

সকালে পান্তা ভাতের উপকারিতা

পান্তা ভাত খেলে মোটা হওয়া যায় কিনা জেনেছেন, কিন্তু সকালে পান্তা ভাতের উপকারিতা জানেন কি? অনেকেই আছেন যারা সকালে পান্তা ভাত খেতে পছন্দ করেন। সকালে পান্তা ভাত খাওয়ার বেশ কিছু স্বাস্থ্যের উপকারিতা রয়েছে যা আমরা অনেকেই জানিনা। উপকারিতা গুলো হল-

পান্তা-ভাত-খেলে-কি-মোটা-হয়-বিস্তারিত-জানুন

  • সকালে পান্তা ভাত খেলে এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখে, বিশেষ করে গরমের দিনে। সাথে পেটের অস্বস্তি কমায় এবং শরীরের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • পান্তা ভাত যেহেতু হজমে সহায়ক সেহেতু সকাল বেলা পান্তা ভাত খেলে পেটের গ্যাস বা অম্বল দূর হয়। ফলে আপনি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • পান্তা ভাতে অতিরিক্ত পরিমাণ পানি থাকে। ফলে সকালবেলা পান্তা ভাত খেলে এটি আপনার শরীরে সারাদিন শক্তি সরবরাহ করতে থাকে এবং দীর্ঘসময়ের জন্য আপনার পেট ভরা রাখে।
  • গরমের দিনে সকালে পান্তা ভাত খেলে এটি শরীরে পর্যাপ্ত জল সরবরাহ করে, যা শরীরের ডিহাইড্রেশন রোধে কাজ করে।
  • গরমের সময় পান্তা ভাত খুবই আরামদায়ক এবং ঠান্ডা হওয়ার কারণে শরীরের তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। এই ভাত খাওয়ার পর শরীর শীতল ও সতেজ থাকে।
  • পান্তা ভাতের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেমন- ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম থাকে। যা শরীরের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করে।
  • পান্তা ভাতে প্রাকৃতিক প্রোটিন থাকে যা মাংসপেশী গঠন এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক।
  • পান্তা ভাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি। হোলি দিনের শুরুতে সকাল বেলা পান্তা ভাত খেলে এটি কার্যক্রম বাড়াতে সাহায্য করে এবং মনের স্থিরতা বজায় রাখে।
  • পান্তা ভাতে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে। এটা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে তোলে।
  • আপনারা যারা ওজন কমানোর জন্য চেষ্টা করছেন তারা সকালে পান্তা ভাত খেতে পারেন। কারণ, এতে ক্যালোরি পরিমাণ অনেকটাই কম থাকে।
  • উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য সকালে পান্তা ভাত খাওয়া খুবই উপকারী। কারণ এই ভাতে সঠিক মাত্রায় প্রাকৃতিক সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে দারুণ কাজ করে।

পান্তা ভাতের সাথে কি খাওয়া যায়

পান্তা ভাতের সাথে কি খাওয়া যায়? এর সঙ্গে খাওয়ার জন্য অনেক সুস্বাদু খাদ্য উপাদান রয়েছে যা পান্থার স্বাদ ও পুষ্টিগুণ আরো বাড়িয়ে তোলে। সাধারণত পান্তা ভাতের সাথে আপনি শুটকি ভর্তা, আলু ভর্তা, ডাল সেদ্ধ, বেগুন পোড়া, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা লঙ্কা, শুকনো লঙ্কা পোড়া, লবণ, ইলিশ মাছ ভাজা, ডালের বড়া ইত্যাদি উপকরণ যোগ করে খেতে পারেন। 

চাইলে এক টুকরো লেবুর রস এবং সামান্য সরষে তেল ভাতের উপর ছিটিয়ে নিতে পারেন। লেবুর রস দিয়ে পান্তা ভাত খেলে তাতে শরীর অনেকটাই ভালো থাকে। কেউ কেউ আবার পান্তা ভাতের সাথে ডিম ভাজা খেতেও পছন্দ করেন। তবে পান্তার সাথে অতিরিক্ত তেলে ভাজা চপচপে মাছ এবং আলু ভর্তা না খাওয়াটাই ভালো। 

এতে শারীরিক অস্বস্তি হতে পারে। তাছাড়া পুষ্টিবিদরাও এই দুটি উপাদান পান্তা ভাতের সাথে কম খেতে বলেছেন। কারণ, এই দুটি উপাদানই একসাথে খেলে শরীরে ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে আপনার ওজন বেড়ে যেতে পারে। আপনি যত ইচ্ছা পান্তা ভাতের সাথে কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পারেন। কিন্তু মটরশুঁটি, ভুট্টা ভাজা, বিভিন্ন ধরনের সালাদ, স্টার্চ বা গম জাতীয় খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। 

কারণ, এগুলো খেলে আপনার বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে এবং বদহজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকেই আবার পান্তা ভাতের সাথে চানাচুর কিংবা আচার খেতে পছন্দ করেন। এটিও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। পান্তা ভাতের সাথে কি কি খাওয়া যাবে আর কি কি খাবেন না আশা করি বুঝতে পেরেছেন। তাছাড়া পান্তা ভাত খেলে আসলেই মোটা হয় কিনা তা খানিক আগেই আজকের আলোচনায় জেনেছেন।

গরমে পান্তা ভাতের উপকারিতা

গরমে পান্তা ভাতের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।কথায় আছে পান্থার জল, তিন পুরুষের বল। হ্যাঁ সত্যিই তাই। গরমকালে পান্তা ভাত খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী। গরমকালে অতিরিক্ত ঘাম ও পানি শূন্যতা অনেক সময় শরীরের দুর্বল করে তোলে। এমনকি এই সময় হিট স্ট্রোকের মতো সমস্যাও দেখা দেয়। কিন্তু এই সময় পান্তা ভাত খেলে এতে থাকা ইলেকট্রোলাইটস শরীরে

পানির ভারসাম্যতা রক্ষা করে। এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন বি ও মিনারেল শরীরে অতিরিক্ত শক্তি যোগাতে এবং ক্লান্তি ভাব দূর করতেও ভালো কাজ করে। আবার গরমে শরীর পেট ঠান্ডা রাখতেও পান্তা ভাতের জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া এটি সহজপাচ্য হওয়ায় গরমের দিনে অতিরিক্ত পরিমাণে ভারী খাবার খাওয়ার চাপে পড়তে হয় না শরীরকে। সব মিলিয়ে গরমের দিনে পান্তা ভাত ভাত খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত এবং উপকারী।

রাতে পান্তা ভাত খেলে কি হয়

রাতে পান্তা ভাত খেলে কি হয়? পান্তা ভাত খেলে কি আদৌ মোটা হওয়া যায়! তা আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। এবার আমরা জানবো রাতে পান্তা ভাত খেলে কি হয়। সাধারণত সকালের দিকে খাওয়ার চল বেশি। তবে আপনি চাইলে রাতেও খেতে পারেন। কিন্তু রাতে পান্তা ভাত খেলে এর আবার কিছু ভালো ও খারাপ দিক রয়েছে।

একদিকে এটি সহজপাচ্য এবং গ্যাস্ট্রিক বা পেটের সমস্যায় উপকারী হতে পারে। কারণ এটি পেট ঠান্ডা রাখে এবং হজমে সাহায্য করে। তাছাড়া এতে থাকা ফার্মেন্টেড উপাদান আমাদের অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে সাহায্য করে। তবে অন্যদিকে দীর্ঘ সময় পানি দিয়ে ভেজানোর কারণে এতে জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়ার জন্ম নিতে পারে, 

যদি আপনি সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করেন বিশেষ করে গরমকালে। এছাড়া পান্তা ভাত যেহেতু ঠান্ডা হয় তাই রাতে অতিরিক্ত ঠান্ডা পান্তা ভাত খেলে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, বদহজম এবং শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই রাতে পান্তা ভাত খাওয়ার আগে নিজের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তবেই খাবেন।

পান্তা ভাতের পুষ্টি উপাদান

পান্তা ভাতের পুষ্টি উপাদান জানলে আপনি নিজেও অবাক হবেন। এতক্ষণ আমরা জেনেছি পান্তা ভাতের বিভিন্ন উপকারী অপকারিতা এবং পান্তা ভাত খেলে মোটা হওয়া যায় কিনা সে সম্পর্কে। এবার আমরা জেনে নেব পান্তা ভাতের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে। তো চলুন নিচে একটি ছকের মাধ্যমে পান্তা ভাতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান কি পরিমান রয়েছে তা দেখে নিন-

পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
ক্যালরি ৮০-১১০
কার্বোহাইড্রেট ২৫-৩০ গ্রাম
প্রোটিন ২-৩ গ্রাম
ভিটামিন বি-১ ০.৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি-২ ০.৩ গ্রাম
ভিটামিন বি-৩ ০.৬ গ্রাম
ভিটামিন বি-৬ ০.২ গ্রাম
পটাশিয়াম ১৬-৩০ মিলিগ্রাম
আয়রন ০.২-০.৪ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ১০-২০ মিলিগ্রাম
ফাইবার ০.৫ মিলিগ্রাম
জিংক ০.৫ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ৪০ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ৬-১০ মিলিগ্রাম
ফ্যাট ০.২-০.৫ গ্রাম

পান্তা ভাত খেলে কি মোটা হয় এ সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

পান্তা ভাত খেলে কি মোটা হয় আশা করি আজকের আর্টিকেল থেকে আপনি এর উত্তর পেয়ে গেছেন। আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত পান্তা ভাত। বিশেষ করে বাঙালি ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বাংলা নববর্ষে পান্তা ভাত খাওয়ার চল চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। শুধু বাংলাদেশ নয় উড়িষ্যা, ভিয়েতনাম, 

তামিলনাড়ু এবং চীনসহ বিভিন্ন দেশে পান্তা ভাত বেশ জনপ্রিয়। তবে একেক দেশে খাওয়ার নিয়ম একেক রকম। তাছাড়া পান্তা ভাতের তেমন ক্ষতিকর দিক নেই বললেই চলে। এর অপকারিতার থেকে উপকারিতাই বেশি। সুতরাং গরমে সুস্থ থাকতে নিয়মিত পান্তা ভাত খাওয়ার অভ্যাস করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url